বুধবার, ১৭ এপ্রিল ২০২৪, ০৪ বৈশাখ ১৪৩১, ০৭ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

শান্তি ও সমৃদ্ধির পথ ইসলাম

প্রাকৃতিক দুর্যোগ মুমিনের জন্য পরীক্ষা

উবায়দুর রহমান খান নদভী | প্রকাশের সময় : ১৯ আগস্ট, ২০২০, ১২:০০ এএম

পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ জীব হিসেবে আল্লাহ মানুষকে সৃষ্টি করেছেন। আনন্দ-বেদনা, সুখ-দুঃখ নিয়েই মানুষের জীবন। আল্লাহ রাব্বুল আলামীন মানুষকে তার প্রতিনিধি হিসেবে পৃথিবীতে প্রেরণ করেছেন। তিনি চান বান্দা পৃথিবীতে তার জয়গান করুক। এ ব্যাপারে আল্লাহ তায়ালা পবিত্র কোরআনে ইরশাদ করেছেন, ‘যখন আপনার প্রভু ফেরেশতাদের বললেন, আমি পৃথিবীতে আমার প্রতিনিধি প্রেরণ করব...।’ (সূরা বাকারাহ : আয়াত ৩০) এ আয়াত থেকে বোঝা যায়, সৃষ্টির সেরা জীব মানুষ পৃথিবীতে আল্লাহর প্রতিনিধি। সেই মানুষকে তিনি কখনো সুখ, কখনো দুঃখ ও নানারকম বিপদাপদ দিয়ে পরীক্ষা করেন। দুঃখ আছে বলেই সুখের মর্ম উপলব্ধি করা যায়। বিপদাপদ আসে বলেই ভালো সময়ের কদর অনুভব করা যায়। পবিত্র কোরআনে আল্লাহ বলেন, ‘নিশ্চয় কষ্টের সাথে রয়েছে স্বস্থি।’ (সূরা ইনশিরাহ : আয়াত ৫)।

ভালো সময়ে মানুষ কতটুকু আনন্দিত হবে সেটা যেমনি ইসলাম বলে দিয়েছে, তেমনিভাবে খারাপ সময়ে পেরেশান, হাহাকার না করে সবর করার শিক্ষাও দিয়েছে। বিপদাপদ আল্লাহর পক্ষ থেকেই আসে। অন্য দৃষ্টিকোণ থেকে দেখলে তা মানুষের হাতের কামাই। একজন মানুষ অন্য মানুষের কষ্টের কারণ হয়ে দাঁড়ায়। কারণ, কিছু মানুষের কৃতকর্মের জন্য সমগ্র মানবজাতি বিপদে আপতিত হয়।

দুনিয়ার জীবনে বিপদাপদের মাধ্যমে মানুষ তার গোনাহ থেকে মুক্তি পায়। যে সমস্ত মানুষ গোনাহ না করেও বিপদে পতিত হয়, তার মান মর্যাদা আল্লাহ বৃদ্ধি করে দেন। তাই বিপদাপদে মুমিনদের হতাশ হওয়া, মন খারাপ করা, ধৈর্যহারা হওয়া উচিত নয় । মানুষ জীবনের প্রতিটি সময় আল্লাহর রহমত পেতে থাকে।

এ ব্যাপারে হাদিস শরীফে রাসূলুল্লাহ সা. ইরশাদ করেন, মুসলিম ব্যক্তির ওপর যেসব যাতনা রোগ ব্যধি উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা দুঃশ্চিন্তা কষ্ট ও পেরেশানি আপতিত হয়। এমন কি যে কাটা তার দেহে বিদ্ধ হয় এ সবের দ্বারা আল্লাহ রাব্বুল আলামিন তার গোনাহসমূহ ক্ষমা করে দেন। (বুখারি)

মানুষের জন্য বিপদাপদ বালা-মুসিবত আল্লাহর পক্ষ থেকে পরীক্ষা। এ সম্পর্কে আল্লাহ রাব্বুল আলামিন ঘোষণা করেছেন, ‘এবং অবশ্যই আমি তোমাদের পরীক্ষা করব কিছু ভয়, ক্ষুধা, সম্পদ, জীবনের ক্ষতি ও ফল-ফসল বিনষ্টের মাধ্যমে। হে নবি! ধৈর্যধারণকারীদের আপনি সুসংবাদ দিন যখন তারা বিপদ পড়ে তখন বলে নিশ্চয় আমরা সবাই আল্লাহর জন্য এবং তার কাছেই ফিরে যাবো।’ (সুরা বাকারা : আয়াত ১৫৫ ও ১৫৬)।

মহামারি, বন্যা, খরা, জলোচ্ছ্বাস, ভূমিকম্প, ঝড়-তুফান, সমুদ্রের নিম্নচাপ, চন্দ্রগহণ ও সূর্যগ্রহণ এসব কিছু আল্লাহর পক্ষ থেকে তার বান্দার জন্য সতর্কতামূলক বার্তা। দ্বিতীয়ত এসব কিছুই আল্লাহ তায়ালার শক্তিমত্তা, প্রজ্ঞা ও ক্ষমতার নিদর্শন।

কখনো কখনো আল্লাহ তার আদেশ-নিষেধ অমান্য করার কারণে মানুষের ওপর দুর্যোগ চাপিয়ে দেন। বিভিন্ন দুর্যোগ, ভয়ভীতি ও বিপদাপদের মাধ্যমে আল্লাহ তার বান্দাদের ঈমানের পরীক্ষা নেন। সূরা বাকারার ১৫৫, ১৫৬, ১৫৭ নং আয়াতে এ ব্যাপারে আলোচনা করা হয়েছে।

সুতরাং মানুষের উচিত বিপদ, মহামারি দুর্যোগের সময় সর্বপ্রথম আল্লাহ তাআলার ওপর পূর্ণ আস্থা ও বিশ্বাস রেখে তাঁর সাহায্য কামনা করা এবং ধৈর্য ও সহনশীলতার পরিচয় দেয়ার পাশাপাশি তার ইবাদাত-বন্দেগি করে দুর্যোগপূর্ণ অবস্থা থেকে মুক্তি লাভের প্রার্থনা করা।

রাসূল সা. বলেছেন, ‘যখন কোথাও ভূমিকম্প, সূর্যগ্রহণ, ঝড়ো-বাতাস কিংবা বন্যা হয়; তখন বান্দার উচিত আল্লাহ তাআলার নিকট তাওবা করা; ক্ষতি থেকে বেঁচে থাকার দোয়া করা; আল্লাহকে স্মরণ করা এবং ক্ষমা প্রার্থণা করা।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (10)
মাওলানা সেলিম হোসাইন আজাদী ১৯ আগস্ট, ২০২০, ১:১২ এএম says : 0
মহান আল্লাহতায়ালা তার বান্দাদের বিপদ-আপদ দেন বান্দার কল্যাণার্থে। বান্দাকে ইমানের পরীক্ষায় অবতীর্ণ করান।
Total Reply(0)
মাহমুদ ১৯ আগস্ট, ২০২০, ১:১৩ এএম says : 1
দুর্যোগকালীন বান্দা আল্লাহর প্রতি আস্থাবান কিনা, অপরদিকে এমন পরিপ্রেক্ষিতে অপরাপর বান্দা কোন ভূমিকায় অবতীর্ণ হন সে ব্যাপারে তিনি সম্যক ধারণা নেন। বিপদগ্রস্ত বান্দার সহায়তা ও সেবায় অপর বান্দা পাশে দাঁড়াবেন এটাই আল্লাহতায়ালা প্রত্যাশা করেন।
Total Reply(0)
সাইফুল ইসলাম ১৯ আগস্ট, ২০২০, ১:১৪ এএম says : 0
যে কোনো দুর্যোগের মুহূর্তে প্রত্যেকের উচিত নিজ নিজ সাধ্যানুযায়ী সাহায্যের হাত প্রসারিত করা। মানুষ মানুষের জন্য এই নীতি প্রয়োগের উৎকৃষ্ট সময় হলো প্রাকৃতিক দুর্যোগের মুহূর্ত। ভূমিকম্প, ঝড়-বৃষ্টি, টর্নেডো-জলোচ্ছ্বাস, খরা-বন্যা প্রতিটি দুর্যোগেই মানুষের পাশে দাঁড়ানো প্রকৃত মুমিনের পরিচয়। আল্লাহ কারও সামর্থ্য দেখেন না, তিনি দেখেন আন্তরিকতা। মানুষের জন্য কিছু করার মানসিকতা থাকলে এর সুফল আল্লাহর কাছ থেকে অবশ্যই পাওয়া যাবে।
Total Reply(0)
নুরজাহান ১৯ আগস্ট, ২০২০, ১:১৫ এএম says : 0
আমাদের উচিত নিজেদের আমল-আখলাক বিশুদ্ধ করে খাঁটি মানুষ হিসেবে নিজেকে গড়ে তোলা। প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে যেহেতু মানবিক বিপর্যয় দেখা দেয়, অগণিত মানুষ আশ্রয়হীন হয়ে পড়ে, তাদের সাহায্যের জন্য এগিয়ে আসাও একটি মহৎ কাজ।
Total Reply(0)
রুহান ১৯ আগস্ট, ২০২০, ১:১৬ এএম says : 0
আল্লাহ তাআলা বিশ্বমানবতাকে মহামারী করোনাভাইরাস থেকে মুক্ত করুন। যাবতীয় অন্যায়-অপরাধ থেকে নিজেদের বিরত রাখার তাওফিক দান কারুন। আমিন।
Total Reply(0)
মুফতি মুহাম্মদ মর্তুজা ১৯ আগস্ট, ২০২০, ১:১৭ এএম says : 1
আল্লাহ তাআলা আমাদের সকলকে সব ধরনের রোগব্যাধি ও বিপদাপদ থেকে রক্ষা করুক। আমিন।
Total Reply(0)
লিয়াকত আলী ১৯ আগস্ট, ২০২০, ১:২২ এএম says : 0
প্রাকৃতিক দুর্যোগ মুমিনের জন্য আল্লাহর পরীক্ষা। তাই প্রাকৃতিক দুর্যোগের সময় সর্বপ্রথম আল্লাহ তাআলার প্রতি পরিপূর্ণ আস্থা এবং বিশ্বাস রেখে তাঁর সাহায্য কামনা করা এবং ধৈর্য ও সহনশীলতার পরিচয় দেয়ার পাশাপাশি তার ইবাদাত-বন্দেগি করে দুর্যোগপূর্ণ অবস্থা থেকে মুক্তি লাভের প্রার্থনা করা।
Total Reply(0)
শাফায়েত ১৯ আগস্ট, ২০২০, ১:২৩ এএম says : 0
প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে যেহেতু মানুষ আশ্রয়হীন হয়ে পড়ে, তাই তাদের সাহায্যের জন্য এগিয়ে আসাও একটি মহৎ কাজ। যে কোনো দুর্যোগের মুহূর্তে প্রত্যেকের উচিত নিজ নিজ সাধ্যানুযায়ী সাহায্যের হাত প্রসারিত করার পাশাপাশি ভয়াবহ দুর্যোগপূর্ণ অবস্থায় তাওবার মাধ্যমে আল্লাহর দিকে ফিরে আসা। তাঁর নিকট আশ্রয় চাওয়া।
Total Reply(0)
ফারজানা ১৯ আগস্ট, ২০২০, ৭:৫৩ এএম says : 0
কোরআন ও হাদিসের দলিল সহকারে সুন্দর লেখাটির উবায়দুর রহমান খান নদভী সাহেবকে অসংখ্য ধন্যবাদ
Total Reply(0)
Md Rejaul Karim ১৯ আগস্ট, ২০২০, ৯:৩৭ এএম says : 0
আল্লাহপাক যে ব্যক্তির কল্যাণ কামনা করেন তাকে বিভিন্ন দুঃখ কষ্টে পতিত করেন।।। বর্তমান প্রেক্ষাপটের প্রাকৃতিক দুর্যোগ মহামারী নিজ কৃতকর্মের ফলাফল!!! এই প্রাকৃতিক মহামারী থেকে আমাদের সকলেরই শিক্ষা নেয়া উচিত।।।
Total Reply(0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন