আমরা আজ যে সমাজ ব্যবস্থায় অভ্যস্ত তাতে আমাদের অনুভ‚তিগুলোও দিন দিন যান্ত্রিক হয়ে যাচ্ছে। মানুষকে অবিশ্বাস আর সন্দেহের দৃষ্টিতে দেখাই যেন আজকালকার যুগের সবার চিন্তাধারার একটি অংশ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
ইট পাথরের দালানে থাকা আমরাও যেন অনুভ‚তিহীন কলের পুতুল। পাশের দরজার প্রতিবেশীর বিপদে-আপদে, তাদের সুখ-দুঃখের সঙ্গী হওয়া তো আজকাল দূরের কথা, কেউ কাউকে চিনিই না অনেক সময়। এরপরও কি আমরা দাবি করতে পারি আমরা সত্যিকারের মুসলমান? আসুন দেখি প্রতিবেশীদের অধিকার সম্পর্কে আল্লাহ তা’য়ালা ও তঁরা রাসুল আমাদেরকে কি বলেছেন।
আল্লাহ তাআলা বলেন, তোমরা আল্লাহর উপাসনা করো ও কোনো কিছুকে তাঁর অংশী করো না, এবং পিতা-মাতা, আত্মীয়-স্বজন, পিতৃহীন, অভাবগ্রস্ত, আত্মীয় ও অনাত্মীয় প্রতিবেশী, সঙ্গী-সাথী, পথচারী এবং তোমাদের অধিকারভুক্ত দাস-দাসীদের প্রতি সদ্ব্যবহার করো। ( সূরা নিসা: ৩৬)
উম্মাহাতুল মুমিনীন আয়েশা রা. বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা:) বলেছেন, ‘জিব্রাইল আমাকে সব সময় প্রতিবেশী সম্পর্কে অসিয়ত করে থাকেন। এমনকি আমার মনে হলো যে, তিনি প্রতিবেশীকে ওয়ারেস বানিয়ে দেবেন।’ (বুখারী : ৬০১৪)। আবু যার রা. বলেন, একদা রাসূলুল্লাহ (সা:) বললেন, ‘হে আবু যার, যখন তুমি ঝোল (ওয়ালা তরকারি) রান্না করবে, তখন তাতে পানির পরিমাণ বেশি করো। অতঃপর তোমার প্রতিবেশীর বাড়িতে রীতিমতো পৌঁছে দাও। (মুসলিম : ২৬২৫)।
হযরত আবু হুরাইরাহ রা. বলেন, নবী (সা:) বলেছেন, ‘আল্লাহর কসম, সে ব্যক্তি মু’মিন নয়। আল্লাহর কসম, সে ব্যক্তি মু’মিন নয়। আল্লাহর কসম, সে ব্যক্তি মু’মিন নয়। জিজ্ঞেস করা হলো, ‘কোন ব্যক্তি? হে আল্লাহর রসূল, তিনি বললেন, যে লোকের প্রতিবেশী তার অনিষ্ট থেকে নিরাপদ থাকে না।’ (বুখারী : ৬০১৬)।
মুসলিমের এক বর্ণনায় আছে, ওই ব্যক্তি জান্নাতে প্রবেশ করবে না, যার অনিষ্ট থেকে তার প্রতিবেশী নিরাপদে থাকে না। হযরত আবু হুরাইরাহ রা. থেকেই বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (সা:) বলেছেন, হে মুসলিম মহিলাগণ! কোনো প্রতিবেশিনী যেন তার অপর প্রতিবেশিনীর উপঢৌকনকে তুচ্ছ মনে না করে; যদিও তা ছাগলের পায়ের ক্ষুর হোক না কেন। (বুখারী : ২৫৬৬)।
হযরত আবু হুরায়রা রা. থেকে আরও বর্ণিত হয়েছে, রাসূলুল্লাহ (সা:) বলেছেন, ‘যে ব্যাক্তি আল্লাহ ও শেষ দিনের প্রতি বিশ্বাস রাখে, সে যেন তার মেহেমানের খাতির করে। এবং যে ব্যাক্তি আল্লাহ ও পরকালের প্রতি বিশ্বাস রাখে, সে যেন ভালো কথা বলে, নচেৎ চুপ থাকে।’ (বুখারী : ৬০১৮)।
হযরত আয়েশা রা. কর্তৃক বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি বললাম, ‘হে আল্লাহর রাসূল, আমার দু’জন প্রতিবেশী আছে। (যদি দু’জনকেই দেয়া সম্ভব না হয় তাহলে) আমি তাঁদের মধ্যে কার নিকট হাদিয়া (উপঢৌকন) পাঠাব?’ তিনি বললেন, যার দরজা তোমার বেশি নিকটবর্তী, তার কাছে (পাঠাও)। (বুখারী : ৬০২০,)।
উপরোক্ত কোরআন ও হাদীসের বর্ণনায় বোঝা যায় যে, প্রতিবেশীর সাথে উত্তম আচরণ করা, তাদের খোঁজ খবর রাখা উত্তম মুসলমানের বৈশিষ্ট্য। আমরা প্রতিবেশীর হক পরিপূর্ণভাবে আদায় করতে সচেষ্ট থাকব।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন