শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

সারা বাংলার খবর

শিবচরে ৪টি স্কুল নদীগর্ভে

শিক্ষা কার্যক্রম ব্যাহত ঝরে পড়ছে শিশুরা

মাদারীপুর জেলা সংবাদদাতা : | প্রকাশের সময় : ১০ সেপ্টেম্বর, ২০২০, ১২:০২ এএম

দেশের অধিকাংশ চরাঞ্চল যখন সুবিধাবঞ্চিত তখন শিবচরের পদ্মা বেষ্টিত চরাঞ্চল ও আড়িয়াল খাঁ তীরবর্তী এলাকার শিক্ষা অবকাঠামো সমতলের সমান হলেও নদীর ভয়ংকর আগ্রাসনে প্রতিবছরই সেইটুকুও কেড়ে নিচ্ছে। অস্থায়ীভাবে জিও ব্যাগ ডাম্পিং করা হলেও স্থায়ী বাঁধ না থাকায় আধুনিকতার ছোয়া পাওয়া চরাঞ্চলের ৪টি ইউনিয়ন রক্ষা করা যাচ্ছে না। শিক্ষা থেকে ছিটকে পড়ছে অনেক শিশু। ভিটেমাটি হারিয়ে সর্বশান্ত হচ্ছে হাজারো পরিবার। মধ্যবিত্ত-নিম্নবিত্তরা এক নিমিষেই হয়ে যাচ্ছে সর্বশান্ত। চলতি বছর এ পর্যন্ত পদ্মা নদীর কড়াল গ্রাসে ৪টি স্কুলসহ সহস্রাধিক ঘর বাড়ি ভাঙন আক্রান্ত হয়েছে। চলতি বছর ৪টি বিদ্যালয়সহ গত ১২ বছরে ২৫টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসহ হাজারো পরিবার বাস্তুহারা হয়েছে।
জানা যায়, শিবচরে পদ্মা নদীর ভাঙা গড়ার খেলায় প্রায় ৪০ বছর আগে ৪ ইউনিয়ন নিয়ে গড়ে ওঠে বৃহৎ চরাঞ্চল। নাগরিক সকল সুবিধা বঞ্চিত ছিল চরাঞ্চল। আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসলে জাতীয় সংসদের চিফ হুইপ নূর-ই-আলম চৌধুরীর উদ্যোগে আধুনিকতার ছোয়া লাগে অবহেলিত চরাঞ্চলে। জনবিচ্ছিন্ন চরাঞ্চল পর্যায়ক্রমে সম্পৃক্ত হয় মূল জনপদে। অসংখ্য সেতু, পাকা সড়ক, বিদ্যুতায়ন, স্কুলগুলোতে পাকা ভবনসহ ব্যাপক উন্নয়নে চরাঞ্চল হয়ে ওঠে দেশের মডেল আধুনিক চরাঞ্চল।
কিন্তু নদী ভাঙন প্রতিরোধে স্থায়ী বাঁধ নির্মাণ না হওয়ায় চরাঞ্চলে উন্নয়নের রুপরেখাগুলো এখন বিলীনের প্রহর গুনছে। চলতি বন্যায় শিবচরের চরাঞ্চলের চরজানাজাত ইলিয়াস আহমেদ চৌধুরী উচ্চ বিদ্যালয়টি ২য় বারের মতো ভাঙন কবলিত হয়। এর আগে ২০১৮ সালে স্কুলটির ৩টি ভবন নদীতে বিলীন হয়। এছাড়াও চলতি বছর বন্দরখোলা ইউনিয়নের নুরুদ্দিন মাদবরকান্দি এস ই এস ডি পি মডেল উচ্চ বিদ্যালয়ের ৩ তলা ভবন, বন্দরখোলার কাজীরসুরা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের দ্বিতল ভবন কাম সাইক্লোন সেন্টার, কাঁঠালবাড়ি ইউনিয়নের ৭৭ নম্বর কাঁঠালবাড়ি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কাম সাইক্লোন সেন্টারের ৩ তলা ভবন নদীতে বিলীন হয়। এছাড়াও সহস্রাধিক পরিবার কোনমতে সহায় সম্বল নিয়ে আশ্রয় নেয় নিরাপদ স্থানে। ভাঙ্গন প্রতিরোধে পানি উন্নয়ন বোর্ড জিও ব্যাগ ডাম্পিং চালিয়ে গেলেও দফায় দফায় পানি বাড়া কমায় ভাঙন আগ্রাসী রুপ নিয়ে চরাঞ্চলকে বিপর্যস্ত করে তুলেছে। এখনো ভাঙন হুমকিতে রয়েছে বন্দরখোলা ইউনিয়ন পরিষদ ভবনসহ বহু গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা, বাজার, মসজিদ, বসত বাড়ি। প্রতি বছরের ভাঙনে চরাঞ্চল রুপ নিয়েছে বিপর্যস্ত জনপদে।
স্কুলছাত্র রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘আমাগো স্কুল বাড়িঘর সব নদীতে ভাইঙ্গা গেছে। ব্রিজের ওপর আশ্রয় নিছি। করোনার জন্য স্কুল বন্ধ। কিন্তু চালু হইলে কই যে পড়মু’। চরজানাজাত ইউনিয়ন পরিষদ সদস্য আ. মালেক তালুকদার বলেন, দেশের অন্যান্য চরের চাইতে আমাদের চরগুলো অনেক আধুনিক ছিল। বড় বড় ভবনের স্কুল, পাকা রাস্তা, ইউনিয়ন পরিষদ ভবন, স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স সবই ছিল। কিন্তু প্রতি বছরের ভাঙনে আমরা এখন নিঃস্ব।
বন্দরখোলা নুরুউদ্দিন মাদবরেরকান্দি এসইএসডিপি মডেল উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আফজাল হোসেন বলেন, আমাদের স্কুলটিসহ চরাঞ্চল এত সুন্দর যে কেউ বলবেই না এটি পদ্মার চর। কিন্তু প্রতি বর্ষায় ভাঙনে আধুনিক চরটি এখন বিলীনের পথে। হাজার হাজার জিও ব্যাগ ডাম্পিং করা হলেও স্থায়ী বাঁধ না থাকায় আধুনিকতার ছোয়া পাওয়া চরটি হারিয়ে যাচ্ছে।
ইলিয়াস আহমেদ চৌধুরী মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সুলতান মাহবুব বলেন, ২০১৮ সালে আমাদের স্কুলটির ৩টি ভবন নদীতে বিলীন হয়। অন্যত্র সরিয়ে নিলেও আবারো স্কুলটি এ বছর নদীতে বিলীন হয়েছে। স্বাভাবিকভাবে চরের শিক্ষা ব্যবস্থা মারাত্মক ব্যাহত হচ্ছে। অনেক শিশুই ঝরে পড়ছে।
উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা মো. রফিকুল ইসলাম বলেন, চলতি বছর পদ্মার ভাঙনে বিলীন হওয়া বিদ্যালয়গুলোর শিক্ষা কার্যক্রম অব্যাহত রাখতে অন্যত্র উচুঁ স্থানে জায়গা নির্ধারণের কাজ চলছে। স্কুল ও সংলগ্ন এলাকাগুলো ভাঙন কবলিত হওয়ায় স্বাভাবিকভাবেই শিক্ষা কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. আসাদুজ্জামান বলেন, নদী ভাঙন প্রতিরোধে চিফ হুইপের নির্দেশে জিও ব্যাগ ডাম্পিং চলমান রয়েছে। যদি স্থায়ী বাঁধের ব্যবস্থা করা যায় তাহলে এই চরাঞ্চল দেশে একটি মডেল চরাঞ্চল হিসেবে রুপ নিত। সকল আধুনিক সুবিধাই এখানে বিদ্যমান ছিল। ভাঙন কবলিত স্কুলগুলোর বিকল্প স্থান নির্ণয়ের কাজ চলছে।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন