নবী কারীম (সা.) ছিলেন দয়া-মমতার সাগর। উম্মাতের প্রতি ছিল তাঁর গভীর মায়া, সীমাহীন মমতা এবং তাদের কল্যাণ সাধনে ছিলেন সদা ব্যাকুল, ব্যতিব্যস্ত।
তাদের তিনি নিঃস্বার্থ ভালোবাসতেন। তিনি তাদের থেকে না এর কোনো প্রতিদান চাইতেন, আর না কৃতজ্ঞতা কামনা করতেন। চাইতেন শুধু তাদের নাজাত ও সফলতা। চাইতেন যেন উম্মত হেদায়েতের পথ হারিয়ে না ফেলে, আল্লাহর পক্ষ থেকে কোনো আযাব তাদের আক্রান্ত না করে। হযরত আব্দুল্লাহ বিন আমর ইবনুল আস রা. বলেছেন, নবী কারীম (সা.) এ আয়াত পাঠ করলেন, যাতে ইবরাহীম আলাইহিস সালামের কথা উল্লেখ আছে : হে আমার রব! এসব প্রতিমা বহু মানুষকে বিভ্রান্ত করেছে। সুতরাং যে আমার অনুসরণ করবে সে আমার দলভুক্ত হবে। (আর সেই আয়াতও পড়লেন যেখানে আছে), (এবং ঈসা (আ.) বললেন,) যদি আপনি তাদের শাস্তি দেন তবে তারা তো আপনারই বান্দা। আর যদি তাদের ক্ষমা করেন তবে নিশ্চয়ই আপনার ক্ষমতাও পরিপূর্ণ এবং হিকমতও পরিপূর্ণ।
অতঃপর নবীজী (সা.) দু’হাত তুলে কেঁদে কেঁদে বললেন, হে আল্লাহ, আমার উম্মত! আমার উম্মত! তখন আল্লাহতা’আলা বললেন, হে জিবরাঈল! মুহাম্মাদকে গিয়ে জিজ্ঞাসা করো সে কেন কাঁদে? যদিও তোমার রবই ভালো জানেন। অতঃপর জিবরাঈল (আ.) নবীজীর কাছে এসে তা জিজ্ঞাসা করলেন। রাসূলুল্লাহ (সা.) সব খুলে বললেন। যদিও আল্লাহতা’আলা সব জানেন। অতঃপর আল্লাহতা’আলা বললেন, হে জিবরাঈল! মুহাম্মাদকে গিয়ে বলো, আমি অচিরেই তোমার উম্মতের ব্যাপারে তোমাকে সন্তুষ্ট করব, ব্যথিত করব না। (সহীহ মুসলিম : ২০২)।
আরেক হাদিসে উদাহরণ টেনে নবীজী উম্মতের প্রতি তাঁর দরদকে এভাবে বুঝিয়েছেন, আমার ও তোমাদের দৃষ্টান্ত সে ব্যক্তির দৃষ্টান্তের মতো, যে আগুন জ্বালালো, ফলে ফড়িং দল পতঙ্গরাজি তাতে পড়তে লাগল। আর সে ব্যক্তি তাদের তা থেকে তাড়াতে লাগল। অনুরূপ আমিও আগুন থেকে রক্ষার জন্য তোমাদের কোমর ধরে টানছি, আর তোমরা আমার হাত থেকে ছুটে যাচ্ছ। (সহীহ মুসলিম : ২২৮৫)।
উম্মতের হেদায়েত লাভে তাঁর দরদ ও আত্মত্যাগের মাত্রা বোঝার জন্য কুরআন কারীমের এ একটি আয়াতই যথেষ্ট, মনে হয় যেন আপনি ওদের পেছনে পরিতাপ করতে করতে স্বীয় প্রাণনাশ করে ফেলবেন, যদি ওরা এই বাণীর প্রতি ঈমান না আনে। (সূরা কাহ্ফ : ৬)।
এমনকি অকৃতজ্ঞ উম্মতের ধৃষ্টতার সামনেও তাঁর দয়ার বাঁধ ছিল অটল। তায়েফবাসীর কাছে নিয়ে গিয়েছিলেন তাওহীদের বাণী, হেদায়েতের পয়গাম। তাদের দেখাতে চেয়েছিলেন মুক্তির পথ। কিন্তু তাদের অজ্ঞতা তাদের ওপর চেপে বসল। চরম ধৃষ্টতা দেখিয়ে তারা নবীজীর ওপর চড়াও হলো। পাথরের আঘাতে তাঁকে জর্জরিত করল। আঘাতে আঘাতে তাঁকে রক্তাক্ত করে ফেলল। কেঁপে উঠল আল্লাহর আরশ। পাঠালেন জিবরীল আমীনকে।
জিবরীল বললেন, আপনার কওম আপনার উদ্দেশে যা বলেছে এবং আপনার সাথে যে আচরণ করেছে আল্লাহ তা দেখেছেন। আপনার আদেশ পালনে পাহাড়ের দায়িত্বে নিয়োজিত ফেরেশতাকে পাঠিয়েছেন। তখন পাহাড়ের ফেরেশতা আমাকে সম্বোধন করে সালাম দিলো এবং বলল, আমি পাহাড়ের দায়িত্বে নিয়োজিত ফেরেশতা। হে মুহাম্মাদ! আপনার কওমের বক্তব্য আল্লাহ শুনেছেন। আমাকে পাঠিয়েছেন আপনার আদেশ পালন করতে। আপনি আমাকে কী আদেশ করবেন করুন। আপনি যদি আদেশ করেন তাহলে আমি দুই পাহাড়ের মাঝে এদের পিষে ফেলব।
কিন্তু দয়ার সাগর নবীজী জবাব দিলেন, (আমি এটা চাই না;) বরং আমি আশা রাখি, আল্লাহতা’আলা এদের বংশধরদের মাঝে এমন মানুষ বের করবেন, যারা এক আল্লাহর ইবাদত করবে, তাঁর সাথে কাউকে শরিক করবে না। (মুসলিম : ১৭৯৫)। উম্মতের প্রতি নবীজী কী পরিমাণ দয়ার্দ্র ও অনুগ্রহশীল ছিলেন, এখানে তার কিঞ্চিতই বিবৃত হলো। আল্লাহতা’আলা এককথায় বড় সুন্দরভাবে বিষয়টি উপস্থাপন করেছেন, (হে মানুষ!) তোমাদের নিজেদের মধ্য থেকেই তোমাদের কাছে এক রাসূল এসেছে। তোমাদের যে কোনো কষ্ট তার জন্য অতি পীড়াদায়ক। সে সতত তোমাদের কল্যাণকামী, মুমিনদের প্রতি অত্যন্ত সদয়, পরম দয়ালু। (সূরা তাওবা : ১২৮)। তো যেই নবী উম্মতের জন্য এতটা মহানুভব ছিলেন; সেই নবীর প্রতি উম্মতের আচরণ কেমন হওয়া চাই! সেটা আমাদের মনে রাখা উচিত।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন