মঙ্গলবার ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ১১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৩ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

শান্তি ও সমৃদ্ধির পথ ইসলাম

পৃথিবী ধ্বংস হবে আশুরার দিনে

এ. কে. এম. ফজলুর রহমান মুন্শী | প্রকাশের সময় : ৩০ আগস্ট, ২০২০, ১২:০০ এএম

আল্লাহ তায়ালা এই পৃথিবী সৃষ্টি করেছেন। সেখানে তার প্রতিনিধি স্বরূপ মানুষদের পাঠিয়েছেন। মানুুষদের সঠিক পথে পরিচালনার শিক্ষা দেয়ার জন্য যুগে যুগে নবী রাসূল প্রেরণ করেছেন। একদিন এই পৃথিবী ধ্বংস হয়ে যাবে। আল্লাহ তায়ালা যেদিন চাইবেন, সেদিন এই দুনিয়ায় প্রলয় সংঘঠিত হবে। সৃষ্ট জগতের প্রলয় শিঙ্গার ফুৎকারের মাধ্যমে সাধিত হবে। আল কোরআনে ইরশাদ হয়েছে : ‘আর শিঙ্গার ফুৎকার উচ্চকিত হবে, সেটা হবে নির্ধারিত দিনে।’ (সুরা ক্বাফ : আয়াত ২০)।

আরও ইরশাদ হয়েছে : ‘যেদিন শিঙ্গার ফুৎকার উচ্চকিত হবে, সেদিন পৃথিবী ও আকাশমন্ডলির বাসিন্দারা বেকারার হয়ে যাবে।’ (সূরা নমল : আয়াত ৮৭)। এই ফুৎকার মুহাররমের ১০ তারিখ কোনো এক শুক্রবার দিন উচ্চকিত হবে। তাই আশুরার দিনে মুসলমানদের সতর্ক থাকা উচিত। কেননা, জানা নেই সেইদিন কবে। এদিনে কিছু লোক বাড়াবাড়ি করে অতিরঞ্জিত ও গর্হিত কার্যকলাপ দ্বারা বিদআত ও নাজায়েজ বিষয়ের অবতারণা করে চলেছেন। মুসলমানদের সেসব গর্হিত কাজ থেকে দূরে থাকতে হবে। যেমন :

১. আশুরার সিয়ামকে শোক পালনের উদ্দেশ্যে করা : মুহাররম মাসের বা আশুরার সুন্নত আমল হিসেবে রোজা রাখা কর্তব্য। আশুরার সেই রোজার উদ্দেশ্য স্পষ্ট হাদিস দ্বারা পরিষ্কারভাবে প্রমাণিত। আর তা হলো, অত্যাচারী শাসক ফিরাউনের কবল থেকে মুসা আ.-এর নাজাতের শুকরিয়া স্বরূপ ও সিয়াম পালন করা। কিন্তু সেই উদ্দেশ্যকে পাশ কাটিয়ে শোক পালনের উদ্দেশ্যে সিয়াম পালনের কোনো সুযোগ নেই। অথচ অনেকে তা করে থাকেন। বলা বাহুল্য, আশুরার এই সিয়ামের সূচনা হয়েছে মুসা আ.-এর সময় থেকে। আর রাসুলুল্লাহ (সা.) স্বীয় জীবদ্দশায় সেই সিয়াম পালন করতে বলেছেন। অপরদিকে কারবালার ঘটনা ঘটেছে রাসুলুল্লাহ সা.-এর ওফাতের ৫০ বছর পর ৬১ হিজরিতে। হাদিস শরীফে যেই রোজা পালনের উদ্দেশ্যের কথা স্পষ্টভাবে বর্ণনা করা হয়েছে। তা হচ্ছে অত্যাচারী শাসক ফিরাউনের কবল থেকে মুসা আ.-এর নাজাতের জন্য আল্লাহর দরবারে শুকরিয়া স্বরূপ। সুতরাং রাসুলুল্লাহ (সা.) যে উদ্দেশ্যে আশুরার রোজা রাখতে বলেছেন, আমাদেরও সেই উদ্দেশ্যকেই সামনে রেখে রোজা রাখতে হবে।

২. ১০ মুহাররমকে আনন্দ উৎসবে পরিণত করা : রাফেজিরা (কট্টর শিয়া) হযরত হুসাইন রা.-এর শাহাদতের শোক স্বরূপ শোক দিবস পালন করে। পক্ষান্তরে একটি গোষ্ঠী রাফেজিদের বিরোধিতা করার লক্ষ্যে এ দিনটিকে আনন্দ উৎসবে পরিণত করে। এ উভয় প্রকার কাজই গর্হিত ও বিদআত। রাসুলুল্লাহ (সা.) ও সাহাবায়ে কিরাম (রা.) এ দিনটিকে শোক দিবস হিসেবেও পালন করেননি, আবার আনন্দ উৎসবে পরিণত করেননি। তারা শুধুমাত্র ফিরাউনের কবল থেকে মুসা আ.-এর নাজাতের শুকরিয়া স্বরূপ সিয়াম পালন করেছেন। সুতরাং আমাদেরও তা-ই করতে হবে।

৩. তাযিয়া : তাযিয়া অর্থ বিপদে সান্ত¡না দেয়া। তবে বর্তমানে শাহাদাতে হুসাইন রা.-এর শোক মিছিলে রূপ নিয়েছে। অথচ ইসলামে কারো মৃত্যুতে তিন দিনের অধিক (আর স্বামীর মৃত্যুতে স্ত্রীর জন্য চার মাস দশ দিনের অধিক) শোক পালন করা নিষেধ। (দ্রষ্টব্য : সুনানে আবু দাউদ, হাদিস নং- ৪৪৬২)। তাই শিয়াদের উদ্ভাবিত উক্ত তাযিয়া সম্পূর্ণ বিদআত। তা থেকে সকলের দূরে থাকতে হবে।

৪. আশুরা উপলক্ষে চোখে সুরমা লাগানো : অনেকেই আশুরার দিন বা ১০ মুহাররম উপলক্ষে এদিন বিশেষ ফজিলতের আশায় চোখে সুরমা লাগিয়ে থাকেন। এটাও সুস্পষ্ট বিদাআত। কেননা, রাসুলুল্লাহ (সা.) ও সাহাবায়ে কিরাম (রা.) আশুরার নিয়মরূপে চোখে সুরমা লাগাননি এবং কোনো ফজিলত বর্ণনা করেননি। এ মর্মে যা প্রচলিত আছে, তা মাওযূ বা জাল।

৫. ১০ মুহাররমে বিশেষ পদ্ধতিতে সালাত আদায় করা : অনেকে ১০ই মুহাররমে বিশেষ বিশেষ পদ্ধতিতে সালাত আদায় করে থাকেন। এটাও সম্পূর্ণ বিদআত। কেননা, রাসুলুল্লাহ (সা.) ও সাহাবায়ে কিরাম (রা.) এদিনে বিশেষ কোনো সালাত আদায় করেছেন বা বলেছেন মর্মে কোনো নির্ভরযোগ্য দলিল নেই। এ সম্পর্কে আল্লামা ইবনে তাইমিয়াহ রহ. বলেন, সিয়াম ব্যতীত আশুরা সম্পর্কিত কোনো বিশেষ নিয়মের আমলের ব্যাপারে কোনো সহীহ হাদিস বর্ণিত হয়নি। সুতরাং আশুরা উপলক্ষে আমাদের ইসলামের সহীহ আমলরূপে রোজা পালন করতে হবে। এ জন্য আশুরার দিন এবং তার সাথে মিলিয়ে তার আগের বা পরের দিনসহ রোজা পালন করা বাঞ্ছনীয়। আর এ মাসকে সম্মানিত জ্ঞান করে এ মাসে দাঙ্গা-ফাসাদ ও ঝগড়া-বিবাদ থেকে বিশেষভাবে বিরত থাকতে হবে। এ ছাড়াও কারবালার ঘটনার ব্যাপারে সকল প্রকার আবেগ ও বাড়াবাড়ি হতে বিরত থাকতে হবে।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (10)
Mahabubur Rahman ৩০ আগস্ট, ২০২০, ৪:৩৪ এএম says : 0
আল্লাহু,, আকবার।
Total Reply(0)
Kowser Bhai ৩০ আগস্ট, ২০২০, ৪:৩৪ এএম says : 0
দিনটা শুক্রবার হবে
Total Reply(0)
Belal Hossin ৩০ আগস্ট, ২০২০, ৪:৩৫ এএম says : 0
কেয়ামতের জ্ঞান কেবল আল্লাহর রয়েছে।
Total Reply(0)
তাসফিয়া আসিফা ৩০ আগস্ট, ২০২০, ৪:৩৫ এএম says : 0
পবিত্র মুহরর্ম মাসের ১০ তারিখকে বলা হয় আশুরা। বিশ্ব মানব সভ্যতার ইতিহাসে এই আশুরা গুরুত্বপূর্ণ দিবস হিসেবে বিবেচিত হয়ে আসছে। হাদীস শরীফে এই আশুরার গুরুত্ব সম্পর্কে বর্ণিত হয়েছে।
Total Reply(0)
Jahangir Alam ৩০ আগস্ট, ২০২০, ৪:৩৫ এএম says : 0
বিভিন্ন যুগে অনেক গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা ঘটেছে আশুরাতে। আল্লাহ্ জাল্লা শানুহু বিশ্বজগত সৃষ্টি করেন আশুরাতে, পৃথিবীতে প্রথম বৃষ্টিপাত হয় আশুরাতে, জান্নাতে হযরত আদম আলাইহিস্ সালামকে পানি, আগুন, মাটি, বাতাস (আব্, আতশ, খাক্, বাদ) দ্বারা সৃষ্টি করে তাঁর দেহে রূহ্ (আত্মা) ফুঁকে দেয়া হয় এই আশুরাতে, আদম ও তাঁর স্ত্রী হাওয়াকে যেদিন পৃথিবীতে নামিয়ে দেয়া হয় সেদিন ছিলো আশুরা, যেদিন তাঁদের তওবা আল্লাহ্ জাল্লা শানুহু কবুল করেন সেদিন ছিলো আশুরা, হযরত নূহ্ আলায়হিস্ সালাম মহাপ্লাবনের কারণে ৪০ দিন কিশ্তিতে ভাসমান থাকার পর মহাপ্লাবনের অবসান ঘটলে যেদিন যূদী পাহাড়ে অবতরণ করেন সেদিন ছিলো আশুরা, হযরত ইব্রাহীম আলায়হিস্ সালাম নমরুদের অগ্নিকুন্ড হতে যেদিন মুক্তিলাভ করেন সেদিন ছিলো আশুরা, হযরত ইউনুস আলায়হিস্ সালাম মাছের পেট থেকে উদ্ধার লাভ করেন এক আশুরায়, হযরত আইয়ুব আলায়হিস্ সালাম ভীষণ রোগ থেকে আরোগ্য লাভ করেন এক আশুরাতে, হযরত সুলায়মান আলায়হিস্ সালাম রাজত্ব ফিরে পান আশুরাতে। হযরত ইউসুফ আলায়হিস্ সালাম দীর্ঘকাল পর পিতা হযরত ইয়াকুব আলায়হিস্ সালামের সাথে মিলিত হন আশুরাতে। কিয়ামত হবে ভবিষ্যতের কোনো এক আশুরার শুক্রবারে।
Total Reply(0)
জাহিদ খান ৩০ আগস্ট, ২০২০, ৪:৩৫ এএম says : 0
আশুরায় সংঘটিত বহু ঘটনা আশুরাকে বিশেষ মর্যাদায় উন্নীত করেছে। সব ঘটনাকে ছাপিয়ে যে ঘটনা আশুরাকে তাৎপর্যমন্ডিত করেছে তা হলো কারবালার যুদ্ধে হযরত হুসাইন রাদিআল্লাহু তা’আলা আন্হুর শাহাদাতের ঘটনা।
Total Reply(0)
সজল মোল্লা ৩০ আগস্ট, ২০২০, ৪:৩৫ এএম says : 0
স্মরণ রাখতে হবে, ইসলামের ইতিহাসে মহররম মাসের ঐতিহাসিক গুরুত্ব বিভিন্ন কারণে। প্রাক-ইসলামি যুগেও মহররমের ঐতিহ্য বিদ্যমান ছিল। পৃথিবীর ইতিহাসের অসংখ্য কালজয়ী ঘটনার জ্বলন্ত সাক্ষী পুণ্যময় এ মাস।
Total Reply(0)
Md.Abdur Rahim Gazi ৩০ আগস্ট, ২০২০, ১:০০ পিএম says : 0
Mohrrom Mase Tazia Michil ebong dhol bazano nishidho kora houk
Total Reply(0)
Towfik ৩০ আগস্ট, ২০২০, ১১:৩২ পিএম says : 2
ঈমাম তাইমিয়া (রহঃ) জখন বলেছে আশুরার কোন সহীহ বা নির্দৃস্ট হাদিস নেই,তবে কোন হাদিসের উপর ভিত্তি করে আপনি লিখলেন,??
Total Reply(3)
Monjur Rashed ৩১ আগস্ট, ২০২০, ৪:৪৭ পিএম says : 0
Monjur Rashed ৩১ আগস্ট, ২০২০, ৪:৪৭ পিএম says : 0
৩১ আগস্ট, ২০২০, ৬:০৯ পিএম says : 0
Mahfuzur Rahman ৩ সেপ্টেম্বর, ২০২০, ৫:২৭ পিএম says : 0
গত ৩০-৮-২০২০ তারিখ ভোররাত ৩টার দিকে পবিত্র আশুরার দিন আমার আব্বা মারা যান৷ সবাই তার জন্য দোয়া করবেন।
Total Reply(0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন