কুড়িগ্রামে দীর্ঘ বন্যায় কাঁচা-পাকা সড়ক, বাঁধ ও ব্রীজ-কালভার্ট বিধ্বস্ত হওয়ায় ভেঙ্গে পড়েছে গ্রামীণ যোগাযোগ ব্যবস্থা। এ অবস্থায় বন্যা পরবর্তী সময়ে যাতায়াতের চরম দুর্ভোগে পড়েছেন চরাঞ্চলসহ বন্যা দুর্গত এলাকার প্রায় ৫ লক্ষাধিক মানুষ। ব্যহত হয়ে পড়েছে তাদের এসব এলাকার মানুষের স্বাভাবিক জীবন-যাত্রা।
এবারের দেড় মাসের দীর্ঘ বন্যায় প্লাবিত হয়ে পড়ে কড়িগ্রামের ৯ উপজেলার ৫৬ ইউনিয়নের অধিকাংশ এলাকা। এতে করে সরকারী হিসেবেই সম্পুর্ণ ও আংশিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে পড়েছে ১৯১ কিলোমিটার পাকা সড়ক। ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে পড়েছে ৬৩টি ব্রীজ, ১৮১ টি কালভার্ট, ১১৪৫ কিলোমিটার কাঁচা সড়ক ও ১৩৭ কিলোমিটার বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ।
কুড়িগ্রাম জেলা প্রশাসন ৯ উপজেলায় সবগুলো বিভাগের সমন্বয়ে কাঁচা-পাকা সড়ক, বাঁধ ও ব্রীজ-কালভার্টের ক্ষতি নিরুপন করে এগুলো নতুন করে তৈরি, মেরামত ও সংস্কারের জন্য তালিকা ও ব্যয়ের পরিমাণ নির্ধারণ করে ত্রাণ মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে বলে জানিয়েছেন কুড়িগ্রামের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ রেজাউল করিম।
জেলা প্রশাসনের দেয়া তথ্যমতে জেলায় সম্পুর্ণ রুপে ক্ষতিগ্রস্থ হয়ে পড়েছে ৮দশমিক৮০ কিলোমিটার পাকা সড়ক, ৪০১ কিলোমিটার কাঁচা সড়ক, ২১ কিলোমিটার নদ-নদীর তীর রক্ষা বাঁধ, ৬টি ব্রীজ ও ১০টি কালভার্ট। আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে পড়েছে ১৮৩ কিলোমিটার পাকা সড়ক, ৭৪৪ কিলোমিটার কাঁচা সড়ক, ১১৬ কিলোমিটার নদ-নদীর তীর রক্ষা বাঁধ, ৫৭টি ব্রীজ ও ১৭১টি কালভার্ট।
নতুন করে এসব সড়ক, বাঁধ ও ব্রীজ-কালভার্ট তৈরি ও সংস্কারে ব্যয় ধরা হয়েছে, সম্পুর্ণ ক্ষতিগ্রস্থ পাকা সড়কে কিলোমিটার প্রতি ৫০ লাখ টাকা, আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত পাকা সড়কে কিলোমিটার প্রতি ১০ লাখ টাকা, সম্পুর্ণ ক্ষতিগ্রস্ত কাঁচা সড়কে কিলোমিটার প্রতি ৩ লাখ টাকা, আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত কাঁচা সড়কে ১ লাখ টাকা। এছাড়াও সম্পুর্ণ ক্ষতিগ্রস্ত ব্রীজে ৩৫ লাখ টাকা, আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত ব্রীজে ৫ লাখ টাকা, সম্পুর্ণ ক্ষতিগ্রস্ত কালভার্টে ৩ লাখ টাকা, আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত কালভার্টে ২ লাখ টাকা এবং সম্পুর্ণ ক্ষতিগ্রস্ত বাঁধ নির্মাণে ১০ লাখ টাকা ও আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত বাঁধ নির্মাণে ৫ লাখ টাকা। এতে যোগাযোগ ব্যবস্থায় মোট ব্যায়ের পরিমাণ প্রায় ৬২ কোটি ৫৪ লাখ টাকা।
এই তালিকা অনুমোদন দিয়ে অর্থ ছাড় সাপেক্ষে জেলার সংশ্লিষ্ট বিভাগের মাধ্যমে কাজ শুরু করা হবে বলে জানিয়েছেন জেলা প্রশাসক।
এদিকে বন্যার সময় চরম দুর্ভোগে দিন পাড় করা জেলার প্রায় সাড়ে ৪ শতাধিক চরাঞ্চলসহ নি¤œাঞ্চলের প্রায় ৫ লক্ষাধিক মানুষ বন্যা পরবর্তী সময়েও ক্ষতিগ্রস্ত রাস্তা-ঘাটে চরম দুর্ভোগ নিয়ে জীবন-জীবিকার চাহিদা মেটাচ্ছেন। ক্ষতিগ্রস্ত এলাকার সড়কে কোন যান-বাহন চলাচল করতে না পারায় পায়ে হেঁটে হাট-বাজার, অফিস-আদালতসহ প্রয়োজনীয় চিকিৎসা সেবা নিতে উপজেলা বা জেলা শহরের হাসপাতালে আসতে হচ্ছে তাদের। এ অবস্থায় কোন পণ্য সামগ্রী বা প্রয়োজনীয় মালপত্র পরিবহন করতে পড়তে হচ্ছে চরম ভোগান্তিতে। এ অবস্থায় স্থানীয় মানুষজন সামান্য ক্ষতিগ্রস্ত রাস্তাগুলো চলাচলের জন্য নিজেরাই বাঁশের সাঁকো বানিয়ে চলাচলের চেষ্টা করছে।
কুড়িগ্রাম সদর উপজেলার যাত্রাপুর ইউনিয়নের গারুহারা গ্রামের আবুল হোসেন জানান, রাস্তা ভেঙ্গে যাওয়ায় খুব কষ্ট করে পায়ে হেটে হাট-বাজারে যেতে হচ্ছে। এ অবস্থায় কোন কিছু বাজারে নিয়ে যেতেও কষ্ট আবার আনতেও কষ্ট। মাথায় করে বহন করে আনা নেয়া করতে হচ্ছে।
যাত্রাপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মো: আইয়ুব আলী সরকার জানান, গত বন্যায় আমার পুরো ইউনিয়নটিই বন্যা কবলিত হয়ে পড়েছিল। এতে করে কোন রাস্তা-ঘাটের অবস্থাই এখন ভালো নেই। জরুরী প্রয়োজনে মানুষজন রোগী নিয়ে দ্রুত হাসপাতালেও যেতে পারছেন না। আমি চাই দ্রুত এসব মেরামতে করে মানুষের দুর্ভোগ কমানো উচিৎ।
কুড়িগ্রাম স্থানীয় সরকার প্রকৌশল বিভাগ (এলজিইডি) এর নির্বাহী প্রকৌশলী সৈয়দ আব্দুল আজিজ জানান, বন্যায় কুড়িগ্রাম জেলায় শুধু এলজিইডি’র ১২৮ কিলোমিটার পাকা সড়ক আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে পড়েছে। এছাড়াও ৩১টি ব্রীজ ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে পড়েছে যেগুলো রিপ্লেসমেন্ট করতে হবে। আমরা তালিকা করে চীফ ইঞ্জিনিয়ারের কাছে পাঠিয়েছি পাশাপাশি জেলা প্রশাসকের কাছেও পাঠানো হয়েছে। বরাদ্দ পেলে দ্রুত কাজ করা হবে।
কুড়িগ্রামের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ রেজাউল করিম জানান, জেলার সবগুলো বিভাগের সমন্বয়ে বন্যায় ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ নির্ধারন করে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। এবারের বন্যায় কুড়িগ্রাম জেলায় ক্ষতির পরিমাণ প্রায় ৪শ ১৮ কোটি টাকা। বরাদ্দ পেলে সংশ্লিষ্ট বিভাগের মাধ্যমে বন্যা কবলিত এলাকাগুলোতে দ্রুত যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়নে কাজ করা হবে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন