কুয়াকাটায় বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরামের উদ্যোগে রাখাইন সম্প্রদায়ের ভূমি,ভাষা, শিক্ষা, সাংস্কৃতি ও অধিকার বিষয়ক বর্তমান প্রেক্ষিতে আমাদের করণীয় শীর্ষক এক আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। সোমবার বেলা সাড়ে ১১ টায় রাখাইন পল্লী কালাচান পাড়ায় এ সভা অনুষ্ঠিত হয়। বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরাম বরিশাল অঞ্চলের সভাপতি মংচোথিন তালুকদারের সভাপতিত্বে সভায় পটুয়াখালী ও বরগুনা জেলার রাখাইনদের শীর্ষ নেতৃবৃন্দ অংশ নেয়। আলোচনায় রাখাইনদের ভূমি দখল, শিক্ষা, সমাজ ব্যবস্থা নিজেদের বর্তমান নানামুখী সংকটের কথা তুলে ধরা হয়। আদিবাসী রাখাইন সম্প্রদায়ের অস্থিত্ব সংকটে। এ সংকট উত্তরণে রাখাইন সমাজ পতিরা নিজেদের অধিকার আদায়ে একত্রিত হয়ে কাজ করার জন্য সকলকে সংগঠিত হয়ে কাজ করার আহবান জানান নেতৃবৃন্দ।
পটুয়াখালী জেলা রাখাইন সমাজকল্যান সমিতির সভাপতি টেনসুয়ে হাওলাদার প্রধান অতিথির বক্তব্যে বলেন, পটুয়াখালীর কলাপাড়ার আদিবাসী রাখাইন সম্প্রদায় চলতি বছর বিশ^ আদিবাসী দিবস পালন করতে পারেনি প্রশাসনের বাধার মুখে। এক সময়ে এই অঞ্চলের ভূমি আবাদ করেন রাখাইনরা। আর সেই রাখাইনরা এখন নিজ ভূমে পরবাসী। ১৯৫০ সালের প্রজাতন্ত্র আইন বাস্তবায়ন না হলে রাখাইনদের ভূমি অধিকার নিশ্চিত হবে না। রাখাাইন সমাজকল্যান সমিতির সাধারন সম্পাদক মংতেন বলেন, রাষ্ট্রীয় ও সামাজিকভাবে হেয় প্রতিপন্ন করতে এখনও তাদের মগ’ বলে ডাকা হয়। ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী, উপজাতি বলে সম্মোধন করা হয়। বাস্তবে তারা কুয়াকাটার আদিবাসী রাখাইন সম্প্রদায়। রাষ্ট্রীয়ভাবে আদিবাসী হিসেবে স্বীকৃতির দাবী তোলেন। তিনি আরও বলেন, আদিবাসীদের জন্য যেখানে বিশে^র সব দরজা খোলা, সেখানে আমদের দেশে সব দরজাগুলো বন্ধ কেন এমন প্রশ্ন রেখে কলাপাড়া উপজেলা সিসিইউ ফেডারেশন সভাপতি মংম্যাচিন মাষ্টার বলেন, বিশ^ জুড়ে ভূমির সঙ্গে আদিবাসীদের সম্পর্ক শুধু অর্থনৈতি বা সাংস্কৃতিক নয়, ভূমির সঙ্গে আদিবাসীদের রয়েছে আধ্যাত্মিক সম্পর্ক। সেই ভূমিতে থাকা রাখাইনদের জমি নানা অজুহাতে দখল হচ্ছে। বেদখলে যাচ্ছে দেবালয়সহ শ্মশানের জমিটুকু।
দিয়ারআমখোলা পাড়া কৃষিপন্য সংরক্ষণ সমিতির সভাপতি মংথেনথান রাখাইন বলেন, এ অঞ্চলের রাখাইনদের জীবন জীবিকায় কৃষি, সমুদ্র ও বনজঙ্গল কেন্দ্রীক। জমিজমা,বনজঙ্গল ও নদী না থাকায় তাদের খাদ্যাভাসে পরিবর্তন এসেছে। এ সম্প্রাদায়ের জন্য যা হুমকি স্বরুপ। এক সময় এখানকার ভূমির অধিপতি ছিলেন রাখাইনরা। কালের পরিবর্তনে এখন তারা ভূমি ও খাদ্য সংকটে কোন রকম জীবনযাপন করছেন।
বরগুনা জেলার রাখাইন অধিকার অন্দোলন কর্মী মংচিথান রাখাইন বলেন, নানামূখী অস্থিত্ব সংকটে বরগুনা ও পটুয়াখালী জেলার সমতলের রাখাইনরা। সামাজিক,অর্থনৈতিক,শিক্ষা,জনবল ও সংস্কৃতিতে দিন দিন পিছিয়ে পড়ছে এ সম্প্রদায়। আদিবাসী রাখাইনদের অধিকার রক্ষায় রাষ্ট্রীয়ভাবে উদ্যোগ গ্রহন না করলে এ সম্প্রদায় এক সময় হারিয়ে যাবে।
কলাপাড়া উপজেলা রাখাইন সাংস্কৃতিক সংঘের সাধারণ সম্পাদক চোতেন রাখাইন তার বক্তব্যে বলেন, রাখাইনদের ভাষা সংস্কৃতি আজ বিল্পুতির পথে। এ অঞ্চলের শিশুরা বিদ্যালয়ে নিজ ধর্মের বই পাঠের সুযোগ পাচ্ছে না। শিক্ষক সংকটে নিজ ভাষা ও সংস্কৃতি শিক্ষা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। রাখাইন অধ্যুসিত এলাকার স্কুল গুলোতে এ সম্প্রদায়ের শিক্ষার পরিবেশ নিশ্চিতে সরকারের কাছে দাবী জানান এই নেতা। এসময় মুল প্রবন্ধ উপাস্থাপন করেন বাংলাদেশ আদিবাসী ফেরামের বরিশাল বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক ও রাখাইন সমাজ উন্নয়ন কর্মী মংম্যা।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন