আল্লাহপাক অতীতে বহু প্রভাবশালী, পরাক্রমশীল, ক্ষমতাবান ও বিত্তবৈভবের অধিকারী ব্যক্তি এবং উন্নত ও সমৃদ্ধ জাতিকে তাদের পাপ, অন্যায়, অপকর্ম ও জুলুমবাজির জন্য ধ্বংস করে দিয়েছেন। পবিত্র কোরআনে এসব ব্যক্তি ও জাতির কথা আল্লাহতায়ালা বর্ণনা করেছেন। আদ, সামুদ প্রভৃতি জাতি, লুত ও শোয়াইবের সম্প্রদায়সহ বিভিন্ন সম্প্রদায়কে আল্লাহ ধ্বংস করে দিয়েছেন তাদের অপকর্ম ও কুকর্মের কারণে। সে বিবরণ তুলে ধরে আল্লাহ সমকালীন ও অনাগত মানবমন্ডলীকে শিক্ষা নিতে অনুপ্রাণিত করেছেন। পবিত্র কোরআনে আল্লাহ বলেছেন: তাদের ঘটনাবলিতে আছে জ্ঞানীদের জন্য শিক্ষা। সুরা ইউসুফ: ১১১। ইমাম ইবনে তাইমিয়া (রহ.) এ প্রসঙ্গে বলেছেন, আল্লাহ আমাদেরকে পূর্ববর্তীদের ঘটনা বর্ণনা করেছেন, যেন তা আমাদের জন্য শিক্ষনীয় হয়।
আমরা নমরুদ, ফেরাউন ও কারুনের কথা জানি। পবিত্র কোরআন ও অন্যান্য প্রাচীন গ্রন্থে তাদের কথা ও কৃতকর্মের বিবরণ আছে। ক্ষমতা, অর্থ-বিত্ত ও প্রভাব-প্রতিপত্তিতে তারা ছিল সেরা। কিন্তু তারা সবাই ছিল আল্লাহকে অস্বীকারকারী, দাম্ভিক, অহংকারী, অনাচারী ও জুলুমকারী। নমরুদ নিজেকে আল্লাহর সমকক্ষ দাবি করেছিল। পবিত্র কোরআনে তার সম্পর্কে বলা হয়েছে: তুমি কি ওই ব্যক্তির অবস্থা চিন্তা করোনি, যাকে আল্লাহ রাজত্ব দান করার কারণে সে নিজ প্রতিপালকের (অস্তিত্ব) সম্পর্কে ইবরাহিমের সঙ্গে বিতর্কে লিপ্ত হয়? যখন ইবরাহিম বলল, তিনি আমার প্রতিপালক যিনি জীবন দান করেন এবং মৃত্যু ঘটান। তখন সে বলল, আমিও তো জীবন দান করি ও মৃত্যু ঘটাই। ইবরাহিম বলল, আচ্ছা আল্লাহ তো সূর্য পূর্ব দিক থেকে উদিত করেন, তুমি তা পশ্চিম দিক থেকে উদিত করো। একথায় সেই কাফির নিরুপায় হয়ে গেল। সুরা বাকারা: ২৫৮। কথিত আছে, দীর্ঘ ৪০০ বছর নমরুদ রাজত্ব করেছিল। এই আল্লাহদ্রোহী শাসকের মৃত্যু হয়েছিল একটি অতি ক্ষুদ্র মশার কারণে। মশাটি তার নাক দিয়ে মস্তিষ্কে প্রবেশ করেছিল। তার কামড়ে অতিষ্ঠ হয়ে নমরুদ কীভাবে মৃত্যু বরণ করেছিল, সে কথা অনেকেরই অজানা নয়।
ফেরাউন ছিল এক উদ্ধত ও অত্যাচারী শাসক। পবিত্র কোরআনে তার প্রসঙ্গ এসেছে এভাবে: ফেরাউন জমিনে ঔদ্ধত্য প্রদর্শন করেছিল এবং সে তার অধিবাসীদের বিভিন্ন দলে বিভক্ত করছিল। তাদের একটি শ্রেণিকে সে অত্যন্ত দুর্বল করে রেখেছিল, যাদের পুত্রদের সে জবেহ করত এবং নারীদের জীবিত রাখত। প্রকৃতপক্ষে সে ছিল বিপর্যয় সৃষ্টিকারী। সুরা কাসাস: ৪। নমরুদ নিজেকে শ্রেষ্ঠ প্রতিপালক দাবি করেছিল। পবিত্র কোরআনে উল্লেখ করা হয়েছে: আর সে বলল, আমিই তোমাদের শ্রেষ্ঠ প্রতিপালক। পরিণামে আল্লাহ তাকে পাকড়াও করলেন আখেরাত ও দুনিয়ার শাস্তিতে। যে ভয় করে তার জন্য অবশ্যই এতে রয়েছে শিক্ষা। সুরা নাজিয়াত: ২৪-২৬। আল্লাহ তাকে সেনাদলসহ পানিতে ডুবিয়ে মারেন। পবিত্র কোরআনে আল্লাহর স্পষ্ট উচ্চারণ: আমি তাকে ও তার সেনাদের পাকড়াও করলাম এবং সাগরে নিক্ষেপ করে ডুবিয়ে মারলাম। এবার দেখো, জালিমদের পরিণিত কী হয়ে থাকে। সুরা কাসাস: ৩৯-৪০।
কারুন ছিল ঔদ্ধত ও দাম্ভিক। সে ছিল বিপুল সম্পদের মালিক। পবিত্র কোরআনে তার সম্পর্কে বলা হয়েছে: কারুন ছিল মুসা (আ.) এর সম্প্রদায়ের এক ব্যক্তি। কিন্তু সে তাদেরই ওপর জুলুম করল। আমি তাকে এমন ধনভান্ডার দিয়েছিলাম যার চাবিগুলো বহন করা একদল শক্তিমান লোকের পক্ষেও কষ্টকর ছিল। স্মরণ করো, তার সম্প্র্রদায় তাকে বলেছিল, দম্ভ করো না, নিশ্চয় আল্লাহ দাম্ভিকদের পছন্দ করে না। সে বলল, এসব আমি আমার জ্ঞানবলে লাভ করেছি। সে কি জানতো না, আল্লাহ তার আগে এমন বহু মানবগোষ্ঠীকে ধ্বংস করেছিলেন, যারা শক্তিতেও তার অপেক্ষা প্রবল ছিল এবং লোকবলেও বেশি ছিল? অপরাধীদের তাদের অপরাধ সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হয় না। পরিণামে আমি তাকে তার প্রাসাদসহ ভ‚গর্ভে ধসিয়ে দিলাম। তার সপক্ষে এমন কোনো দল ছিল না, যারা আল্লাহর শাস্তি থেকে তাকে সাহায্য করতে পারত এবং সে নিজেও পারল না আত্মরক্ষা করতে। সুরা কাসাস: ৭৬-৮১।
সকল প্রশংসা আল্লাহর। আল্লাহ ছাড়া কোনো উপাস্য নেই। তিনি আকাশ ও পৃথিবীর স্রষ্টা এবং তাদের অন্তর্বর্তী স্থানে ও ভূগর্ভে যা কিছু আছে তা তারই। সুরা তাহা: ৬। তিনিই সব কিছুর প্রতিপালক। সার্বভৌম ক্ষমতা একমাত্র আল্লাহরই। আল্লাহ সর্ববিষয়ে সর্বশক্তিমান। সুরা আল ইমরান: ১৮৯। আল্লাহর ইচ্ছা ও নির্দেশ ছাড়া কোনো কিছু হয় না। সব কিছুর ওপর তিনি কর্তৃত্বশীল। যা ইচ্ছা তাই করার একমাত্র ক্ষমতা তারই। এই করোনাকালে এসব সত্য পরিস্ফুট ও প্রমাণিত। একই সঙ্গে মানুষের অক্ষমতা, অসহায়ত্ব ও ক্ষুদ্রত্ব সর্বত্র দৃশ্যমান। এ বাস্তবতা থেকে মানুষের শিক্ষা নেয়ার অনেক কিছু রয়েছে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন