বিশ্বনবী হজরত মোহাম্মদ (সা.)-এর প্রতি অবমাননা, বেআদবি-গোস্তাখি, এমনকি তাকে হত্যার ঘৃণ্য ষড়যন্ত্র পর্যন্ত করেছিল ইহুদী-খৃষ্টান ও মোনাফেকরা। পরবর্তীকালে উমাইয়া খলিফা আবদুল মালেক ইবনে মারোওয়ানের সময়ে রোমের খৃষ্টান বাদশাহ কর্তৃক মহানবী (সা.)-এর ব্যঙ্গচিত্র নির্মাণের হুমকির উচিত জবাব দিয়েছিলেন এই খলিফা ইসলামী মুদ্রা তৈরির মাধ্যমে। পরবর্তী সময় থেকে এখন পর্যন্ত রোমের বাদশাহর প্রেতাত্মারা বিশ^নবী হজরত মোহাম্মদ (সা.)-এর ব্যঙ্গচিত্র নির্মাণ করে তা দুনিয়াময় ছড়িয়ে দেয়ার ষড়যন্ত্রে লিপ্ত রয়েছে।
খলিফা আবদুল মালেকের সময়ের ঘটনাটির সাথে পরবর্তীকালে অনুরূপ ঘটনাবলির যে যোগসূত্র রয়েছে তা প্রমাণ করে, সে কালের রোমরাজের ব্যঙ্গচিত্র নির্মাণের হুমকি স্বরূপ খলিফার নামে বিভিন্ন দাবি নামা সম্বলিত এক পত্রে বাদশাহ হুমকি দিয়ে বলেছিলেন, ‘তুমি যদি না মানো, তোমাদের নবির ব্যঙ্গচিত্র নির্মাণ করা হবে।’
খৃষ্টান বাদশাহর এ ধৃষ্টতাপূর্ণ উক্তি উপেক্ষা করে খলিফা আবদুল মালেক ইবনে মারোওয়ান প্রাচীনকাল থেকে ত্রিত্ববাদের প্রতিকী নিদর্শন রূমী মুদ্রা বাতিল ঘোষণা করেন এবং তার বদলে মুসলিম সামাজের সর্বত্র কালেমা তাওহীদ খচিত আরবি মুদ্রা প্রবর্তণ করেন।
ইসলামের প্রাথমিক যুগে সাধারণভাবে দীনারসমূহে ত্রিত্ববাদের নিদর্শন রূমী নকশা এবং দেরহামগুলোতে পার্সিক নকশা অঙ্কিত হতো। খলিফা আবদুল মালেকের এ আলোড়ন সৃষ্টিকারী বৈপ্লবিক পদক্ষেপের কারণে তিনি দীনার-দেরহামের ইসলামী রূপকার হিসেবে ইতিহাস খ্যাত হয়ে রয়েছেন।
খলিফা আবদুল মালেকের এ ঘটনাটি আব্বাসীয় খলিফা হারুনুর রশীদ ইমাম আল কেসায়ীকে বর্ণনা করেন, যা বায়হাকীর কিতাবে বিস্তারিত উল্লেখিত হয়েছে। ঘটনাটি সংক্ষেপে এই রূপ: খলিফা হারুনুর রশীদের ভাষ্য অনুযায়ী, খলিফা আবদুল মালেক সর্বত্র ব্যাপকভাবে প্রচলিত রূমী মুদ্রা দেখে নাপছন্দ করেন এবং বলেন যে, ‘এটি ইসলামের সাথে খাপ খায় না।’ তিনি ঐ মুদ্রা আরবিতে অনুবাদ করান। এ মুদ্রার নকশায় কারুকার্য হিসেবে পাত্র, কাপড়, পর্দা ইত্যাদি অঙ্কিত হতো।
খলিফা তার মিশরের শাসনকর্তা উমর ইবনে আবদুল আজীজ ইবনে মারোওয়ান এর নিকট লিখলেন যে, নকশা করা সকল রূমী মুদ্রা হতে তাদের কারুকার্য সম্বলিত সকল নকশা মুছে ফেলে তদস্থলে তাওহীদের কলেমা অঙ্কন করতে হবে। আবদুল আজীজ খলিফার নির্দেশ পালন করলেন। খলিফা সাম্রাজ্যের সকল শাসক ও কর্মকর্তাকে নির্দেশ দিলেন, তারা যেন প্রত্যেকে নিজ নিজ এলাকায় রূমী নকশা অঙ্কিত সকল মুদ্রা জব্দ করেন।
এ নির্দেশের পর কারো কাছে রূমী মুদ্রা পাওয়া গেলে তাকে শাস্তি প্রদান করা হবে অথবা কারাগারে নিক্ষেপ করা হবে। কালেমা খচিত কিছু মুদ্রার নমুনা স্বরূপ রূমের বাদশাহর বিভিন্ন এলাকায় প্রেরণ করা হয়। সুতরাং এ আবিষ্কারের খবর রূমের এলাকাগুলোতে ছড়িয়ে পড়ে।
রূমের এ সব নকশার অনুবাদ করে বাদশাহর খেদমতে পেশ করা হয়, দেখে তিনি খুবই অসন্তুষ্ট হন এবং ভীষণ ভাবে ক্ষুদ্ধ হন। রূমের বাদশাহ খলিফা আবদুল মালেকের নামে প্রেরিত পত্রে অনুরোধ জানান, রূমী মুদ্রা চালু রাখতে এবং নতুন আরবি মুদ্রা প্রত্যাহার করে নিতে। পত্রের সাথে বাদশাহ বহুদামি উপহারও প্রেরণ করেন।
খলিফা আবদুল মালেক চিঠির কোনো জবাব দিলেন না এবং প্রেরিত উপহারও ফেরত দিলেন। বাদশাহর কাসেদ (দূত) প্রত্যাবর্তন করে অবস্থা জানান। বাদশাহ আরবি চিঠি ও অতিরিক্ত উপহারসহ পুনরায় দূত প্রেরণ করেন। খলিফা এবারও চিঠির কোনো জাবাব দিলেন না এবং উপহার ফেরত দেন।
রূমের বাদশাহ তৃতীয়বার প্রেরিত পত্রে খলিফা আবদুল মালেককে এই মর্মে হুমকি দেন যে, ‘তার দেশে যে পদ্ধতিতে মুদ্রা ঢালাই করা হয় যা ইসলামে প্রচলিত ছিল না এবং ঢালাইও করা হতো না। যদি তুমি নির্দেশ না মানো, তাহলে তোমাদের নবীর ব্যঙ্গচিত্র (নকশা) বানানো হবে।’
খলিফা আবুদল মালেক একা নন, পরবর্তীকালে খলিফা হারুনুর রশীদ, সুলতান নূরুদ্দীন মাহমুদ জঙ্গী এবং গাজী সালাহ উদ্দীন আইউবী প্রমুখ মহানবী (সা.)-এর প্রতি অবমাননা-গোস্তাখির যে সময়োচিত জবাব দিয়ে গেছেন, অনেক মুসলিম শাসক তা বিস্মৃত হয়ে গেলেও ইসলামের গৌরবুজ্জল ইতিহাসে তা এক স্মরণীয় অধ্যায় হিসেবে বিদ্যমান।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন