মঙ্গলবার ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ১১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৩ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

শান্তি ও সমৃদ্ধির পথ ইসলাম

ডিপ্রেশন ও আত্মহত্যা কারণ ও প্রতিকার

উবায়দুর রহমান খান নদভী | প্রকাশের সময় : ২৭ সেপ্টেম্বর, ২০২০, ১২:০১ এএম

সম্প্রতি ডিপ্রেশন নামে একটি শব্দ খুব জোরেশোরে শোনা যাচ্ছে। কিশোর, তুরুণ, যুবা, বৃদ্ধ সবাই নাকি ডিপ্রেশনে ভুগে। মানুষ যখন জীবনের মানে খুঁজে পায় না, তখন সে কি করবে, কেন করবে সে ব্যাপারে তার কোনো আইডিয়া থাকে না। সে তখন মানুষের সঙ্গ এড়িয়ে চলতে পছন্দ করে। একাকী থাকাটাকে ভালোবাসে। কিন্তু সঠিক কোনো রাস্তা না পেয়ে সে হতাশ হয়ে যায়। এক সময় সে আর তার এই একাকিত্ব, হাতাশা আর সাইতে পারে না। এই একাকিত্ব, হতাশা তার জীবনের প্রতি ভালোবাসা ধ্বংস করে দেয়। তখন সেই মানুষ তার অন্তরে পাওয়া দুঃখ ও দুশ্চিন্তার ভার বইতে না পেরে আত্মহননের পথ বেছে নেয়। প্রকৃত ঈমানদার কোনোদিন ডিপ্রেশনে ভুগে না। আত্মহত্যা করে না।

উন্নত বিশ্বে নানা কারণে মানুষ আত্মহত্যা করে। উদ্বেগ হতাশা ও দুঃখ থেকে যেমন মানুষ আত্মহত্যা করে তেমনই দুনিয়ার সকল প্রাপ্তি পরিপূর্ণ হয়ে মানুষ যখন সুখের প্রতিও বিতৃষ্ণ হয়ে উঠে তখন সে আত্মহত্যার প্রবণতায় ভোগে। দলে দলে আত্মহত্যার এ কাজটিকে জাপানিরা বলে হারিকিরি। জীবনকে ভোগ করতে করতে মানুষ যখন ক্লান্ত হয়ে যায় তখনও তার মন তৃপ্ত হয় না। কারণ, মন এ পৃথিবীতে তৃপ্ত হওয়ার নয়।

মানুষ মূলত জান্নাতে সৃষ্ট জীব। তার আত্মাটি পৃথিবীতে বহিরাগত। এখানে নিজেকে মানিয়ে নিতে তার কষ্ট হয়। তবে দেহটি যেহেতু তার মাটির তৈরি তাই পৃথিবীকে তার ভালো লাগে। এ ভালোলাগা ও না লাগার সংঘাত সয়েই মানুষকে বাঁচতে হয়। পৃথিবীর বৈরিতা মোকাবিলা করার জন্য আল্লাহ মানুষকে হেদায়াতের পথ দান করেছেন। যারা এ পথ অনুসরণ করে তারাই পারে সফলভাবে পৃথিবীর সকল বৈরিতা মোকাবিলা করতে।

এরপরও যদি হৃদয় শান্ত না হয় তাহলে এর একমাত্র ওষুধ আছে আল্লাহর জিকিরের মধ্যে। কোরআনে বলা হয়েছে, ‘যারা ঈমানদার তারা আল্লাহকে স্মরণ করে মনে শান্তি পায়। মনে রেখ, আল্লাহর জিকিরের মধ্যেই আছে অন্তরের প্রশান্তি।’ প্রাত্যহিক উদ্বেগ, দুঃখ-দুশ্চিন্তা মোকাবিলার জন্য আল্লাহ অনেক ওষুধ দিয়েছেন।

যেমন, আল্লাহ নির্ভরতা, ধৈর্য, সন্তুষ্টি, লোভহীনতা ও কৃতজ্ঞতাবোধ। আল্লাহর রাসুল সা., সাহাবায়ে কেরাম ও পীর-মাশায়েখগণ মানুষকে এসব গুণ শিক্ষা দিয়েছেন। হাদীসে এসেছে, হতাশা কুফুরীর অন্তর্ভুক্ত। নবী করিম সা. বলেছেন, আত্মহত্যা মহাপাপ। যে আত্মহত্যা করে তার পরকালীন শাস্তি অনন্তকাল সে নিজেকে হত্যা করতে থাকবে। আর সে চিরস্থায়ী জাহান্নামী হবে।

আত্মহত্যা থেকে মানুষ বাঁচতে পারে তার ঈমানের কারণে। যখন সে বোঝে যে আমার সকল অবস্থা সম্পর্কে আল্লাহ পাক জানেন। তিনি আমার বর্তমান বিপদ বা হতাশা সম্পর্কেও জানেন। তার জানার বা ইচ্ছার বাইরে কিছু নেই। আমার উচিত সবর করা। বিপদ তিনিই দূর করবেন। আমার মালিক আমি নই। নিজেকে হত্যা করাও অপর মানুষকে হত্যা করার সমান অপরাধ।

তাছাড়া আমি মৃত্যুর মধ্যে সমাধান খুঁজছি বটে, তবে এখানে সমাধান নেই। বরং আরও বড় বিপদ ও আযাবের মুখে আমি নিজেকে ঠেলে দিচ্ছি। যা থেকে মুক্তি পাওয়ার কোনো পথ আমার নেই। এক কবি বলেছিলেন, ‘এয়ছে তো হাম ক্যাহতে হ্যায় কে হাম মরজায়েঁেঙ্গ-মরকে ভী আগার চাইন না মিলা তো কিধার জায়েঁঙ্গে।’

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (8)
Md Shafiul Alam ২৭ সেপ্টেম্বর, ২০২০, ৫:২৩ এএম says : 0
আত্মহত্যা বর্তমানে এক মহামারির রূপ ধারণ করেছে। প্রতিনিয়ত বাড়ছে আত্মহত্যার ঘটনা। প্রতি ৪০ সেকেন্ডে বিশ্বের কোথাও না কোথাও কেউ না কেউ আত্মহত্যা করছে।
Total Reply(0)
মোঃ তোফায়েল হোসেন ২৭ সেপ্টেম্বর, ২০২০, ৫:২৩ এএম says : 0
আত্মহত্যা বা আত্মহনন (ইংরেজি: Suicide) হচ্ছে কোনো ব্যক্তি কর্তৃক ইচ্ছাকৃতভাবে নিজের জীবন বিসর্জন দেয়া বা স্বেচ্ছায় নিজের প্রাণনাশের প্রক্রিয়াবিশেষ। ল্যাটিন ভাষায় সুই সেইডেয়ার থেকে আত্মহত্যা শব্দটি এসেছে, যার অর্থ হচ্ছে নিজেকে নিজে হত্যা করা।
Total Reply(0)
কামাল রাহী ২৭ সেপ্টেম্বর, ২০২০, ৫:২৪ এএম says : 0
আত্মহত্যার প্রধান কারণ হলো মানসিক বিকৃতি। ২৭% থেকে ৯০% এরও বেশি সময় আত্মহত্যার সাথে মানসিক সমস্যার সম্পর্ক থাকে।
Total Reply(0)
হাসান মুনাব্বেহ সাআদ ২৭ সেপ্টেম্বর, ২০২০, ৫:২৪ এএম says : 0
জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটের দেয়া তথ্য মতে, বাংলাদেশে মোট জনসংখ্যার ৩১ শতাংশ বা প্রায় ৫ কোটি মানুষ কোন না কোন মানসিক সমস্যায় আক্রান্ত।
Total Reply(0)
মেহেদী ২৭ সেপ্টেম্বর, ২০২০, ৫:২৪ এএম says : 0
আত্মহত্যার ব্যবহারিক নানাবিধ কারণের মাঝে রয়েছে স্বামী-স্ত্রীর মনোমালিন্য, যৌতুকের কারণে ঝগড়া-বিবাদ, বাবা-মা ও ছেলে-মেয়ের মাঝে মনোমালিন্য, প্রেম-বিরহ, মিথ্যা অভিনয়ের ফাঁদে পড়া, কারও কাছে পরাজয় বরণ করা, ধনদৌলত আত্মসাৎ হয়ে ফতুর হওয়া, দীর্ঘস্থায়ী রোগ যন্ত্রণায় জীবনযাপন করা, পরীক্ষায় ব্যর্থ হওয়া, জীবনের লক্ষ্য-উদ্দেশ্য ও আত্মবোধ সম্পর্কে অবহিত না হওয়া, ধর্মীয় রীতিনীতি, আদর্শ সম্পর্কে অবগত না হওয়া, জাতীয় পর্যায়ে ধর্মীয় ও নীতিনৈতিকতাপূর্ণ শিক্ষার বাস্তবায়ন না থাকা ইত্যাদি।
Total Reply(0)
বাতি ঘর ২৭ সেপ্টেম্বর, ২০২০, ৫:২৪ এএম says : 0
ইসলামের দৃষ্টিতে আত্মহত্যা কবিরা গুনাহ। শিরকের পর সবচে বড় গুনাহ। ফকিহ ইমামগণের সর্বসম্মত মতে আত্মহত্যা হারাম। আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘আর তোমরা নিজেরা নিজেদের হত্যা করো না। নিশ্চয়ই আল্লাহ তোমাদের প্রতি দয়ালু। আর যে কেউ যুলুম করে, অন্যায়ভাবে তা (আত্মহত্যা) করবে, অবশ্যই আমি তাকে অগ্নিদগ্ধ করবো, আল্লাহর পক্ষে তা সহজসাধ্য।’ [সুরা নিসা, ৪ : ২৯-৩০]
Total Reply(0)
SALIM SINHA ২৭ সেপ্টেম্বর, ২০২০, ৯:০১ এএম says : 0
FROM ALLAMA NADVI SAHEB WE WANT MORE DISCUSSION ON IT. IT IS SEEN THAT WHEN ANY PERSON DECIDED TO SUICIDE HE /SHEE BECOMES DETACHED FROM SOCIAL INTERACTION. HERE NADVI SAHEB TOLD ABOUT JIKR. IT WILL BE GOOD IF YOU TELL WHAT JIKR A PERSON CAN DO & IN WHICH METHOD. EVEN A PERSON CAN GO TO AN WISE ISLAMIC SCHOLAR. SHOWING FEAR OF PUNISHMENT IS NOT ENOUGH FOR A SUICIDAL ATTITUDE PERSON . GOOD COUNSELLING IS ESSENTIAL . AN WISE ISLAMIC SCHOLAR CAN DO IT VERY WELL . IT WILL BE GOOD IF NADVI SAHEB DISCUSS WITH PSYCRIATIST & I THINK THEN ALLAMA SHAHEB CAN SUGGEST MORE TO US . ITS REALLY A MATTER OF CONCERN FOR OUR YOUTH NOW A DAYS.
Total Reply(0)
Madhumita Maity ৩১ অক্টোবর, ২০২০, ১:২৩ পিএম says : 0
কিভাবে সংসার করে রে ভাই এর সাথে একমত হতে পারলাম না বলে অভিযোগ উঠেছে এক জন করে শিক্ষক ও তার স্ত্রী ও দুই বছর আগে এই দিনে দিনে আরো অনেক কিছু জানতে পারলাম যে কোন
Total Reply(0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন