শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

অভ্যন্তরীণ

মেঘনায় বিলীনের পথে ২ বাজার

নদীগর্ভে ৩২টি দোকান

কাজী মুহাম্মদ ইউনুছ, কমলনগর (লক্ষীপুর) থেকে | প্রকাশের সময় : ৩০ সেপ্টেম্বর, ২০২০, ১২:০২ এএম

কমলনগর উপজেলার মাতাব্বরহাট বাজার থেকে এক সময় মেঘনার দূরত্ব ছিলো প্রায় ১০ কিলোমিটার। বর্তমানে ওই বাজার থেকে মেঘনার দূরত্ব মাত্র ২শ’ ফুট। তীব্র স্রোত এবং ঢেউয়ের আঘাতে বিলীন হচ্ছে চার যুগেরও পুরনো ঐতিহ্যবাহী এ বাজারটি। বাজারটির মাঝখান দিয়ে বয়ে যাওয়া মাতাব্বরহাট খাল মিলিত হয়েছে মেঘনার নদীর সাথে। বর্তমানে বাজারটি নদীর তীরবর্তী হওয়া জোয়ারের তীব্র স্রোতে ভেঙে গেছে প্রায় ১২টি দোকানঘর। চার যুগেরও আগে প্রতিষ্ঠিত বাজারটিতে প্রায় দুইশ’টি দোকানঘর রয়েছে।
জরুরি কোন পদক্ষেপ না নিলে যে কোন মুহূর্তে বিলীন হয়ে যাবে ঐতিহ্যবাহী এ মাতাব্বরহাট বাজার। এর দুই সপ্তাহ আগে আকস্মিক ভাঙনে চরফলকনের বাঘারহাট বাজারের প্রায় ২০টি দোকানঘর মেঘনার ভাঙনে বিলীন হয়ে গেছে। চরফলকন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় মেঘনার ভাঙনের শিকার হয়ে বাঘারহাট বাজারে অস্থায়ীভাবে স্কুল পরিচালনা করলেও এক বছরের মাথায় ওই স্কুলটিও আবার মেঘনার ভয়াবহ ভাঙনে বিলীন হয়ে গেছে। যে কোন মুহূর্তে বিলীন হয়ে যেতে পারে পুরো ওই বাজারটি।
বাজার ব্যবসায়ীরা ক্ষোপ প্রকাশ করেন বলেন, পানি উন্নয়ন বোর্ড যদি সময় মতো পদক্ষেপ নিতো তাহলে হয়তো এ দু’টি বাজার রক্ষা পেত। তাদের উদাসীনতায় ভাঙনের কবলে এলাকার সাধারণ মানুষ।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, ১৯৭০ সালের দিকে চরকালকিনি ও চরফলকন ইউনিয়ন দু’টিতে মেঘনার ভাঙন শুরু হয়। দীর্ঘ পাঁচ দশকের মেঘনার এ অব্যাহত ভাঙনে চরকালকিনি ইউনিয়নের চরকাঁকড়া, চরসামছুদ্দিন ও তালতলি, সাহেবেরহাট ইউনিয়নের চরজগবন্ধু, মাতব্বরনগর এবং চরফলকন ইউনিয়নের চরকটোরিয়া, চরকৃষ্ণপুর, মাতব্বরচর ও পাতারচর এবং পাটারীরহাট ইউনিয়নের উরিরচর, পশ্চিম চরফলকন ও ডিএস ফলকনসহ ১২টি গ্রাম সম্পূর্ণ মেঘনার গর্ভে বিলীন হয়ে যায়। গত ৪৯ বছরের ভাঙনে মেঘনাগর্ভে বিলীন হয়েছে এসব এলাকার প্রায় ২০ হাজার একর ফসলি জমি, সরকারি-বেসরকারি ১৮টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, ঘূর্ণিঝড় আশ্রয়কেন্দ্র, আশ্রয়ণ কেন্দ্রের পাঁচটি কলোনি, পানি উন্নয়ন বোর্ডের ২৫ কিলোমিটার বেড়িবাঁধ এবং কয়েক কিলোমিটার কাঁচা-পাকা সড়কসহ অসংখ্য মসজিদ, বিভিন্ন স্থাপনা ও হাটবাজার।
পানি উন্নয়ন বোর্ড আপদকালীন চলমান বরাদ্দ দিয়ে জিও ব্যাগে ডাম্পিং ও জিও টিউবে ডাম্পিং করা হলেও কাজের কাজ কিছুই হচ্ছেনা। এ সব লোক দেখানো আপদকালীন প্রকল্পের নামে অবৈধ উপায়ে কোটি কোটি টাকা লোপাট হচ্ছে বলে স্থানীয় মেঘনা পাড়ের মানুষ ক্ষোভ করে জানান।
চরফলকন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারি শিক্ষক আবদুস সহিদ সুমন জানান, ২০১৯ সালের সেপ্টেম্বর মাসে দু’টি দ্বিতল ভবনসহ বিদ্যালয়টি মেঘনার ভাঙনে বিলীন হয়ে যায়। পাঠদান চালিয়ে নিতে লুধুয়া বাঘারহাট বাজারের সরকারি টলঘরে শ্রেণিকক্ষ স্থাপন করে তাদের কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছিলেন। কিন্তু মেঘনার ভয়াবহ ভাঙনে ওই অস্থায়ী বিদ্যালয়টি মেঘনায় ঘিলে খেয়েছে। বর্তমানে অনিশ্চয়তার মধ্যে রয়েছে বিদ্যালয়টি।
মাতাব্বরহাট বাজারের দোকানঘর মালিক মো. ইসমাইল হোসেন মাস্টার, মাতাব্বরহাট থেকে মেঘনার দুরত্ব ছিলো প্রায় ১০ কিলোমিটার। কখনো ভাবিনী মাতাব্বরহাট বাজার মেঘনায় ভাঙনের শিকার হবে। সরকারের উর্ধ্বতন মহলের উদাসীনতায় এ উপজেলার হাজার হাজার মানুষ এখন ভিটেমাটি হারা হয়ে মানবেতর জীবন যাপন করছে।
ল²ীপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) নির্বাহী প্রকৌশলী ফারুক আহমেদ জানান, কমলনগর উপজেলার মাতাব্বরহাট বাজার মেঘনায় ভাঙছে এ বিষয়ে তিনি জানেন না। লোক পাঠিয়ে খোঁজ খবর নিবেন তিনি।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন