গত আলোচনায় ধর্ষণ ও ব্যভিচারের দুনিয়া ও আখেরাতের শাস্তির কথা বলা হয়েছিল। আজকের আলোচনায় অসহায় ভুক্তভোগীর করণীয় সম্পর্কে আলোচনা করা হয়েছে। কেউ যদি ধর্ষণের শিকার হয় বা এমন পরিস্থিতির শিকার হয় তাহলে ইসলাম তাকে যথাসম্ভব প্রতিরোধ করতে বলে। এমনকি যদি ধর্ষণকারীকে হত্যা করার মতো পরিস্থিতিও তৈরি হয়, সেটাও ইসলাম সমর্থন করে।
সাইদ ইবনে জায়েদ (রা.) বলেন, ‘আমি রাসুলুল্লাহ (সা.)-কে বলতে শুনেছি, সম্পদ রক্ষা করতে গিয়ে যে ব্যক্তি নিহত হয়েছে, সে শহীদ। জীবন রক্ষা করতে গিয়ে যে নিহত হয়েছে, সে-ও শহীদ। দীন রক্ষা করতে গিয়ে যে নিহত হয়েছে, সে শহীদ। আর সম্ভ্রম রক্ষা করতে গিয়ে যে নিহত হয়েছে, সে-ও শহীদ।’ (আবু দাউদ, হাদিস : ৪৭৭২; তিরমিজি, হাদিস : ১৪২১)।
এ প্রসঙ্গে ইমাম আহমাদ একটি হাদিস উল্লেখ করেন। যে হাদিসটি যুহরি বর্ণনা করেছেন, তাতে রয়েছেÑ এক ব্যক্তি হুযাইল গোত্রের কিছু লোককে মেহমান হিসেবে গ্রহণ করল। সে ব্যক্তি মেহমানদের মধ্য থেকে এক মহিলাকে ধর্ষণ করার চেষ্টা করেছিল। তখন সে মহিলা তাকে পাথর ছুড়ে মারেন। যার ফলে লোকটি মারা যায়। সে মহিলার ব্যাপারে উমর (রা.) বলেন: আল্লাহর শপথ, কখনই পরিশোধ করা হবে না অর্থাৎ কখনোই এই নারীর পক্ষ থেকে দিয়ত (রক্তমূল্য) পরিশোধ করা হবে না।
কারণ যদি সম্পদ রক্ষার্থে লড়াই করা, সম্পদ খরচ করা, ব্যবহার করা জায়েয, তাহলে কোনো নারী তার আত্মরক্ষার্থে, খারাপ কাজ থেকে নিজেকে হেফাযত করতে গিয়ে, যেনা থেকে নিজেকে বাঁচাতে গিয়ে (যে গুনাহ কোনো অবস্থায় বৈধ নয়) লড়াই করা সম্পদ রক্ষার লড়াই এর চেয়ে অধিক যুক্তিপূর্ণ।
এইটুকু যখন সাব্যস্ত হলো সুতরাং সে নারীর যদি আত্মরক্ষা করার সামর্থ্য থাকে তাহলে সেটা করা তার ওপর ওয়াজিব। কেননা দুর্বৃত্তকে সুযোগ দেয়া হারাম। এক্ষেত্রে আত্মরক্ষা না করাটাই তো সুযোগ দেয়া। (আল-মুগনি : ৮/৩৩১; আল-মুফাসসাল ফি আহকামিল মারআ ৫/৪২-৪৩)।
এ মাসআলার আলোকে মজলুম নারীর জন্য জালিমদের হত্যা করা শরীয়তসম্মত। লাঠি, দা-বটি, দেশীয় অস্ত্র ব্যবহার করে সংঘবদ্ধ ধর্ষক দলকে নিজে বা নিজের আত্মীয় স্বজনকে সাথে নিয়ে হত্যা করা জায়েজ। সংঘবদ্ধ ধর্ষক, গণ ধর্ষণ দল, চিহ্নিত খুনি ধর্ষক ও সন্ত্রাসীদের জনগণও বেছে বেছে শেষ করে দিতে পারবে। যেমন ডাকাত, ছিনতাইকারী ও খুন করতে উদ্যত কাউকে মেরে ফেলা যায়। সমঝোতা ও ভালো আচরণ করে এসব মানবতা ও সমাজবিরোধীকে খাদ্য কিংবা পানীয়ের সাথে বিষ দিয়েও মেরে ফেলা জায়েজ।
এটি নৈরাজ্য বা আইন নিজের হাতে তুলে নেওয়ার নামান্তর এ জন্য নয়, কারণ আধিপত্য বিস্তার ও ক্ষমতার দাপট দেখানোর জন্য কিছু মানুষ যখন পশুর কাতারে নেমে আসে, প্রশাসন যখন তাদের নানা কারণে ধ্বংস করতে পারে না, তখন জাতির সামনে এছাড়া আর কোনো পথ খোলা থাকে না। রাষ্ট্র ও সরকারের সহায়তায় এগিয়ে আসার লক্ষ্যেই তখন সামাজিক প্রতিরোধ গড়ে তোলা জনমানুষের কর্তব্য হয়ে দাঁড়ায়।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন