সিলেট এমসি কলেজ ছাত্রাবাসে গণধর্ষণের ঘটনায় অন্য আসামিদের মতো রিমান্ড ভাগ্য জুটেছে আসামি তারেকুল ইসলাম তারেক ও মাহফুজুর রহমান মাসুমের। তাদেরকে ৫ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালতের বিচারক। তবে, আদালতে ‘নিজকে নির্দোষ দাবি করে বক্তব্য দিয়েছে আসামি। তারেক ও মাসুমসহ এ নিয়ে মামলায় এজহারনামীয় ৬ আসামি ছাড়াও সন্দেহভাজন আরো ২ জনের রিমান্ড মঞ্জুর হলো আদালতে।
৫ দিনের রিমান্ডে তারেক ও মাহফুজ :
গণধর্ষণ মামলার অন্যতম আসামি তারেকুল ইসলাম তারেককে গতকাল বিকেল ৪টায় মহানগর চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে হাজির করে ৭ দিনের রিমান্ড আবেদন করেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ইন্দ্রানীল ভট্টাচার্য। শুনানি শেষে ৫ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন আদালতের বিচারক আবুল কাশেম।
এর আগে গত মঙ্গলবার সন্ধ্যায় র্যাব-৯ এর একটি দল তাকে দিরাই উপজেলার গরমা গ্রামে তার আত্মীয়ের বাড়ি থেকে তাকে গ্রেফতার করা হয়ে। মঙ্গলবার বিকাল ৩ টার দিকে মোবাইল ট্র্যাকিংয়ের মাধ্যমে উপজেলার জগদল ইউনিয়নের কাওয়াজুড়ি গ্রামের সমছু মিয়ার স্ত্রী ও পুত্র বদরুলকে আটক করে র্যাব। এরপর সন্ধ্যায় গরমা গ্রামের আলি হোসেনের বাড়ি থেকে গ্রেফতার করা হয় তারেককে। গত তিনদিন আগে দিরাই উপজেলার ভাটিরগাও গ্রামের সাদিক মিয়ার বাড়িতে দাড়ি-চুল কেটে ছদ্মবেশ ধারণ করেছিল তারেক। অবশেষে র্যাব গ্রেফতার পর তাকে শাহপরান থানা পুলিশে হস্তান্তর করে।
এদিকে মামলায় আরেক আসামি মাহফুজুর রহমান মাসুমের ৫ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত। গতকাল দুপুরে সিলেট চীফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে হাজির করে তদন্ত কর্মকর্তা ইন্দ্রানীল ভট্টাচার্য আদালতে ৭ দিনের রিমান্ড প্রার্থনা করেন। শুনানী শেষে ৫ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন আদালতের বিচারক আবুল কাশেম। অপরদিকে, রাতের বেলা লুঙ্গি পরে পালাতে গিয়ে গোয়েন্দা জালে ধরা পড়েন ছাত্রলীগ নেতা মাহফুজুর রহমান মাসুম। জেলা পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগ জানিয়েছে, গ্রেফতার এড়াতে মাসুম লুঙ্গি পরে খালি পায়ে জৈন্তাপুর উপজেলার হরিপুরে ঘোরাফেরা করছিলেন।
গোয়েন্দা তথ্যে খবর পেয়ে গত সোমবার মধ্যরাতে তাকে গ্রেফতার করা হয়। কানাইঘাট থানার ওসি শামসুদ্দোহা বলেন, মাসুমকে গত মঙ্গলবার মহানগরের শাহপরান থানায় হস্তান্তর করা হয়। তিনি আরও বলেন, পলাতক আসামি মাসুম ও তারেককে ধরতে তৎপর ছিল পুলিশের একাধিক দল। এর সঙ্গে গোয়েন্দা তৎপরতাও ছিল। গ্রেফতারকালে মাসুম পরনে লুঙ্গি ছিল। গ্রেফতার এড়াতে এই বেশ ধরেছিলেন তিনি। তবে তার গন্তব্য কোথায় ছিল এ বিষয়ে কিছু বলেননি ওসি।
মাসুম এমসি কলেজের ইংরেজি বিভাগের স্মাতক (সম্মান) শ্রেণির চতুর্থ বর্ষের ছাত্র। ছাত্রাবাসে গণধর্ষণকান্ডে অভিযুক্ত ছয় ছাত্রলীগ নেতাকর্মীর মধ্যে তিনিই একমাত্র নিয়মিত শিক্ষার্থী। তার নামে ছাত্রাবাসে সিটও বরাদ্দ ছিল। তবে ধর্ষণের অভিযোগ ওঠায় সিটটি কলেজ কর্তৃপক্ষ বাতিল করেছে। মাসুমের বাড়ি সিলেটের সীমান্ত উপজেলা কানাইঘাটের দক্ষিণ বাণীগ্রাম ইউনিয়নের লামা-দলইকান্দি গ্রামে।
মাসুমের বক্তব্য থামিয়ে দিলেন বিচারক:
গণধর্ষণের মামলার আসামি মাহফুজুর রহমান মাসুমের রিমান্ড আবেদন শুনানিকালে নিজেকে নির্দোষ দাবি করেন আদালতে। গতকাল বুধবার দুপুরে সিলেটের মুখ্য মহানগর হাকিম মো. আবুল কাশেমের আদালতে আসামিপক্ষের কোনো আইনজীবী না থাকায় ধর্ষণ মামলার আসামি মাসুম নিজে আদালতে তার বক্তব্য প্রদানকালে নিজেকে নির্দোষ দাবি করে আদালতকে বলেন ‘মোবাইলে খবর পেয়ে মোটরসাইকেল নিয়ে আমি এমসি ছাত্রাবাসে গিয়েছিলাম। তবে ধর্ষণের ঘটনার সাথে আমি জড়িত নই। আদালতের সরকারি কৌঁসুলি জানান, মাসুম নিজের পক্ষে সাফাই গাওয়া শুরু করলে তাকে থামিয়ে দেন আদালত। এরপর রিমান্ড আবেদন শুনানি সম্পন্ন করে দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন