মঙ্গলবার ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ১১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৩ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

শান্তি ও সমৃদ্ধির পথ ইসলাম

বালা-মুসিবত কেন আসে

মাওলানা মুহাম্মাদ আব্দুল মালেক | প্রকাশের সময় : ৪ সেপ্টেম্বর, ২০২০, ১২:০০ এএম

দুনিয়াতে মানুষের জীবন এক অবস্থায় থাকে না। অবস্থার পরিবর্তন ঘটে। আর এটা যেমন ব্যক্তির ক্ষেত্রে সত্য তেমনি সত্য জাতি-গোষ্ঠীর ক্ষেত্রেও। এ জীবনে যেমন আসে সুখের পর দুঃখ, সুস্থতার পর অসুস্থতা তেমনি আবার আসে দুঃখের পরে সুখ এবং অসুস্থতার পরে সুস্থতা। সচ্ছলতার পর অসচ্ছলতা আবার অসচ্ছলতার পর সচ্ছলতা। পরিবর্তনের এই চলমান ধারাই হলো পার্থিব জীবন।

মানুষের এ জীবন এরূপ পরিবর্তনশীল বানানোর পিছনে রয়েছে অনেক তাৎপর্য ও হিকমত। যার সম্যক জ্ঞান রয়েছে মানুষের খালিক ও মালিক আল্লাহ তাআলার কাছে। তবে আল্লাহ যাদের চিন্তাশক্তি দান করেছেন তারা কিছু কিছু হিকমত অনুধাবনও করে থাকেন।

বাহ্যদৃষ্টিতে যেরূপ অবস্থার মুখোমুখিই হোক না কেন মুমিনের সৌভাগ্য এই যে, সকল অবস্থাই তার জন্য কল্যাণকার। শর্ত হলো, সে যে অবস্থার সম্মুখীন হয়েছে তাতে আল্লাহর কী হুকুম রয়েছে সে সম্পর্কে অবগত থাকা এবং সে হুকুমের অনুগত থাকা।

বিভিন্ন আসমানি মুসিবত যথা মহামারি, বন্যা, খরা, ঘূর্ণিঝড়, জলোচ্ছ্বাস ইত্যাদির কিছু পরিবেশগত কার্যকারণ রয়েছে, যা বৈজ্ঞানিক পর্যবেক্ষণের মাধ্যমে নির্ণিত। এ কারণগুলো যদি শুধু ধারণা ও অনুমানভিত্তিক না হয়ে সঠিক পর্যবেক্ষণের ভিত্তিতে নির্ণিত হয়ে থাকে তবে এগুলো স্বীকার করতে কোনো অসুবিধা নেই। তবে একথা ভুলে গেলে চলবে না যে, এসব বাহ্যিক ও পরিবেশগত কার্যকারণের পশ্চাতে এমন কিছু কার্যকারণ ও উপযোগিতা রয়েছে, যেগুলো বিজ্ঞানের বস্তুনির্ভর পর্যবেক্ষণ-দৃষ্টির আওতা-বহির্ভ‚ত।

শুধু ‘ওহী’র মাধ্যমে এগুলোর জ্ঞান অর্জিত হয়। এরূপ কিছু কার্যকারণ আল্লাহ তাআলা বান্দাদের জানিয়ে দিয়েছেন ওহীর মাধ্যমে। এই ওহীভিত্তিক দৃষ্টিকোণ থেকেই একজন মুমিন এ ধরনের আসমানি মুসিবতগুলোকে বিশ্লেষণ করে থাকেন। বস্তুগত কার্যকারণগুলোকে তারা স্থান দিয়ে থাকেন দ্বিতীয় পর্যায়ে।

এসব দুর্যোগ সম্পর্কে প্রচলিত ধারণা হলো, এগুলো অবশ্যই আযাব ও গযব, যা ব্যাপক পাপাচারের শাস্তিরূপে আপতিত। এতে কোনো সন্দেহ নেই যে, যার অন্তরে আল্লাহর ভয় আছে সে অবশ্যই এ পরিস্থিতিতে আল্লাহ তাআলার দিকে রুজু করে, সবর করে এবং তওবা, ইস্তেগফারের মাধ্যমে সংশোধিত হওয়ার চেষ্টা করে। কিন্তু ঈমানী দুর্বলতার কারণে কারো কারো মনে বিভিন্ন প্রশ্নেরও উদ্রেক হয় এবং আল্লাহ মাফ করুন, কখনো কখনো তা উচ্চারিত হতেও দেখা যায়। যথা: এ প্রশ্ন হয় যে, যদি এটা গুনাহ ও অপরাধের শাস্তিই হয়ে থাকে তাহলে বড় বড় অপরাধী যে দেশে ওখানে কেন আযাব আসে না?

আবার যদি এই ভূখন্ডেই আযাব আসার সিদ্ধান্ত হয়ে থাকে তবে এ ভূখন্ডেরই অন্যান্য অংশেও তো পাপাচার হয়ে থাকে। সে অংশগুলো কেন ক্ষতিগ্রস্ত হলো না? আর দুর্যোগগ্রস্ত এলাকায় সবাই কি পাপী-গোনাহগার? ওখানেও তো মসজিদ আছে, মাদরাসা আছে, নিষ্পাপ শিশু আর নেককার মানুষ আছে? তাদের অপরাধ কী? তাহলে কি বড়লোকের পাপের সাজা গরিব-দুঃখীকে ভূগতে হচ্ছে?

আবার কারো মনে এই ওয়াসওয়াসাও সৃষ্টি হতে পারে যে, এগুলো যখন আযাব-গযব তাহলে আমাদের বোধ হয় দুর্যোগগ্রস্ত স্থানে যাওয়া উচিত নয়। কেননা, আযাব-গযবের স্থান থেকে দূরে থাকাই হলো হাদীস শরীফের নির্দেশনা।

এগুলো ভুল চিন্তা এবং এক ধরনের অবাধ্য মানসিকতা থেকে সৃষ্ট ওয়াসওয়াসা। এ অবাধ্য ও ভ্রান্ত চিন্তা বিদূরিত হওয়ার জন্য খাঁটি দিলে আল্লাহর দরবারে তওবা করা কর্তব্য। আর ‘লা হাওলা’ পড়ে আল্লাহর কাছে এই দুআ করা কর্তব্য যে, ইয়া আল্লাহ! আপনি আমাকে বিশুদ্ধ ঈমান দান করুন। আপনার সিদ্ধান্তে সন্তুষ্ট থাকার তাওফীক দান করুন। শোকরের সময় শোকর আর সবরের সময় সবর করার তাওফীক নসীব করুন।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (6)
Mujib Hassan ৪ সেপ্টেম্বর, ২০২০, ১:৩৯ এএম says : 0
কেউ আজ এ কথা বলতে পারি না যে, আমি নিরাপদ। আমার অন্যায় কৃতকর্মের মাত্রা আজ এতটাই ছাড়িয়েছে যে, পুরো দেহ যেন পাপে ভরপুর। আমি ব্যবসা-বাণিজ্য, চাকরি যাই করছি না কেন, সবকিছুতেই যেন আমি অসৎকেই প্রাধান্য দিচ্ছি। এমনকি মুখে আমি যা বলছি তা-ও মিথ্যা বলছি; আল্লাহর ভয়ে দুই রাকাত যে নামাজ আদায় করছি সেখানেও দুনিয়ার চিন্তায় মগ্ন থাকছি। তাই একের পর এক আজাবের মুখোমুখি হচ্ছি। এর মূল কারণ হচ্ছে- আমার কৃতকর্মই এসবকে আহ্বান জানাচ্ছে।
Total Reply(0)
কে এম শাকীর ৪ সেপ্টেম্বর, ২০২০, ১:৪০ এএম says : 0
যেভাবে পবিত্র কোরআনে আল্লাহপাক ইরশাদ করেছেন- ‘মানুষের কৃতকর্মের দরুন স্থলে ও জলে বিশৃঙ্খলা ছড়িয়ে পড়ে। এর পরিণামে তিনি কর্মের শাস্তির স্বাদ তাদের ভোগ করাবেন, যাতে তারা আল্লাহর দিকে ফিরে আসে’ (সূরা আর রুম : ৪১)।
Total Reply(0)
তরুন সাকা চৌধুরী ৪ সেপ্টেম্বর, ২০২০, ১:৪০ এএম says : 0
হযরত হুসাইন (রহ.) বলেন, আল্লাহর পক্ষ থেকে বান্দার কাছে যে বালা-মুসিবত আসে তা বান্দার জন্য ক্ষমার ওসীলা ও আখেরাতের আজাব থেকে বাচার কারণ ।
Total Reply(0)
তাসফিয়া আসিফা ৪ সেপ্টেম্বর, ২০২০, ১:৪০ এএম says : 0
হযরত সুহাইল তাসতুরী (রহ.) বলেন, আল্ল্লাহর পক্ষ থেকে যদি বালা-মুসিবত না থাকত। তাহলে বান্দার জন্য আল্ল্লাহ মুখী হওয়ার কোন রাস্তাই থাকত না।
Total Reply(0)
দর্শন ই ইসলাম ৪ সেপ্টেম্বর, ২০২০, ১:৪০ এএম says : 0
সর্বোত্তম ধৈর্যশীল ঐ ব্যক্তি যে তাঁর বালা মুসিবতের কষ্ট গোপন রাখতে পারে এবং কারো কাছে তা প্রকাশ করেনা।
Total Reply(0)
দু খী জীবন ৪ সেপ্টেম্বর, ২০২০, ১:৪১ এএম says : 0
হযরত আলি ইবনে বুন্দার (রহ.) বলেন, এই দুনিয়া হল বালা মুসিবত ও কষ্ট-ক্লেশের একটি ঘর স্বরূপ। সুতরাং বালা-মুসিবত ও কষ্ট ছাড়া এ দুনিয়ায় থাকা সম্ভব নয়।
Total Reply(0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন