মঙ্গলবার ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ১১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৩ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

শান্তি ও সমৃদ্ধির পথ ইসলাম

সামর্থ্যবানদের কোরবানিই করতে হবে

মাওলানা শাব্বীর আহমাদ মোমতাজী | প্রকাশের সময় : ২৭ জুলাই, ২০২০, ১২:০১ এএম

আরবি বছরের সর্বশেষ মাস জিলহজ। এ মাসে রয়েছে ইসলামের মূল ভিত্তিসমূহের একটি হজ। এ মাসে বিশ^জুড়ে পালিত হয় ঈদুল আযহা বা ইয়াওমুন নাহর। বাংলাদেশে যা কোরবানির ঈদ নামে পরিচিত। এই দিনের প্রধান আমল হলো কোরবানি। কোরবানি ইসলামী নিদর্শনাবলির মধ্যে অন্যতম। কোরআন ও হাদীসে কোরবানি যে পদ্ধতির কথা বলা হয়েছে তা ইবরাহীম আ. এর সুন্নাতেও ছিল। এ কারণে কোরবানিকে ইবরাহীম আ. এর সুন্নাতও বলা হয়ে থাকে।

ইসলামে মূলত দু’টি ঈদ। হযরত আনাস রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) যখন হিজরত করে মদীনায় আসলেন তখন মদীনাবাসীদের দুটি উৎসবের দিবস ছিল। রাসূলুল্লাহ (সা.) তাদের জিজ্ঞেস করলেন, এ দুটি দিবস কী? (কী হিসেবে তোমরা এ দু’দিন উৎসব পালন কর?) তারা বলল, জাহেলিয়াত তথা ইসলামপূর্ব যুগে আমরা এ দিন দু’টিতে উৎসব পালন করতাম। তখন রাসূলুল্লাহ (সা.) বললেন, আল্লাহ তোমাদেরকে এ দুটি দিনের পরিবর্তে এর চেয়ে উত্তম দুটি দিন দান করেছেন- ঈদুল আযহা ও ঈদুল ফিতর। (সুনানে আবু দাউদ : ১১৩৪)।

ঈদ আল্লাহর পক্ষ হতে এসেছে। এ ব্যাপারে হাদীস শরীফে বলা হয়েছে, হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আমর রা. হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন- আমাকে ‘ইয়াওমুল আযহা’র আদেশ করা হয়েছে (অর্থাৎ, এ দিবসে কুরবানি করার আদেশ করা হয়েছে); এ দিবসকে আল্লাহ তাআলা এই উম্মতের জন্য ঈদ বানিয়েছেন। (মুসনাদে আহমাদ : ৬৫৭৫)।

করোনা মহামারির কারণে মানুষের অবস্থা শোচনীয়। এমতাবস্থায় কিছু কিছু মানুষ বলতে চাচ্ছে যে, শুধু শুধু কোরবানি না করে এ টাকা তাদের মধ্যে দান করে দিতে। তাদের কথা শুনতে ভালো শোনা গেলেও তাদের মতলব খারাপ। কেননা, কোরবানি হচ্ছে শা’আইরে ইসলামের অন্তর্ভূক্ত। মনে রাখতে হবে, সামর্থবানরা এই করোনার সময়ও কোরবানি বাদ দিতে পারবে না।

যদি কেউ বলে কোরবানি না করে সে টাকা দান করে দেবে, তা হলে সে ভুল চিন্তা করছে। যেমনিভাবে যদি কেউ নামাজ বাদ দিয়ে রোজা রাখে, তাহলে নামাজের ফরজ আদায় হবে না, তেমনিভাবে কোরবানি না দিয়ে দান করলে কোরবানির ওয়াজিব আদায় হবে না। অফিস, হাট-বাজার সব চলছে, এখন কোরবানির বেলায় কেন আলাদা কথা হবে।

সদকা করা উত্তম কাজ। কিন্তু প্রায় সব ওলামায়ে কেরামের ঐক্যমতে এটি সাব্যস্ত হয়েছে যে, কোরবানির পশু জবাই করাটাই উত্তম। কারণ আল্লাহর নবী (সা.) পশু জবাই করেছেন। যদি এমনটি হতো নবী (সা.) জবাই না করতেন বা সদকা করে দিতেন, তাহলে প্রমাণ পাওয়া যেত যে সদকা করাটা উত্তম।

প্রথম কথা হচ্ছে, নবী (সা.) জবাই করেছেন। শুধু জবাই-ই করেছেন তা কিন্তু না। নবী (সা.) কোরবানির পশু তাঁর সাহাবিদের মধ্যে বণ্টন করে দিয়েছেন এবং সাহাবিদের রাসূল (সা.) বলেছেন যে, তোমরা জবাই করো। নবী (সা.) কিন্তু বলেননি তোমাদের মধ্যে সদকা করে দিয়েছি, তোমরা নিয়ে যাও। বরং জবাই করতে নির্দেশ দিয়েছেন।

এই জন্য হাসান বসরি (র.) বর্ণনা করে বলেন, ‘আল্লাহর রাস্তায় সন্তুষ্টির জন্য কোরবানি হিসেবে একটি ছাগল জবাই করা আমার কাছে ১০০ দিরহাম আল্লাহর রাস্তায় সদকা করার চাইতে উত্তম।’ তখনকার সময়ে ১০ দিরহাম বা তার কাছাকাছি দিরহামে একটি ছাগল পাওয়া যেত।

এর কারণ হিসেবে তিনি বলেন, ‘আল্লাহর রাস্তায় এই রক্ত প্রবাহিত করার বিষয়টিকে আল্লাহ সুবহানাহু তায়ালা ইসলামের একটি মৌলিক নিদর্শন হিসেবে উল্লেখ করেছেন।’ কোরআনে কারিমের সুরা হজের মধ্যে আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘এই কোরবানি মুসলিম উম্মার জন্য একটি নিদর্শন হিসেবে আমি করে দিয়েছি, এই নিদর্শন তোমরা বাস্তবায়ন করবে।’

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (7)
ParVez Omar ২৭ জুলাই, ২০২০, ১:২৩ এএম says : 0
ইসলামে যত বিধান আছে, তার অন্যতম হলো কোরবানি। কোরবানি করা অত্যন্ত তাৎপর্যমণ্ডিত ও ফজিলতপূর্ণ ইবাদত। এতে আছে আত্মত্যাগের মহিমা ও আর্তের সেবার গৌরব।
Total Reply(0)
মরিয়ম বিবি ২৭ জুলাই, ২০২০, ১:২৩ এএম says : 0
কোরবানি ইসলামের একটি গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত এবং দিনের একটি নিদর্শন। কিন্তু বিশ্বব্যাপী করোনা মহামারির এ কঠিন সময়ে কীভাবে কোরবানি আদায় করা যেতে পারে?
Total Reply(0)
পরাজিত মিজান ২৭ জুলাই, ২০২০, ১:২৪ এএম says : 0
কোরবানি শুধু পশু জবাইয়ের মাধ্যমেই সম্পন্ন হয়। কোরবানির কোনো বিকল্প নেই। টাকাপয়সা প্রদান, অর্থসম্পদ দান ও সদকা খয়রাতের মাধ্যমে কোরবানি আদায় হবে না।
Total Reply(0)
হাসান মুনাব্বেহ সাআদ ২৭ জুলাই, ২০২০, ১:২৪ এএম says : 0
যদি কেউ কোরবানির পশু কেনা, জবাই করা ও গোশত বিতরণ করা ইত্যাদি ঝামেলা এড়াতে চান, তবে বিশ্বস্ত কোনো ব্যক্তি-আত্মীয়স্বজন বা গ্রামের লোকজন অথবা নির্ভরযোগ্য কোনো ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান বা সেবা সংস্থাকে তাঁর কোরবানি সম্পাদনের দায়িত্ব দিতে পারেন।
Total Reply(0)
জোহেব শাহরিয়ার ২৭ জুলাই, ২০২০, ১:২৪ এএম says : 0
কোরবানির পাশাপাশি অভাবী গরিব, দুঃখী, দুর্দশাগ্রস্ত মানুষকে ঈদ আনন্দে শামিল করার জন্য বেশি বেশি আর্থিক দান–অনুদান, জামাকাপড় প্রদান এবং নিত্যপ্রয়োজনীয় ও ঈদসামগ্রী কিনে দেওয়ার মাধ্যমে আরও বেশি পুণ্য অর্জন করা যায়।
Total Reply(0)
Ahmed Bipul ২৭ জুলাই, ২০২০, ১:২৮ এএম says : 0
কত বড় ভিআইপি কন?
Total Reply(0)
সাইদুর ২৭ জুলাই, ২০২০, ১২:০৬ পিএম says : 0
আরেকটু আলোচনা হলে ভাল লাগত।
Total Reply(0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন