মিয়ানমারের সরকার রাখাইন রাজ্যে প্রায় এক লাখ ৩০ হাজার রোহিঙ্গা মুসলিমকে বছরের পর বছর নোংরা ক্যাম্পে আটক করে রেখেছে বলে এক বিবৃতি প্রকাশ করেছে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক মানবাধিকার সংস্থা হিউম্যান রাইটস ওয়াচ। সংস্থাটি অনির্দিষ্ট সময়ের জন্য ঢালাওভাবে আটক করা রোহিঙ্গাদের অবিলম্বে মুক্তি দেয়ার দাবি জানিয়েছে। ২০১২ সালে বিভিন্ন জাতিগোষ্ঠীর বিরুদ্ধে অভিযান চালানো শুরু করার পর থেকে রোহিঙ্গা ও কামান মুসলিমদের ‘উন্মুক্ত বন্দিশিবিরে’ আটক করে রাখা হয়েছে বলে উঠে এসেছে মানবাধিকার সংস্থাটির রিপোর্টে। ১৬৯ পৃষ্ঠার রিপোর্টে মধ্য রাখাইন রাজ্যে ২৪টি ক্যাম্পের অমানবিক পরিস্থিতি তুলে ধরা হয়। বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয় রোহিঙ্গাদের জীবনযাত্রা, শিক্ষা, স্বাস্থ্য সেবা, খাদ্য ও আশ্রয়ের অধিকারের পাশাপাশি তাদের মানবিক সহায়তা পাওয়ার অধিকারও ক্ষুণœ হচ্ছে। ক্যাম্পে আটক থাকা রোহিঙ্গাদের মধ্যে পানিবাহিত রোগ, অপুষ্টির মাত্রা এবং শিশু ও প্রস‚তি মৃত্যুর হার বেশি বলে উঠে এসেছে বিবৃতিতে। রিপোর্টের লেখক ও হিউম্যান রাইটস ওয়াচের এশিয়া বিষয়ক গবেষক শায়না বাউকনার বলেন, মিয়ানমার সরকার দাবি করে যে তারা সবচেয়ে গুরুতর আন্তর্জাতিক অপরাধ করছে না, কিন্তু তাদের এই দাবি ফাঁকা বুলির মত শোনাবে যদি তারা রোহিঙ্গাদের প‚র্ণ আইনি সুরক্ষাসহ ফিরে যাওয়ার সুযোগ করে না দেবে। সংস্থাটি বলছে ২০১৬ ও ২০১৭ সালে উত্তর রাখাইন রাজ্যে মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর চালানো গণহত্যা ও নির্যাতনের ভিত্তি তৈরি করে দিয়েছে ২০১২ সালের পদক্ষেপ। ২০১৮ সালের পর থেকে ৬০ জনেরও বেশি রোহিঙ্গা, কামান মুসলিম এবং মানবাধিকার কর্মীর সাক্ষাৎকারের ভিত্তিতে তৈরি করা হয়েছে রিপোর্টটি। এছাড়া এক শ›র বেশি সরকারি, বেসরকারি অভ্যন্তরীণ নথিসহ জাতিসংঘের রিপোর্ট পর্যালোচনা করে তৈরি করা প্রতিবেদনটিতে উঠে এসেছে যে মিয়ানমার ও রাখাইন রাজ্যের সরকারের কাছে ক্যাম্পগুলোর পরিস্থিতি উন্নয়নের জন্য বারবার আহŸান জানানো হলেও কর্তৃপক্ষ পরিকল্পিতভাবে ওই সব আহŸান উপেক্ষা করে এসেছে। রোহিঙ্গারা বলছে ক্যাম্পের জীবন গৃহবন্দী থাকার মতো। এক রোহিঙ্গা বলেন, ক্যাম্পের জীবন খুবই কষ্টের। আমাদের স্বাধীনতা বলে কিছু নেই। হিউম্যান রাইটস ওয়াচ বলছে, মিয়ানমার কর্তৃপক্ষ দীর্ঘসময় ধরে রোহিঙ্গাদের বিতাড়িত করার চেষ্টা করছে আর সেই পরিকল্পনার প‚র্বপ্রস্তুতি হিসেবে ২০১২ সালে রোহিঙ্গা স¤প্রদায়ের বিরুদ্ধে সহিংসতা চালায়। ওই সময় রাখাইন রাজ্যে কর্মরত একজন জাতিসঙ্ঘ কর্মকর্তা ২০১২ সালে মিয়ানমারের সরকারের মনোভাব সম্পর্কে বলেন : তাদের মনোভাব ছিল কোণঠাসা করা, আবদ্ধ করা এবং শত্রæকে আটক রাখা। ২০১৭ সালের এপ্রিলে ২০১২ সালে তৈরি করা অস্থায়ী ক্যাম্পগুলো বন্ধ করার ঘোষণা দেয় মিয়ানমার কর্তৃপক্ষ। ২০১৯ সালে তারা অভ্যন্তরীণভাবে বাস্তুচ্যুতদের পুনর্বাসন ও আইডিপি ক্যাম্প বন্ধের জাতীয় কর্মস‚চি হাতে নিলেও ওই সময় ক্যাম্পের পরিধি বাড়িয়ে কার্যত রোহিঙ্গাদের নিজেদের বাসস্থানে ফিরে যাওয়ার সুযোগ আরো সীমিত করে দেয়। নভেম্বরে মিয়ানমারে সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা থাকলেও বেশির ভাগ রোহিঙ্গার ভোট দেয়ার অধিকারই নেই। বিবিসি।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন