মঙ্গলবার ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ১১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৩ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

শান্তি ও সমৃদ্ধির পথ ইসলাম

ইসলামসেবকদের সাহায্যে ব্যবসা করার অপূর্ব ঘটনা

খালেদ সাইফুল্লাহ সিদ্দিকী | প্রকাশের সময় : ৩ সেপ্টেম্বর, ২০২০, ১২:০০ এএম

ইসলামে জীবিকা নির্বাহ ও পরের উপকারের স্বার্থে এবং ইসলামের শিক্ষা ও প্রচার-প্রসারে সৎ ও সততার সাথে ব্যবসা-বাণিজ্য করা সুন্নত। তাই সাধু ও সৎ ব্যবসায়ীদের উচ্চ মর্যাদার কথা কোরআন ও বহু হাদিসে বর্ণিত হয়েছে। সাথে সাথে ভিক্ষাবৃত্তিকে অনুৎসাহিত করা হয়েছে এবং অলস বেকার বসে না থেকে যে কোনো বৈধ কর্ম অবলম্বনের ওপর বিশেষ গুরুত্ব আরোপ করা হয়েছে। মানুষের কাছে হাত পাতা অপেক্ষা যে কোনো বৈধ ব্যবসা ও সৎ পেশা অবলম্বন করা উত্তম।

রসূলুল্লাহ (সা.)-এর যুগে সাহাবায়ে কেরাম এবং পরবর্তীকালে যুগে যুগে মুসলমান, মনীষী, উলামা-মাশায়েখের জীবনী পাঠ করলে দেখা যায়, তাঁদের অনেকে নানাভাবে ইসলামের সেবায় নিয়োজিত থেকেও কোনো না কোনো বৈধ-সৎ ব্যবসা ও পেশা অবলম্বন করে জীবিকা নির্বাহ করেছেন এবং হালাল উপায় অবলম্বন করেছেন। এরূপ বহু দৃষ্টান্ত অনেক খলিফা, সুলতান তথা রাজা, বাদশাহ, শাসকগণের মধ্যেও পরিলক্ষিত হয়। আবার এমন উদাহরণেরও অভাব নেই, যারা নিজের সৎ জীবনযাপনের জন্য কেবলমাত্র ইসলামের সেবায় নিয়োজিতদের নিশ্চিন্তে ইসলামের খেদমত আনজাম দেয়ার জন্য তাদের সাহায্যার্থে ব্যবসা করেছেন, যেন তারা পরের মুখাপেক্ষি না হয় এবং রাজদরবারের সাথে দহরম- মহরম না করেন, বৈষয়িক স্বার্থ লাভের পরিবর্তে ইসলামের সেবায় নিয়োজিত থাকতে পারেন। এ ব্যাপারে হযরত ইমাম আজম আবু হানিফা (রহ.)-এর ব্যবসার কথা ইতিহাস খ্যাত।

আরেকজন বিখ্যাত তাবেঈ হযরত আবদুল্লাহ ইবনে মোবারক (রহ.) (১১৮-১৮১ হি.)-এর নাম বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। তিনি ছিলেন বনি হানজালা গোত্রের আজাদকৃত গোলাম। তিনি ছিলেন হাদিসের হাফেজ, ফকীহ এবং সাধক-বুজর্গ। তাকে উলামায়ে রাব্বানিয়ীনের অন্তর্ভুক্ত করা হয়। তিনি ছিলেন অত্যন্ত দানশীল। তিনি নিজের ভাগ্যোন্নয়নের জন্য উপার্জন করতেন না। তিনি ব্যবসা করতেন দ্বীনের সেবায় নিয়োজিত উলামায়ে কেরামের সাহায্যের জন্য, যারা দুনিয়াবী স্বার্থ রক্ষার চিন্তা-ধান্দা হতে মুক্ত হয়ে নিঃস্বার্থ ইসলামের খেদমতে নিয়োজিত থাকতে পারেন। তাঁর ব্যবসা করার একটি ব্যতিক্রমী ঘটনা নিম্নে তুলে ধরা হলো।

আব্বাসীয় খলিফা হারুনুর রশীদের খেলাফত আমল। হাদিসশাস্ত্রে ‘আমিরুল মোমেনীন’ উপাধিতে ভূষিত হযরত আবদুল্লাহ ইবনে মোবাররক (রহ.) ছিলেন একজন জবরদস্ত আলেম, আবেদ, জাহেদ, ইলম ও আমলের অনুকরণীয় নমুনা। তাঁর যোগ্যতা প্রতিভা ও গুণাবলির বিবরণ তার জীবনচরিতে বর্ণিত হয়েছে। তাঁর চারিত্রিক গুণাবলির মধ্যে একটি অদ্ভুত গুণ ছিল এই যে, তিনি সততার সাথে ব্যবসা করতেন এবং বলতেন, যদি পাঁচ ব্যক্তি না হতেন তাহলে আমি ব্যবসা-বাণিজ্য করতাম না। তারা হচ্ছেন- সুফিয়ান সওরী, সুফিয়ান ইবনে উওয়াইনিয়া, ফোযাইল ইবনে আয়াজ, ইবনে সাম্মাক এবং ইবনে উলাইয়া। তিনি তাদের নিকট আর্থিক সাহায্য প্রেরণ করতেন। তিনি ‘ছেলারেহমী’ বা আত্মীয়সুলভ আচরণ করতেন। এভাবে এক বছর অতিবাহিত হয়ে যায় এবং উক্ত পাঁচ ব্যক্তির নামে হযরত আবদুল্লাহ ইবনে মোবারকের সাহায্য অব্যাহত থাকে।

হযরত আবদুল্লাহ ইবনে মোবারককে এক ব্যক্তি এসে একদিন জানাল যে, ‘ইবনে উলাইয়াকে এখন তো কাজী (বিচারপতি) বানানো হয়েছে।’ এ কথা শোনার পর থেকে তিনি ইবনে উলাইয়ার নিকট আসা-যাওয়া বন্ধ করে দেন এবং তাকে নিয়মিত যে সাহায্য দান করে আসছিলেন, তাও বন্ধ করে দেন। এর পর ইবনে উলাইয়া একদিন আবদুল্লাহ ইবনে মোবারকের খেদমতে খোদ হাজির হন, কিন্তু আবদুল্লাহ ইবনে মোবারক তাঁর দিকে মাথা উঁচু করেও তাকালেন না। বাধ্য হয়ে তিনি চলে যান। এ ঘটনার পর আবদুল্লাহ ইবনে মোবারক ইবনে উলাইয়ার নিকট নিন্দাসূচক কিছু কবিতা লিখে প্রেরণ করেন। কবিতাগুলোর অর্থ এই:

১. হে ইলম (জ্ঞান)-কে বাজপাখিতে পরিণতকারী! গরিবদের মাল হজম করছ। ২. তুমি দুনিয়া ও তার উপভোগ্যগুলোকে এভাবে কাবু করে রেখেছ, যা দ্বীনকে ধ্বংস করে। ৩. তুমি দুনিয়া অর্জনে পাগল হয়ে গেছ, অথচ তুমি নিজেই ছিলে পাগলদের জন্য ঔষধ। ৪. তোমার বর্ণনাগুলো বাদশাহদের প্রবেশদ্বারসমূহে ঝুলিয়ে রাখার ব্যাপার কোথায় গেল? ৫. তোমার বর্ণিত রেওয়াতসমূহ কোথায় গেল, যেগুলো ইবনে আওফ ও ইবনে সিরীনের জন্য বর্ণিত হয়েছে। ৬. তুমি বলছ যে, বিচারক পদ গ্রহণের জন্য তুমি বাধ্য হয়েছ, এ কথা ভুল, জ্ঞানের গাধা মাটিতে আছাড় খেয়েছে। ইসমাঈল ইবনে উলাইয়া যখন এসব কবিতা অবগত হন, তখন খলিফা হারুনুর রশীদের দরবারে গমন করে ইস্তফা পেশ করেন এবং তা গৃহীত হয়।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (8)
মেঘদূত পারভেজ ৩ সেপ্টেম্বর, ২০২০, ৫:০৮ এএম says : 0
ইসলাম ব্যবসাবান্ধব জীবন বিধান। কোরআন ও হাদিস বার বার ব্যবসা-বাণিজ্যের গুরুত্ব প্রদান করেছে এবং তার ফাজায়েল বর্ণনা করেছে।
Total Reply(0)
সিদরাতুল মুনতাহা ৩ সেপ্টেম্বর, ২০২০, ৫:০৮ এএম says : 0
হে ইমানদারগণ! তোমরা একে অপরের সম্পদ অন্যায়ভাবে গ্রহণ কর না, কেবল তোমাদের একে অপরের সম্মতিক্রমে যে ব্যবসা করা হয় তা বৈধ।
Total Reply(0)
রুবি আক্তার ৩ সেপ্টেম্বর, ২০২০, ৫:০৯ এএম says : 0
নবী (সা.) বলেছেন, কোনো ব্যক্তি এমন উত্তম খানা কোনো সময় খাননি যে খানা নিজ হাতে কামাই করে খেয়েছে এবং হজরত দাউদ (আ.) নিজ হাতে কামাই করা খানা সব সময় খেতেন।
Total Reply(0)
বদরুল সজিব ৩ সেপ্টেম্বর, ২০২০, ৫:০৯ এএম says : 0
ব্যবসা করা রসুল (সা.)-এর সুন্নত এবং এ ব্যাপারে আল্লাহপাকের সুনির্দিষ্ট নীতিনির্ধারিত হয়েছে।
Total Reply(0)
কাজল খান ৩ সেপ্টেম্বর, ২০২০, ৫:০৯ এএম says : 0
সুন্নত তরিকা মোতাবেক ব্যবসা করতে পারলে তা হবে একটি ইবাদত। কিন্তু বর্তমান বিশ্বে ব্যবসা-বাণিজ্যের সব রাস্তা নিয়ন্ত্রণ করেছে ইসলামবিরোধী অপশক্তি। তাদের হাতে ব্যবসা-বাণিজ্য নিয়ন্ত্রিত হওয়ায় ব্যবসার পবিত্রতা ক্ষুণ্ন হচ্ছে।
Total Reply(0)
নাজনীন জাহান ৩ সেপ্টেম্বর, ২০২০, ৫:০৯ এএম says : 0
আমাদের সবারই উচিত ব্যবসা-বাণিজ্যের ক্ষেত্রে পবিত্র কোরআন ও রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নির্দেশনা অনুসরণ করা।
Total Reply(0)
সাইফ ৩ সেপ্টেম্বর, ২০২০, ১০:৪৮ এএম says : 0
আল্লাহ তায়ালা জনাব লেখক এবন ইনকিলাব সংশ্লিষ্ট সকলকে এর উত্তম প্রতিধান অবশ্যই দেবেন। অনেক সুন্দর এবং অতিব জরুরী মাসায়েল নিয়ে লেখার জন্যে অনেক ধন্যবাদ, আল্লাহ তায়ালা আমাদের সকলেক এর থেকে শিক্ষা নিয়ে নিজের জীবনকে রাঙ্গানোর তৌফিক প্রধান করুন।
Total Reply(0)
Jack Ali ৩ সেপ্টেম্বর, ২০২০, ১০:৫২ এএম says : 0
Our business man they never read Hadith how to business... they only know how to cheat in every possible way.. Allah will treat them with the fire of Hell.
Total Reply(0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন