সামাজিক-ব্যবহারিক জীবনে মানুষকে নানা পর্যায় বা স্তর অতিক্রম করতে হয় এবং জীবন ও জীবিকার তাগিদে বিভিন্ন উপায়-পন্থা অবলম্বন করতে হয়। তার মধ্যে সর্বোত্তম হচ্ছে সৎ উপায়ে ব্যবসা-বাণিজ্য করা এবং সততা ও সাধুতার সাথে তা পরিচালনা করা। সৎ ব্যবসার ওপর হাদীসে যেমন বিশেষ গুরুত্বারোপ করা হয়েছে, তেমনি অসাধু ব্যবসা, ভেজাল ও মওজুদদারী ইত্যাদি গর্হিত পন্থাগুলোরও কঠোর নিন্দা করা হয়েছে। আল্লাহর গজবে যারা সর্বদা নিপতিত থাকবে, রসূলুল্লাহ (সা.) তাদের কথা স্পষ্ট করে দিয়েছেন, তারা হচ্ছে অসাধু ব্যবসায়ী। দুর্যোগকালে এদের নানা প্রকারের জালিয়াতি এবং অবৈধ উপায়-পন্থা অবলম্বন বেড়ে যায়। অবৈধ মওজুদদারী, নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যের মূল্য বৃদ্ধি, ভেজালের ছড়াছড়ি, ত্রাণসামগ্রী আত্মসাৎ, চোরাচালান, কালোবাজারী ইত্যাদি অসংখ্য প্রকারের জালিয়াতি লক্ষ্য করা যায়। বিশ^ব্যাপী করোনা মহামারি খোদায়ী পরীক্ষা যারা এ মহাদুর্যোগকালেও অসাধু ব্যবসা হতে বিরত হয় না, রসূলুল্লাহ (সা.)-এর সতর্কবাণী তাদের সর্বদা স্মরণে থাকা উচিত। বিশেষত: এ বৈশি^ক করোনা মহামারিতে এসব পাপাচার ত্যাগ না করলে আরো খোদায়ী গজব হয়তো অপেক্ষা করছে।
আল্লাহতাআলা কখন কিভাবে তাঁর বান্দাদের পরীক্ষা করেন অর্থাৎ বিপদাপদের সম্মুখীন করেন, কেবল তিনিই তা জানেন।
তবে আল্লাহ এবং তাঁর রসূল (সা.) বারে বারে মানুষকে সতর্ক করে দিয়েছেন, স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন যে, আল্লাহর আদেশ-নিষেধগুলো অমান্য করলে, পাপাচারে লিপ্ত হলে পরোকাল তো পরের কথা, এ দুনিয়াতেও তিনি শাস্তি দিতে পারেন এবং শাস্তি দিয়ে থাকেন, যার অসংখ্য উদাহরণ কোরআনে বিশদভাবে বর্ণিত হয়েছে। সাথে সাথে এই সুসংবাদও রয়েছে, আল্লাহর পরীক্ষাগুলো ধৈর্য ধারণ করে যারা আল্লাহর দরবারে তওবা-ইসতেগফার করবে, তার কাছে ক্ষমা প্রার্থণা করবে, পাপাচারে আর লিপ্ত হবে না বলে অঙ্গীকার করলে তাদের জন্য পুরস্কারও রয়েছে।
তাছাড়া, খোদায়ী পরীক্ষা, দুর্যোগ, দুর্বিপাকের সময় যেসব ধনী সক্ষম লোকেরা সমাজের দুঃখী, দরিদ্র ও এতিম মিসকিনদের সাহায্যে এগিয়ে আসবে, দুর্গত মানবতার প্রতি সাহায্য-সহযোগিতার হাত প্রসারিত করবে, তাদের জন্যও রয়েছে আল্লাহর নিকট পুরস্কার ও প্রতিদান। হাদীসের আলোকে বিষয়টি তুলে ধরা হলো।
রসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, যে ব্যীক্ত খাদ্যদ্রব্য চড়া দামের আশায় চল্লিশ দিন পর্যন্ত বিক্রয় না করে মওজুদ রাখে, আল্লাহর নির্ধারিত স্বাভাবিক নিয়ম হতে সে মুখ ফিরিয়ে নিলো এবং আল্লাহও তার ওপর থেকে নিজের হেফাজতের দায়িত্ব প্রত্যাহার করে নিবেন।
রসূলুল্লাহ (সা.) ওজনকারীদের সম্বোধন করে বলেছেন, মাপ এবং ওজনের ব্যাপারে তোমরা হচ্ছ জনগণের অভিভাবক। প্রতিটি কাজের বিশ^াস ও পবিত্রতা নষ্ট করায় তোমাদের পূর্ববর্তী জাতিসমূহ ধ্বংস হয়ে গিয়েছে। তিনি আরও বলেছেন, খাদ্যদ্রব্যের সৎ ব্যবসায়ীগণ আল্লাহ কর্তৃক জীবিকাপ্রাপ্ত হয়। কিন্তু খাদ্যদ্রব্যের মওজুদকারীগণ আল্লাহ কর্তৃক অভিশপ্ত হয়।
রসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, যে ব্যক্তি বিক্রয়যোগ্য দ্রব্যের দোষ থাকলে তা প্রকাশ না করে বিক্রয় করে, সে সর্বদা আল্লাহর গজবে নিপতিত থাকে অথবা সর্বদা ফেরেশতাগণ তাকে অভিশাপ দিতে থাকেন। ব্যবসা বাণিজ্যের ক্ষেত্রে অসাধু ব্যবসায়ীদের ব্যাপারে কঠোর সতর্কবাণী উচ্চারণ করেছে ইসলাম, যা বর্ণিত কয়েকটি হাদীস হতে স্পষ্ট।
সুতরাং, সবধরনের অসাধু ব্যবসার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করার প্রয়োজন অস্বীকার করা যায় না। বিশেষত: এ বৈশি^ক করোনায় উদ্ভূত পরিস্থিতিতে সুযোগ সন্ধানী মোনাফেক, অসাধু ব্যবসায়ীদের সম্পর্কে অধিক সতর্ক থাকা আবশ্যক।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন