এবছর তিনদফায় বন্যায় টাঙ্গাইলের ৭৮৮টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ভবন ও মাঠ ধস এবং আসবাবপত্র নষ্ট হয়ে ১৩ কোটি ৪১ লাখ ৩১ হাজার টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে বলে জানা গেছে। এর মধ্যে রয়েছে প্রাথমিক ও মাধ্যমিক বিদ্যালয়, মাদ্রাসা ও কলেজ।
এবার বন্যায় যমুনায় বিলীন হয়ে যাওয়া পাইকশা মাইঝাইল প্রাথমিক বিদ্যালয় নতুনভাবে নির্মাণের জন্য এক কোটি ২০ লাখ টাকার চাহিদাপত্র প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরে পাঠানো হয়েছে। করোনা ভাইরাসের কারণে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় প্রতিষ্ঠান খোলার পরে পাঠদানে ভোগান্তি হবে বলে জানিয়েছেন একাধিক শিক্ষক। তাই দ্রুত সময়ের মধ্যে ক্ষতিগ্রস্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান সংস্কার করার দাবি জানিয়েছেন শিক্ষক ও অভিভাবকরা।
অপরদিকে ধনবাড়ী ও মধুপুর উপজেলার কোনো শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ক্ষয়ক্ষতি হয়নি।
শিক্ষা বিভাগ সূত্র জানায়, জেলার ১২টি উপজেলার মধ্যে ১০টি উপজেলার ৫৬৬ প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ৮ কোটি ৩৯ লাখ ৩১ হাজার টাকা, ১৪২টি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের দুই কোটি ৪৭ লাখ ২৫ হাজার টাকা, ৬৮টি মাদ্রাসার এক কোটি ৪৩ লাখ ৭৫ হাজার টাকা ও ১২টি কলেজের ৩৪ লাখ টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।
সদর উপজেলার ১০০টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ৫৪ লাখ ১০ হাজার টাকা, ২০টি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ৬৬ লাখ ৫০ হাজার টাকা, তিনটি কলেজের ৯ লাখ টাকা ও ১১টি মাদ্রাসার ৪৮ লাখ ৫০ হাজার টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।
দেলদুয়ারে ৮১টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ৪২ লাখ ৩৬ হাজার টাকা, দুইটি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের এক লাখ টাকা, দুইটি মাদ্রাসার এক লাখ ৫০ হাজার টাকা, কালিহাতীতে ৭৩টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ৮৬ লাখ ২০ হাজার টাকা, ৬টি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ১০ লাখ টাকা, চারটি মাদ্রাসার ৬ লাখ ৬ টাকা, নাগরপুরে ৩৯টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ৫০ লাখ ৯০ হাজার টাকা, ১৮টি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ৫০ লাখ ৫০ হাজার টাকা, দুইটি কলেজের পাঁচ লাখ টাকা ও সাতটি মাদ্রাসার ১৪ লাখ টাকা।
সখীপুরে সাতটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ৩২ লাখ ৫৫ হাজার টাকা, তিনটি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সাত লাখ টাকা, একটি কলেজের এক লাখ টাকা ও একটি মাদ্রাসার তিন লাখ ৫০ হাজার টাকা।
মির্জাপুরে ৮৬টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ৪৩ লাখ ৭০ হাজার টাকা, ৩১টি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ২৭ লাখ ৭৫ হাজার টাকা, পাঁচটি মাদ্রাসার চার লাখ ২৫ হাজার টাকা।
ভূঞাপুরে ৬১টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের এক কোটি ১৮ লাখ ৭০ হাজার টাকা, ১৫টি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ২৬ লাখ টাকা, একটি কলেজের এক লাখ টাকা ও ১৪টি মাদ্রাসার ১৪ লাখ টাকা।
ঘাটাইলে ৪৩টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ২৩ লাখ ৮০ হাজার টাকা, ১০টি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ১৫ লাখ ৫০ হাজার টাকা, ছয়টি মাদ্রাসার ১৩ লাখ টাকা, গোপালপুরে ৫৬টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ২৮ লাখ ৩০ হাজার টাকা, ১৬টি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ৪৫ লাখ ৫০ হাজার টাকা, দুইটি কলেজের আট লাখ টাকা ও পাঁচটি মাদ্রাসার ১৫ লাখ টাকা ও বাসাইলে ২০টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের আট লাখ ৭০ হাজার টাকা, ২১টি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ৫৫ লাখ টাকা, তিনটি কলেজের ১০ লাখ টাকা ও ১১টি মাদ্রাসার ২৪ লাখ টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।
পাইকশা মাইঝাইল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আনোয়ারা খানম জানান, গত বছর বন্যায় এই এলাকায় তীব্র ভাঙন দেখা দেয়। সে সময় যদি ভাঙন রোধে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করা হতো তাহলে আজ তাদের বিদ্যালয়টি যমুনায় বিলীন হয়ে যেত না।
সলিমাবাদ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট দাউদুল ইসলাম দাউদ জানান, গত বছর পাইকশা মাইঝাইল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় এলাকায় ভাঙন পরিদর্শনে গিয়েছিলেন পানিসম্পদ উপমন্ত্রী ও স্থানীয় এমপি আহসানুল ইসলাম টিটু। তিনি ভাঙন রোধে আশ্বাস দিয়েছিলেন কিন্তু তা বাস্তবায়ন হয়নি।
বেড়বুচনা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পরিচালনা পরিষদের সভাপতি মো. নাসির উদ্দিন জানান, বিদ্যালয়টি পৌর এলাকার মধ্যে হলেও পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা না থাকায় একটু বৃষ্টিতেই বিদ্যালয়ের মাঠে হাঁটু পানি জমে। এর আগে খুব দুর্ভোগে ক্লাস করেছে শিক্ষার্থীরা। তাই দ্রুত সময়ের মধ্যে পানি নিষ্কাশনের প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করার দাবি জানান তিনি।
জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা আব্দুল আজিজ জানান, এবারের বন্যা দীর্ঘ স্থায়ী হওয়ায় ক্ষয়ক্ষতি বেশি হয়েছে। ক্ষয়ক্ষতি নিরুপণ করে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান মেরামতের জন্য বরাদ্দ চাওয়া হয়েছে। বরাদ্দ পাওয়ার পর মেরামত করা হবে।
টাঙ্গাইল জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা লায়লা খানম জানান, ক্ষতিগ্রস্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের তালিকা করে ঢাকা শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তর বরাবর পাঠানো হয়েছে। বরাদ্দ পেলে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো সংস্কার করা হবে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন