শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১, ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

শান্তি ও সমৃদ্ধির পথ ইসলাম

আম্বিয়ায়ে কেরাম (আ.)-এর মরণোত্তর জীবন

এ. কে. এম. ফজলুর রহমান মুনশী | প্রকাশের সময় : ১০ সেপ্টেম্বর, ২০২০, ১২:০০ এএম

আম্বিয়ায়ে কেরাম (আ.) পার্থিব জীবনের পরিসমাপ্তিতে কবরদেশে জীবিত। তাদের এ জীবন দুনিয়ার জীবনের মতোই দৈহিক জীবন বটে। এ জন্য আমাদের পিয়ারা নবী (সা.) ও অন্য আম্বিয়াগণের কবর পাশে দাঁড়িয়ে কোনো ব্যক্তি সালাত ও সালাম পাঠ করলে তারা নিজে তা শ্রবণ করেন এবং সালামের জওয়াব দিয়ে থাকেন। এতদসংক্রান্ত দলিল প্রমাণ নিম্নে সন্নিবেশ করা হলো।

১. আল্লাহপাক আমাদের সতর্ক করে ইরশাদ করেছেন, ‘যারা আল্লাহর পথে মরণ বরণ করেন তাদের সাধারণ মৃত বলো না। বরং তারা জীবিত, কিন্তু তোমরা তা পুরোপুরি অনুধাবন করতে পার না।’ (সূরা বাকারাহ : আয়াত ১৪৫)।
২. অপর এক আয়াতে ইরশাদ হয়েছে, ‘আল্লাহর পথে শাহাদত বরণকারীদের তোমরা মৃত বলো না, বরং তারা সান্নিধ্যে জীবিত, রিজিকপ্রাপ্ত।’ (সূরা আল ইমরান : আয়াত ১৬৯)। এই আয়াতে সুস্পষ্টভাবে ঘোষণা করা হয়েছে যে, যারা সাধারণ শহীদরূপে মৃত্যুবরণ করেন তারা কবরদেশে জীবিত। এই নিরিখে আম্বিয়ায়ে কেরামগণের কবরে জীবিত থাকা অবশ্যই অবধারিত। কারণ তাদের মৃত্যু আল্লাহর পথেই হয়ে থাকে। আল্লাহর পথে ছাড়া কোনো নবী ও রাসূল মৃত্যুবরণ করেন না। এটাই চিরায়ত সত্য। এই সত্যের ব্যতিক্রম চিন্তা করা যায় না।

৩. হযরত আনাস বিন মালিক রা. হতে বর্ণিত আছে, ‘রাসূলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেছেন, আম্বিয়ায়ে কেরাম তাদের কবরে জীবিত, তারা নামাজ আদায় করেন।’ (মুসনাদে আবু ইয়ালা : খন্ড ৩, পৃ. ২১৬)।
৪. আল্লামা মোল্লা আলী কারী (রহ.) উল্লিখিত আয়াতে কারীমার ব্যাখ্যায় উল্লেখ করেছেন যে, ‘আমি বলব, আম্বিয়ায়ে কেরামের মরণোত্তর হায়াতের ব্যাপারে কোনো প্রশ্নই নেই। কেননা, আম্বিয়ায়ে কেরাম সাধারণ শহীদগণ হতে শ্রেষ্ঠ। আর শহীদগণ তো তাদের পরওয়ারদিগারের নিকট জীবিত। সুতরাং আম্বিয়ায়ে কেরাম প্রশ্নাতীতভাবেই মৃত্যুর পর জিন্দা থাকবেন।’ (উমদাতুল কারী : খন্ড ১১, পৃ. ৪০২)।

৫. বোখারী শরীফের ব্যাখ্যাগ্রন্থ ফাতহুল বারী এর ষষ্ঠ খন্ডের ২৮৮ পৃষ্ঠায় উল্লেখ করা হয়েছে যে, ‘নকলী দলিলের ভিত্তিতে সাধারণ শহীদগণ যেহেতু জীবিত প্রমাণিত হয়েছে, আল কোরআনে তার সুস্পষ্ট বর্ণনা আছে, সুতরাং আম্বিয়ায়ে কেরাম অবশ্যই মৃত্যুর পর জীবিত থাকবেন। কারণ তারা শহীদগণ হতে উত্তম।’

৬. নবীগণ কবরে জীবিত ও নামাজরত এই হাদিসটি সম্পূর্ণ সহীহ। (মিরকাত : খন্ড ২, পৃ. ২৬১)। ইমাম বায়হাকী (রহ.) ও আল্লামা মুনযেরী (রহ.) হাদিসটিকে সহীহ বলেছেন। (নায়লুল আওতার : খন্ড ৩, পৃ. ২৬১)।
৭. হযরত আবু হুরায়রা রা. হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেন, ‘কোনো ব্যক্তি আমার ওপর সালাম প্রেরণ করলে আল্লাহপাক আমার রূহ ফেরত দেন। (সুনানু আবু দাউদ : খন্ড ১, পৃ. ২৮৬)। হযরত আবু হুরায়রা রা. হতে অপর এক বর্ণনায় আছে, রাসূলুল্লাহ (সা.) ফরমান, যে ব্যক্তি আমার কবর পাশে দাঁড়িয়ে সালাম জানায়, আমি তা শ্রবণ করি। আর যে দূর হতে সালাত ও সালাম জানায়, তা আমার নিকট পৌঁছে দেয়া হয়। (কানজুল উম্মাহ : খন্ড ১, পৃ. ৪৯২)।

৮. নিঃসন্দেহে মোহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ (সা.) ওফাতের পর কবরদেশে জীবিত আছেন। অনুরূপভাবে অন্যান্য নবী ও রাসূলগণ শহীদের চেয়েও পূর্ণ হায়াতে জীবিত। যাদের সম্পর্কে আল্লাহপাক আল কোরআনে সংবাদ দিয়েছেন। (ওয়াফাউল ওয়াফা : খন্ড ২, পৃ. ৪০৫)।

মোটকথা, গ্রহণযোগ্য ইতিকাদ ও সত্যনির্ভর অভিমত হলো এই যে, নবী করিম (সা.) কবরদেশে জীবিত আছেন, যেমন অন্য সকল নবী ও রাসূল তাদের পরওয়ারদিগারের সমীপে জীবিত আছেন। তাদের রূহসমূহ ঊর্ধ্বজগতের সাথে যেমন সম্পর্ক রাখে, তেমনি নিম্ন জগতের সাথেও সম্পর্ক রাখে। যেমন- পৃথিবীতে অবস্থানকালে উভয় জগতের সাথে সম্পর্ক ছিল। সুতরাং তারা কলবের (অন্তরের) দিক হতে ঊর্ধ্বজগতের এবং কালিব বা বহিরাবরণের দিক হতে নিম্ন জগতের অন্তর্গত। (শরহু আশ শিফা : মোল্লা আলী কারী : খন্ড ৩, পৃ. ৪৯৯)।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (7)
সত্য বলবো ১০ সেপ্টেম্বর, ২০২০, ২:৫৭ এএম says : 2
আম্বিয়া্ কেরামগণ আমাদের জন্য শিক্ষাণীয়।
Total Reply(0)
নাজারেথ স্বনন ১০ সেপ্টেম্বর, ২০২০, ২:৫৮ এএম says : 2
আল্লাহ তাদের জন্য উত্তম পুরস্কার দান করুক।
Total Reply(0)
নীল প্রজাপতি ১০ সেপ্টেম্বর, ২০২০, ২:৫৮ এএম says : 2
লেখককে আমার পক্ষ থেকে লাল গোলাপ শুভেচ্ছা।
Total Reply(0)
রাজিয়া সুলতানা ১০ সেপ্টেম্বর, ২০২০, ২:৫৯ এএম says : 2
বাহিরে ঘুমানোর অভ্যাস ত্যাগ করতে হবে।
Total Reply(0)
saif ১০ সেপ্টেম্বর, ২০২০, ৯:৪৬ এএম says : 0
আল্লাহ জনাব মুন্সি সাহেব ও ইনকিলাব সংশ্লিষ্ট সকলকে এর উত্তম প্রতিধান অবশ্যই দেবেন। এত উত্তম এবং প্রয়োজিনীয় লেখার জন্যে অনেক ধন্যবাদ এবং সেই সাথে দোয় করি আল্লাহ আমাদের বোঝার এবং সেই মাফিক ইমানকে সংশোধন করার তৌফিক প্রধান করুন।
Total Reply(0)
Mujahid Chowdhury ১০ সেপ্টেম্বর, ২০২০, ৯:৫৮ এএম says : 0
আল্লাহ আমাদেরকে ইসলামের পথে সঠিকভাবে চলার তৌফিক দান করুক
Total Reply(0)
Monjur Rashed ১০ সেপ্টেম্বর, ২০২০, ১২:০১ পিএম says : 0
Splendid writing from a true Ashique E Rasul ( sm). Having respect & affection toward Rasul ( sm) is precondition to be accepted to Almighty Allah. So called Muslims who are ignorant about dignity of Rasul ( sm), can learn a lot from this publication. Special thanks to Mr Fazlur Rahman Munshi from core region of my heart.
Total Reply(0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন