আরবি-আরশ শব্দটির শাব্দিক অর্থ ছাদ বিশিষ্ট কিছু। আরবি ভাষাভাষিরা ছাদ বিশিষ্ট উটের হাওদাকেও আরশ বলে। আরবি ভাষায় রাজার আসন বুঝাতেও আরশ শব্দটির ব্যবহার হয়।
মুফতী আবদুহু (রহ.) বলেন : আল্লাহর আরশ বলতে সৃষ্টির ব্যাপার বিষয়াদির পরিচালনা কেন্দ্র বুঝায়। আর ইমাম রাযী (রহ.) বলেন : আল্লাহপাকের অসীমত্তে¡র কিছুটা ধারণা দেওয়ার জন্য ‘আল্ আরশুল আজীম’ এই রূপকটি ব্যবহৃত হয়। আরশ শব্দটি আল কোরআনে সর্বমোট ২২ বার ব্যবহৃত হয়েছে। আর সম্বন্ধপদ ‘আরশুকে’ রূপে সূরা নামল-এর ৪২ নং আয়াতে একবার এবং ‘আরশিহা’ রূপে সূরা নামল্-এর ৩৮ নম্বর আয়াতে একবার, এবং ‘আরশুহু’ রূপে সূরা হুদ-এর ৭ নম্বর আয়াতে একবার এসেছে। বস্তুত : একদল ফিরিশ্তা সারিবদ্ধভাবে আরশে আজীমের চতুর্দিকে দন্ডায়মান আছে।
এতদপ্রসঙ্গে আল-কোরআনে ইরশাদ হয়েছে : ‘আর তুমি ফিরিশতাদেরকে দেখতে পাবে যে, তারা আরশের চতুস্পার্শ্ব ঘিরে তাদের প্রতিপালকের সú্রশংস পবিত্রতা ও মহিমা ঘোষণা করছে। আর (জ্বিন ও মানুষ জাতির) তাদের ন্যায়ের সাথে বিচার করা হবে; এবং বলা হবে-সকল-প্রশংসা জগত সমূহের প্রতিপালক আল্লাহরই প্রাপ্য’। (সূরা যুমার : আয়াত ৭৫)।
অপর এক আয়াতে ইরশাদ হয়েছে : ‘সেদিন মহা প্রলয় সঙ্ঘঠিত হবে এবং আকাশ বিদীর্ণ হয়ে বিশ্লিষ্ট হয়ে পড়বে। ফিরিশতাগণ আকাশের প্রান্তদেশে থাকবে এবং সেদিন আটজন ফিরিশতা তাদের প্রতিপালকের আরশকে তাদের ঊর্ধে ধারণ করবে।’ (সূরা হাক্কাহ : আয়াত ১৫, ১৬, ১৭)। এই ফিরিশতাগণ মুমিন মোক্তাকী বান্দাহদের জন্য মাগফেরাত কামনা করে এবং দোয়া করে। যার পূর্ণ বিবরণ আল-কোরআনে এভাবে বিবৃত হয়েছে।
ইরশাদ হয়েছে : যারা (যে সকল ফিরিশতা) আরশ ধারণ করে আছে এবং যারা এর চতুস্পার্শ্ব ঘিরে আছে, তারা তাদের প্রতিপালকের পবিত্রতা ও মহিমা ঘোষণা করে পবিত্রতার সাথে এবং তাতে বিশ্বাস স্থাপন করে এবং মুমিনদের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করে বলেÑ হে আমাদের প্রতিপালক! তোমার দয়া ও জ্ঞান সর্বব্যাপি।
অতএব যারা তাওবাহ করে ও তোমার পথ অবলম্বন করে তুমি তাদেরকে ক্ষমা করো এবং জাহান্নামের শাস্তি হতে রক্ষা করো। হে আমাদের প্রতিপালক! তুমি তাদেরকে স্থায়ী জান্নাতে দাখিল করো, যার প্রতিশ্রæতি তুমি তাদেরকে দিয়েছ এবং তাদের পিতামাতা, পতি-পতœী ও সন্তান সন্ততীদের মধ্যে যারা সৎকর্ম করেছে তাদেরকেও। নিশ্চয়ই তুমি পরাক্রমশালী, প্রজ্ঞাময়। এবং তুমি তাদেরকে শাস্তি হতে রক্ষা করো, সেদিন তুমি যাকে শাস্তি হতে রক্ষা করবে, তাকে তো অনুগ্রহই করবে, ইহাই তো মহাসাফল্য। (সূরা মুমিন : আয়াত ৭, ৮, ৯)।
সুতরাং মুমিন মোত্তাকী বান্দাহদের উচিত আল্লাহপাকের নিদর্শনাবলি অবলোকন করে আল্লাহমুখী জীবনযাপন করা এবং তাঁর আনুগত্যে একনিষ্ঠ হয়ে যাওয়া। আল-কোরআনে ইরশাদ হয়েছে : ‘তিনিই তোমাদেরকে তাঁর নিদর্শনাবলি দেখান এবং আকাশ হতে তোমাদের জন্য রিযিক প্রেরণ করেন। আল্লাহ অভিমুখী ব্যক্তিরাই উপদেশ গ্রহণ করে।’ (সূরা মুমিন : আয়াত ১৩)।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন