দিনাজপুরের ঘোড়াঘাট উপজেলার ইউএনও ওয়াহিদা খানম ও তার পিতার উপর হামলা’র ঘটনা নুতন মোড় নিয়েছে। ঘটনার পরের দিন র্যাব সংবাদ সম্মেলন করে জানিয়েছিল ‘নিছক চুরির জন্য ইউএনও’র উপর আক্রমন হয়েছে’। পরবর্তীতে এ নিয়ে ব্যাপক বিতর্ক-সন্দেহ ও ধূম্রজাল সৃষ্টি হয়। এমনকি সম্প্রতি সচিবালয়ে আইন শৃংখলা রক্ষা কমিটির ঠৈকের পর মুক্তিযোদ্ধা বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক বলেছেন, ‘চুরির জন্য ঘোড়াগাটে ইউএনও’র উপর হামলা মানুষের কাছে বিশ্বাসযোগ্য হয়নি’। গতকাল দিনাজপুর পুলিশ সুপার কার্যালয়ে রংপুর রেঞ্জের ডিআইজি দেবদাস ভট্টাচার্য প্রেস ব্রিফিং করে জানান, এই মামলায় নুতন করে রবিউল নামে একজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তার স্বীকারোক্তি মোতাবেক হামলায় ব্যবহৃত হাতুড়ি উপজেলা চত্বরের একটি পুকুর থেকে এবং মই ও বালতি উদ্ধার করা হয়েছে। গ্রেফতার রবিউল উপজেলা পরিষদের মালি অর্থাৎ চতুর্থ শ্রেনীর কর্মচারী। ইতিমধ্যেই তাকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে।
এদিকে, রাজধানীর ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব নিউরোসায়েন্স হাসপাতালে চিকিৎসাধীন দিনাজপুরের ঘোড়াঘাট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ওয়াহিদা খানমের মাথার সেলাই কাটা হয়েছে। গতকাল ইউএনও ওয়াহিদার শারীরিক অবস্থার ও চিকিৎসা সম্পর্কে সর্বশেষ এ তথ্য জানান হাসপাতালের নিউরো ট্রমা বিভাগের প্রধান নিউরো সার্জন ও গঠিত মেডিকেল বোর্ডের প্রধান মোহাম্মদ জাহেদ হোসেন। তিনি জানান, ওয়াহিদা অবশ ডান হাতের কনুই পর্যন্ত তুলতে ও নাড়তে পারছেন। পা নাড়াতে পারছেন না। তার শারীরিক অবস্থার উন্নতি ধারা অব্যাহত আছে। তাকে অনেকটা শঙ্কামুক্ত বলা যায়। মেডিকেল বোর্ডের প্রধান বলেন, ইউএনও ওয়াহিদার মাথায় যে অপারেশন করা হয়েছিল সেখানকার সেলাইগুলো আজকে আমরা কেটেছি। অপারেশনের জায়গাগুলো ভালো আছে। যেসব জায়গায় সেলাই কেটেছি সেসব স্থানও ভালো আছে। তিনি বলেন, আমরা এখনো তার সব ধরনের খাবার অ্যালাউ করিনি। তিনি সলিড খাবার খাচ্ছেন। তার ব্লাড প্রেসার, সেন্স স্বাভাবিক রয়েছে।
ওয়াহিদাকে এখনো বেডে স্থানান্তরের সিদ্ধান্ত হয়নি জানিয়ে ডা. জাহেদ হোসেন বলেন, আরও দু-একদিন অবজারভেশনে রাখা হবে। আপাতত কেবিনে স্থানান্তর করছি না। কারণ তাকে কেবিনে স্থানান্তর করলে অনেক বেশি ভিজিটর এখানে ভিড় করবেন। সেক্ষেত্রে তার ইনফেকশনের শঙ্কা বেড়ে যায়। সেজন্য আমরা তার শারীরিক অবস্থা বুঝে আরও দু-একদিন পরে এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেব। তিনি বলেন, এটা বলা যায়, যেখানে তার চিকিৎসা চলছে সেটাও কেবিনের মতোই এইচডিইউ। এখানে তার উন্নত চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে। তার অবশ ডান হাতের কনুই পর্যন্ত অংশের উন্নতি হয়েছে। আরও উন্নতির জন্য এখানে দিনে তিন-চারবার তার ফিজিওথেরাপি চলছে বলেও জানান তিনি।
ওয়াহিদাকে শঙ্কামুক্ত বলা যায় কি-না জানতে চাইলে ডা. জাহেদ হোসেন বলেন, তাকে অনেকটা আশঙ্কামুক্ত বলা যায়। তবে তিনি যেহেতু হাসপাতালে চিকিৎসাধীন, সে কারণে যেকোনো মুহূর্তে যেকোনো জটিলতা তৈরি হতে পারে। সেজন্য আমরা তাকে নিবিড় পর্যবেক্ষণে রেখেছি। এটা বলতে পারি, তার স্বাস্থ্যগত আর কোনো জটিলতা নেই।
দিনাজপুর থেকে মাহফুজুল হক আনার জানান, গতকাল আদালতে রবিউলসহ ইউএনও’র বাসার নাইট গার্ড নাদিম হোসেন পলাশকেও আদালতে গ্রেফতার দেখিয়ে হাজির করা হয়। একইসাথে ৭ দিনের রিমান্ডে থাকা যুবলীগ নেতা আসাদুলকেও হাজির করা হয়। এর আগে র্যাব ব্রিফিংকালে আসাদুলের স্বীকারোক্তি মোতাবেক এটিকে নিছক চুরির কথা বলেছিল এবং সেদিন যুবলীগ নেতা জাহাঙ্গীর ও পলাশকে ছেড়ে দেয়ার কথা বলেছিল র্যাব। গতকাল শনিবার আদালতে হাজির করা তিনজনের মধ্যে কেবল রবিউলকে ১০ দিনের রিমান্ড চাওয়া হয়। আদালত ৬ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। অপর দু’জন আসাদুল ও নুতনভাবে গ্রেফতার পলাশকে জেলা কারাগারে প্রেরণ করা হয়। গতকাল পর্যন্ত অফিসিয়ালী মোট ৫ জনকে গ্রেফতার দেখানো হলো।
গতকাল শনিবার সকাল থেকেই রিমান্ডে থাকা আসাদুলকে আদালতে হাজিরের কথা জানা যায়। তার আগে পুলিশ গনমাধ্যম কর্মীদের কাছে প্রেস ব্রিফিং করে হালনাগাত তথ্য উপস্থাপন করার কথা বলেন। বিকেল সাড়ে তিনটায় পুলিশের ডিআইজি প্রেস ব্রিফিং স্থলে হাজির হোন। ব্রিফিং শুরুর আগেই তিনি কোন প্রশ্ন না করা করার জন্য অনুরোধ করেন। মাত্র ৫ থেকে ৬ মিনিটের ব্রিফিংয়ে তিনি জানান, এই মামলায় নুতন করে রবিউল নামে একজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তার স্বাকারোক্তি মোতাবেক হামলায় ব্যবহৃত হাতুড়ি ও মইও উদ্ধার করা হয়েছে। সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে তিনি জানান, রবিউলকে আদালতে হাজির করে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য রিমান্ডে নেয়ার আবেদন করা হবে। জিজ্ঞাসাবাদের মাধ্যমে হামলার কারণসহ আরো কেউ জড়িত আছে কিনা তা তদন্ত করা হবে। পরে আবারও জানানো হবে।
এদিকে টক অব দ্য কান্ট্রি এই হামলার ঘটনা ক্রমশই জটিল হচ্ছে। কেননা গতকাল গ্রেফতারকৃত আসামী রবিউল ও পলাশকে কবে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য পুলিশ হেফাজতে নেয়া হয়েছে তার কোন ব্যাখ্যা দেয়া হয়নি। এছাড়া এখনও কতজন পুলিশ হেফাজতে রয়েছে ব্রিফিংয়ে এ নিয়ে কিছুই বলা হয়নি। তবে হামলায় ব্যবহৃত হাতুড়ি ও মই উদ্ধারের মাধ্যমে পুলিশ এক ধাপ এগিয়েছে বলেই মনে করা হচ্ছে। একজন মালি কী কারণে তার উর্ধ্বতন কর্মকর্তাকে হত্যার উদ্দেশ্যে হামলা চালালো তার কোনো সঠিক ব্যাখ্যা পাওয়া যায়নি। এক কথায় হামলার প্রায় ১১ দিন পরও সঠিক কোনো কারণ বা ক্লু উদঘাটন করা সম্ভব হয়নি এটি এখন স্পষ্ট। #
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন