সড়কে নিষিদ্ধ অটো-রিকশার বেপরোয়া দৌরাত্ম্য আর তীব্র যানজটে ভোগান্তি চরমে পৌঁছেছে। ১০-১২ বছর বয়সী শিশু ও অদক্ষ চালকের হাতে প্রতিদিনই ঘটছে দুর্ঘটনা।
দুর্ঘটনায় মারা যায় পথচারীরা। আহত হয়ে চিকিৎসা নিচ্ছেন অনেকে। এসব ইজিবাইক ও অটোরিকশার কারণে পথচারীদের স্বাভাবিক চলাফেরা দুর্বিষহ হয়ে পড়েছে।
উপজেলার ব্যস্ত সড়ক হাজিরহাট তোরাবগঞ্জ করইতলা চরলরেন্স ফজুমিয়ারহাট করুনানগর বাজার চৌধুরীবাজার চৌরাস্তার মোড়ে দিনভর যানজট লেগেই থাকে। অনাকাঙ্খিত এ যানজটে ক্রমশ অসহনীয় হয়ে উঠছে। এসব অটোরিকশা-ইজিবাইকের চালকরা রাস্তায় যেখানে সেখানে অটো থামিয়ে যাত্রী ওঠানামা করে। কখনো কখনো নিয়ন্ত্রন হারিয়ে যাত্রীসহ উল্টে পরে সড়কের বাহিরে।
স¤প্রতি করইতলাবাজার থেকে চৌধুরীবাজার যাওয়ার পথিমধ্যে আল আরাফাহ মাদরাসা সংলগ্ন স্থানে অটোরিকশা চাপায় গুরুতর আহত হয় স্থানীয় নুর নবীর পুত্র শাকিল। পরে নোয়াখালী হসপিটালে নেয়ার পথিমধ্য শিশু শাকিল মারা যায়। চরমার্টিন ৭ নম্বর ওয়ার্ড বাসিন্দা আবুল খায়েরের শরীরে অটোরিকশা উঠিয়ে দেয় স্থানীয় দশ বছর বয়সি চালক।
আহতকে কমলনগর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যাওয়া হলে অবস্থার অবনতি ঘটলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে নোয়াখালী জেনারেল হাসপাতালে প্রেরণ করে। সেখান থেকে মাথায় আঘাতজনিত কারণে তাকে ঢাকায় নিওরো সায়েন্স ল্যাবরেটরী হাসপাতালে প্রেরণ করা হয়। বর্তমানে সেখানেই চিকিৎসাধীন রয়েছে নিরীহ আবুল খায়ের। উপজেলার চর লরেন্স ইউনিয়নের ৮ নম্বর ওয়ার্ড ভক্তপাড়া এলাকার বাসিন্দা জাকের হোসেন বাচ্ছুর ছেলে সাব্বির সপ্তাহখানেক আগে অটোরিকশার ধাক্কায গুরুতর আহত হয়ে মাথায় প্রচুর রক্তক্ষরণ হওয়াসহ বাম পা বাম হাত ভেঙে যায়। শিশু সাব্বির বিছানায় যন্ত্রনা ভোগ করছে।
শাব্বিরের বাবা জাকের বলেন, মাত্র দশ বার বছরের বাচ্চারা নিয়ন্ত্রণহীনভাবে চালাচ্ছে অটোরিকশা। বেপরোয়া গতিতে অটোরিকশা চালানো রোধে কার্যকরী ব্যবস্থা না নেয়ায় আবারো নিষিদ্ধ এ যানবাহন সড়কে দাবড়িয়ে বেড়িয়ে চলে অহরহ দুর্ঘটনা ঘটিয়ে থাকে। এসব প্রশাসনিক দুর্বলতা বলে মনে করেন সাধারণ জনগণ। এ উপজেলায় কতগুলো ইজিবাইক আর অটোরিকশা চলাচল করে তার সঠিক কোনো পরিসংখ্যান কারো কাছেই নেই। প্রায় এক হাজার অটোরিকশা ইজিবাইক এ উপজেলায় চলাচল করছে।
এ ব্যাপারে কলেজ শিক্ষার্থী রিমন বলেন, ইচ্ছে থাকলেও হেটে কলেজে যেতে পারি না, যানজটের কারণে দশ কদমও যাওয়া যায় না। অবসরপ্রাপ্ত সরকারি কর্মকর্তা আমানত উল্লাহ বলেন, প্রতিনিয়ত ইজিবাইক রিকশা বাস ট্রাক পাওয়ার টিলার ট্রাক্টর সবই চলাচল করে সড়কের উপর দিয়ে। এসব পরিবহন চলাচলে ট্রাফিক পুলিশের নজরদারির অভাবে অনেকটাই নিয়ন্ত্রনহীন ও বেপরোয়া চলাচল করছে। তবে কোথাও ইজিবাইক আর অটোরিকশার জন্য নির্ধারিত স্ট্যান্ড না থাকায় সড়ক অবরুদ্ধ করে যাত্রী ওঠানামা করায় যানজট সৃষ্টির অন্যতম একটি কারণ বলেন তিনি। এছাড়াও এসব অটোরিকশা ইজিবাইকের ব্যাটারি চার্জ করতে অবৈধ বিদ্যুৎ সংযোগ ব্যবহার করায় পুরো উপজেলাব্যাপী চলছে লাগামহীন লোডশেডিং।
সরেজমিন ঘুরে দেখা যায়, উপজেলার গুরুত্বপূর্ণ বাণিজ্যিক বাজার হাজিরহাট করুনানগর লরেন্সবাজার, করইতলাবাজার, তোরাবগঞ্জ বাজার, মুন্সীরহাট, মতিরহাট, চৌধুরীবাজার, ফজুমিয়ারহাট, ফাজেল ব্যপারীরহাট বাজারের মূলসড়কগুলো অটোরিকশা, ইজিবাইক আর পাওয়ার টিলারের দখলে রয়েছে। নির্ধারিত স্ট্যান্ড বা পার্কিং ব্যবস্থা না থাকায় সড়কের সিংহভাগ দখল করেই যাত্রী উঠানামা করছে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন