শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১, ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

আন্তর্জাতিক সংবাদ

হ্যাসপিলকে শনাক্ত করেছেন দুই জন

ফাহিম সালেহ হত্যাকান্ড

ইনকিলাব ডেস্ক | প্রকাশের সময় : ২১ জুলাই, ২০২০, ১২:০০ এএম

নিউ ইয়র্কে বাংলাদেশের রাইড শেয়ারিং অ্যাপ পাঠাও-এর সহ-প্রতিষ্ঠাতা ফাহিম সালেহ খুনের ঘটনায় অভিযুক্ত টাইরিস হ্যাসপিল নিজেকে নির্দোষ দাবি করেছে। তবে, অন্তত দুই ব্যক্তি তাকে শনাক্ত করতে পেরেছে বলে পুলিশের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে। রোববার শুনানিতে তার আইনজীবীরা আদালতকে জানান, নিউ ইয়র্কের স্থানীয় বাসিন্দা ২১ বছরের হ্যাসপিলের বিরুদ্ধে ইতঃপূর্বে এ ধরনের কোনও অভিযোগ ছিল না।

এ বিষয়ে হোমিসাইড ডিফেন্স টাস্ক ফোর্সের লিগ্যাল এইড অ্যাটর্নি স্যাম রবার্টস এবং নেভিল মিচেল বলেন, এটি একটি জটিল ও দীর্ঘ মামলা। আমরা প্রকৃত ঘটনা উদঘাটনের খুব প্রাথমিক পর্যায়ে আছি। হ্যাসপিলের অ্যাটর্নি হিসেবে আমরা জনগণকে এ ঘটনায় তাদের দৃষ্টিভঙ্গি উন্মুক্ত রাখার আহ্বান জানাই। ডিস্ট্রিক্ট অ্যাটর্নি অফিস জানিয়েছে, আগামী আগস্টে হ্যাসপিলের বিষয়ে পরবর্তী শুনানির দিন ধার্য করেছেন আদালত।

প্রসঙ্গত, চলতি মাসের ১৪ তারিখে নিউ ইয়র্কের ম্যানহাটন এলাকার নিজ অ্যাপার্টমেন্ট থেকে ফাহিম সালেহর ক্ষতবিক্ষত লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। ১৭ জুলাই এ ঘটনায় গ্রেফতার করা হয় তার সাবেক ব্যক্তিগত সহকারী হ্যাসপিলকে। একইদিন তার বিরুদ্ধে সেকেন্ড ডিগ্রি মার্ডারের অভিযোগ দায়ের করা হয়।

নিউ ইয়র্ক সময় শুক্রবার মধ্যরাতে ম্যানহাটনের ক্রিমিনাল কোর্টে হ্যাসপিলের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠনের সময় ম্যানহাটনের অ্যাসিসট্যান্ট ডিস্ট্রিক্ট অ্যাটর্নি লিন্ডা ফোর্ড জানান, টাইরিস হ্যাসপিলকে দোষী প্রমাণের জন্য ‘পর্যাপ্ত আলামত’ পাওয়া গেছে। নজরদারি ক্যামেরায় ধারণকৃত ফুটেজ দেখে এসব আলামত শনাক্ত করা হয়েছে। এক সংবাদ সম্মেলনে নিউ ইয়র্ক পুলিশ বিভাগের প্রধান ডিটেকটিভ রোডনি হ্যারিসন সাংবাদিকদের বলেন, ফাহিমের অর্থনৈতিক ও ব্যক্তিগত বিষয়গুলো তদারকি করতো সন্দেহভাজন হ্যাসপিল।

এখন পর্যন্ত পাওয়া বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমের তথ্য থেকে জানা গেছে, ২১ বছর বয়সী হ্যাসপিল নিহত ফাহিমের ৯০ হাজার ডলার চুরি করেছিল। এর বাইরেও ফাহিম তার কাছে আরও অনেক ডলার পেতেন। বাংলাদেশি মুদ্রায় এর পরিমাণ দাঁড়ায় ৮৪ লাখ ৮৩ হাজার ৪৫ টাকা। নিউ ইয়র্ক পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগের প্রধান রডনি হ্যারিসন জানান, ‘চুরি করা অর্থের পাশাপাশি হ্যাসপিল আরও বড় অঙ্কের অর্থ ভুক্তভোগীর কাছ থেকে ধার নিয়েছিল বলে আমরা ধারণা করছি।’

নিউ ইয়র্ক টাইমসের প্রতিবেদন অনুযায়ী, হ্যাসপিল লং আইল্যান্ড হাইস্কুল থেকে গ্রাজুয়েশন করেছেন। তবে ডেইলি নিউজ বলছে, গ্রাজুয়েশন শেষ করতে পারেনি হ্যাসপিল। ফাহিমের সঙ্গে সে কাজ করার সুযোগ পায় একটি প্রতিযোগিতা থেকে।

প্রতিবেদনে গোয়েন্দা সূত্রের বরাতে বলা হয়েছে, হ্যাসপিল হত্যাকান্ডটিকে এমনভাবে সাজাতে চেয়েছিল, যাতে মনে হয় এটি কোনও পেশাদার খুনির কাজ এবং এর পেছনে আন্তর্জাতিক যোগসূত্র রয়েছে। তবে তার বেশ কিছু ভুলের কারণে পুলিশ তাকে শনাক্ত করতে সক্ষম হয়েছে। গোয়েন্দাদের ধারণা, ১৬ বছর বয়স থেকে ফাহিমের সঙ্গে কাজ শুরু করে হ্যাসপিল। ধীরে ধীরে সে ফাহিমের কিছু আর্থিক ও ব্যক্তিগত বিষয় দেখাশোনা শুরু করে। ব্যক্তিগত বিষয়ের মধ্যে ফাহিমের কুকুরের দেখাশোনাও অন্তর্ভুক্ত ছিল।

একজন কর্মকর্তা জানিয়েছেন, ফাহিম তাকে যথেষ্ট মজুরি দিতেন। এর ফলে হ্যাসপিল তার পরিবারের অনেকের ঋণ শোধ করতে পেরেছে। কিন্তু তারপরও নৃংশস কায়দায় নিজের বসকে হত্যা করে সে। খুনের পর ফাহিম সালেহর কার্ড দিয়ে কেনাকাটাও করে খুনি টাইরিস হ্যাসপিল। নৃশংস এ হত্যাকান্ডের রহস্য উদঘাটনে পুলিশ যখন মরিয়া তখন গার্লফ্রেন্ডকে নিয়ে সময় কাটাচ্ছিল সে। প্রস্তুতি নিচ্ছিল জন্মদিনের পার্টি উদযাপনের। এজন্য খুনের দুই দিনের মাথায় বান্ধবীর ২২তম জন্মদিন উদযাপনের জন্য ২২ লেখা দুটি বেলুন কিনে সে।

নিরাপত্তা বাহিনীর একজন কর্মকর্তা নিউইয়র্ক পোস্টের কাছে এই খুনিকে ‘আমেরিকার নতুন সাইকো’ হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন। ম্যানহাটনের অ্যাসিসট্যান্ট ডিস্ট্রিক্ট অ্যাটর্নি লিন্ডা ফোর্ড বলেন, ‘এ মামলার ক্ষেত্রে বিস্তর প্রমাণ রয়েছে। অপরাধ সঙ্ঘটনের আগে ও পরে তাকে (হ্যাসপিল) নজরদারি ক্যামেরায় দেখা গেছে। ভিডিও টেপ দেখে অন্তত দুই ব্যক্তি তাকে শনাক্ত করতে পেরেছে।’ সূত্র : সিএনএন।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন