সর্বশ্রেষ্ঠ সর্বশেষ মহানবী হজরত মোহাম্মদ (সা.) ছিলেন রহমাতুল্লিল আলামীন, সমগ্র বিশ্বের জন্য রহমত স্বরূপ। আল্লাহ কোরআনে ঘোষণা করেছেন, ‘ওয়া-মা আরসালনাকা ইল্লা রহমাতুল্লিল আলামীন।’ আয়াতে আলামীন শব্দের ব্যাখ্যা প্রসঙ্গে তাফসীরসমূহে বিস্তারিত আলোচনা রয়েছে। ‘আলম’ অর্থ বিশ্ব বা পৃথিবী। এ শব্দের বহুবচন ‘আলামীন’। এর অর্থ বহুবিশ্ব, বহু পৃথিবী। অপর এক আয়াতে আল্লাহ বলেন, ‘ওয়া-মা খালাক্তুল জিন্না ওয়াল-ইন্সা ইল্লা লিইয়াবুদুন।’ অর্থাৎ আল্লাহ জিন ও মানুষকে একমাত্র তাঁরই এবাদতের জন্য সৃষ্টি করেছেন।
এই পৃথিবীতে মানুষের বসবাস, জিনের বসবাসের নির্দিষ্ট স্থান রয়েছে। আল্লাহতাআলার এ মাখলুক স্বতন্ত্র সৃষ্টি। জিনের শ্রেণিভাগ সম্পর্কে রসূলুল্লাহ (সা.)-এর উক্তি বিদ্যমান। তিনি বলেন, ‘জিন তিন প্রকারের- (১) এক প্রকারের জিন বাতাসে ওড়ে, (২) এক প্রকারের জিন সাপ ও কুকুরের রূপ ধারণ করে আত্মপ্রকাশ করে এবং (৩) এক প্রকারের জিন উদ্বাস্তুর ন্যায় এক স্থান হতে অন্য স্থানে স্থানান্তরিত হয়ে থাকে। তিবরানি, হাকেম ও বায়হাকির বরাতে এ হাদীস বর্ণিত হয়েছে।
আরো বিভিন্ন সহি হাদীস হতে জানা যায় যে, রসূলুল্লাহ (সা.)-এর আবির্ভাবের পর জিন ও শয়তানের আসমানে ওঠার ক্ষমতা হরণ করা হয়েছে এবং ওঠার চেষ্টা করা হলে (আসমানি খবর আনার জন্য) তাদের প্রতি শাহাবে সাকিব অর্থাৎ আগুনের উল্কা নিক্ষেপ করে তাদের রোধ করা হয়। অর্থাৎ এই পৃথিবীতেই জিনদের বসবাস করতে হয় নানা স্থানে এবং নানা শ্রেণিতে। যেমন রসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, জিন অদৃশ্য শক্তি হলেও নানা আকারে মনুষ্য সমাজে তাদের বিচরণ লক্ষ করা যায়। তাদের মধ্যে মানুষের ন্যায় মোমেন মুসলমান ও কাফের-মোশরেক প্রভৃতি রয়েছে।
‘ইজমা’ বা সর্বসম্মত মত অনুযায়ী, রসূলুল্লাহ (সা.) মানুষের জন্য যেমন নবী, অনুরূপ জিনদের জন্যও নবী। তাঁর কাছে দলে দলে জিন মুসলমান হয়েছে, যার বর্ণনা কোরআন ও হাদীসে রয়েছে। বিভিন্ন পর্যায়ে তিনি তাদেরকে (জিন) কোরআন শিক্ষা দিয়েছেন এবং ইসলামের বিধি বিধান জানিয়ে দিয়েছেন এবং দুষ্টু প্রকৃতির জিনদের ক্ষতিকর তৎপরতা হতে রক্ষা পাওয়ার জন্য বিভিন্ন দোয়া, আয়াত পড়তে বলেছেন।
অপরদিকে, এমন অসংখ্য ঘটনার কথা হাদীস ও সীরাত গ্রন্থগুলো হতে বিশেষত জিন সংক্রান্ত গ্রন্থ ও তথ্য হতে জানা যায় যে, জিনের গায়বী কণ্ঠে রসূলুল্লাহ (সা.)-এর আবির্ভাবের আগমনবার্তা ও তাঁর পরিচয় শুনে অনেকে ইসলাম গ্রহণ করেছেন এবং জিনরা তাদের আরবি কবিতায় রসূলুল্লাহ (সা.)-এর প্রতি ঈমান আনার জন্য উপদেশ প্রদান করেছে, যা ছিল হুজুর (সা.)-এর জীবন্ত অনন্য মোজেযা।
মহানবী (সা.)-এর আবির্ভাব সংক্রান্ত জিনদের গায়বী কণ্ঠগুলো সবই ছিল আরবি ভাষায় পদ্যে ও গদ্যে। মুসলমান জিনদের মধ্যে আরবি কবি, সাহিত্যিকদের কণ্ঠে উচ্চারিত বাক্যগুলাতে অভিনবভাবে এবং অতিউঁচু দৃষ্টিভঙ্গিতে হুজুর (সা.)-এর বংশমর্যাদা ও তাঁর নুবওয়াতি আদর্শ শিক্ষার প্রতি আভাস রয়েছে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন