শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৬ বৈশাখ ১৪৩১, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

শান্তি ও সমৃদ্ধির পথ ইসলাম

চল্লিশ দিনের বেশি খাদ্য মজুদ রাখা হারাম

খালেদ সাইফুল্লাহ সিদ্দিকী | প্রকাশের সময় : ২৪ জুলাই, ২০২০, ১২:০১ এএম

সামাজিক-ব্যবহারিক জীবনে মানুষকে নানা পর্যায় বা স্তর অতিক্রম করতে হয় এবং জীবন ও জীবিকার তাগিদে বিভিন্ন উপায়-পন্থা অবলম্বন করতে হয়। তার মধ্যে সর্বোত্তম হচ্ছে সৎ উপায়ে ব্যবসা-বাণিজ্য করা এবং সততা ও সাধুতার সাথে তা পরিচালনা করা। সৎ ব্যবসার ওপর হাদীসে যেমন বিশেষ গুরুত্বারোপ করা হয়েছে, তেমনি অসাধু ব্যবসা, ভেজাল ও মওজুদদারী ইত্যাদি গর্হিত পন্থাগুলোরও কঠোর নিন্দা করা হয়েছে। আল্লাহর গজবে যারা সর্বদা নিপতিত থাকবে, রসূলুল্লাহ (সা.) তাদের কথা স্পষ্ট করে দিয়েছেন, তারা হচ্ছে অসাধু ব্যবসায়ী। দুর্যোগকালে এদের নানা প্রকারের জালিয়াতি এবং অবৈধ উপায়-পন্থা অবলম্বন বেড়ে যায়। অবৈধ মওজুদদারী, নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যের মূল্য বৃদ্ধি, ভেজালের ছড়াছড়ি, ত্রাণসামগ্রী আত্মসাৎ, চোরাচালান, কালোবাজারী ইত্যাদি অসংখ্য প্রকারের জালিয়াতি লক্ষ্য করা যায়। বিশ^ব্যাপী করোনা মহামারি খোদায়ী পরীক্ষা যারা এ মহাদুর্যোগকালেও অসাধু ব্যবসা হতে বিরত হয় না, রসূলুল্লাহ (সা.)-এর সতর্কবাণী তাদের সর্বদা স্মরণে থাকা উচিত। বিশেষত: এ বৈশি^ক করোনা মহামারিতে এসব পাপাচার ত্যাগ না করলে আরো খোদায়ী গজব হয়তো অপেক্ষা করছে।

আল্লাহতাআলা কখন কিভাবে তাঁর বান্দাদের পরীক্ষা করেন অর্থাৎ বিপদাপদের সম্মুখীন করেন, কেবল তিনিই তা জানেন।
তবে আল্লাহ এবং তাঁর রসূল (সা.) বারে বারে মানুষকে সতর্ক করে দিয়েছেন, স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন যে, আল্লাহর আদেশ-নিষেধগুলো অমান্য করলে, পাপাচারে লিপ্ত হলে পরোকাল তো পরের কথা, এ দুনিয়াতেও তিনি শাস্তি দিতে পারেন এবং শাস্তি দিয়ে থাকেন, যার অসংখ্য উদাহরণ কোরআনে বিশদভাবে বর্ণিত হয়েছে। সাথে সাথে এই সুসংবাদও রয়েছে, আল্লাহর পরীক্ষাগুলো ধৈর্য ধারণ করে যারা আল্লাহর দরবারে তওবা-ইসতেগফার করবে, তার কাছে ক্ষমা প্রার্থণা করবে, পাপাচারে আর লিপ্ত হবে না বলে অঙ্গীকার করলে তাদের জন্য পুরস্কারও রয়েছে।

তাছাড়া, খোদায়ী পরীক্ষা, দুর্যোগ, দুর্বিপাকের সময় যেসব ধনী সক্ষম লোকেরা সমাজের দুঃখী, দরিদ্র ও এতিম মিসকিনদের সাহায্যে এগিয়ে আসবে, দুর্গত মানবতার প্রতি সাহায্য-সহযোগিতার হাত প্রসারিত করবে, তাদের জন্যও রয়েছে আল্লাহর নিকট পুরস্কার ও প্রতিদান। হাদীসের আলোকে বিষয়টি তুলে ধরা হলো।

রসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, যে ব্যীক্ত খাদ্যদ্রব্য চড়া দামের আশায় চল্লিশ দিন পর্যন্ত বিক্রয় না করে মওজুদ রাখে, আল্লাহর নির্ধারিত স্বাভাবিক নিয়ম হতে সে মুখ ফিরিয়ে নিলো এবং আল্লাহও তার ওপর থেকে নিজের হেফাজতের দায়িত্ব প্রত্যাহার করে নিবেন।

রসূলুল্লাহ (সা.) ওজনকারীদের সম্বোধন করে বলেছেন, মাপ এবং ওজনের ব্যাপারে তোমরা হচ্ছ জনগণের অভিভাবক। প্রতিটি কাজের বিশ^াস ও পবিত্রতা নষ্ট করায় তোমাদের পূর্ববর্তী জাতিসমূহ ধ্বংস হয়ে গিয়েছে। তিনি আরও বলেছেন, খাদ্যদ্রব্যের সৎ ব্যবসায়ীগণ আল্লাহ কর্তৃক জীবিকাপ্রাপ্ত হয়। কিন্তু খাদ্যদ্রব্যের মওজুদকারীগণ আল্লাহ কর্তৃক অভিশপ্ত হয়।

রসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, যে ব্যক্তি বিক্রয়যোগ্য দ্রব্যের দোষ থাকলে তা প্রকাশ না করে বিক্রয় করে, সে সর্বদা আল্লাহর গজবে নিপতিত থাকে অথবা সর্বদা ফেরেশতাগণ তাকে অভিশাপ দিতে থাকেন। ব্যবসা বাণিজ্যের ক্ষেত্রে অসাধু ব্যবসায়ীদের ব্যাপারে কঠোর সতর্কবাণী উচ্চারণ করেছে ইসলাম, যা বর্ণিত কয়েকটি হাদীস হতে স্পষ্ট।

সুতরাং, সবধরনের অসাধু ব্যবসার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করার প্রয়োজন অস্বীকার করা যায় না। বিশেষত: এ বৈশি^ক করোনায় উদ্ভূত পরিস্থিতিতে সুযোগ সন্ধানী মোনাফেক, অসাধু ব্যবসায়ীদের সম্পর্কে অধিক সতর্ক থাকা আবশ্যক।

 

 

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (11)
ইনসানিয়াত ২৪ জুলাই, ২০২০, ১:০৮ এএম says : 0
এই কলাম সকল ব্যবসায়ীদের পড়া উচিত।
Total Reply(0)
মোঃ তোফায়েল হোসেন ২৪ জুলাই, ২০২০, ১:১০ এএম says : 0
খাদ্যদ্রব্য মজুদ করা অথবা তা বাজার থেকে তুলে নিয়ে দাম বাড়ানো এবং অধিক মুনাফার প্রত্যাশা করাকে ইসলাম অবৈধ করেছে। হানাফি মাজহাব মতে তা মাকরূহে তাহরিমি (হারাম সমতুল্য) হলেও অন্যান্য মাজহাব মতে এটি হারাম। এর ফলে সাধারণ মানুষের ক্রয়ক্ষমতা হ্রাস পায় এবং অনেক মানুষ দুর্গতির মধ্যে পতিত হয়।
Total Reply(0)
জোবায়ের আহমেদ ২৪ জুলাই, ২০২০, ১:১১ এএম says : 0
রাসুল (সা.) বলেন, 'যে ব্যক্তি মুসলমানদের খাদ্যশস্য মজুদ রাখে, আল্লাহপাক তার ওপর দরিদ্রতা চাপিয়ে দেন।' (আবু দাউদ : ৫৫)
Total Reply(0)
চাদের আলো ২৪ জুলাই, ২০২০, ১:১১ এএম says : 0
ব্যবসায়িক পণ্য বিক্রি না করে কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করে বর্ধিত মুনাফা আদায়ের প্রচেষ্টা একটি সামাজিক অপরাধ।
Total Reply(0)
হোসাইন এনায়েত ২৪ জুলাই, ২০২০, ১:১১ এএম says : 0
তবে গুদামজাত পণ্য যদি মানুষের নিত্যপ্রয়োজনীয় বস্তু না হয় কিংবা মানুষ এর মুখাপেক্ষী না হয় অথবা এসব পণ্য চাহিদার অতিরিক্ত হয় বা গুদামজাতকারী বর্ধিত মুনাফা অর্জনের অভিলাষী না হয়, তাহলে এসব অবস্থায় পণ্য মজুদ রাখা অবৈধ নয়।
Total Reply(0)
হৃদয় আমার বাংলাদেশ ২৪ জুলাই, ২০২০, ১:১২ এএম says : 0
অধিক মুনাফার আশায় খাদ্যদ্রব্য মজুদের মাধ্যমে কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করে মানুষকে কষ্ট দেয়া ইসলামের দৃষ্টিতে সম্পূর্ণ হারাম। এ ধরনের লোকের কোনো ইবাদত কবুল হয় না বলে হাদিসে স্পষ্ট বর্ণনা এসেছে। মজুদকৃত দ্রব্য সরকার নিজের জিম্মায় নিয়ে বিক্রি করে দেয়ার অধিকারও রাখে।
Total Reply(0)
জাহিদ খান ২৪ জুলাই, ২০২০, ১:১২ এএম says : 0
ব্যবসায়িক পণ্য বিক্রি না করে কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করে বর্ধিত মুনাফা আদায়ের প্রচেষ্টা শুধু ইসলাম নিষিদ্ধ করেনি বরং এটি একটি সামাজিক অপরাধ। এসম্পর্কে আরো একটি হাদিসে এসেছে, যে ব্যক্তি খাদ্যশস্য গুদামজাত করে সে অপরাধী। (আল মু’জামুল কাবির : ১০৮৬)।
Total Reply(0)
Islamic law ২৪ জুলাই, ২০২০, ২:০২ এএম says : 0
Original Bangladeshi Muslim and Saudi Muslims are exact same Muslim. All other Muslim our bellow, even all other Arabs. Saudi can marriage with only Bangladeshi original Muslim. Do you know that?
Total Reply(0)
md anwar ali ২৪ জুলাই, ২০২০, ৫:২০ এএম says : 0
ইসলামের গুরুত্বপুর্ন বিষয়গুলো পত্রিকায় তুলে ধরার জন্য লিখক ভাইদের প্রতি সালাম।
Total Reply(0)
Mohammed Kowaj Ali khan ২৪ জুলাই, ২০২০, ১০:৫২ এএম says : 0
একটা ভূল এবং অন্যায় বার বার করিতেছেন। খোদায়ী না বলে বলিবেন আল্লাহ তা'আলার পরীক্ষা। আপনারা নানান ঢংগে না বুজিয়া কথা বলিবেন না। ইনশাআল্লাহ।
Total Reply(1)
Mohammad Sirajullah, M.D. ২৫ জুলাই, ২০২০, ৪:১৮ এএম says : 0
Thank you Sir for your comment. Khoda or Khuda is a word used by Fereesused by Zorastrians of Iran. Muslims should use Allah which is Arabic andis Arabic and used by the Prophet Muhammad (SA) and is tthe Language of Quran. The same is for the WordMusalman. The Word should be Muslim and Muslim.
আবু সাইদ আহমেদ ১৭ ফেব্রুয়ারি, ২০২২, ৭:৪৮ পিএম says : 0
আসসালামু আলাইকুম, পারিবারিক ব্যবহারের জন্য কত দিনের খাদ্য মজুদ করা জায়েজ?
Total Reply(0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন