দিনাজপুরের ঘোড়াঘাট উপজেলার ইউএনও ওয়াহিদা খানম ও তার পিতার উপর হামলা’র ঘটনা নতুন মোড় নিয়েছে। নিছক চুরি থেকে সর্বশেষ চুরির দায়ে শাস্তির কারণে প্রতিশোধ হিসাবেই ইউএনও ওয়াহিদা খানম ও তার পিতার ওপর হামলা হতে পারে বলে ধারণা করছে পুলিশ। তবে এবার যুবলীগ কর্মী আসাদুলের জায়গায় গ্রেফতার করা হয়েছে ইউএনও’র অধঃস্তন কর্মচারী মালি রবিউলকে। সে চুরি করা টাকা ক্রিকেট জুয়ায় লাগিয়েছিল বলে জানায় পুলিশ।
এদিকে, রাজধানীর ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব নিউরোসায়েন্স ও হাসপাতালে চিকিৎসাধীন গত ওয়াহিদা খানমের অবস্থাও আগের চেয়ে কিছুটা উন্নতি হয়েছে বলে জানিয়েছেন চিকিৎসকরা। তার চিকিৎসায় গঠিত মেডিক্যাল বোর্ডের প্রধান অধ্যাপক ডা. জাহেদ হোসেন জানান, ওয়াহিদা ডান হাতের কনুই থেকে নিচের দিকে নাড়াতে পারছেন। হাতের তালু মুষ্টি করতে পারছেন। হালকা খাবার খাচ্ছেন, কথাও বলছেন। বর্তমানে তার শারীরিক অবস্থার অনেক বড় উন্নতি হয়েছে বলে মনে করেন ওই চিকিৎসক। এদিকে, ওয়াহিদা খানমের বাবা মুক্তিযোদ্ধা ওমর আলী শেখকে উন্নত চিকিৎসার জন্য রংপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল থেকে ঢাকার নিউরোসায়েন্স হাসপাতালে আনা হয়েছে। প্যারালাইজড হয়ে পড়া ওমর আলী শেখকে গত শনিবার রাতে রংপুর সিটি করপোরেশনের একটি অ্যাম্বুলেন্সে ঢাকায় পাঠানো হয়। রংপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ডা. ফরিদুল ইসলাম বিষয়টি জানান।
হাসপাতাল সূত্র জানা যায়, ঘটনায় পর দিন সকালে রংপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের সার্জারি ওয়ার্ডে ভর্তি করা হয় তাকে। পরে তাকে নিউরোসার্জারি ওয়ার্ড থেকে ভিআইপি কেবিনে নেয়া হয়। বর্তমানে তার কোমর থেকে নিচের পুরো অংশই প্যরালাইইজড হয়ে পড়েছে। কথা বলতে এবং খেতে পারলেও তিনি চলাচল করতে পারছেন না। আপাতত অস্ত্রোপচারের প্রয়োজন না হলেও পুরোপুরি সেরে উঠতে দীর্ঘ সময় লাগতে পারে বলে জানিয়েছেন চিকিৎসক।
রংপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের নিউরোসার্জারি বিভাগের প্রধান ডা. তোফায়েল হোসেন ভ‚ঁইয়া জানান, ইউএনও ওয়াহিদা খানমের বাবা মুক্তিযোদ্ধা ওমর আলী শেখের আগে থেকে ডায়াবেটিস ছিল। ঘটনার রাতে সন্ত্রাসীরা তার ঘাড়ে আঘাত করে। এতে তার স্পাইনাল কর্ডে মারাত্মক ইনজুরি হয়। সাধারণত এ ধরনের জটিলতায় চার হাত-পা অবশ হয়ে যায়। এক্ষেত্রে তার দুই হাত কিছুটা সচল থাকলেও নাভির নিচ থেকে পুরো অংশ অবশ হয়ে পড়েছে।
দিনাজপুর থেকে মাহফুজুল হক আনার জানান, ইউএনও ওয়াহিদা খানম ও তার পিতার উপর হামলার ঘটনায় এবার গ্রেফতার করা হয়েছে ইউএনও অফিসের মালি রবিউল। চুরি করা টাকা ক্রিকেট জুয়ায় লাগিয়েছিল বলে জানিয়েছে পুলিশ। যেই জুয়ারিকে টাকা দিয়েছিল খোকন নামের যুবককেও পুলিশ গ্রেফতার করেছে এবং বিচারকের ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি রেকর্ড করেছে। কোতয়ালী থানায় সাধারণ জুয়া আইনে গ্রেফতার খোকনকে আদালতের মাধ্যমে জেল হাজতে পাাঠানো হয়েছে। গত শনিবার প্রেস ব্রিফিংয়ে রবিউল ও আগে থেকে রিমান্ডে থাকা আসাদুলকে আদালতে হাজির করার কথা বলা হলেও মুলত ৪ জনকে আদালতে হাজির করা হয়। এরমধ্যে একমাত্র রবিউলকে ১০ দিনের রিমান্ড চাওয়া হলে আদালত ৬ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। তদন্তকারী কর্মকর্তারা আদালত থেকেই তাকে জিঙ্গাসাবাদের জন্য নিয়ে যান। এদিকে ইউএনও’র উপর হামলার ঘটনায় দোষীদের শাস্তি দাবি করে দিনাজপুরে মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ডের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা এবং ঘোড়াঘাটে মুক্তিযোদ্ধারা রবিউলের সর্বোচ্চ শাস্তি দাবিতে মানববন্ধন করেছে।
একটি সুত্র মতে টিএনও’র ব্যাগ থেকে ৫০ হাজার টাকা চুরির অভিযোগে গত জানুয়ারি মাসে রবিউলকে সাময়িকভাবে বরখাস্ত করা হয়। রবিউল এই টাকা ক্রিকেট জুয়ায় লগ্নি করে। গতকাল ক্রিকেটে জুয়া খেলার সাথে জড়িত দিনাজপুর শহরের মুন্সিপাড়া এলাকা থেকে খোকন নামে একজনকে গ্রেফতার করে। বিষয়টি জানান গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি) ওসি ইমাম জাফর। পুলিশের প্রাথমিক জিঙ্গাসাবাদে ইউএনও’র ওপর হামলার কথা স্বীকারকারী রবিউল গত ৬-৭ মাস আগে টিএনও ওয়াহিদা খানমের ব্যাগ থেকে ৫০ হাজার টাকা চুরি করেছিল। সেই টাকার মধ্যে ৪৮ হাজার ৫শ’ টাকা খোকনের কাছে ক্রিকেট জুয়ায় লাগিয়েছিল। গতকাল দিনাজপুর শহরের মুন্সিপাড়া এলাকা থেকে খোকনকে গ্রেফতার করে আদালতে পাঠানো হয়। তার নামে দিনাজপুর কোতয়ালী থানায় জুয়া আইনের ধারায় মামলা দায়ের করা হয়েছে। এসময় খোকনের কাছ থেকে ৩ লাখ ১৬ হাজার টাকা উদ্ধার করা হয়েছে। খোকন এ ব্যাপারে আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে বলেও তদন্তকারী কর্মকর্তা জানান।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন