মঙ্গলবার ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ১১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৩ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

শান্তি ও সমৃদ্ধির পথ ইসলাম

কন্যা সন্তানের মা হওয়া কি অপরাধ

মাওলানা আবুল কাসেম আযহারী | প্রকাশের সময় : ৫ অক্টোবর, ২০২০, ১২:০১ এএম

কিছুদিন আগে একটি জাতীয় দৈনিকের একটি লেখার ওপর চোখ পড়ল। লেখাটির শিরোনাম ছিল ‘কন্যাসন্তানের মা হওয়াটাই যেন অপরাধ।’ বেশ কৌত‚হল নিয়ে পুরো লেখাটি পড়লাম এবং খুব মর্মাহত ও বিস্মিত হলাম। লেখাটির কিছু অংশ ছিল এ রকম- ‘কোন মা যদি পুত্র সন্তানের জন্ম দিতে ব্যর্থ হয় তবে সব দায় তার ঘাড়েই চাপে। তাকে উঠতে বসতে গঞ্জনা শুনতে হয়। লাঞ্ছনার শিকার হতে হয়।’ এরপর দেশের বিভিন্ন জায়গায় কন্যা সন্তান প্রসবকারিনী কয়েকজন মায়ের করুণ কাহিনী তুলে ধরা হয় রিপোর্টটিতে, যা পড়ে নিজের অজান্তেই চোখের কোণে পানি এসে পড়ে আর হৃদয়-পটে ভেসে ওঠে জাহেলী যুগের সে বর্বরতার চিত্র।

যে যুগে কন্যা সন্তানের পিতা হওয়া ছিল ভীষণ লজ্জার বিষয়। সমাজে তার মুখ দেখানো দায়। এমনকি আপন কন্যা সন্তানকে জীবন্ত পুঁতে রাখতেও বিন্দুমাত্র দ্বিধা হতো না। তাদের এই অবস্থা তুলে ধরে কোরআন মাজীদে আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন, আর যখন তাদের কাউকে কন্যা সন্তানের সুসংবাদ দেয়া হয় তখন তার চেহারা কালো হয়ে যায় এবং অসহ্য মনস্তাপে ক্লিষ্ট হতে থাকে। তাকে শুনানো সুসংবাদের দুঃখে সে লোকদের কাছ থেকে চেহারা লুকিয়ে রাখে। সে ভাবে, অপমান সহ্য করে তাকে রাখবে, না মাটির নিচে পুঁতে ফেলবে। শুনে রাখ, তাদের ফয়সালা খুবই নিকৃষ্ট। (সূরা নাহল : ৫৮-৫৯)।

অপর আয়াতে ইরশাদ করেন, নিশ্চয়ই তারা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, যারা নিজ সন্তানদেরকে নির্বুদ্ধিতাবশতঃ কোনো প্রমাণ ছাড়াই হত্যা করেছে এবং আল্লাহ তাদেরকে যেসব রিযিক দিয়েছিলেন তা আল্লাহর প্রতি মিথ্যারোপ করে হারাম করেছে। নিশ্চয়ই তারা পথভ্রষ্ট হয়েছে এবং সুপথগামী হয়নি। (সূরা আনআম : ১৪০)।

এটা ছিল ইসলাম-পূর্ব জাহেলী যুগের চিত্র, যেখানে ছিল না শিক্ষা-দীক্ষা এবং তাহযিব ও তামাদ্দুন তথা প্রকৃত ভালো মানুষ হওয়ার বিষয়াদি, যা তাদেরকে সভ্য, ভদ্র ও সুন্দর মানুষ হিসেবে গড়ে তুলবে। কিন্তু বর্তমান সময়! বর্তমান যুগ! এ তো শিক্ষা-দীক্ষার যুগ! তাহযিব-তামাদ্দুনের যুগ। সভ্যতার যুগ! বিজ্ঞান-প্রযুক্তির চরম উৎকর্ষতার যুগ! এরপরও এরা কেন হিংস্র পশুর মতো আচরণ? তবে কি সভ্য সমাজে বসবাসকারী মানুষরুপী সে পশুর দল, যাদের বর্ণনা কোরআন মাজীদে আল্লাহ তাআলা দিয়েছেন এভাবে- ওরা তো পশুর ন্যায়; বরং তার চেয়েও নিকৃষ্ট।

এসব প্রশ্নের জবাব যদি হয় ‘না’ তাহলে এদের বলব, আপনারা কি কখনো আল্লাহ প্রদত্ত বিবেক-বুদ্ধি দিয়ে চিন্তা করেছেন যে, কন্যা সন্তান প্রসবের কারণে যে নারীর ওপর আমি অমানবিক নির্যাতন করছি, তার স্থানে যদি আমি অথবা আমার কোনো বোন বা মেয়ে হতো এবং সে আমার বা আমাদের ওপর অনুরূপ নির্যাতন চালাত তবে কি আমি বা আমরা তা মেনে নিতাম? অথবা তা সঠিক বলে বিবেচনা করতাম? কিংবা তাকে সভ্য মানুষ বলে মনে করতাম? আপনারা কি কখনো চিন্তা করেছেন যে, সন্তান দেয়া, না দেওয়া, কিংবা মেয়ের পরিবর্তে ছেলে বা ছেলের পরিবর্তে মেয়ে সন্তান প্রসব করায় মায়ের কোনো এখতিয়ার ও ক্ষমতা নেই। এ বিষয়ে পূর্ণ এখতিয়ার ও ক্ষমতা একমাত্র আল্লাহ তাআলারই। কোনো মানুষ তথা মাখলুকের নয়।

কোরআন মাজীদে আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেছেন, নভোমন্ডল ও ভূমন্ডলের রাজত্ব আল্লাহ তাআলারই। তিনি যা ইচ্ছা সৃষ্টি করেন। যাকে ইচ্ছা কন্যাসন্তান এবং যাকে ইচ্ছা পুত্রসন্তান দান করেন। অথবা তাদেরকে দান করেন পুত্র ও কন্যা উভয়ই এবং যাকে ইচ্ছা বন্ধা করে রাখেন। নিশ্চয়ই তিনি সর্বজ্ঞ, ক্ষমতাবান। (সূরা শুরা : ৪৯-৫০)।

আল্লাহ তাআলার উপরোক্ত সুস্পষ্ট ঘোষণার পরও যদি কোনো দুরাচার, হতভাগা স্বামী কিংবা নির্যাতনে অংশগ্রহণকারী ব্যক্তির বুঝে না আসে এবং এই বর্বর আচরণ থেকে বিরত না থাকে তাহলে তাদের বলব, নিরপরাধ মায়ের উপর কন্যাসন্তান প্রসব হেতু আপনার এই জুলুম ও নির্যাতনের উপযুক্ত শাস্তি পেতে সেই দিনের অপেক্ষায় থাকুন, যেদিন আপনার সকল ক্ষমতা ও অহঙ্কার চূর্ণ-বিচূর্ণ হয়ে যাবে তখন প্রতিটি জালিম চিৎকার করে বলতে থাকবে, হে আমাদের পালনকর্তা, আমাদেরকে (এই যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি থেকে) বের করুন, আমরা সৎ কাজ করব, পূর্বে যা করতাম তা আর করব না। (আল্লাহ তাআলা বলবেন) আমি কি তোমাদেরকে এতটুকু বয়স দেইনি, যাতে যা চিন্তা করার বিষয় (তা নিয়ে) চিন্তা করতে পারতে? উপরন্তু তোমাদের কাছে সতর্ককারী এসেছিল। অতএব (শাস্তি) আস্বাদন করো। (আজ) জালিমদের জন্য কোনো সাহায্যকারী নেই। (সূরা ফাতির : ৩৭)।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (7)
Golam Dostgir Bablu ৫ অক্টোবর, ২০২০, ১:৩২ এএম says : 0
ছেলে হোক-মেয়ে হোক উভয়টি আল্লাহর নিয়ামত। তাই এই নিয়ামত পেয়ে আমাদের উচিৎ, মহান রবের দরবারে কৃতজ্ঞতা আদায় করা। কারণ এমনও তো হতে পারত যে, আল্লাহ ছেলে-মেয়ে কোনটাই না দিয়ে বন্ধ্যা করে দিয়েছেন।
Total Reply(0)
তাসফিয়া আসিফা ৫ অক্টোবর, ২০২০, ১:৩২ এএম says : 0
যার মেয়ে আছে সে অবশ্যই ছেলে সন্তান পাওয়ার আগ্রহী হবে। এটা দোষণীয় নয়। এটি মানুষের স্বভাবজাত প্রবৃত্তি। এ জন্য সে দুয়াও করতে পারে। তবে আল্লাহ যদি তা না দেন তবে আল্লাহ যা তাকদীরে লিখে রেখেছেন তার উপর সন্তুষ্ট থাকা অপরিহার্য। না হলে তা ঈমানের ছয়টি রোকনের একটি (তাকদীরের ভালো-মন্দের প্রতি) বিশ্বাসে ফাটল সৃষ্টি হবে।
Total Reply(0)
হাসান মুনাব্বেহ সাআদ ৫ অক্টোবর, ২০২০, ১:৩২ এএম says : 0
মনে রাখতে হবে, নিশ্চয় আল্লাহ বান্দার ব্যাপারে তাই সিন্ধান্ত গ্রহন করে যা তার জন্য কল্যাণকর। তিনি কখনো বান্দার অকল্যাণ চান না।
Total Reply(0)
গাজী মোহাম্মদ শাহপরান ৫ অক্টোবর, ২০২০, ১:৩৩ এএম says : 0
কেউ হয়ত ভাবে, ছেলে সন্তান হলে সে পিতামাতার কাফনদাফন করত বা কবর যিয়ারত করত ...ইত্যাদি। কিন্তু এর বিপরীতটাও তো হতে পারত। অর্থাৎ সে ছেলে অন্যায় পথে পরিচালিত হত এবং তা তাদের জীবন দুর্বিসহ করে তুলত। কারণ আমরা কেউ ভবিষ্যত সম্পর্কে অবহিত নই-একমাত্র আল্লাহ ছাড়া। তাই তিনি যা চেয়েছেন তাই দিয়েছেন। অত:এব, আল্লাহর ফয়াসালাতেই সন্তুষ্ট থাকা জরুরি।
Total Reply(0)
হক কথা ভল ৫ অক্টোবর, ২০২০, ১:৩৩ এএম says : 0
সবচেয়ে বড় বিষয় হল, হাদীসে কণ্যা সন্তানের ব্যাপারে যে মর্যাদার কথা বলা হয়েছে, পূত্র সন্তানের ব্যাপারে তা বলা হয় নি।
Total Reply(0)
হাফেজ মোহাম্মদ মাহদী হাছান ৫ অক্টোবর, ২০২০, ১:৩৩ এএম says : 0
পূত্র সন্তান না পেলে মন খারাপ করা উচিৎ নয় বরং মেয়েদেরকে পূর্ণ-স্নেহমমতা দিয়ে প্রতিপালিত করলে এবং ধৈর্যের সাথে তাদেরকে দ্বীন শিক্ষায় শিক্ষিত করলে ইনশাআল্লাহ তারাই পিতামাতার জন্য দুনিয়া ও আখিরাতে অবারিত কল্যাণ বয়ে নিয়ে আসবে এবং তাদের জন্য জাহান্নামের আগুনের সামনে প্রতিবন্ধকতা হয়ে দাঁড়াবে ইনশাআল্লাহ। আল্লাহ কবুল করুন। আমীন।
Total Reply(0)
SALIM SINHA ৫ অক্টোবর, ২০২০, ৯:১৫ এএম says : 0
This is the first report , I think about this issue from an islamic scholar. This is a burning issue in our society from thousand years ago. For misconception about birth process our male dominating society blamed female about giving birth of girl child. But now modern science proved that actually male's sperm X or Y chromosome is responsible whether a baby will be boy or girl. Allah , the almighty , determine this. In thousand of cases wife has been criticized or even getting divorce as a punishment for giving bith of girl child. From thousand of years even in modern days the hujurs are silent about this issue. In each jummah the imams are advising us many necessary & unnecessary issues. But never discussed about this issue. Thanks to Maulana Abul Kashem for Discussing this issue for 1st time. Hope that other islamic scholars will come forward to make the society aware to stop blaming to our mother & sisters for this issue.
Total Reply(0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন