হাই তোলাকে হাদিসে ‘তাছাউব’ বলা হয়েছে এবং এটি শয়তানের পক্ষ হতে হয়ে থাকে। শয়তান তাতে খুশি হয়ে হাসে। শয়তানের এ হাসির রহস্য কী তা অনুধাবন করার বিষয়। বলা হয়ে থাকে, হাই তোলার কারণ হচ্ছে মস্তিষ্ক শুষ্ক হয়ে যাওয়া, যার ফলে অবসাদ দেখা দেয় এবং কর্মক্ষমতা হ্রাস পায়, অলসতা দেখা দেয়, আল্লাহকে স্মরণ করা থেকে বিমুখ ভাব তৈরি হয়। আর এটাই শয়তান কামনা করে এবং সে আনন্দে আত্মহারা হয়ে হাসতে থাকে। তাছাড়া হাই তোলার সময় মুখ যখন খুলে যায়, এ সুযোগে শয়তান মুখে ঢুকে পড়ে, যা হাদিসে বর্ণিত হয়েছে।
এবার হাঁচি ও হাই তোলা সংক্রান্ত কয়েকটি হাদিস দেখা যাক: হজরত আবু সাঈদ খুদরী (রা.) বলেন, রসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘যখন তোমাদের মধ্যে কেউ হাই তোলে, হাতদ্বারা মুখ বন্ধ রাখবে। কেননা, মুখে শয়তান প্রবেশ করে।’ (মুসলিম)।
মুখের ভেতর শয়তান প্রবেশ করতে পারলে পেটের অভ্যন্তর পর্যন্ত পৌঁছে যাওয়া তার পক্ষে খুবই সহজ ব্যাপার। পেটের ভিতরে গিয়ে নানা প্রকারের উৎপাত করে সে ব্যক্তিকে আল্লাহর স্মরণ হতে বিরত রাখার কাজে আত্মনিয়োগ করে।
হজরত আনাস (রা.) বর্ণনা করেন, রসূলুল্লাহ (সা.)-এর নিকট দুই ব্যক্তি হাঁচি দেয়। তিনি এক ব্যক্তিকে জবাব দিলেন এবং অপর ব্যক্তির জবাব দিলেন না। সে ব্যক্তি বলল, ‘আপনি তো তার জবাব দিলেন এবং আমার জবাব দিলেন না।’তিনি বললেন, সে ব্যক্তি ‘আলহামদুলিল্লাহ’ বলেছে এবং তুমি বলনি।’ (বোখারি ও মুসলিম)
হজরত আবু মূসা (রা.) বলেন, আমি রসূলুল্লাহ (সা.)-এর কাছে শুনেছি, তিনি বলেন, ‘তোমদের মধ্যে কারো হাঁচি আসে এবং যদি সে আলহামদুলিল্লাহ বলে তাকে জবাব দেবে, আর যদি সে আলহামদুলিল্লাহ না বলে, তাকে জবাব দেবে না।’ (মুসলিম)
হজরত সালমা (রা.) ইবনে আকওয়া বলেন, তিনি রসূলুল্লাহ (সা.)-এর নিকট শুনেছেন এবং এক ব্যক্তি তার নিকট হাঁচি দেয়, তিনি ইয়ারহামুকাল্লাহ বললেন। ঐ ব্যক্তি আবার হাঁচি দেয়, তিনি বললেন, ‘তার জুকাম (কাশ) আছে।’ মুসলিম ও তিরমিজির বর্ণনায় আছে, তিনি তৃতীয়বার বলেছেন, তার জুকাম (কাশি) আছে।
এই হাদিসে দ্বিতীয়-তৃতীয়বার হাঁচি এলে তাকে সর্দি-কাশি তথা রোগ বলা হয়েছে। হাঁচি ও হাই তোলার সময় সাধ্যমতো তা রোধ করার চেষ্টা করতে বলা হয়েছে। কেবল চলমান করোনাভাইরাস নয়, একজন মানুষ যে কোনো সময় হাঁচি দিতে পারে এবং হাই তুলতে পারে। ইসলামের এ ব্যবস্থা সকলের জন্য এবং সব সময়ের জন্য প্রযোজ্য।
মহামারি আকারে এ খোদায়ী পরীক্ষা যুগপৎভাবে সারা বিশে^ ছড়িয়ে পড়ায় মাস্ক পরার প্রয়োজন ও গুরুত্ব বিশেষভাবে দেখা দিলেও মাস্ক ব্যবহারের অপরিহার্যতা ইসলামেরই বাতলানো শিক্ষা। করোনা যখন থাকবে না, তখনো এর ব্যবহারের গুরুত্ব এতটুকু হ্রাস পাবে না।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন