বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ০৫ বৈশাখ ১৪৩১, ০৮ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

শান্তি ও সমৃদ্ধির পথ ইসলাম

শাসকের ক্ষমা ও উদারতা

উবায়দুর রহমান খান নদভী | প্রকাশের সময় : ৩ অক্টোবর, ২০২০, ১২:০৫ এএম

বিশ্বের ইতিহাসে সফল শাসকদের অন্যতম ছিলেন খলীফা ওমর ইবনে আব্দুল আজিজ। শাসনকাল ৯৯ হতে ১০১ হিজরি। তিনি উমাইয়া শাসকদের একজন। মাত্র ২ বছরে মুসলিম বিশ্বে নবুওয়তী ধারার খেলাফতি রাষ্ট্র ব্যবস্থা পুনরুজ্জীবিত করেন। মুসলিম জাহানে শান্তি ও সমৃদ্ধির উৎকর্ষ সধিত হয়।
আটলান্টিক থেকে আফগানিস্তান পর্যন্ত কোনো দরিদ্র নাগরিক খুঁজে পাওয়া যেত না। যাকাত নেয়ার লোক না থাকায় সেই তহবিল দিয়ে ক্রীতদাস কিনে আজাদ করে দেয়া হতো। নাগরিকদের সুখ শান্তির প্রতি খেয়াল থেকে তিনি ব্যক্তিগত নিরাপত্তার চিন্তা করতেন না বললেই চলে। প্রহরীদের জন নিরাপত্তার কাজে নিয়োজিত করেন।
নিজের নিরাপত্তার জন্য উপদেষ্টারা জোর দিলে বলতেন, ‘আমার পাহারায় মৃত্যুকেই নিয়োজিত করেছি। তার নির্ধারিত সময়ের আগে আর কেউ আমাকে মারতে পারবে না। আর যখন নির্ধারিত সময়ে মৃত্যু আসবে, তখন সারা সৃষ্টিজগত মিলেও আমাকে বাঁচাতে পারবে না।’

পূর্বেকার শাসকদের লুটপাট, বিলাসিতা ও জনগণের সম্পদগ্রাস তিনি পছন্দ করতেন না। ক্ষমতায় বসেই তাদের সব অবৈধ সম্পদ রাষ্ট্রের অনুক‚লে বাজেয়াপ্ত করেন। দুর্নীতি, অপচয়, শোষণ সর্বাংশে বন্ধ করেন। শাসক ও অভিজাত শ্রেণি তার শত্রু হয়ে দাঁড়ায়। নিজ গোষ্ঠীর লোকেরাও তার প্রাণহানীর চেষ্টা শুরু করে। অবশেষে তাকে বিষ প্রয়োগ করে হত্যা করে তারা।

অবশ্য বিষজনিত কারণে তিনি মারা গিয়েছিলেন, একথা প্রমাণিত নয়। তার স্ত্রী বাদশা আব্দুল মালিকের মেয়ে ফাতিমা বলেন, আল্লাহতায়ালার সীমাহীন ভয় এবং জাতির কল্যাণে তার কল্পনাতীত কষ্ট সাধনা ওমর ইবনে আব্দুল আজিজের মৃত্যুর কারণ। বিষ প্রয়োগে তার ক্ষতি হয়েছিল বটে, তবে এর প্রতিক্রিয়ায় তিনি মারা যাননি। তিনি সুস্থ হয়ে উঠেন এবং পরে সাধারণ স্বাস্থ্যহানীতে বিশেষ করে আল্লাহর ভয়ে অধিক সাধনা ও জনকল্যাণে অকল্পনীয় পরিশ্রমে তার মৃত্যু হয়।

তার পানাহার দায়িত্বে নিয়োজিত খাদেমকে তার বংশের লোকেরাই খাদ্যে বিষ মেশানোর কাজে ব্যবহার করে। সে রাজী না হলে এক হাজার দিনার প্রদান করে। এতেও রাজী না হলে প্রাণ নাশের হুমকি দেয়। শেষ পর্যন্ত খাদেম পানির সাথে বিষ মিশিয়ে দেয়। পানি পানের পর ওমর ইবনে আব্দুল আজিজ বিষক্রিয়া টের পান। তাবেয়ী মুজাহিদ রহ. বলেন, ওমর ইবনে আব্দুল আজিজ আমাকে জিজ্ঞাসা করেন, জনগণ আমার ব্যাপারে কি বলাবলি করে? মুজাহিদ জবাব দেন, লোকেরা বলে, আপনাকে জাদু করা হয়েছে। খলীফা বলেন, আসলে আমাকে বিষ পান করানো হয়েছে।

তিনি পানাহারের দায়িত্বে থাকা খাদেমকে ডেকে বললেন, কেন তুমি আমাকে বিষ দিলে? সে বলল, এক হাজার দিনার ও মুক্ত হওয়ার লোভে। খলীফা বললেন, দিনারগুলো নিয়ে আসো। এসব তিনি জনগণের তহবিলে রেখে দিলেন। বললেন, যারা এসব দিয়েছে, তারা নিজেদের টাকা দেয়নি। জনগণ থেকে চুরি করা টাকা থেকেই আমাকে হত্যার জন্য দিয়েছে। আর তুমি এখন মুক্ত। রাষ্ট্রের কোনো দায়িত্বশীলের সামনে কখনো পড়বে না। সাম্রাজ্যের যে কোনো অঞ্চলে জীবন কাটিয়ে দাও।
উপদেষ্টারা বললেন, তাকে মৃত্যুদন্ড দেয়া হোক। খলীফা জবাব দিলেন, সে তো আমাকে হত্যা করেনি। চেষ্টা করেছে মাত্র। আমার মৃত্যু হলে সে অপরাধী হয়ে যাবে। তাই তাকে ক্ষমা করে দিচ্ছি। এর বিনিময় আমি আল্লাহর কাছে পাব। আখেরাতে এই বিনিময় হবে অনেক দামী। দেরি করে তাকে মৃত্যুদন্ড দিলে কিসাস গ্রহণ করা যাবে।

তবে, ক্ষমা করে দেয়ার অফুরন্ত মর্যাদা ও কল্যাণ থেকে বঞ্চিত হতে হবে। পাশাপাশি আমি যড়যন্ত্রের সঙ্গে বাকি সবাইকেও ক্ষমা করে দিলাম। সব বিনিময় আমি পরকালেই পেতে চাই। এর কিছুদিন পর খলীফা ওমর ইবনে আব্দুল আজিজ ইন্তেকাল করেন। ইতিহাসে তাকে দ্বিতীয় ওমর বলা হয়।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (9)
Abu Arif ৩ অক্টোবর, ২০২০, ৬:১০ এএম says : 0
ইসলামের প্রথম মুজাদ্দিদ হলেন হজরত ওমর ইবনে আব্দুল আজিজ রহমাতুল্লাহি আলাইহি। রাজ পরিবারে তাঁর জন্ম। প্রাপ্ত বয়স্ক হয়ে তিনি দেখতে পান যে, তাঁর পিতা মিসরের ন্যায় বিশাল সম্রাজ্যের গর্ভনর। আরো বয়ঃপ্রাপ্ত হলে তিনি নিজেই উমাইয়া সরকারের অধীনে গবর্ণর নিযুক্ত হন।
Total Reply(0)
নাজনীন জাহান ৩ অক্টোবর, ২০২০, ৬:১১ এএম says : 0
তিনি বিত্তশালীদের ন্যায় শান-শওকত পূর্ণ জীবন-যাপন করতেন। পোশাক-পরিচ্ছেদ, খানা-পিনা, বাড়ি-ঘর, যান-বাহন, স্বভাব-চরিত্র সবই ছিল শাহজাদার ন্যায়।
Total Reply(0)
বদরুল সজিব ৩ অক্টোবর, ২০২০, ৬:১২ এএম says : 0
ইলমে হাদিস ও ফিকরে ওপর তাঁর গভীর পাণ্ডিত্য ছিল। যে কারণে রাষ্ট্র পরিচালনায় যে কোনো সংযোজন বিয়োজনে ক্ষতি ও উপকারের দিকগুলো তার ভালোই জানা ছিল।
Total Reply(0)
বদরুল সজিব ৩ অক্টোবর, ২০২০, ৬:১৩ এএম says : 0
খলীফা ওমর ইবনে আব্দুল আজিজ রাষ্ট্রের অমুসলিম প্রজাদের সঙ্গে সঙ্গে যে সব অন্যায় আচরণ করা হয়েছিল, তার প্রতিকার করেন।
Total Reply(0)
মোঃ নাজমুল ইসলাম ৩ অক্টোবর, ২০২০, ৬:১৪ এএম says : 0
ইসলামি নীতির ভিত্তিতে মানুষের মধ্যে সুবিচার প্রতিষ্ঠা করতে সরকারি হস্তক্ষেপকে প্রভাবমুক্ত করেন। আর এভাবেই হজরত ওমর ইবনে আব্দুল আজিজ রাষ্ট্র ব্যবস্থা সুন্দর, সুসজ্জিত ও সসংহত করতে ইসলামি রাষ্ট্র ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা ও পুনরুজ্জীবিত করেন
Total Reply(0)
মনিরুল ইসলাম ৩ অক্টোবর, ২০২০, ৬:১৪ এএম says : 0
তাঁর অল্প দিনের শাসন ব্যবস্থা অর্ধ শতাব্দীর জাহেলি রীতি-নীতি অপসারিত হয়। বন্ধ হয়ে যায় বিকৃত আকিদা-বিশ্বাসের প্রচার ও প্রসার। ব্যাপকভাবে জনগণের শিক্ষার ব্যবস্থা করা হয়। কুরআন হাদিস ও ইলমে ফিকহার শিক্ষা ব্যবস্থা বুদ্ধিজীবী শ্রেণীকে আকৃষ্ট করে।
Total Reply(0)
Ahsan Sumon ৩ অক্টোবর, ২০২০, ৬:১৪ এএম says : 0
হজরত ওমর ইবনে আব্দুল আজিজের ক্ষমতাকালে অবস্থা এতটাই উন্নত হয় যে, ৪ জন লোক একত্রিত হলেই সেখানে নামাজ, রোজা, হজ, জাকাত ও কুরআন-সুন্নাহ সম্পর্কিত আলোচনা শুরু হয়ে যেত।
Total Reply(0)
সাইফুল ইসলাম ৩ অক্টোবর, ২০২০, ৬:১৫ এএম says : 0
হজরত ওমর ইবনে আব্দুল আজিজের সময়ে পাশ্ববর্তী অনেক রাষ্ট্র ইসলাম গ্রহণ করে। ইসলামের প্রভাবে মুসলমান হয় অসংখ্য মানুষ। যার প্রভাব পড়ে রাষ্ট্রীয় কোষাগারে। দীর্ঘ দিন ধরে সংঘাত লেগে থাকা রোম সম্রাজ্যের ওপর বিরাট নৈতিক প্রভাব পড়েছিল।
Total Reply(0)
আরাফাত ৩ অক্টোবর, ২০২০, ১১:০৪ এএম says : 0
এই শিক্ষণীয় ঘটনাটি প্রকাশ করায় দৈনিক ইনকিলাব ও লেখক উবায়দুর রহমান খান নদভী সাহেবকে মোবারকবাদ জানাচ্ছি
Total Reply(0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন