শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৬ বৈশাখ ১৪৩১, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

শান্তি ও সমৃদ্ধির পথ ইসলাম

ধর্ষণের বিচার ও শাস্তি বনাম অসহায় ভুক্তভোগীর করণীয়-২

উবায়দুর রহমান খান নদভী | প্রকাশের সময় : ১১ অক্টোবর, ২০২০, ১২:০০ এএম | আপডেট : ১২:০৯ এএম, ১১ অক্টোবর, ২০২০

গত আলোচনায় ধর্ষণ ও ব্যভিচারের দুনিয়া ও আখেরাতের শাস্তির কথা বলা হয়েছিল। আজকের আলোচনায় অসহায় ভুক্তভোগীর করণীয় সম্পর্কে আলোচনা করা হয়েছে। কেউ যদি ধর্ষণের শিকার হয় বা এমন পরিস্থিতির শিকার হয় তাহলে ইসলাম তাকে যথাসম্ভব প্রতিরোধ করতে বলে। এমনকি যদি ধর্ষণকারীকে হত্যা করার মতো পরিস্থিতিও তৈরি হয়, সেটাও ইসলাম সমর্থন করে।

সাইদ ইবনে জায়েদ (রা.) বলেন, ‘আমি রাসুলুল্লাহ (সা.)-কে বলতে শুনেছি, সম্পদ রক্ষা করতে গিয়ে যে ব্যক্তি নিহত হয়েছে, সে শহীদ। জীবন রক্ষা করতে গিয়ে যে নিহত হয়েছে, সে-ও শহীদ। দীন রক্ষা করতে গিয়ে যে নিহত হয়েছে, সে শহীদ। আর সম্ভ্রম রক্ষা করতে গিয়ে যে নিহত হয়েছে, সে-ও শহীদ।’ (আবু দাউদ, হাদিস : ৪৭৭২; তিরমিজি, হাদিস : ১৪২১)।

এ প্রসঙ্গে ইমাম আহমাদ একটি হাদিস উল্লেখ করেন। যে হাদিসটি যুহরি বর্ণনা করেছেন, তাতে রয়েছেÑ এক ব্যক্তি হুযাইল গোত্রের কিছু লোককে মেহমান হিসেবে গ্রহণ করল। সে ব্যক্তি মেহমানদের মধ্য থেকে এক মহিলাকে ধর্ষণ করার চেষ্টা করেছিল। তখন সে মহিলা তাকে পাথর ছুড়ে মারেন। যার ফলে লোকটি মারা যায়। সে মহিলার ব্যাপারে উমর (রা.) বলেন: আল্লাহর শপথ, কখনই পরিশোধ করা হবে না অর্থাৎ কখনোই এই নারীর পক্ষ থেকে দিয়ত (রক্তমূল্য) পরিশোধ করা হবে না।

কারণ যদি সম্পদ রক্ষার্থে লড়াই করা, সম্পদ খরচ করা, ব্যবহার করা জায়েয, তাহলে কোনো নারী তার আত্মরক্ষার্থে, খারাপ কাজ থেকে নিজেকে হেফাযত করতে গিয়ে, যেনা থেকে নিজেকে বাঁচাতে গিয়ে (যে গুনাহ কোনো অবস্থায় বৈধ নয়) লড়াই করা সম্পদ রক্ষার লড়াই এর চেয়ে অধিক যুক্তিপূর্ণ।

এইটুকু যখন সাব্যস্ত হলো সুতরাং সে নারীর যদি আত্মরক্ষা করার সামর্থ্য থাকে তাহলে সেটা করা তার ওপর ওয়াজিব। কেননা দুর্বৃত্তকে সুযোগ দেয়া হারাম। এক্ষেত্রে আত্মরক্ষা না করাটাই তো সুযোগ দেয়া। (আল-মুগনি : ৮/৩৩১; আল-মুফাসসাল ফি আহকামিল মারআ ৫/৪২-৪৩)।

এ মাসআলার আলোকে মজলুম নারীর জন্য জালিমদের হত্যা করা শরীয়তসম্মত। লাঠি, দা-বটি, দেশীয় অস্ত্র ব্যবহার করে সংঘবদ্ধ ধর্ষক দলকে নিজে বা নিজের আত্মীয় স্বজনকে সাথে নিয়ে হত্যা করা জায়েজ। সংঘবদ্ধ ধর্ষক, গণ ধর্ষণ দল, চিহ্নিত খুনি ধর্ষক ও সন্ত্রাসীদের জনগণও বেছে বেছে শেষ করে দিতে পারবে। যেমন ডাকাত, ছিনতাইকারী ও খুন করতে উদ্যত কাউকে মেরে ফেলা যায়। সমঝোতা ও ভালো আচরণ করে এসব মানবতা ও সমাজবিরোধীকে খাদ্য কিংবা পানীয়ের সাথে বিষ দিয়েও মেরে ফেলা জায়েজ।

এটি নৈরাজ্য বা আইন নিজের হাতে তুলে নেওয়ার নামান্তর এ জন্য নয়, কারণ আধিপত্য বিস্তার ও ক্ষমতার দাপট দেখানোর জন্য কিছু মানুষ যখন পশুর কাতারে নেমে আসে, প্রশাসন যখন তাদের নানা কারণে ধ্বংস করতে পারে না, তখন জাতির সামনে এছাড়া আর কোনো পথ খোলা থাকে না। রাষ্ট্র ও সরকারের সহায়তায় এগিয়ে আসার লক্ষ্যেই তখন সামাজিক প্রতিরোধ গড়ে তোলা জনমানুষের কর্তব্য হয়ে দাঁড়ায়।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (10)
Jaber Ahmed Rumel ১১ অক্টোবর, ২০২০, ২:১৩ এএম says : 0
নারী ও কন্যাশিশুদের প্রতি বখাটেদের হামলা, উৎপাত, নির্যাতন ও সহিংসতা নতুন কিছু নয়। গ্রামগঞ্জে, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে, রাস্তাঘাটে বা বাড়ির আশপাশেই ঘটছে নানা উৎপাতের ঘটনা। একমাত্র ইসলামই পারে মেয়েদের সুরক্ষা দিতে।
Total Reply(0)
কামাল ১১ অক্টোবর, ২০২০, ২:১৪ এএম says : 0
হাদিসে সৎ সঙ্গী নির্বাচনের জন্য অত্যধিক গুরুত্বারোপ করা হয়েছে। এ ক্ষেত্রে হজরত রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিম্নোক্ত হাদিসটি খুব তাৎপর্যপূর্ণ। হজরত আবু মুসা আশআরি (রা.) বলেন, হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘সৎ সঙ্গ ও অসৎ সঙ্গের দৃষ্টান্ত হচ্ছে সুগন্ধি বিক্রেতা ও কামারের হাপরে ফুঁ দানকারীর মতো। সুগন্ধি বিক্রেতা হয়ত তোমাকে এমনিতেই কিছু দিয়ে দেবে অথবা তুমি তার কাছ থেকে কিছু ক্রয় করবে অথবা তার সুঘ্রাণ তুমি পাবে। আর কামারের হাপরে ফুঁ দানকারী হয় তোমার কাপড় জ্বালিয়ে-পুড়িয়ে দেবে নয় তার দুর্গন্ধ তো তুমি পাবেই। ’
Total Reply(0)
দর্শন ই ইসলাম ১১ অক্টোবর, ২০২০, ২:১৪ এএম says : 0
আজকে যেসব বখাটের জন্য সমাজ কলুষিত তাদের মাঝে রয়েছে সুশিক্ষা ও নৈতিক শিক্ষার মারাত্মক অভাব। নৈতিক শিক্ষার আলো তাদের মাঝে থাকলে তারা এমন কাজ করতে পারত না।
Total Reply(0)
কায়সার মুহম্মদ ফাহাদ ১১ অক্টোবর, ২০২০, ২:১৪ এএম says : 0
আমরা মনে করি, ইসলামি শিক্ষা তথা নবী হজরত মুহাম্মদ (সা.)-এর আদর্শের যথাযথ বাস্তবায়নের মাধ্যমে এসব রোধ করা সম্ভব।
Total Reply(0)
তাসফিয়া আসিফা ১১ অক্টোবর, ২০২০, ২:১৫ এএম says : 0
কিশোর অপরাধ বেড়েছে নানা কারণে। সেসব কারণ চিহ্নিত করে ব্যবস্থা নিতে হবে। সেই সঙ্গে তথ্যপ্রযুক্তির অপব্যবহার রোধ করতে হবে। দেশের ক্রমবর্ধমান নারী উত্যক্তের ঘটনা রোধে কঠোর শাস্তি প্রদানের ব্যবস্থা করতে হবে। নারী নির্যাতন তথা উত্যক্তকরণ, ধর্ষণ, খুন, ছিনতাই, অপহরণ, এসিড নিক্ষেপ, অঙ্গহানী, সম্মানহানী, মিথ্যা অপবাদ প্রদান ইত্যাদি অপরাধের জন্য যে শাস্তির বিধান দিয়েছে, সে বিধান যথাযথভাবে কার্যকর করতে হবে।
Total Reply(0)
বাতি ঘর ১১ অক্টোবর, ২০২০, ২:১৫ এএম says : 0
বস্তুত ইভটিজিং বা নারী উক্ত্যক্তের যতো কারণ রয়েছে তার অন্যতম প্রধান কারণ হলো- তরুণ ও যুবকদের নৈতিক পদস্খলন। তাই শুধুমাত্র আইন প্রয়োগের মাধ্যমে নৈতিক পতন রোধ করা সম্ভব নয়। এ সমস্যার সমাধান চাইলে অল্প বয়স থেকে সন্তানদের ধর্মের ভিত্তিতে নৈতিকতার শিক্ষা দিতে হবে।
Total Reply(0)
জোহেব শাহরিয়ার ১১ অক্টোবর, ২০২০, ২:১৬ এএম says : 0
নৈতিকতা বিধ্বংসী উপাদানগুলো নিয়ন্ত্রণ করার সঙ্গে সঙ্গে অল্প বয়সে সন্তানদের মধ্যে ধর্মীয় মূল্যবোধ জাগ্রত করতে হবে এবং মুসলিম মনীষীদের জীবনীর সঙ্গে পরিচিত করতে হবে।
Total Reply(0)
কে এম শাকীর ১১ অক্টোবর, ২০২০, ২:১৬ এএম says : 0
পবিত্র কোরআন-হাদিসের শিক্ষা জনমনে ছড়িয়ে দিতে পারলে এ ধরনের সংকট কাটিয়ে ওঠা সম্ভব হবে- ইনশাআল্লাহ।
Total Reply(0)
kamrul islam ১১ অক্টোবর, ২০২০, ১১:১৫ এএম says : 0
সমাজ কলুষিত তাদের মাঝে সুশিক্ষা ও নৈতিক শিক্ষার মারাত্মক অভাব রয়েছে।
Total Reply(0)
শরিফুল ইসলাম ১১ অক্টোবর, ২০২০, ১১:২৫ এএম says : 0
কিন্তু বাংলার মানুষ তো এভাবে নিরপরাধ মানুষকেও গণধোলাই দিতে পারে! এরকম রেকর্ড আছে
Total Reply(0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন