গত ১৪ সেপ্টেম্বর হঠাৎ করে ভারত পেঁয়াজ রফতানি নিষিদ্ধ ঘোষণা করলে বাংলাদেশে রাতারাতি পেঁয়াজের দাম দ্বিগুণের বেশি বৃদ্ধি পায়। বাজার থেকে পেঁয়াজ প্রায় উধাও হয়ে যায়।
ক্রেতাদের অনেকে পেঁয়াজ কিনতে হুমড়ি খেয়ে পড়ে। দাম আরও বাড়তে পারে, এই আশঙ্কায় তারা যে যতটুকু পারে, পেঁয়াজ কিনে ঘরে মজুদ করে। এ প্রসঙ্গে অনেকগুলো বিষয় সামনে এসে পড়ে। প্রথমত, কোনো দেশ আমদানিকারক দেশকে না বলে- না কয়ে হুট করে পণ্যাদির বিশেষ করে খাদ্যপণ্যের রফতানি নিষিদ্ধ করতে পারে না। ভারত এটা করে সাধারণ নিয়ম ও সৌজন্যের খেলাপ করেছে। এতে বাংলাদেশ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বাংলাদেশের ক্রেতা-ভোক্তারা অধিক দামে পেঁয়াজ কিনে ফতুর হয়েছে। এ ঘটনায় শিক্ষা হয়েছে : কোনো খাদ্যপণ্যের ক্ষেত্রে বিশেষ কোনো দেশের ওপর সর্বাংশে নির্ভরশীল হওয়া উচিৎ নয়।
দ্বিতীয়ত, ভারতের পেঁয়াজ রফতানি নিষিদ্ধের ঘোষণা প্রচারের পরপরই বাংলাদেশে পেঁয়াজের সঙ্কট দেখা দেয়ার কথা নয়। যে কোনো সঙ্কট দেখা দেয়, তা ‘মনুষ্যসৃষ্ট’। এই ‘মনুষ্যরা’ ব্যবসায়ী। তারা অধিক মুনাফার আশায় বাজার থেকে পেঁয়াজ সরিয়ে গুদামজাত করে। এভাবে পেঁয়াজের কৃত্রিম সঙ্কট সৃষ্টি করে যথেচ্ছ দাম বাড়িয়ে অস্বাভাবিক মুনাফা লুটে নেয়। এরকমভাবে পণ্য মজুদ ও দাম বাড়ানো অন্যায়, অমানবিক ও অপরাধতুল্য।
তৃতীয়ত, যে কোনো কারণেই হোক, বাজারে কোনো পণ্যের সঙ্কট দেখা দিলে বেশি বেশি সেই পণ্য কেনা ক্রেতা-ভোক্তাদের মোটেই উচিত নয়। পেনিক বায়িং একেবারেই পরিত্যাজ্য। এতে পণ্যের সঙ্কট আরও বাড়ে; দামও বাড়ে। অন্যরা পণ্য থেকে বঞ্চিত হয় কিংবা তাদের আরও অধিক দামে পণ্য কিনতে হয়। তাই সঙ্কটকালে ক্রেতা-ভোক্তাদের পণ্য কেনার ব্যাপারে সংযম প্রদর্শন করা উচিত।
শুধু পেঁয়াজ নয়, ইতোমধ্যে চালসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় সকল পণ্যই সাধারণ ক্রেতাদের ক্রয়ক্ষমতার বাইরে চলে গেছে। পণ্যের সঙ্কট এর কারণ নয়। কারণ, ব্যবসায়ীদের মজুদদারী ও মুনাফা অর্জনের অন্যায্য প্রবণতা। ব্যবসাকে আল্লাহপাক হালাল করেছেন। রুজি-রোজগারের মাধ্যম করেছেন। তাই ব্যবসায়ীদের তো উচিত আল্লাহর নির্দেশিত পথে ব্যবসা করা; সীমা লঙ্ঘন না করা। মজুদদারী ও পণ্যের কৃত্রিম সঙ্কট সৃষ্টি করে দাম বাড়ানো নিষিদ্ধ।
রাসূল (সা.) বলেছেন: যে ব্যক্তি কোনো খাদ্যপণ্য ৪০ দিনের বেশি মজুদ করে রাখবে সে ওই খাদ্যপণ্য সাদকা করে দিলেও তার গুদামজাত করার গুনাহ মাফ হবে না। পণ্য গুদামজাত করে, দাম বাড়িয়ে যে মুনাফা ব্যবসায়ীরা অর্জন করে, তা পরিশুদ্ধ উপার্জন বলে গণ্য হতে পারে না। আর কারও উপার্জন যদি পবিত্র, পরিশুদ্ধ ও হালাল না হয়, তবে তার দোয়া কবুল হয় না। একটি হাদিসে আছে : হযরত আনাস (রা.) বলেছেন, আমি একদিন রাসূল (সা.)-এর কাছে আরজ করলাম, হে আল্লাহর রাসূল (সা.), আল্লাহর দরবারে দোয়া করুন যেন আমার দোয়া কবুল হয়।
রাসূলে করিম (সা.) বললেন, হে আনাস, তোমার উপার্জনকে পবিত্র ও হালাল রাখ। তবে তোমার দোয়া কবুল হবে। কেননা, কেউ হারাম খাদ্যের এক লোকমা মুখে দিলেও ৪০ দিন পর্যন্ত দোয়া কবুল হয় না। অন্য এক হাদিসে আছে : হযরত আবু বকর (রা.) বলেছেন, আমি রাসূল (সা.) কে বলতে শুনেছি, যে শরীর হারাম খাদ্য দিয়ে পরিপূর্ণ হয়, জাহান্নামই তার শ্রেষ্ঠ স্থান।
রাসূলুল্লাহ (সা.) আরও বলেছেন, যে ব্যক্তি ৪০ রাত্রি খাদ্য মজুদ করে রাখলো, সে আল্লাহ থেকে নিঃসম্পর্ক হয়ে গেল এবং আল্লাহ নিঃসম্পর্ক হয়ে গেলেন তার থেকে। অন্য এক হাদিসে তিনি খাদ্য মজুদকারীকে অপরাধী হিসাবে অভিহিত করেছেন। বলেছেন : অপরাধী ছাড়া কেউ খাদ্য মজুদ করে না। আল্লাহপাক পবিত্র কোরআনে কাফির ও খোদাদ্রোহীদের সম্পর্কে ‘অপরাধী’ শব্দটি ব্যবহার করেছেন। রাসূল (সা.) যখন মজুদদারদের সম্পর্কে এই অপরাধী শব্দটিই ব্যবহার করেন, তখন মজুদরারীর অপরাধ কতটা গুরুতর, সহজেই অনুধাবন করা যায়।
পণ্য মজুদকারী ভালো লোক হতেই পারে না। রাসূলুল্লাহ (সা.) তাকে অত্যন্ত খারাপ লোক বলে উল্লেখ করেছেন। বলেছেন ; পণ্য মজুদকারী ব্যক্তি অত্যন্ত খারাপ লোক হয়ে থাকে। তার একটি স্বভাব বা প্রবণতার কথা বলেছেন এভাবে : সে যদি শুনতে পায় পণ্যমূল্য কমে গেছে, তাহলে তার খুব খারাপ লাগে, আর যদি শোনে পণ্যমূল্য বৃদ্ধি পেয়েছে, তবে উল্লসিত হয়ে উঠে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন