দুনিয়াময় উদ্ভূত সকল সমস্যার সমাধান বিশ^ধর্ম ইসলামে রয়েছে এবং তাতে উন্নয়ন-কল্যাণের সকল উপায় তদবিরও রয়েছে। ইসলাম সমগ্র মানবজাতির জন্য পূর্ণাঙ্গ ও পরিপূর্ণ জীবন-বিধান।
আর পবিত্র মহাগ্রন্থ আল-কোরআন হচ্ছে এর মূল উৎস এবং হযরত রসুলুল্লাহ (সা.) এর হাদিস হচ্ছে তার ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণ। তাই রসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘আমি তোমাদের মধ্যে দুইটি জিনিস রেখে গেলাম, যতদিন তোমরা এ দুটি আঁকড়ে ধরে থাকবে, ততদিন তোমরা পথভ্রষ্ট হবে নাÑ এর একটি হচ্ছে আল্লাহর কিতাব (কোরআন) এবং অপরটি হচ্ছে আমার সুন্নাত বা হাদিস ।
সুতরাং, কেবল মুসলমান নয় বিশ^ মানবের ওপর কোনো আসমানি, জমিনি, হাওয়ায়ি তথা প্রাকৃতিক কোনো সমস্যা-সঙ্কট দেখা দিলে কিংবা দুর্যোগ-বিপর্যয় এলে ধৈর্য্য সহকারে তা মোকাবিলা করার শক্তিও মানুষকে দান করা হয়েছে এবং এর উপায় উদ্ভাবনের ক্ষমতাও দেয়া হয়েছে, এটি মুসলমানদের বিশ^াস। তবে এর অর্থ এই নয় যে, প্রাকৃতিক সবকিছুর নিয়ন্ত্রণ ক্ষমতা মানুষকে দেয়া হয়েছে। বহু কিছুতেই মানুষ অসহায়-অক্ষম। বালা-মুসিবত মানুষের কুকর্ম-অপকর্মের পরীক্ষা বা শাস্তি হিসেবে আল্লাহর পক্ষ হতে আপতিত হয়ে থাকে।
বর্ণিত হাদিসের মর্মানুযায়ী, বিনা দ্বিধায় বলা যায় যে, করোনা প্রতিরোধে আরোপিত আন্তর্জাতিক বিধি-বিধান মেনে চলতে গিয়ে আল্লাহর ফরজ ইবাদত ও রাসুল (সা.) এর সুন্নাত মুসলমানগণ যথাযথভাবে পালন করতে পারছেন না, এসত্য অস্বীকার করার উপায় নেই।
মুসলমানগণ মনে-প্রাণে বিশ^াস করেন, আল্লাহ যেমন মানুষের পরীক্ষার জন্য বহুবিধ রোগ সৃষ্টি করেছেন, তেমনি মৃত্যু ব্যতীত প্রতিটি রোগেরও প্রতিষেধক সৃষ্টি করেছেন। খোদ রসুলুল্লাহও (সা.) কারোর অসুখ হলে চিকিৎসা করার উপদেশ দিয়েছেন। তাই ইসলামে চিকিৎসাবিজ্ঞান একটি অতি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। আল্লাহ পবিত্র কোরআনে বলেছেন, ‘তোমরা আমার কাছে প্রার্থনা করো, আমি তোমাদের প্রার্থনা কবুল করব।’ দোয়ার বেশুমার তাৎপর্যের কথা কোরআন ও হাদিসে বর্ণিত হয়েছে। দোয়া বালা-মুসিবত দূর করে বলে রসুলুল্লাহ (সা.) এর উক্তি রয়েছে। প্রাকৃতিক মহাবিপদে নানারকমের দোয়া মোনাজাত কোরআন ও হাদিসে বর্ণিত হয়েছে এবং ‘গণমোনাজাতের’ও বহু দৃষ্টান্তর য়েছে। খরাকালে বৃষ্টির জন্য গণসমাবেশের মাধ্যমে ‘ইস্তেসকা’ নামাজ পড়ার ব্যাপক প্রচলন সর্বস্তরে স্বীকৃত ও প্রচলিত।
বাস্তবে বারে বারে প্রত্যক্ষ করা গিয়েছে যে, বৃষ্টির জন্য ‘ইস্তেসকা’ নামাজ পড়ার সাথে সাথে বৃষ্টি নেমে আসে। এ নামাজ মাঠে-ময়দানে জনসমাবেশের মাধ্যমে পড়তে হয়, কিন্তু করোনা তো মুসলমানদের ঈদের নামাজকেও ময়দান হতে দূরে সরিয়ে দিয়েছে।
বাংলাদেশ করোনাকবলিত হওয়ার পাশাপাশি বর্তমানে মারাত্মক বন্যা-প্লাবনের তাÐবলীলার শিকার। আবার কোনো কোনো দেশে করোনার সাথে যুক্ত হয়েছে ভ‚মিকম্প, দাবানল এবং পঙ্গপালের আক্রমণ ইত্যাদি। নানা রোগবালাই আল্লাহরই পরীক্ষা, মানুষের পাপের ফল। তাই আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাইতে হবে একা এবং সমবেতভাবে। করোনা, বন্যাকে প্রতিহত করার বৈষয়িক ব্যবস্থাদি অব্যাহত রাখার পাশাপাশি আল্লাহর দরবারে গণমোনাজাতের ব্যবস্থা করাও প্রয়োজন ।
আমাদের দেশে সম্মানিত ইমাম-খতিবগণ প্রতি নামাজ ও জুম্মার জমাতে আল্লাহর দরবারে মোনাজাত করে থাকেন, যেন আল্লাহ সে সকল জমিনি, আসমানি, হাওয়ায়ি, আকস্মিক বিপদাপদ হতে রক্ষা করেন। তবে দোয়া মোনাজাত কবুল হওয়ার সময় ও শর্তাবলি পালিত হয় কি’না তাও ভেবে দেখার বিষয়। হাদিসে রসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘তোমরা দীর্ঘ মোনাজাত করবে, তা কবুল হওয়ার আশা করা যায়।’ হুজুর (সা.) কেন দীর্ঘ মোনাজাতের কথা বলেছেন, তার তাৎপর্য অনুভব করতে হবে। এ সর্ম্পকে রাসুলুল্লাহ (সা.) হতে বর্ণিত দোয়া মোনাজাতগুলোর অনুসরণ করাও উত্তম, তাঁরপ্রতি দরুদ ও সালাম অবশ্যই থাকবে এবং দীর্ঘ মোনাজাতের তাৎপর্য অনুধাবন করতে হবে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন