বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১, ১৪ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

শান্তি ও সমৃদ্ধির পথ ইসলাম

স্ত্রী-পুত্র-কন্যার হক

উবায়দুর রহমান খান নদভী | প্রকাশের সময় : ২২ আগস্ট, ২০২০, ১২:০১ এএম

পিতা-মাতার পর মানুষের সবচাইতে বড় সম্পর্ক থাকে স্ত্রী-পুত্রদের সাথে। নিজের পরিবার-পরিজনকে সুখে রাখা মানুষের সাধারণ প্রকৃতি। বরং বলতে গেলে এ ব্যাপারে অনেকে নিজের সীমাও অতিক্রম করে বসে। সে জন্য কুরআন মাজিদে এ ব্যাপারে খুব বেশি জোর দেয়া হয়নি যে, পরিবার-পরিজনের সাথে ভালো আচরণ করবে এবং তাদের হক আদায় করবে।

অবশ্য অনেকেই যেহেতু নিজের পরিবার-পরিজনের দ্বীনি সংশোধন ও পরিচর্যার ক্ষেত্রে শৈথিল্য অবলম্বন করে থাকে। সুতরাং কুরআন পরিবার-পরিজনের সে হক বা অধিকারের প্রতি বিশেষভাবে দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে যে, তাদের দ্বীনদার তথা ধর্মপরায়ণ বানানোর এবং আল্লাহ তায়ালার সন্তুষ্টির পথে পরিচালিত করার জন্য তেমনি প্রয়াস চালাবে, যেমন প্রত্যেকটি ঈমানদারের প্রাণকে দোজখ থেকে রক্ষা করার চিন্তা-ভাবনা করা উচিত।

সূরা তাহরিমে ইরশাদ হয়েছে, ‘হে ঈমানদারগণ, নিজেদের এবং নিজেদের পরিবার-পরিজনকে দোজখের আগুন থেকে রক্ষা করো, যার জ্বালানি হলো মানুষ ও পাথর। তাতে (আজাব দেয়ার জন্য) এমন ফেরেশতা নিয়োজিত যারা অত্যন্ত কঠোরতা এবং অত্যন্ত শক্তিশালী (রূপে সৃষ্ট)। আল্লাহ তাদের প্রতি যে হুকুম দিয়ে দিয়েছেন, তারা তার (সামান্যতম) অন্যথা করবে না। আর যে কাজের জন্য তারা আদিষ্ট, তা তারা (পুরোপুরি) সম্পাদন করবে’ (সূরা তাহরিম : আয়াত-৬)।

অবশ্য স্ত্রীদের ব্যাপারে যেহেতু অনেকের দ্বারাই ত্রæটি-বিচ্যুতি হয়ে থাকে, তাই তাদের সাথে সদাচরণ এবং তাদের হক আদায়ের ব্যাপারে কুরআন মাজিদে বিশেষ তাকিদ করা হয়েছে। সূরা বাকারায় বলা হয়েছে, ‘এবং পুরুষদের ওপর মহিলাদের তেমনি অধিকার রয়েছে, যেমন পুরুষদের অধিকার রয়েছে মহিলাদের ওপর রীতি মোতাবেক’ (সূরা বাকারা : আয়াত-২২৮)। সূরা নিসায় বর্ণনা করা হয়েছে, ‘আর তাদের সাথে (অর্থাৎ, নিজেদের স্ত্রীদের সাথে) রীতি মোতাবেক সদ্ভাব রেখে জীবনযাপন করো’ (সূরা নিসা : আয়াত-১৯)।

আল্লাহর কোনো বান্দার স্ত্রী-পুত্ররা যদি বদমেজাজি অথবা বিধর্মিতার দরুন তার বিরুদ্ধাচরণ করে কিংবা তাকে কষ্ট দেয় এবং তাদের পক্ষ থেকে যদি তার আশঙ্কা থাকে, তবে কুরআন মাজিদের পরামর্শ হলো এই যে, তাদের চক্রান্ত থেকে নিজেদের রক্ষা করবে এবং তাদের থেকে সতর্ক থাকবে। কিন্তু যতটা সম্ভব প্রতিশোধ ও কঠোর কোনো ব্যবস্থা নেবে না, বরং ক্ষমা ও উপেক্ষা করবে। ইনশাআল্লাহ এ কর্মপন্থা তাদের সংশোধনেরও কারণ হবে।

সূরা তাগাবুনে বলা হয়েছে, ‘হে ঈমানদারগণ, তোমাদের কোনো কোনো স্ত্রী এবং কোনো কোনো সন্তান তোমাদের শত্রæ। সুতরাং তোমরা তাদের উপদ্রব থেকে আত্মরক্ষা করো। আর যদি তোমরা ক্ষমা করে দাও, অনুকম্পা প্রদর্শন করো, তা হলে (সেটাই তোমাদের জন্য উত্তম ও শুভ পরিণাম বয়ে আনবে) নিঃসন্দেহে আল্লাহ তায়ালা মহা ক্ষমাশীল ও করুণাময়’ (সূরা তাগাবুন : আয়াত-১৪)।

বান্দাদের হক বা অধিকার প্রসঙ্গে পিতা-মাতা, পরিবার-পরিজন, নিকট প্রতিবেশী, এতিম-অনাথ, গরিব-মিসকিন, বন্দি প্রভৃতি দুর্বল শ্রেণির অধিকার এবং তাদের সেবা ও সদ্ব্যবহার সম্পর্কে কুরআন মাজিদের শিক্ষা ও তাকিদ পাঠকবর্গ এখন পাঠ করলেন।

এবার দেখা যাক, সাধারণ মানুষের অধিকার এবং তাদের সাথে সদাচরণ সম্পর্কে কুরআনের শিক্ষা কী? এ প্রসঙ্গে প্রথমত কুরআন মাজিদের বিভিন্ন জায়গায় স্পষ্ট করে দিয়েছে যে, সমস্ত মানুষ একই সম্মানিত যুগল (আদম-হাওয়া)-এর সন্তান। গোটা মানব ভ্রাতৃত্বকে তাদের মৌল প্রকৃতির দিক দিয়ে সম্মানিত করে দেয়া হয়েছে। তারপর অন্যান্য যাবতীয় সৃষ্টির তুলনায় মানুষকে সে বিশেষ জ্ঞানগত ও কর্মগত যোগ্যতা ক্ষমতা দেয়া হয়েছে যার মাধ্যমে তারা সমগ্র জগৎ-সংসারকে ব্যবহার করেছে।

এ বিষয়টিকেও কুরআনে গোটা মানব-জাতির জন্য আল্লাহ প্রদত্ত এক সম্মান ও মর্যাদা হিসেবে বর্ণনা করা হয়েছে। বলা হয়েছে, ‘আর আমি মানুষকে এক বিশেষ সম্মান ও মর্যাদায় ভ‚ষিত করেছি এবং এ জগতের পানি ও স্থলভাগের ওপর তাকে ক্ষমতা ও অধিকার দান করেছি’ (সূরা বনী ইসরাইল : আয়াত-৭০)।

এই প্রাকৃতিক ও খোদাপ্রদত্ত মর্যাদা ও সম্মান ছাড়াও কুরআনে তার আজ্ঞাবহদের নির্দেশ দান করেছে, যেন তারা সব মানুষের সাথে ভালোভাবে কথা বলে। বলা হয়েছে, ‘ওয়া কুলু লিন্নাসি হুসনা’ অর্থাৎ, সব মানুষের সাথে ভালো কথা বল। তেমনিভাবে সাধারণভাবে সবার সাথে ন্যায় ও সৌজন্যের নির্দেশ দান করেছে। ঈমানদারদের শোনানো হয়েছে, ‘আল্লাহ তায়ালা ন্যায়পরতা ও (সবার সাথে) সৌজন্য প্রদর্শনের নির্দেশ দান করেন’ (সূরা নাহল : আয়াত-৯০)।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (8)
Helal Ahmad Helal ২১ আগস্ট, ২০২০, ১:০৪ এএম says : 0
ইসলাম মানবসমাজের ইহকাল ও পরকালের সফলতা এবং উন্নতির পথ বাতলে দিয়েছে। আর ইসলাম হচ্ছে দায়িত্ব পালনের নাম, অর্থাৎ যার যার অধিকার তাকে সঠিকভাবে পৌঁছে দেওয়াই হলো একজন মুসলিমের কাজ।
Total Reply(0)
মোহাম্মদ কাজী নুর আলম ২১ আগস্ট, ২০২০, ১:০৪ এএম says : 0
অধিকার দুই ধরনের—এক. আল্লাহর হক বা অধিকার, দ্বিতীয় হলো বান্দার হক। এই দুটি হক বা অধিকার সঠিকভাবে তার প্রাপ্যকে পৌঁছে দেওয়াই হলো ইসলাম ও শরিয়ত।
Total Reply(0)
জাহিদ খান ২১ আগস্ট, ২০২০, ১:০৫ এএম says : 0
নিজের ও পরিবারের ভরণ-পোষণ খরচ বহনের বিষয়টি আমাদের কাছে শুধু একটি পার্থিব বিষয় মনে হলেও এটি একটি মহান দ্বিনি দায়িত্ব ও কর্তব্য। কোরআন ও হাদিস অন্যান্য ইবাদত-বন্দেগির চেয়ে এ অধ্যায়টিকে কোনো দিক দিয়ে কম গুরুত্ব দেয়নি।
Total Reply(0)
দর্শন ই ইসলাম ২১ আগস্ট, ২০২০, ১:০৫ এএম says : 0
নিজের ও পরিবারের জন্য বৈধ রিজিকের সন্ধান করাও একজন মুসলিমের ফরজ দায়িত্ব। হাদিস শরিফে এসেছে, ‘হালাল রিজিকের সন্ধান করা অন্যান্য ফরজ ইবাদতের পর অন্যতম একটি ফরজ।’ (আল মুজামুল কাবির, হাদিস : ৯৯৯৩)
Total Reply(0)
তাসফিয়া আসিফা ২১ আগস্ট, ২০২০, ১:০৬ এএম says : 0
শরিয়ত বিবাহের পর থেকেই স্বামীর ওপর স্ত্রীর জন্য যেসব অধিকার সাব্যস্ত করেছে, তার মধ্যে অন্যতম হলো স্ত্রীর ব্যয়ভার গ্রহণ করা। মহান আল্লাহ বলেন, ‘সন্তানের পিতার ওপর সন্তানের মায়ের জন্য অন্ন-বস্ত্রের উত্তম পন্থায় ব্যবস্থা করা একান্ত দায়িত্ব।’ (সুরা : বাকারা, আয়াত : ২৩৩)
Total Reply(0)
কামাল রাহী ২১ আগস্ট, ২০২০, ১:০৬ এএম says : 0
ভরণ-পোষণের ব্যাপারে ইসলামী শরিয়ত পরিমাণ নির্ধারিত করে দেয়নি। বরং শরিয়তের ভাষায় স্ত্রীকে প্রয়োজনীয় পরিমাণ ভরণ-পোষণ দেওয়া স্বামীর কর্তব্য। এই পরিমাণ পরিবেশ-পরিস্থিতি ও স্বামীর সামর্থ্যের ওপর নির্ভর করে।
Total Reply(0)
তোফাজ্জল হোসেন ২১ আগস্ট, ২০২০, ১:০৭ এএম says : 0
স্বামী যদি বিহিত কোনো কারণ ছাড়া স্ত্রী-সন্তানের তথা সাংসারিক জরুরি খরচ না দেয়, তাহলে স্ত্রী স্বামীর অনুমতি ছাড়াও স্বামীর সম্পদ থেকে প্রয়োজনমতো অপচয় না করে খরচ করতে পারবে।
Total Reply(0)
Mohammad Sirajullah, M.D. ২১ আগস্ট, ২০২০, ২:২৫ এএম says : 0
Do Bangladeshi people show it in action that Looking for Halal Income is Far. We neglect another most important Farj is the ct anther most importent Farj is Seeking for ILM all life. Acquiring Knowledge is the first FARJ in FARJ in Islam.
Total Reply(0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন