ইমাম নববী রহ. তাহযীব নামক কিতাবে লেখেন, আল্লাহ তায়ালা চরিত্র ও অভ্যাসের সকল মাধুর্য উচ্চ গুণাবলি রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর পবিত্র সত্তায় সন্নিবেশিত করে দিয়েছিলেন এবং পূর্ববর্তী ও পরবর্তীদের যত গুণ-গরিমা কল্পনা করা যায়, সে সবগুলো দ্বারাই তাকে ভূষিত করেছিলেন। তিনি ছিলেন উম্মী। মানবকুলের মধ্যে কেউ তার গুরু ছিল না। এতদসত্তে¡ও তাকে এমন জ্ঞান দান করা হয়, যা সমগ্র সৃষ্টিজগতে কাউকে দেয়া হয়নি। তাকে ভূমন্ডলের রত্মভান্ডারের চাবি পেশ করা হয়, কিন্তু তিনি পার্থিব ধনৈশ্বর্যের বদলে সর্বদা পরকালকে অগ্রাধিকার দিয়েছেন।
হযরত আনাস (রা.) বলেন, নবী করিম (সা.) জ্ঞান ও প্রজ্ঞা সম্পর্কে সর্বাধিক অবহিত ছিলেন। তিনি সর্বাদিক সম্মানকারী, সর্বাধিক ন্যায়বিচারক, সর্বাধিক মননশীল ও সংযমশীল, সর্বাধিক সৎ, মানুষের সর্বাধিক উপকারকারী এবং মানুষের নির্যাতন ও উৎপীড়নে সর্বাধিক সবরকারী ও ধৈর্যশীল ছিলেন। (ওসায়েলুল ওসুল ইলা শামায়িলির রাসূল)।
বুখারী ও মুসলিমে হযরত আনাস (রা.) থেকে বর্ণিত আছে যে, নবী করিম (সা.) সকল মানুষের মধ্যে সর্বাধিক সুশ্রী, বীর ও উদারপ্রাণ ছিলেন। কারণ, তিনি সকল মানুষের সেরা মানব এবং সর্বাধিক মিতাচারী ছিলেন। এমন সব মহতী গুণে গুণান্বিত ব্যক্তির কর্ম ও আচার-আচরণই তো সর্ব মানবের জন্য আদর্শ হয়ে থাকে। তার মধ্যে যাবতীয় দৈহিক ও আধ্যাত্মিক গুণ সন্নিবেশিত ছিল এবং তিনি সৌন্দর্য ও অনুপম চরিত্রমাধুর্যের বাহক ছিলেন। তিনি সর্বাধিক উদার, সর্বাধিক ভদ্র ও সর্বাধিক দানশীল ছিলেন।
আল্লাহতায়ালা পবিত্র কোরআনে হযরত রাসূলে আকরাম (সা.)-এর উৎকৃষ্ট চরিত্র ও প্রশংসনীয় গুণাবলির প্রশংসা করে বলেছেন, নিশ্চয় আপনি মহান চরিত্রের অধিকারী। (সূরা আল কালাম : আয়াত ৪)। এর আগের আয়াতে আল্লাহ তায়ালা বলেন, আপনার জন্য আল্লাহ তায়ালার অপরিসীম প্রতিদান রয়েছে। (সূরা আল কালাম : আয়াত ৩)। স্বয়ং রাসূলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেছেন, উৎকৃষ্ট চারিত্রিক গুণাবলিকে পূর্ণতা দান করার উদ্দেশ্যেই আমি প্রেরিত হয়েছি। (মুসনাদে বাযযার)।
এ থেকে জানা গেল, রাসূলে আকরাম (সা.)-এর পবিত্র সত্তায় সুন্দর ও উৎকৃষ্ট চারিত্রিক গুণের সমাবেশ ঘটেছিল। কেননা তার প্রত্যক্ষ শিক্ষাদাতা আল্লাহ তায়ালা সর্ববিষয়ে পরিজ্ঞাত। হযরত আয়েশা (রা.) রাসূলে আকরাম (সা.)-এর চারিত্রিক গুণাবলি সম্পর্কে জিজ্ঞাসিত হয়ে বলেন, ‘তার চরিত্র ছিল কোরআন।’ এর বাহ্যিক অর্থ এই, কোরআনুল কারীমে বর্ণিত সকল প্রশংসনীয় চারিত্রিক গুণাবলি দ্বারা তিনি গুণান্বিত ছিলেন।
কাযী আয়ায রহ. কিতাবুশ শিফায় আরও উল্লেখ করেন, রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর সন্তুষ্টি ছিল কোরআনে পাকের সন্তুষ্টির সাথে এবং তার অসন্তুষ্টি ছিল কোরআনের অসন্তুষ্টির সাথে ওতপ্রোতভাবে জড়িত। উদ্দেশ্য এই, তার সন্তুষ্টি ছিল খোদায়ি আদেশ পালনের মধ্যে এবং অসন্তুষ্টি ছিল খোদায়ি আদেশ লঙ্ঘনে ও পাপ কর্মের মধ্যে।
আধ্যাত্ম জ্ঞানের নির্ভরযোগ্য কিতাব আওয়ারেফুল মাআরেফে আছে, উপরোক্ত বাক্য দ্বারা হযরত আয়েশা (রা.) এ কথা বোঝাতে চেয়েছিলেন যে, কোরআনের মধ্যেই নবী করিম (সা.)-এর চরিত্র নিহিত ছিল। সত্য ঘটনা এই, কারও বিবেক-বুদ্ধি ও অনুমান হুযুর (সা.)-এর মর্যাদার মহান স্বরূপ পর্যন্ত পৌঁছাতে পারে না এবং আল্লাহ ব্যতীত কেউ এর স্বরূপ চিনতেও পারে না এবং যেমন আল্লাহতাআলাকে রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর মতো যথার্থভাবে কেউ চিনতে পারেনি। এর ‘যথার্থ’ অর্থ আল্লাহ ব্যতীত কেউ জানে না। (মাদারিজুন নবুওয়াত : আব্দুল হক দেহলভী)।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন