বৃহস্পতিবার ২১ নভেম্বর ২০২৪, ০৬ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৮ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

শান্তি ও সমৃদ্ধির পথ ইসলাম

আমাদের প্রতি রাসূল (সা.)-এর দয়া মায়া ভালোবাসা-১

মুফতি আহমদ যাকারিয়া | প্রকাশের সময় : ৬ অক্টোবর, ২০২২, ১২:১৫ এএম | আপডেট : ১২:১৯ এএম, ৬ অক্টোবর, ২০২২

উম্মতের প্রতি নবী মুহাম্মদ (সা.)-এর ছিল অতুলনীয় ভালোবাসা। উম্মতের প্রতি মহানবী (সা.)-এর ভালোবাসার কথা বর্ণনা করে মহান আল্লাহ বলেন : ‘তোমাদের কাছে তোমাদের মধ্য থেকে একজন রাসূল এসেছেন, যিনি তোমাদের বিপন্নে কষ্ট পান, তিনি তোমাদের কল্যাণকামী, মুমিনদের প্রতি দয়ার্দ্র ও পরম দয়ালু।’ (সূরা তাওবা : ১২৮)। আল্লাহ তায়ালা এ বিষয়ে আরো বলেন : ‘তোমাদের কাছে এসেছেন তোমাদের মধ্য থেকে এক মহামর্যাদাবান রাসূল যিনি তোমাদের ক্ষতিগ্রস্ত ও বিপথগামী হওয়ার খুবই উদ্বিগ্ন এবং সৎকর্মের প্রতি ধাবমান হওয়ার বড়ই আশাবান। তিনি মুমিনদের প্রতি স্নেহশীল দয়ালু’। (সূরা তাওবা : ২২৮)। উম্মতের প্রতি নবী (সা.)-এর ছিল অতুলনীয় ভালোবাসা। উম্মতের প্রতি নবী (সা.)-এর ভালোবাসার কথা আল্লাহ্ বর্ণনা করেছেন কুরআনের বিভিন্ন জায়গায়।

নবী (সা.) দোয়ার সময় সর্বদা উম্মতের কথা স্মরণ করতেন। সবার জন্য তাঁর মন থাকত ব্যাকুল। তাই প্রতিদিন প্রত্যেক নামাজের পর উম্মতের গুনাহের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করতেন তিনি। উম্মুল মুমিনিন আয়েশা (রা.) বলেছেন, ‘রাসূল (সা.)-এর অন্তর প্রসন্ন দেখলে আমি বলতাম, হে আল্লাহর রাসূল, আপনি আমার জন্য দোয়া করুন।’ তিনি বলতেন, ‘হে আল্লাহ, আপনি আয়েশার আগে ও পরের, গোপন ও প্রকাশ্যে করা গুনাহ ক্ষমা করুন।’ রাসূল (সা.)-এর দোয়া শুনে আয়েশা রা. হেসে নিজের কোলে মাথা নিচু করে ফেলতেন। তাঁর হাসিমাখা মুখ দেখে রাসূল (সা.) বলতেন, ‘আমার দোয়াতে কি তুমি আনন্দিত হয়েছ?’ আয়েশা রা. বলতেন, ‘হে আল্লাহর রাসূল, এটা কেমন কথা, আপনার দোয়ায় আমি আনন্দিত হব না?’ তখন রাসূল (সা.) বলতেন, ‘আল্লাহর শপথ, এভাবেই আমি প্রত্যেক নামাজের পর আমার উম্মতের জন্য আমি দোয়া করি।’ (ইবনে হিব্বান : ৭১১১)

আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূল (সা.) বলেছেন, ‘সব নবীর এমন কিছু দোয়া আছে, যা আল্লাহর কাছে কবুল হয়। সব নবী দ্রæত নিজেদের জন্য দোয়া করেছে। আমি তা কিয়ামতের দিন উম্মতের সুপারিশের জন্য গোপন করে রেখেছি। আমার উম্মতের মধ্যে যে আল্লাহর সঙ্গে কোনো কিছু শরিক না করে মৃত্যুবরণ করবে, সে ইনশাআল্লাহ আমার সুপারিশ লাভ করবে।’ (মুসলিম : ১৯৯)।

আবদুল্লাহ বিন আমর ইবনুল আস (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূল (সা.) ইবরাহিম (আ.)-এর কথা তিলাওয়াত করলেন, ‘হে আমার রব, তারা অনেক মানুষকে পথভ্রষ্ট করেছে, তাই যারা আমার অনুসরণ করবে তারা আমার দলভুক্ত, আর যারা আমার অবাধ্য হবে (তাদের ব্যাপারে) আপনি ক্ষমাশীল ও দয়ালু।’ (সূরা ইবরাহিম : ৩৬)। আর ঈসা (আ.) বলেছেন, আপনি তাদের আজাব দিলে তারা আপনার বান্দা, আর ক্ষমা করলে আপনি পরাক্রমশালী ও প্রজ্ঞাময়।’ (সূরা মায়েদা : ১১৮)।

অতঃপর রাসূল (সা.) দুই হাত তুলে বলেন, ‘হে আল্লাহ, আমার উম্মত! আমার উম্মত!’ আল্লাহ তায়ালা বললেন, ‘হে জিবরাইল, মোহাম্মদের কাছে গিয়ে জিজ্ঞেস করো, আপনি কাঁদছেন কেন?’ মহান আল্লাহ সব কিছুই অবগত আছেন। জিবরাইল (আ.) এসে জিজ্ঞেস করলেন। রাসূল (সা.) তাকে নিজের কথা বললেন। আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘হে জিবরাইল, তুমি মোহাম্মদের কাছে গিয়ে বলো, আমি শিগগির আপনার উম্মতের ব্যাপারে আপনাকে সন্তুষ্ট করব এবং আমি আপনাকে কষ্ট দেবো না।’ (মুসলিম : ২০২)

আমরা মোহাম্মদ (সা.)-এর উম্মত। আর মোহাম্মদ (সা.) উম্মতের সকল বিষয়ে খেয়াল রাখতেন। উম্মতের ক্ষতিকর বিষয়সমূহ হলো যে, তার বিপথগমিতা, ত্রæটিমুক্ত আমল, পার্থিব জীবনে সুখময়ভাবে জীবন পরিচালনা করা, পরকালীন যাবতীয় ক্ষতিকর ও অনিষ্টকর বিষয় থেকে বাঁচানোর জন্য প্রাণান্তকর চেষ্টা করেছেন সারা জীবনভর।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (3)
Antara Afrin ৬ অক্টোবর, ২০২২, ৬:২৯ এএম says : 0
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উম্মতের ক্ষতি হবে এমন সব বিষয়ের ব্যাপারে খুব বেশি চিন্তা করতেন। উম্মতকে ক্ষতি থেকে বাঁচাতে তিনি সব সময় আমল-উপদেশসহ সমস্যা সমাধানের চিন্তা-ভাবনায় নিয়োজিত থাকতেন। আপনজন কিংবা সম্মানিত কোনো ব্যক্তি ঈমান না আনলে তাঁর চিন্তা-পেরেশানি আরও বেড়ে যেত।
Total Reply(0)
Rabbul Islam Khan ৬ অক্টোবর, ২০২২, ৬:২৯ এএম says : 0
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উম্মতের প্রতি বিশেষ দয়াশীল ছিলেন। এমনকি তাঁর জীবদ্দশায় যেসব উম্মতের জন্ম হয়নি অর্থাৎ অনাগত উম্মত; তাদের প্রতিও ছিল বিশ্বনবির অগাধ ভালেবাাসা। কেননা তারা না দেখেই বিশ্বনবির রেসালাতের স্বীকৃতি দেবে।
Total Reply(0)
Md Ali Azgor ৬ অক্টোবর, ২০২২, ৬:২৮ এএম says : 0
নিশ্চয়ই তোমাদের নিজেদের মধ্য থেকে তোমাদের কাছে একজন রাসুল এসেছেন; (তোমাদের জন্য তাঁর মায়া এতইবেশি যে) তোমাদেরকে যা কিছু কষ্ট দেয় তা তার কাছে খুবই কষ্টদায়ক। তিনি তোমাদের কল্যাণকামী, মুমিনদের প্রতি স্নেহশীল, পরম দয়ালু।’ (সুরা তাওবা : আয়াত ১২৮)
Total Reply(0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন