শনিবার ১৬ নভেম্বর ২০২৪, ০১অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৩ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

ধর্ম দর্শন

আমরা ভুলে গেলাম কেন?

মোঃ শিবলী নোমানী ইবনে সাদেক খান | প্রকাশের সময় : ২৪ সেপ্টেম্বর, ২০২০, ১২:০৭ এএম

আমরা ভূলে গেলাম কেন? আমাদের তো মনে থাকার কথা ছিলো? কি মনে থাকার কথা ছিলো? সবচাইতে গুরুত্বপূর্ণ ওয়াদা, যা আমরা আমাদের রবের সাথে করেছিলাম। আবারো প্রশ্ন ওয়াদাটা কি? ওয়াদা ছিলো ওফার। আমরা ছোট বেলায় পড়েছিলাম, আল কারীমু ইজা ওয়াদা ওফা। অর্থাৎ একজন ভদ্রলোক যখন ওয়াদা করে, সে তা রক্ষা করে। শৈশবে এসে জানতে পারলাম, আমাদের মহানবী হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, “মুনাফেকের অন্যতম আলামত হলো, ওয়াদা ভঙ্গ করা”। এবার আসুন মূল আলোচনায় ফিরে যাই, রবের সাথে ওয়াদা প্রসঙ্গে, শৈশব থেকে যখন তারুণ্যে প্রবেশ করলাম তখন বড় ধরনের একটা ঝাকুনি অনুভব করলাম এই বিষয়টি অবগত হয়ে যে, রবের সাথে কৃত ওয়াদা কিভাবে ভূলে গেলাম? এই বিষয়টি আমাকে দীর্ঘদিন ভূগিয়েছে। আজ যখন তারুণ্য পেরিয়ে যৌবনের প্রান্ত সিমায় অবস্থান করছি তখন দীর্ঘ চলার পথের যত অভিজ্ঞতা, যত পড়াশোনা, সম্মানিত আলেম ওলামাগণের যত ওয়াজ-নসিহত সবকিছু একত্রিত করে একটি মাত্র সিদ্ধান্তে পৌছতে আমাকে অসংখ্যবার গলদঘর্ম হতে হয়েছে আর তা হচ্ছে আমরা কেন রবের সাথে কৃত ওয়াদা ভূলে গেলাম? মহানবী মানে মহাজ্ঞানী তাঁর জ্ঞানের সীমা পরিসীমা বলে কিছু নেই অথবা একমাত্র মহান আল্লাহ্পাক ছাড়া অন্য কেউ চিন্তাও করতে পারবে না মহানবীর জ্ঞানের পরিধির বেপকতা কত? তাই তাঁর প্রতি পূর্ণ সম্মান ও শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করে বলছি, আমরা কি তাহলে মুনাফেক? এই প্রশ্নটা যদি আমার আধ্যাত্বিক শিক্ষকের কাছে পেশ করি আমি নিশ্চিত তিনি বলবেন, আমরা যখন রবের সাথে ওয়াদা করেছিলাম তখন শরীয়তের বিধি-বিধান বলবৎ ছিলো না। আর যখন মহানবী আমাদের ওয়াদা রক্ষার ব্যাপারে শতর্ক করেছেন তখন শরীয়তের বিধি বিধান বলবৎ ছিলো এবং আছে। এই জাতীয় উত্তর শরিয়ত সম্মত বটে, তবে আমি আমার সম্মানিত শিক্ষককে কোন প্রকার বিব্রতকর পরিস্থিতির মুখোমুখি দাঁড় করিয়ে দিতে চাই না। আমার অসংখ্য শিক্ষকগণের মধ্যে যিনি সবচাইতে বেশি প্রসিদ্ধ তাঁর পরিচিতি শুধু বিশ্বব্যাপীই নয় উর্দ্ধ জগতের পরিমন্ডল ব্যাপী বিস্তৃত। নিজের শিক্ষক বলে বাড়িয়ে বলছিনা। মহানবীর ঘোষণা, মহান আল্লাহ্পাক যখন কোন বান্দাকে পছন্দ করেন, তখন হযরত জিব্রাইল আলাইহিস সালামকে নির্দেশ দিয়ে বলেন, আমি আমার অমুক বান্দাকে ভালোবাসি, তুমিও তাঁকে ভালোবাসবে এবং আসমান ও জমিনের সকল মাখলুককে জানিয়ে দিবে তাঁকে ভালোবাসার জন্য। সুবহানাল্লাহ্। আমার শিক্ষকের জ্ঞানের পরিধি বিশ্বব্যাপী বিস্তৃত। আমার শিক্ষকের আধ্যাত্বিকতা আখিয়ার পর্যন্ত উন্নিত। আখিয়ার হলো আধ্যাত্বিকতার একটি শীর্ষ পদ, এ পদে গোটা পৃথিবীর মাত্র ৪ জন আল্লাহ্র ওলি অবস্থান করতে সক্ষম হন এর নিচের পদের নাম আবরার যেই পদে গোটা পৃথিবীর মাত্র ৭ জন আল্লাহ্র ওলী অবস্থান করেন। সংগত কারনে আমি আমার শিক্ষকের নাম প্রকাশ করবো না। আর আজকের আর্টিকেলের বিষয়বস্তু খুবই স্পর্শকাতর। এর পুরো দায়ভার আমি আমার নিজের কাঁধে বহন করতে চাই। অর্থাৎ এই আর্টিকেল লেখার জন্য যদি আমাকে জাহান্নামে যেতে হয় তাতেও কোন আক্ষেপ নেই। এবার আসুন আমরা মূল আলোচনায় ফিরে যাই, আমরা ভূলে গেলাম কেন? আমরা শব্দটি বহুবচন। আমি অন্যের দায়িত্ব নেবো না আবার আমার নিজের সিদ্ধান্ত অন্যের উপর চাপিয়ে দেবো না। তাই আমি স্পষ্টভাবে উল্লেখ করতে চাই। রুহের জগতে মহান আল্লাহ্পাক সকল রুহ্কে প্রশ্ন করেছিলেন “আলাস্তু বি রাব্বিকুম” আমি কি তোমাদের রব নই? উত্তরে সকল রুহ্ সমদ্ধরে বলেছিলো “বালা” অর্থাৎ “হ্যাঁ” আপনি আমাদের রব। পবিত্র কুরআনুল কারীমে মহান আল্লাহ্পাক আমাদেরকে যে তথ্যটি জানিয়েছেন তাতেতো স্পষ্ট বোঝা যায়, আমরা আমাদের রবের সাথে যে অঙ্গিকার করেছি সে অনুযায়ী তাঁর দাসত্ব মেনে নিতে বাধ্য বা অঙ্গিকারাবদ্ধ।

আমি সত্য বলছি, আমার কিন্তু রবের সাথে কৃত ওয়াদার ছিটে ফোটাও মনে নেই। আমি জানি না কার মনে আছে? আর কার মনে নেই? তবে এ ব্যাপারে আমি শতভাগ নিশ্চিত আর কারো মনে থাকুক বা না থাকুক আল্লাহ্র হাবীবের যে মনে ছিলো এ বিষয়ে আমার বিন্দুমাত্র সন্দেহ নেই, কারণ মহানবীকে মহান আল্লাহ্পাক যখন সৃষ্টি করেছেন তখন তো রুহ্রে জগতই সৃষ্টি হয়নি সুতরাং মহানবীকে একথা জিজ্ঞেস করার প্রশ্নই আসেনা। আমি ঈমান এনেছি, সম্মানিত সকল নবী-রাসুলগনের প্রতি। তাই তাঁদের প্রতি পূর্ণ শ্রদ্ধা, বিশ্বাস ও অবিচল আস্থা রেখে বলতে চাই, রুহের জগতে রবের সাথে কৃত ওয়াদার কথা সম্মানিত অন্য সকল নবী-রাসুলগণের স্মরণে ছিলো কিনা? তা আমি জানি না। আমার এই না জানার প্রধান কারণ পবিত্র কুরআনুল কারীম থেকে প্রাপ্ত কিছু তথ্য। অর্থাৎ নবী-রাসুলগণের মধ্যে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ সম্মানিত নবী ও রাসুল হলেন মুসলিম জাতীর পিতা হযরত ইব্রাহীম আলাইহিস সালাম। অন্ধকার পৌত্ত¡লিক জাতির মধ্যে তাঁর জন্ম এবং বেড়ে ওঠা। ছোটবেলা থেকেই পৌত্ত¡লিকদের কুসংস্কার তাঁকে বিবৃতকর অবস্থার মধ্যে ফেলে দেয়। বড় হতে হতে তিনি বুঝে ফেলেন তাঁর সমাজের লোকেরা যে সকল মূর্তির আরাধনায় ব্যস্ত তা মূলত অন্ত সারশূণ্য। তাই তিনি নিজের জীবনকে ঝুঁকির মধ্যে ফেলে দিয়ে মূর্তি পূজার শুধু বিরোধিতা করেননি নিজের হাতে মূর্তি গুড়িয়ে দিয়ে এক অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করেন। যা পরবর্তীতে মক্কা বিজয়ের পর হযরত আলী কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহু অনুসরণ করেন। অর্থাৎ নিজ হাতে মূর্তি পূজারীদের মূর্তি ভেঙ্গে দেওয়া মহানবীর সুন্নত নয় এটা হযরত ইব্রাহীম আলাইহিস সালামের সুন্নত। এ পর্যায়ে যারা পৌত্ত¡লিক, তারা হয়ত হযরত ইব্রাহীম আলাইহিস সালামের প্রতি ক্ষুদ্ধ হতে পারে, তাই তাদের জ্ঞাতার্থে জানাতে চাই, হযরত ইব্রাহীম আলাইহিস সালামের পিতা আজর বা তারেক ছিলেন পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ মূর্তি নির্মাতা। ওয়ারিশ সূত্রে তার পুত্র হযরত ইব্রাহীম আলাইহিস সালামের পূর্ণ অধিকার ছিলো মূর্তিগুলোকে তাঁর নিজের মত করে ব্যবহার করা। যেহেতু মূর্তিগুলো শুধুই মূর্তি, এগুলোর কোন প্রকার প্রয়োজনীয়তা মানুষের আছে বলে তিঁনি আবিষ্কার করতে পারেননি, তাই এগুলোকে তিঁনি নিজ হাতে গুড়িয়ে দিয়েছিলেন। হযরত ইব্রাহীম আলাইহিস সালাম মূর্তি ভেঙ্গেই ক্ষান্ত হননি, বরং তিঁনি হন্যে হয়ে ¯্রষ্টার সন্ধান করতে থাকেন। তাঁর এই অনুসন্ধানি তৎপরতায় তিনি কখনও তারকাকে, কখনও চন্দ্রকে আবার কখনও সূর্যকে ¯্রষ্টা হিসেবে আবিষ্কার করেন, সন্ধ্যালগ্নে যখন সূর্য ডুবে যায় তখন হযরত ইব্রাহীম আলাইহিস সালাম মনে মনে চিন্তা করেন, যিনি ¯্রষ্টা তিনি কখনও হারিয়ে যাবেন না।

অত:পর তিঁনি স্থির চিত্তে ঘোষণা করলেন “ইন্নি ওয়াজজাহ্তু ওয়াজহিয়া লিল্লাজি ফাতারাস সামাওয়াতে ওয়াল আরদা হানিফাও ওমা আনা মিনাল মুশরিকিন।” তাঁর এই অবিস্মরণীয় উক্তি যে মুসলিম মিল্লাতের ভিত্তি তৈরী করবে তখন হয়ত তিঁনি নিজেও তা বুঝতে পারেন নি। (চলবে)
লেখক : গবেষক ইসলামী চিন্তাবিদ

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন