পেশা হিসেবে ব্যবসা অতুলনীয়। মানুষের জন্য প্রয়োজনীয় পণ্য উৎপাদন বা আমদানি করে তাদের কাছে পৌঁছে দেয়ার মতো মানবিক কল্যাণমূলক কাজ আর হতে পারে না। এর মধ্যে তার রিজিকের সংস্থানও রয়েছে। ব্যবসায়ীকে তাই বিশ্বস্ত ও সৎ হতে হয়। আল্লাহর রাসূল সা. বলেছেন : বিশ্বস্ত ও সত্যাশ্রায়ী ব্যবসায়ী কেয়ামতের দিন শহীদদের সঙ্গে অবস্থান করবে। অন্য একটি হাদিসে আছে : ওয়াসিলা ইবনুল আসমা (রা.) বলেছেন : রাসূল (সা.) আমাদের কাছে আসতেন- আমরা ছিলাম ব্যবসায়ী এবং বলতেন : হে ব্যবসায়ীরা তোমরা মিথ্যা কথা ও মিথ্যা কারবার থেকে অবশ্যই দূরে সরে থাকবে।
আল্লাহ ও তার রাসূল (সা.)-এর পছন্দের ব্যবসায়ী সেই, যে বিশ্বস্ত ও সততাপরায়ন, যে মিথ্যা কথা বলে না ও মিথ্যা কারবার করে না। বস্তুত তারাই কেয়ামতের দিন উচ্চ মর্যাদা লাভ করবে। একটি হাদিসে মহানবী (সা.) বলেছেন : কেয়ামতের দিন আল্লাহতায়ালা তিনজনের প্রতি তাকাবেন না। তাদের মধ্যে একজন হচ্ছে মিথ্যা কসম করে যে লোক তার পণ্য বিক্রি করে।
ব্যবসায়ীদের এসব চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য থাকা অপরিহার্য। এ ছাড়াও তাদের আরও কিছু শর্ত মেনে চলতে হয়। পণ্য মজুদ না করা, উদ্দেশ্যমূলকভাবে পণ্যের দাম না বাড়ানো, অধিক মুনাফা না করা, ওজনে কম না দেয়া ইত্যাদির পাশাপাশি তাকে ইসলামের হালাল-হারাম বিধি মেনে চলতে হয়। মিথ্যা কসম, ধোঁকাবাজি, কেনার সময় বেশি নেয়া ও বেচার সময় কম দেয়া- এসব নিষিদ্ধ। রাসূল (সা.) বলেছেন : কসম দিয়ে পণ্য বিক্রি করলে বরকত হয় না। পণ্য বিক্রির সময় পণ্যে কোনো দোষ-ত্রুটি থাকলে ক্রেতার কাছে তা প্রকাশ করা উচিত। রাসূল (সা.) বলেছেন : দোষত্রুটি না বলে পণ্য বিক্রি করা হালাল নয়। একবার তিনি বাজারে গিয়ে দেখলেন, এক ব্যক্তি শস্য বিক্রি করছে। তা তার খুব পছন্দ হলো। পরে তিনি স্ত‚পের মধ্যে হাত ঢুকিয়ে দিলেন। দেখলেন, হাত ভিজে গেল। তখন তিনি বিক্রেতাকে জিজ্ঞেস করলেন, হে শস্য ব্যবসায়ী, এসব কি? সে বলল, বৃষ্টির পানিতে ভিজে গেছে। তখন নবী করিম (সা.) বললেন : তাহলে তুমি এ ভিজে শস্যগুলো ওপরে রাখলে না কেন, তাহলে ক্রেতারা দেখতে পেত? এ তো ধোঁকা। আর যে আমাদের সঙ্গে ধোঁকাবাজি করবে সে আমাদের দলভুক্ত নয়।
পণ্য বিক্রির সময় সঠিকভাবে মেপে দেয়ার জন্য কঠোর তাগিদ দিয়েছেন আল্লাহর নবী (সা.)। সঠিক দাঁড়িপাল্লা দিয়ে মাপার কথাও তিনি বলেছেন। বলেছেন : এ নীতি অত্যন্ত কল্যাণকর এবং পরিণতির দিক দিয়ে খুবই ভালো ও উত্তম। তার এ নির্দেশনার ব্যত্যয় ঘটলে পরিণতি হবে ভয়াবহ। তার ভাষায় : মাপে-ওজনে যারা কম করে, তাদের জন্য বড়ই দুঃখ। তারা যখন লোকদের কাছ থেকে কিছু মেপে নেয় তখন পুরোপুরি গ্রহণ করে। আর যখন তারা মেপে বা ওজন করে দেয়, তখন কম করে দেয়। তারা-কি ভেবে দেখে না যে, তারা সেই কঠিন দিনে পুনরুত্থিত হবে, যেদিন সমস্ত মানুষ রাব্বুল আলামীনের সামনে দাঁড়িয়ে যাবে।
যেসব পণ্য হারাম বা নিষিদ্ধ করা হয়েছে তা খাওয়া ও ব্যবহার করা হারাম। ওইসব পণ্যের উৎপাদন ও ক্রয় বিক্রয়ও হারাম। শূকর, মদসহ যাবতীয় নেশাদ্রব্য হারাম। এছাড়া মূর্তি, ক্রুশ প্রতিকৃতি ইত্যাদিও এই পর্যায়ে পড়ে। এসবের উৎপাদন, ক্রয়-বিক্রয় হারাম। এসব থেকে উপার্জিত অর্থও হারাম। একটি হাদিসে আছে : রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন : আল্লাহ ও তার রাসূল মদ, মৃতজীব, শূকর ও মূর্তি বিক্রয় হারাম করে দিয়েছেন। অপর এক হাদিসে তিনি বলেছেন : আল্লাহ যখন কোনো জিনিস হারাম করেন, তখন সে জিনিসের বিক্রয়মূল্যও হারাম করেন।
ব্যবসায়ীদের উচিত সততা ও বিশ্বস্ততার সঙ্গে ব্যবসা করা। সেই সঙ্গে পণ্য মজুদ করাসহ সকল প্রকার অন্যায়, ফাঁকিবাজি, ধোঁকাবাজি, মিথ্যাচার ও হারাম পণ্যের বেচা-কেনা পরিহার করা। আমরা আশা করব, ইসলামের বিধিনিষেধ মেনে ব্যবসায়ীরা ব্যবসা করবে। এর মধ্যেই তাদের ও সকলের কল্যাণ নিহিত রয়েছে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন