মঙ্গলবার ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ১১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৩ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

শান্তি ও সমৃদ্ধির পথ ইসলাম

অন্যের প্রতি ইহসানকারী আল্লাহর প্রিয়পাত্র

এ. কে. এম. ফজলুর রহমান মুন্শী | প্রকাশের সময় : ৬ অক্টোবর, ২০২০, ১২:০১ এএম | আপডেট : ১২:১৩ এএম, ৬ অক্টোবর, ২০২০

ইহসান প্রত্যেক মানুষের অপরিহার্য দায়িত্ব ও কর্তব্যের অন্তর্ভুক্ত। কিন্তু যাদের ধন-সম্পদ, বিত্ত-বৈভব যতখানি বিস্তৃত, তাদের দায়িত্ব ও কর্তব্য ঠিক ততখানি ব্যাপক ও বিশাল। তার উচিত, স্বীয় ইহসানের পরিমন্ডলকে সম্প্রসারিত করা, প্রতিটি ব্যক্তিকে তার সহায়-সম্পদ দ্বারা উপকৃত করা। কারূনের বংশের লোকেরা চেয়েছিল তার মাঝে এ নৈতিক গুণটির বিকাশ ঘটুক। আল কোরআনে এ প্রসঙ্গে বলা হয়েছে, ‘তুমি সেরূপ ইহসান প্রদর্শন করো, যেরূপ ইহসান আল্লাহপাক তোমার ওপর প্রদর্শন করেছেন।’ (সূরা কাসাস : রুকু ৮)।

ইহসানের একটি বিশেষ দিক হচ্ছে এই যে, কাউকে বিপদ থেকে উদ্ধার করা। আল্লাহপাক হজরত ইউসুফ (আ)-কে কয়েদখানা থেকে উদ্ধার করেছিলেন। এ জাতীয় বিপদ থেকে উদ্ধার করার প্রবণতা সর্বত্রই সমভাবে প্রশংসার দাবিদার। তাই দেখা যায়, ধন-সম্পদের মাধ্যমে অথবা মুসিবত থেকে উদ্ধার করার মাধ্যমে ইহসান প্রদর্শনের উত্তম দিকটি বিকশিত হয়ে উঠে। এ ছাড়াও অসংখ্য, অগণিত সদ্ব্যবহার, বদান্যতা ও সহৃদয়তাকে আল্লাহপাক ইহসানের পর্যায়ভুক্ত করেছেন।

অপরাধীদের অপরাধ ক্ষমা করা এবং এগুলোর মোকাবিলায় ক্রোধকে হজম করাও ইহসানের অন্তর্ভুক্ত। আল্লাহপাক এ পর্যায়ের ইহসানকে এতটুকু মর্যাদা দিয়েছেন যে, যে ব্যক্তি এ গুণে গুণান্বিত হবে, সে অবশ্যই আল্লাহর প্রিয় বান্দাদের অন্তর্ভুক্ত হবে। আল কোরআনে ইরশাদ হচ্ছে, ‘এবং আল্লাহপাক এ সকল পুণ্যবানদেরকে ভালোবাসেন।’ (সূরা আল ইমরান : রুকু ১৪)।

ইহসানের জন্য কোরআনুল কারিমে অপর শব্দও ব্যবহৃত হয়েছে। শব্দটি হচ্ছে ‘ফাদল’। যদি কোনো ব্যক্তি কোনো বিবাহিতা স্ত্রীকে খিলওয়াত বা একান্ত সান্নিধ্যে নিয়ে আসার আগেই তালাক দেয়, যদি তার জন্য মোহর নির্ধারিত করা হয়ে থাকে, তাহলে তাকে অর্ধেক মোহরানা অবশ্যই দিতে হবে। (যদি মোহর নির্ধারিত না করা হয়ে থাকে, তাহলে তাকে কিছু বসন ও জিনিস দিয়ে দিলেই চলবে) এটাই হচ্ছে আইন ও বিধানের কথা।

কিন্তু নৈতিক ও আখলাকি হুকুম হচ্ছে এই যে, হয়তো সেই তালাকপ্রাপ্তা মহিলা সেই অর্ধেক মোহরও ক্ষমা করে দেবে, সে এ থেকে কিছুই গ্রহণ করবে না, তাহলে এটা হবে মহিলার সচ্চরিত্রতার নিদর্শন। অথবা স্বামী পুরো মোহর আদায় করে দেবে, অর্ধেক কেটে রাখবে না, এটাও হবে স্বামীর সচ্চরিত্রতার পরিচায়ক। এরপর ইরশাদ হয়েছে, ‘এবং তোমরা পরস্পর ফাদলকে ভুলে যেও না, নিশ্চয়ই আল্লাহ তোমাদের কার্যসম‚হ অবলোকন করছেন।’ (সূরা বাকারাহ : রুকু ৩১)।

হজরত সায়ীদ থেকে বর্ণিত, ‘তোমরা পরস্পর ফাদলকে ভুলে যেও না’ এরপর হচ্ছে ‘পরস্পর ইহসানকে ভুলে যেও না।’ (ইবনে জারির তাবারি : খন্ড ২, পৃষ্ঠা ৪২৬)। আল্লামা জারুল্লাহ জামাখশারী তাফসিরে কাশশাফে এ আয়াতের তাফসিরে উল্লেখ করেছেন যে, কোনো কোনো ভাষ্যকার এ আয়াতের ফাদল শব্দটির অর্থ গ্রহণ করেছেন ফজিলতে দ্বীনি। আবার কেউ বলেছেন, এর অর্থ হচ্ছে- মাল-সম্পদভিত্তিক সাহায্য-সহানুভূতি।

বস্তুত কোনো গরিব কিংবা কোনো নিকটতম বন্ধু-বান্ধব থেকে এমন কোনো আচরণ যদি প্রকাশ পায়, যার দরুণ অসন্তুষ্টি পয়দা হয়, তাহলে ইহসানকামীদের দায়িত্ব ও কর্তব্য হচ্ছে তা ক্ষমা করে দেয়া এবং স্বীয় ইহসান থেকে বিরত না থাকা। আল কোরআনে ঘোষণা করা হয়েছে, ‘এবং তোমাদের মাঝে যারা ইহসান ও সহানুভূতিশীল, তারা যেন আত্মীয়-প্রতিবেশীদের, গরিবদের, আল্লাহর পথে হিজরতকারীদের কোনো কিছু না দেয়ার শপথ না করে। তাদের উচিত ক্ষমা করা, অনুকম্পা প্রদর্শন করা।’ (সূরা নূর : রুকু ২)।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (6)
Md Shakil ৬ অক্টোবর, ২০২০, ৫:১৪ এএম says : 0
আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের সুন্দর নামগুলোর মধ্যে দুটি নাম হলো-‘আর-রহমান’ ও ‘আর-রহীম’। এর অর্থ হলো-পরম দয়াময় ও অতি দয়ালু।
Total Reply(0)
মুক্তিকামী জনতা ৬ অক্টোবর, ২০২০, ৫:১৪ এএম says : 0
আল্লাহ তায়ালার রহমত দ্বারা পরিবেষ্টিত আমরা মানুষ। তার অশেষ রহমত ও করুণা আমাদের গোটা অস্তিত্বে ছেয়ে আছে। আর আল্লাহর এ রহমতকে প্রতিরোধ করার কেউ নেই। সঙ্গে সঙ্গে আল্লাহর রহমত রুদ্ধ হয়ে গেলে তা বিমুক্ত করারও কেউ নেই।
Total Reply(0)
কাজল খান ৬ অক্টোবর, ২০২০, ৫:১৫ এএম says : 0
একমাত্র আল্লাহ তায়ালাই সব রহমত ও করুণার অধিপতি। আল্লাহ রাব্বুল আলামীন বলেন ,আল্লাহ মানুষের জন্য যে রহমত উন্মুক্ত করে দেন, তা আটকে রাখার কেউ নেই। আর তিনি যা আটকে রাখেন, তারপর তা ছাড়াবার কেউ নেই।
Total Reply(0)
Md. Mofazzal Hossain ৬ অক্টোবর, ২০২০, ৫:১৫ এএম says : 0
সব মানুষের প্রতি, সব প্রাণীর প্রতি দয়া-মায়া ও মমতা-করুণা করার জন্য ইসলামের নবি আমাদের নির্দেশ দিয়েছেন। সৃষ্টির প্রতি রহম বা দয়া করলে স্রষ্টার দয়া-করুণা-রহমত লাভ করা যায়।
Total Reply(0)
মনিরুল ইসলাম ৬ অক্টোবর, ২০২০, ৫:১৬ এএম says : 0
গোটা পৃথিবীটাই তিনি সৃষ্টি করেছেন মানুষের জন্য রহমত-দয়া-করুণা ও অনুগ্রহ হিসেবে। অন্যকে ক্ষমা করা, দয়া-মায়া ও মমতা-করুণা ছিল নবিজি [সা.] এর সহজাত স্বভাব। তিনি নিজে এই কাজে এগিয়ে ছিলেন এবং সাহাব আজমাইনসহ গোটা উম্মতকে দয়া-মায়া ও মমতা-করুণার আমলে অগ্রগণ্য থাকার জন্য উপদেশ প্রদান করেছেন।
Total Reply(0)
সৈকত ফকির ৬ অক্টোবর, ২০২০, ৫:১৬ এএম says : 0
আল্লাহ আমাদের সবাইকে সবার প্রতি দয়া-মায়াশীল ও মমতাময়ী এবং করুণা করার তাওফিক দান করুন। আমিন।
Total Reply(0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন