শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৭ বৈশাখ ১৪৩১, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

শান্তি ও সমৃদ্ধির পথ ইসলাম

মুসলমানের দিন-রাত কেমন হবে

উবায়দুর রহমান খান নদভী | প্রকাশের সময় : ২৩ জুলাই, ২০২০, ১২:০১ এএম

হাকীমুল উম্মত আশরাফ আলী থানভী রহ. ইসলামী জীবন পদ্ধতি হিসেবে ৪০টি নিয়ম বর্ণনা করে যান। যেগুলো আজও সমান আবেদন রাখে।
১. প্রয়োজনীয় ধর্মীয় জ্ঞান অর্জন করবে। কিতাবাদি অধ্যয়ন করে অথবা উলামায়ে কেরামের নিকট জিজ্ঞাসা করে। হক্কানী উলামায়ে কেরাম রচিত ধর্মীয় পুস্তক ও লেখা পাঠ করে এবং সত্যনিষ্ঠ উলামা ও হক্কানী পীর মাশায়েখের সাথে সম্পর্ক রেখে এটি করতে হবে। ২. সকল ধরনের গোনাহ থেকে বিরত থাকবে। ৩. কোনো গোনাহ হয়ে গেলে সাথে সাথে তাওবা করে নিবে।

২. অন্যের হক নষ্ট করবে না। কাউকে হাতে, কথায় বা আচরণে কষ্ট দিবে না। কারো দোষ চর্চা করবে না। ৫. ধন-সম্পদের মহব্বত এবং জাগতিক মোহ থেকে মুক্ত থাকবে। পানাহার, বিলাসিতা ও পোশাক পরিচ্ছেদে আভিজাত্যের ফিকিরে থাকবে না। ৬. কেউ যদি দোষ শুধরিয়ে দেয় তাহলে নিঃসঙ্কোচে তা মেনে নিবে এবং নিজেকে সংশোধন করবে।

৭. একান্ত প্রয়োজন ছাড়া সফরে যাবে না। সফরে অপ্রয়োজনীয় অনেক কথা ও কাজ হয়ে যায়। অনেক নেক কাজ ছুটে যায়। জিকির-আযকার ও অজিফা বাদ পড়ে যায়। সময়মতো কোনো কাজ হয় না। ৮. বেশি হাসবে না। বেশি কথা বলবে না। বিশেষ করে গায়রে মাহরামের সাথে অপ্রয়োজনীয় কথা বলবে না। সতর্কতা অবলম্বন করে দূরে থাকবে। ৯. কারো সাথে ঝগড়া ফাসাদ করবে না।

১০. সর্বাবস্থায় শরীয়তের পাবন্দ হবে। ১১. ইবাদতে অবহেলা করবে না। ১২. সম্ভব হলে নির্জন একাকী থাকার চেষ্টা করবে। ১৩. কারো সাথে দেখা সাক্ষাতের প্রয়োজন হলে বিনয় ও নম্রতার আচরণ করবে এবং নিজের বড়ত্ব প্রকাশ করবে না। ১৪. রাজা বাদশাহ, বিত্তশালী ও ক্ষমতাধর লোকদের সাথে চলাফেরা ও মেলামেশা কম করবে।
১৫. বদদ্বীন লোকদের সাথে চলাফেরা অনেক কম করবে। ১৬. অন্যের দোষ তালাশ করবে না। অন্যের সম্পর্কে খারাপ ধারণা করবে না। নিজের দোষ তালাশ করে তা সংশোধনে যতœবান ও আন্তরিক থাকবে। ১৭. সময়মত গুরুত্বসহ সুন্দরভাবে নামাজ আদায় করার চেষ্টা করবে। ১৮. অন্তরে অথবা মুখে সর্বদা আল্লাহকে স্মরণ করবে। একটি মুহ‚র্তও গাফলতির মধ্যে কাটাবে না।

১৯. আল্লাহর যিকির করতে যদি ভালো লাগে, অন্তর খুশি হয় তাহলে শুকরিয়া আদায় করবে। ২০. নরম ভাষায় কথা বলবে। ২১. সব কাজের জন্য সময় নির্ধারণ করবে এবং সে সময়েই সে কাজ সম্পাদন করবে। ২২. কখনো দুঃখ-কষ্ট-পেরেশানী আসলে মনে করবে তা আল্লাহর পক্ষ থেকে এসেছে। অস্থির হবে না। ধারণা করবে যে এর পেছনে কোনো কল্যাণ রয়েছে। বিনিময় তো আছেই।

২৩. দুনিয়ার হিসাব-নিকাশে সারাক্ষণ লেগে থাকবে না। বরং আল্লাহর কথা ধ্যান খেয়ালে রাখার চেষ্টা করবে।
২৪. যথাসম্ভব অন্যের উপকার করবে। দুনিয়ার ক্ষেত্রে হোক বা আখেরাতের ক্ষেত্রে হোক। ২৫. এত কম পরিমাণে খাবে না যে, শরীর দুর্বল হয়ে যায়। বা অসুস্থ হয়ে যাও। আবার এত বেশি পরিমাণেও খাবে না যে, ইবাদতে অলসতা চলে আসে। ২৬. আল্লাহ্ তাআলা ব্যতিত কারো থেকে কিছু পাওয়ার আশা করবে না। অমুক জায়গা থেকে আমার এই ফায়দা অর্জিত হবে এমন খেয়াল করবে না।

২৭. আল্লাহকে পাওয়ার জন্য অস্থির হয়ে যাও। ২৮. নেয়ামত কম হোক বা বেশি এতেই বেশি বেশি আল্লাহর শুকর আদায় করবে। অসচ্ছলতা ও দরিদ্রতার শিকার হবে না। ২৯. নিজ অধীনস্ত লোকদের দোষ-ভুলত্রæটি অন্যায় ক্ষমা করে দেয়ার মানসিকতা পোষণ করবে। ৩০. কারো দোষ জেনে ফেললে তা গোপন করবে। তবে কেউ যদি অন্যের ক্ষতি করতে চায় আর তুমি তা জানতে পারো, তাহলে তাকে জানিয়ে দিবে।

৩১. মেহমান, মুসাফির, গরিব-দুঃখী, উলামায়ে কেরাম এবং দরবেশদের খেদমত করবে। ৩২. সৎ লোকের সংস্পর্শে যাবে। ৩৩. সর্বদা আল্লাহকে ভয় করবে। ৩৪. মৃত্যুর কথা স্মরণে রাখবে। ৩৫. যে কোনো সময় বসে নিজের দৈনিক কাজকর্মের চিন্তা করবে। ভালো কিছু হয়ে থাকলে তার জন্য শুকর আর মন্দের জন্য তওবা করবে। ৩৬. কখনো মিথ্যা কথা বলবে না।

৩৭. শরীয়তবিরোধী মজলিসে যাবে না। ৩৮. লজ্জা-শরম এবং ভদ্রতা বজায় রেখে চলবে। ৩৯. নিজের ভালো কাজের উপর গর্ব করবে না। ৪০. আল্লাহ্ তা’আলা নিকট দুআ করবে যেন, তিনি সঠিক পথে অবিচল রাখেন।
উল্লেখিত বিষয়গুলোর তালিকা মাঝে মাঝেই মনযোগ দিয়ে ভালো করে পড়লে নেক আমলের প্রতি আগ্রহ তৈরি হবে। আল্লাহ তা’আলা আমাদেরকে আমল করার তাওফীক দান করেন।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (6)
কাজী হাফিজ ২৩ জুলাই, ২০২০, ১:৫৬ এএম says : 0
ইসলামী শরীয়ত হচ্ছে একটি পরিপূর্ণ জীবন পদ্ধতি যা সকল দিক থেকে সার্বিকভাবে মুসলমানের ব্যক্তিগত জীবনকে গঠন করার ব্যাপারে অত্যন্ত গুরুত্বারোপ করেছে এসব দিকের মধ্যে গুনাবলি শিষ্টাচার ও চরিত্রের দিকটি অন্যতম। ইসলাম এদিকে অত্যন্ত গুরুত্বারোপ করেছে।
Total Reply(0)
কে এম শাকীর ২৩ জুলাই, ২০২০, ১:৫৬ এএম says : 0
ইসলাম এমন একটি পরিপূর্ণ জীবন পদ্ধতি যা সব দিক থেকে সার্বিকভাবে মুসলমানের ব্যক্তিগত জীবনকে গঠন করার ব্যাপারে গুরুত্ব প্রদান করেছে। আর সেজন্যই ইসলাম চরিত্র তথা উত্তম চরিত্রকে ইমানের জন্য প্রয়োজনীয় উপাদান বলে উল্লেখ করেছে।
Total Reply(0)
কামাল ২৩ জুলাই, ২০২০, ১:৫৭ এএম says : 0
একজন মুসলমানের উপর তার আচার-আচরণে আল্লাহর সাথে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর সাথে, অন্য মানুষের সাথে, এমনকি নিজের সাথে কি ধরনের আচরণ করা উচিত ইসলাম তার এক অভিনব চকমপ্রদ চিত্র অংকন করে দিয়েছে।
Total Reply(0)
গাজী ওসমান ২৩ জুলাই, ২০২০, ১:৫৮ এএম says : 0
আল্লাহ তাআলা এবং তাঁর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আমাদের যে সকল ইসলামী চরিত্রের নির্দেশ দিয়েছেন, তার অন্যতম হচ্ছে সত্যবাদিতার চরিত্র। আল্লাহ তাআলা বলেন,“হে ঈমানদারগণ আল্লাহকে ভয় কর এবং তোমরা সত্যবাদীদের সাথী হও।” [ সূরা আত-তাওবাহ : ১১৯]
Total Reply(0)
জাহিদ খান ২৩ জুলাই, ২০২০, ১:৫৮ এএম says : 0
মুসলমানদের যেসব ইসলামী চরিত্র অবলম্বনের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, তার একটি হচ্ছে আমানতসমূহ তার অধিকারীদের কাছে আদায় করে দেওয়া। আল্লাহ বলেন, ‘নিশ্চয়ই আল্লাহ তোমাদের নির্দেশ দিচ্ছেন আমানতসমূহ তার হকদারদের কাছে আদায় করে দিতে।’ সূরা আন নিসা : ৫৮।
Total Reply(0)
নোমান খালভী ২৪ জুলাই, ২০২০, ৮:২২ পিএম says : 0
আল্লাহ তাআলা মানুষ কে সবচেয়ে সুন্দর করে সৃষ্টি করেছেন। মানুষের মধ্যে যারা মুসলিম তারা সফল ।আবার তাদের মধ্যে যারা তাকওয়াবান তারা আল্লাহর কাছে সবচেয়ে সম্মানিত।
Total Reply(0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন