বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০, ১৭ রমজান ১৪৪৫ হিজরী

শান্তি ও সমৃদ্ধির পথ ইসলাম

জুয়া ও পাশা খেলা হারাম

এ. কে. এম. ফজলুর রহমান মুন্শী | প্রকাশের সময় : ২ সেপ্টেম্বর, ২০২০, ১২:০০ এএম

বর্তমান দুনিয়ার সর্বত্রই জুয়া ও পাশা খেলা অথবা এ জাতীয় বিষয়াদির জমজমাট ব্যবসা চলছে। নানারকম ফন্দি- ফিকির ও উপায় উদ্ভাবনের দ্বারা এ সকল ব্যবসায়ের আকার-আয়তন, গতি প্রকৃতির পরিবর্তন সাধন ও উন্নয়নের জোর প্রচেষ্টা চালানো হচ্ছে। এতে করে বহু মুসলমান এ জাতীয় ধাপ্পাবাজির খপ্পরে নিপতিত হচ্ছে। আশা আকাক্সক্ষার দোলনায় আরোহণ করে এ জাতীয় খেলায় অংশগ্রহণ করত: বহু লোক সর্বস্ত হারা হয়ে পথে বসেছে, আবার কেউ সম্পদের পাহাড় গড়ে তুলে এই হারাম ব্যবসাকে আরাম মনে করে হণ্যে হয়ে এর পেছনে লেগে আছে। এমনকি অন্যান্যদেরকেও নানা কলা-কৌশলে প্রলুব্ধ করে চলেছে। তাদের এ কাজে বিরাম নেই, বিশ্রাম নেই। সুতরাং এ হেন হারাম কাজের বিলুপ্তি সাধন করা প্রত্যেক আকলমান্দেরই উচিত। এই লক্ষ্য মাত্রাকে সামনে রেখেই ক্ষুদ্র পরিসরে এ নিবন্ধের অবতারনা। আসুন, এবার এ দিকে লক্ষ্য করা যাক।

আল্লাহপাক আল কোরআনে প্রিয় হাবীব মোহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ (সা:)-কে খেতাব করে ইরশাদ করেছেন : ‘লোকেরা আপনাকে মদ ও জুয়া সম্পর্কে প্রশ্ন করে; বলুন, এতদুভয়ে রয়েছে শক্ত গোনাহ, এতে মানুষের উপকারও নিহিত রয়েছে, তবে এতদুভয়ের গোনাহ উপকার অপেক্ষা অধিক বড়।’ (সূরা বাকারাহ : আয়াত ২১৯)। আল কোরআনের অপর এক স্থানে আল্লাহ রাব্বুল ইজ্জত ঈমানদারদেরকে খেতাব করে আরও ঘোষণা করেছেন : ‘হে ঈমানদারগন! মদ, জুয়া এবং মূর্তি পূজার বেদী ও ফালের তীর এগুলোর প্রত্যেকটি অপবিত্র শয়তানি কর্মের অন্তর্ভুক্ত, সুতরাং তোমরা এগুলোর সংস্পর্শে কখনোও যেয়োনা, যাতে করে তোমরা নাজাত পেতে পার। অবশ্যই শয়তান এই ইচ্ছা করে যে, মদ ও জুয়ার দ্বারা তোমাদের মধ্যে শত্রæতা ও হিংসা জাগিয়ে দেবে, এবং তোমাদের আল্লাহর স্মরণ হতে ও নামাজ হতে বিরত রাখবে, এরপরও কি তোমরা নিবৃত্ত থাকবে না? (সূরা মায়িদাহ : আয়াত ৯০, ৯১)।

অন্ধকার যুগের আরবও অনারবরা জুয়া ও পাশা খেলায় বাজি ধরত এবং উটসমূহ জবেহ করে এগুলোর গোশত দশটি ভাগে বিভক্ত করত এবং প্রত্যেকটি অংশের উপর পাশার ঘুটি ফেলত এবং তীর ব্যবহার করত। প্রত্যেকটি তীরের জন্য একটি নির্দিষ্ট অংশ নির্ধারিত করে নিত। জুয়া খেলার সময় চিহ্নিত তীরগুলোকে একটি থালিয়াতে রেখে একজন নিরপেক্ষ লোকের নিকট জমা রাখত। এই নিরপেক্ষ ব্যক্তি তীর ভর্তি থলিয়া ভালো করে নাড়াচাড়া করত এবং এক এক ব্যক্তির নাম উচ্চারণ করে স্বহস্তে এক একটি তীর থলিয়া হতে বের করত। যে ব্যক্তির নামে সে তীর বের করা হতো এবং তীরের গায়ে যে অংশ বা হিস্যা লেখা থাকত, উক্ত ব্যক্তি নির্ধারিত উটের গোশতের হার হস্তগত করত এবং এভাবে সে জয়ী বলে বিবেচিত হতো। কিন্তু যে সকল ব্যক্তির নামে বের করা তীরে কোনো অংশ বা হিস্যা লেখা থাকত না তারা জমাকৃত গোশতের কোনো ভাগই পেত না। তারা এই জুয়া খেলায় পরাজিত পক্ষ বলে বিবেচিত হতো।

শুধু তাই নয়, আরবরা জুয়া, পাশা খেলা এবং শরাব পান করে বিভোর অবস্থায় অধিকাংশ সময় মারপিট, ঝগড়া ফ্যাসাদ এবং যুদ্ধ বিগ্রহে জড়িয়ে পড়ত এবং এই রক্তপাত তাদের মাঝে চলতেই থাকত, কখনো বন্ধ হতো না। বনু আবস এবং বনু জুবিয়ানের মধ্যে যে ধ্বংসাত্মক যুদ্ধ দীর্ঘ চল্লিশ বছর পর্যন্ত জারি ছিল এর মূলে ঘোড়দৌড় প্রতিযোগিতায় বাজি হারার কারণটিই ছিল প্রধান। আরবদের দৈন্যদশায় জুয়া ও পাশা খেলার বিস্ময় ফল ছিল সূদুর প্রসারী। ইসলাম এই ঘৃণ্য প্রথার উচ্ছেদ করেছে এবং প্রকৃত মানবতার গুনাবলিকে বিকশিত করার লক্ষ্য ও আর্দশ প্রতিষ্ঠা করেছে। সুতরাং ইসলাম শুধুমাত্র আরবদেরকেই নয়, বরং গোটা বিশ্বের মানুষকে জানিয়ে দিয়েছে যে, জুয়া, পাশা খেলা বা এ জাতীয় যাবতীয় কাজকর্মই হারাম। একজন মুমিন মুসলমানের জন্য শুকরের মাংস যেমন হারাম, জুয়া এবং পাশা খেলাও তেমনই হারাম। এই হারাম ও নিষিদ্ধ পন্থার উপর প্রতিষ্ঠিত যাবতীয় কাজকর্ম, আচার-অনুষ্ঠান ও ইসলামী শরীয়তে চ‚ড়ান্তভাবে নিষিদ্ধ বলে ঘোষিত হয়েছে।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (11)
শাহীন হাসনাত ২ সেপ্টেম্বর, ২০২০, ১:২৯ এএম says : 0
তাই মুসলমান হিসেবে সব ধরনের জুয়াবাজি থেকে দূরে থাকা আবশ্যক।
Total Reply(0)
Mamun Khan ২ সেপ্টেম্বর, ২০২০, ১:৩০ এএম says : 0
সব ধরনের জুয়াবাজি অবৈধ এবং এর থেকে প্রাপ্ত সম্পদ হারাম। আর হারাম সম্পদ ভোগ করে ইবাদত-বন্দেগি করলে আল্লাহতায়ালার দরবারে তা কবুল হয় না।
Total Reply(0)
Nasir Uddin ২ সেপ্টেম্বর, ২০২০, ১:৩০ এএম says : 0
কাজেই জুয়ার সর্বনাশা গ্রাস থেকে বেঁচে থাকা অপরিহার্য।
Total Reply(0)
Abdur Rahim ২ সেপ্টেম্বর, ২০২০, ১:৩১ এএম says : 0
আল্লাহ তায়ালা বলেন, يَسْأَلُونَكَ عَنِ الْخَمْرِ وَالْمَيْسِرِ قُلْ فِيهِمَا إِثْمٌ كَبِيرٌ অর্থাৎ, ‘হে নবী! তারা আপনাকে মদ ও জুয়া সম্পর্কে জিজ্ঞেস করে। আপনি বলে দিন, উভয়ের মধ্যেই রয়েছে মহাপাপ।’ (সূরা: আল বাকারা, আয়াত: ২১৯)
Total Reply(0)
Delwar Khan ২ সেপ্টেম্বর, ২০২০, ১:৩২ এএম says : 0
জুয়াড়ি মানে অসুখী মানুষের জীবনযাপন। জুয়াড়িরা কখনো সুখী হয় না। হতে পারে না।
Total Reply(0)
Elious ২ সেপ্টেম্বর, ২০২০, ১:৩৪ এএম says : 0
মদ-জুয়া জাতীয় সবকিছু সামাজিক, পারিবারিক, আর্থিক ও নৈতিক সঙ্কট তৈরি করে। মানুষকে বহুবিধ ক্ষতির সম্মুখীন করে।
Total Reply(0)
সৈকত ফকির ২ সেপ্টেম্বর, ২০২০, ৯:৫৮ এএম says : 0
ইসলামে যে খেলাতেই হার জিত রয়েছে তাহাই হারাম।
Total Reply(0)
সৈকত ফকির ২ সেপ্টেম্বর, ২০২০, ৯:৫৮ এএম says : 0
ইসলামে যে খেলাতেই হার জিত রয়েছে তাহাই হারাম।
Total Reply(0)
সাইফ আহমেদ ২ সেপ্টেম্বর, ২০২০, ১০:০৪ এএম says : 0
মহান আল্লাহ আমাদের জুয়া থেকে বেঁচে থাকার তৌফিক দান করুন।
Total Reply(0)
Md Nurul Islam ২ সেপ্টেম্বর, ২০২০, ১১:৫১ এএম says : 0
Thank,s.
Total Reply(0)
Jack Ali ২ সেপ্টেম্বর, ২০২০, ১২:০৪ পিএম says : 0
Our country is ruled by Disobedient People who Proudly reject the Law of Allah as such all the crime is happening in our Beloved Country.. O'Muslim wake up and unite under one banner of Islam and rule by the Qur'an and sunnah and do not create division In Islam.
Total Reply(0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন