দিনাজপুরের ঘোড়াঘাট উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা ওয়াহিদা খানম ও তার বাবা ওমর ফারুকে কুপিয়ে মারাত্মকভাবে আহত করেছে দুর্বৃত্তরা। গত বুধবার রাতে তার সরকারি বাসভবনে এ ঘটনা ঘটে। পরে ওয়াহিদা খানমকে আশঙ্কাজনক অবস্থায় রংপুরের একটি হাসপাতালে নেয়া হয়। সেখানে অবস্থার অবনতি হলে তাকে এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে করে ঢাকায় আনা হয়। পরে বিকেল ৩টা ৮ মিনিটে রাজধানীর ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব নিউরোসাইন্স হাসপাতালে ওয়াহিদাকে ভর্তি করা হয়। এরপর সেখানকার চিকিৎসকদের নিয়ে ৭ সদস্যের একটি মেডিকেল বোর্ড গঠন করা হয়। মেডিকেল বোর্ডের সদস্যরা ওয়াহিদার শারীরিক অবস্থা পরীক্ষা-নিরীক্ষা করেন। এরপর চিকিৎসকরা জানান, ওয়াহিদার মাথার বাম পাশের খুলি ভেঙে ভেতরে ঢুকে গেছে। সেখানে রক্তক্ষরণ হচ্ছে। তার যে বড় ধরনের অপারেশন করা দরকার তা এই মুহূর্তে করা যাচ্ছে না। তিনি অচেতন অবস্থায় আছেন। অপারেশন করার মতো অবস্থায় নেই। শুধু তাই নয়, বিদেশে নিয়ে উন্নত চিকিৎসা করাবেন সে অবস্থাতেও নেই বলে জানিয়েছেন হাসপাতালের পরিচালক কাজী দ্বীন মোহাম্মদ। তবে গতকাল রাত ৯টার পর তাকে অপারেশন থিয়েটারে নেয়া হয়। রাত পৌনে ১০টায় এ প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত অপারেশন চলছিল।
হাসপাতাল সূত্র জানায়, অপারেশনে নেওয়ার আগে ওয়াহিদাকে স্যালাইন দেয়া হয়। সার্বক্ষণিক পর্যবেক্ষণ করে রাত ৯টার পর তাকে অপারেশন থিয়েটারে নেয়া হয়। নিউরোসায়েন্স হাসপাতালে অধ্যাপক ডা. জাহিদুর রহমানের অধীনে অপারেশন করছেন চিকিৎসকরা।
এদিকে দিনাজপুর থেকে মাহফুজুল হক আনার জানান, দিনাজপুরের ঘোড়াঘাট উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা ওয়াহিদা খানম ও তার বাবা ওমর ফারুকের উপর দুর্বৃত্তদের হামলার ১২ ঘণ্টা পর গতকাল বৃহস্পতিবার বিকেল ৫টা পর্যন্ত আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কোন কুলকিনারা করতে পারেনি। এখন পর্যন্ত এ ঘটনায় আটক হওয়ার খবর পুলিশ প্রশাসন দিতে পারেনি।
রংপুর কমিনিউটি হাসপাতাল থেকে এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে করে ঢাকায় পাঠানো মুমূর্ষু টিএনও’র অপারেশন করাও সম্ভব হচ্ছে না শারীরিক অবস্থার কারণে। রংপুরে চিকিৎসাধীন তার বাবা ওমর ফারুকের অবস্থাও আশঙ্কাজনক বলে জানা গেছে। বাজার এলাকায় উপজেলা পর্যায়ের সর্বোচ্চ কর্মকর্তার নিরাপত্তা বেষ্টিত সরকারি বাসভবনে রাতে এ ধরনের হামলা এবং হামলা পরবর্তীতে দীর্ঘ সময়ে কাউকে আটক করতে না পারায় সর্বমহলে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। উপজেলা পর্যায়ে কর্মকর্তা টিএনও, এসিল্যান্ডসহ দায়িত্বপূর্ণ কর্মকর্তাদের অনেকেই এখন নিজেদের নিরাপত্তা নিয়ে শঙ্কিত হয়ে পড়েছেন। ঘটনার পরপরই দুপুরে রংপুর বিভাগের ডিআইজি দেবদাস ভট্টাচার্য বিভাগীয় কমিশনার ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন। সকাল থেকেই ইউএনওর উপর হামলার সংবাদ পেয়ে দিনাজপুর-৬ আসনের এমপি শিবলী সাদিক, দিনাজপুরের জেলা প্রশাসক মো. মাহমুদুল আলম, পুলিশ সুপার মো. আনোয়ার হোসেন, র্যাব কর্মকর্তারা সকাল থেকে ঘটনাস্থলে গিয়েছেন।
জানা গেছে, গতকাল ভোর ৩টার দিকে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার দ্বিতল বাসভবনের ২য় তলায় থাকা টিএনও ওয়াহিদা খানম ও তার বাবা ওমর ফারুকের উপর হামলা চালায়। ধারালো অস্ত্র দিয়ে এলোপাথারী আঘাত ও হাতুড়ি জাতীয় শক্ত কোন বস্তু দিয়ে বুকে ও মাথায় আঘাত করা হয়। ফলে টিএনওর মাথার খুলির অনেকটা এলাকা দেবে যায়। এছাড়া অতিরিক্ত রক্তক্ষরণের কারণে দু’জনের অবস্থা সঙ্কটাপন্ন হয়ে পড়ে বলে প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে। এসময় নিচে অবস্থানরত নিরাপত্তা প্রহরীকে বাহির থেকে অবরুদ্ধ করে দুর্বৃত্তরা। তারা পেছনের কার্নিশ বেয়ে বাথরুমের ভেন্টিলেটর দিয়ে ভিতরে ঢুকেছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। কিন্তু ছোট ভেন্টিলেটর দিয়ে ভিতরে ঢোকা সম্ভব কিনা তা নিয়েও প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। আরো একটি বিষয় সাধারণ মানুষকে ভাবিয়ে তুলেছে, তা হলো উপজেলা প্রশাসন চত্তরে নিরাপত্তা ব্যবস্থা ছাড়াও বাজারে ব্যবসায়ীদের নিরাপত্তা প্রহরী রয়েছে। সকলের চোখ ফাঁকি দিয়ে দুর্বৃত্তরা কীভাবে টিএনও’র বাড়িতে ঢুকে হামলা চালিয়ে নিরাপদে চলে গেল। নাটোরের বাসিন্দা ওয়াহিদা খানমের আদিব নামে ৩ বছরের একটি পুত্র সন্তান রয়েছে। তার স্বামী পার্শ্ববর্তী রংপুর জেলার পীরগঞ্জ উপজেলার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা হিসাবে দায়িত্ব পালন করছেন।
এদিকে, যেদিক থেকে দুর্বৃত্তরা ভিতরে ঢুকে উপরে উঠে সেখানে সিসিটিভি (ক্লোজ সার্কিট ক্যামেরা) ছিল। আইনশৃঙ্খলা কর্তৃপক্ষ ইতিমধ্যেই সিসিটিভি ক্যামেরার ফুটেজ পর্যালোচনা করেছেন। ঘোড়াঘাট থানার অফিসার ইনচার্জ, পুলিশ সুপার, জেলা প্রশাসক গণমাধ্যমের সাথে কোন কথা বলছেন না। তাদের একটাই মন্তব্য তদন্ত চলছে। তবে একটি সূত্র মতে সিসিটিভি’র ফুটেজ পর্যালোচনা করে ২ দুর্বৃত্তকে দেখতে পাওয়া গেছে। তারা মুখোশ পরা ছিল। লক্ষ্যণীয় বিষয় তারা সিসিটিভি’র লাইন বিছিন্ন করেনি।
প্রায় এক বছর আগে ঘোড়াঘাটের টিএনও হিসাবে যোগদানকারী ওয়াহিদা খানমের আচরণে সবাই সন্তুষ্টি প্রকাশ করেন। স্থানীয় পর্যায়ে তার শক্রতা থাকার কথা নয়। আর এ ধরনের শত্রু যে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে প্রশাসন চত্বরে উচ্চতর কর্মকর্তার বাড়িতে ঢুকে হামলা চালাবে। এছাড়া হামলা করা হয়েছে হত্যার উদ্দেশ্যে এটা প্রায় নিশ্চিত হয়েছেন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন