কয়েকদিনের টানা বৃষ্টি মেঘনা নদীর অস্বাভাবিক জোয়ারের পানি বন্দী উপকূলীয় জেলা লক্ষ্মীপুরের কমলনগর ও রামগতি।দু উপজেলার নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়ে পড়েছে। আমাবস্যায় প্রভাবে গত কয়েকদিনের টানা বৃষ্টি ও মেঘনা নদীর জোয়ারে পানি স্বাভাবিকের চেয়ে পাঁচ থেকে ছয় ফুট বেড়ে যাওয়ায় এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। এতে দু’উপজেলার মেঘনারতীরবর্তি এলাকার প্রায় লক্ষাধিক মানুষ পানিবন্দি হয়ে থাকাসহ জোয়ারের স্রোতে দুই সহস্রাধিক কাঁচাঘর ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এ ছাড়াও রাস্তাঘাট ও পুল-কালভার্ট বিধ্বস্ত হয়ে অভ্যন্তরীন কয়েকটি সড়কে বন্ধ রয়েছে যোগাযোগ ব্যবস্থা। ওই সব এলাকায় মানুষের ঘর বাড়ীতে পানি উঠে যাওয়ায় ও রান্নার চুলা পানিতে নষ্ট হওয়ায় লোকজন চরম খাদ্য সঙ্কটে ভুগছেন। গত কয়কদিন দিন থেকে পানিবন্দি মানুষগুলো অর্ধাহারে অনাহারে দিন কাটাচ্ছে বলে স্থানীয় একাধিক সুত্র নিশ্চিত করেছেন। আবার কেউ কেউ টিনের জার দিয়ে চুলা বানিয়ে খাবার তৈরী করে কোন মতে দিনাতিপাত করছেন।
জানা গেছে, আমাবস্যার প্রভাবে কয়কদিনের টানা বৃষ্টি আর মেঘনার জোয়ারের পানি স্বাভাবিকের চেয়ে পাঁচ থেকে ছয় ফুট বেড়ে যায়।
বেড়ীবাঁধ না থাকায় এতে নদীর তীরবর্তী কমলনগর উপজেলার মতিরহাট, নাছিরগঞ্জ, কাদির পন্ডিতেরহাট, চরজগবন্ধু, মাতাব্বরহাট, লুধুয়া ফলকন ও পাটারীরহাট এবং রামগতি উপজেলার বালুরচর, সুজনগ্রাম, জনতা বাজার, মুন্সীরহাট, সেবাগ্রাম, চরআলগী, বড়খেরী, চরগাজী, চরগজারিয়া, চর মুজাম্মেল ও তেলিরচর এলাকা পানির নিচে তলিয়ে যায়। পানিতে প্লাবিত হয় মতিরহাট, নাছিরগঞ্জ, কাদির প-িতেরহাট, পাটারীরহাট, লুধুয়া বাঘারহাট, মুন্সীরহাট, জনতা বাজার ও চেয়ারম্যান বাজার। এতে করে দোকানঘরের মালামল নষ্ট হয়ে ব্যবসায়ীরা আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়েন। জোয়ারের পানিতে বিভিন্ন এলাকার খামারীদের হাঁস-মুরগী মারা যাওয়াসহ গবাদিপশু পানিতে ভেসে যায়। জোয়ারের স্রোতে দেড় সহস্রাধিক কাঁচা বসতঘর ক্ষতিগ্রস্ত হওয়াসহ পানিতে ভেসে যায় পুকুর ও ঘেরের মাছ। ক্ষতিগ্রস্ত হয় কয়েকশ’ কিলোমিটার কাঁচা ও পাকা সড়কের।
রামগতি উপজেলার চরগাজী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান তৌহিদুল ইসলাম সুমন জানান, মেঘনার নদীর জোয়ারের তার ইউনিয়নের টাংকির বাজারসহ অনেক এলাকা প্লাবিত হয়েছে। মানুষের ঘরবাড়ি বিধ্বস্ত হওয়ায় খাদ্য সংকটে রয়েছে অধিকাংশ মানুষ।
কমলনগরের চরফলকন ইউপি চেয়ারম্যান হাজী হারুনুর রশিদ জানান, জোয়ারে তার ইউনিয়ন সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত। এখনো তার ইউনিয়নে ৫-৬ফুট পানি রয়েছে। পানিবন্দি মানুষগুলোর জন্য শুকনো খাবার পৌছানোর জন্য প্রশাসনের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে।
সাহেবেরহাট ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. আবুল খায়ের জানান, অস্বাভাবিক জোয়ারের পানিতে তার ইউনিয়নের চরজগবন্ধু ও কাদির পন্ডিতেরহাটসহ নিম্নাঞ্চলীয় এলাকা পানির নিচে তলিয়ে রয়েছে। প্রশাসনের পক্ষ থেকে পানিবন্দি মানুষগুলোকে শুকনো খাবার দেওয়ার জন্য থেকে বলা হলেও তারা কোন সহযোগীতা করেনি।
রামগতি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. আব্দুল মোমিন বলেন, পানিবন্দি মানুষগুলোর খোঁজ খবর প্রতিনিয়ত নেওয়া হচ্ছে। যে সব জায়গায় খাবার সংকট হচ্ছে, দ্রুত আমরা খাবার পৌছানোর ব্যবস্থা করছি।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন