ইসলামের প্রতিটি আদর্শ-সুন্নত মানুষের কোনো না কোনো উপকার-কল্যাণসাধন করে থাকে এবং প্রতিটি কাজ ও আমলেই নিহিত রয়েছে বহু যৌক্তিকতা ও সৌন্দর্য। কোরআন ও হাদিসের ইলম (জ্ঞান) যাদের রয়েছে, তারাই ইসলামের তাৎপর্য ও রহস্য অনুধাবন করতে পারেন। এগুলোর বিশদ বিবরণ-ব্যাখ্যায় না গিয়ে এখানে আমরা অতি সাধারণ বিষয়ের উদাহরণ উল্লেখ করতে চাই, যার সাথে প্রতিনিয়ত প্রত্যেক মানুষের সাক্ষাৎ ঘটে থাকে এবং যার প্রকৃত রহস্য আমাদের অনেকেরই অজানা। চলমান কারোনাকবলিত সমগ্র বিশ^বাসী মুখোশ ব্যবহার করে চলেছে, যা আন্তর্জাতিকভাবে ‘মাস্ক’ বলে পরিচিত।
এটি পরিধান করলে করোনাভাইরাস হতে পরিত্রাণ পাওয়া যায়। আমরা অনেকেই জানিনা, এটি ইসলামেরই বিধান, যা খোদ রসূলুল্লাহ (সা.) ঘোষণা করেছেন। জেনে শুনেও স্বাস্থ্য বিজ্ঞানীরা এ কথা বলছে না এ কারণে যে, এতে ইসলামের শ্রেষ্ঠত্ব স্বীকার করা হয়, অথচ তারা তা করতে চায় না।
হাঁচি ও হাই তোলা সম্পর্কে বোখারী, মুসলিম, তিরমিজি ও আবু দাউদসহ বিখ্যাত হাদিস গ্রন্থগুলোতে বহু হাদিস বর্ণিত হয়েছে। মেশকাত শরীফে এগুলো একই স্থানে সংকলিত হয়েছে। প্রথমে আবু দাউদ ও তিরমিজির বরাতে হজরত আবু হোরায়রা (রা.) কর্তৃক বর্ণিত হাদিসটি অবিকল তুলে ধরছি। তিনি বলেন, ‘রসূলুল্লাহ (সা.) যখন হাঁচি দিতেন, নিজের হস্ত বা কাপড় দ্বারা মুখ ঢেকে ফেলতেন এবং আওয়াজ ক্ষীণ করতেন।’
এ হাদিসে তিনটি বিষয়ের কথা বলা হয়েছে: (১) হস্তদ্বারা, (২) অথবা কাপড়দ্বারা মুখ ঢেকে ফেলা এবং (৩) আওয়াজ ক্ষীণ করা। হাঁচি আসলে মুখ ঢাকার এবং আওয়াজ ক্ষীণ করার কথা কেন বলা হয়েছে তা ব্যাখ্যা সাপেক্ষ। এর রহস্য উদঘাটন করতে হলে প্রথমেই হাঁচি ও হাই তোলা সংক্রান্ত কয়েকটি হাদিসের উল্লেখ করতে হয়। যেমন: (১) হজরত আবু হোরায়রা (রা.) রসূলুল্লাহ (সা.) হতে বর্ণনা করেন, ‘আল্লাহ তাআলা হাঁচিকে পছন্দ করেন এবং হাই তোলাকে ঘৃণা করেন। যখন কারো হাঁচি আসে এবং সে ‘আলহামদুলিল্লাহ’ বলে তখন শ্রোতার উচিত ‘ইয়ার হামুকাল্লাহ’ বলা।’ (আল্লাহ তোমার প্রতি রহম করুন)। আর হাই তোলা সম্পর্কে বলা হয়েছে, তা শয়তানের পক্ষ হতে হয়। তাই যথা সম্ভব তা রোধ করা উচিত। কেননা যখন কেউ হাই তোলে তখন শয়তান তাতে হাসতে থাকে। (বোখারী)
হাঁচিতে আল্লাহর সন্তুষ্টি এবং হাই তোলাতে শয়তানের আনন্দ। এ বক্তব্যদ্বয়ের রহস্য বা তাৎপর্য খুঁজে বের করা দরকার। হাঁচিদ্বারা মানুষের দেহের ভিতরের দূষিত পদার্থ বের হয়ে আসে এবং মুখ খোলা থাকলে সে দূষিত পদার্থ বাতাসের মাধ্যমে অন্যের মধ্যে সংক্রমিত হতে পারে। এ আশঙ্কা হতে নিরাপদে থাকার জন্য খোদ রসূলুল্লাহ (সা.) হাঁচি এলে তার পবিত্র হাতদ্বারা মুখ বন্ধ রাখতেন কিংবা কাপড়দ্বারা ঢেকে রাখতেন এবং মৃদু স্বরে কথা বলতেন। মনে রাখতে হবে, রসূলুল্লাহ (সা.) এর পবিত্র হাঁচি দূষিত ও বিষাক্ত পদার্থ হতে মুক্ত ছিল। কিন্তু তিনি উম্মতের শিক্ষার জন্য উক্ত উপায় অবলম্বন করে দেখিয়ে দিয়েছেন। হাঁচিতে আল্লাহর সন্তুষ্টির কারণ হলো, মানুষের দেহের অভ্যন্তরস্থ ক্ষতিকর পদার্থ বের হয়ে গেলে মানুষ প্রশান্ত হৃদয়ে আল্লাহকে স্মরণ করতে পারে। তাই প্রশংসা করে সে প্রথমেই তার প্রতি কৃতজ্ঞতা জানায় এবং শ্রোতাও তার জন্য আল্লাহর রহমত কামনা করে দোয়া করে। বোখারী শরীফের বর্ণনায় বলা হয়েছে, হাঁচি দাতার ‘আলহামদুলিল্লাহ’ এর জবাবে ‘ইয়ারহামুকাল্লাহ’ যারা বলবে, তাদের উদ্দেশ্যে হাঁচিদাতা আবার বলবে যে, ‘ইয়াহদিকুমুল্লাহু ওয়া ইছলিহু বালাকুম’, অর্থাৎ- আল্লাহ তোমাদেরকে হেদায়েত দান করুন এবং তোমাদের অবস্থা ভালো করুন।
হাঁচি এলে কী পড়তে হয়, তা মুসলমানদের মধ্যে অনেকে জানেন না। না জানা লোকদের জানিয়ে দেয়ারও নানা নিয়মরীতি আছে, বুজর্গানে দ্বীনের জীবনীতে তার শিক্ষণীয় দিক রয়েছে। এখানে বিখ্যাত তাবেঈ হাদিস শাস্ত্রে ‘আমিরুল মোমেনীন’ খেতাবে ভ‚ষিত হজরত আবদুল্লাহ ইবনে মোবারক (রহ.)-এর একটি ঘটনা উল্লেখযোগ্য। একদিন তার মজলিসে এক ব্যক্তির হাঁচি হলে, তিনি ‘আলহামদুলিল্লাহ’ পড়লেন না। এতে ইবনে মোবারক প্রশ্ন করলেন, ‘যদি কোনো ব্যক্তির হাঁচি আসে তাহলে তার কী পড়া উচিত? ’জবাবে লোকটি বললেন, ‘আলহামদুলিল্লাহ’ বলা উচিত।’ তখন ইবনে মোবারক বললেন, ‘ইয়ারহামুকাল্লাহ’। এ কথা শুনে মজলিসে উপস্থিত সবাই হজরত আবদুল্লাহ ইবনে মোবারকের বুদ্ধিমত্তা ও চমৎকার জবাবে বিস্মিত হলেন। তিনি এটা বললেন না যে, হাঁচি এলে ‘আলহামদুলিল্লাহ’ পড়ার জবাবে ‘ইয়ারহামুকাল্লাহ’ বলতে হয়, বরং তা না বলে তিনি হাঁচিদাতাকে কৌশলে এবং ভদ্রভাবে ‘আলহামদুলিল্লাহ’ বলার কথা স্মরণ করিয়ে তার মুখে তা পাঠ করালেন এবং তার জবাবে ‘ইয়ারহামুকাল্লাহ’ বলে অন্যদেরকে জবাবটাও শিখিয়ে দিলেন।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন