হযরত আনাস (রা.) বলেন, হুজুর পাক (সা.) পরবর্তী দিনের জন্য কোনো বস্তু সঞ্চয় করে রাখতেন না। (শামায়েলে তিরমিযী)। অর্থাৎ, যা আসত নিঃশেষে ব্যয় করে দিতেন। আগামীকাল আবার প্রয়োজন হবে এ ধারণায় সংরক্ষিত রাখতেন না; এটা ছিল চরম তাওয়াক্কুল। যে প্রভু আজ দিয়েছেন, তিনি কালও দেবেন। এই ছিল তার মনোভঙ্গি।
তবে এ নিয়ম কেবল তার নিজের জন্যই ছিল; নতুবা পত্মীগণের ভরণ-পোষণের উপকরণ অধিকাংশ সময় একসাথে তাদের হাতে সমর্পণ করে দিতেন। তারা যেভাবে ইচ্ছা তা ব্যয় করতে পারতেন, বণ্টনও করে দিতে পারতেন; কিন্তু তারাও তো রাসুলুল্লাহ (সা.) এরই পত্মী ছিলেন। হযরত আয়েশা (রা.)-এর খেদমতে একবার এক লাখ দেরহামেরও বেশি নজরানা পেশ করা হয়। তিনি একটি বড় থালা আনিয়ে তা ভরে ভরে সেগুলো বণ্টন করে দিলেন। সেদিন তিনি রোজা রেখেছিলেন। ইফতারের সময় একটি রুটি ও যয়তুনের তৈল দ্বারা ইফতার করলেন। বাঁদি আরজ করল, এক দিরহামের গোশত কিনে আনলে আজ তাতে ইফতার করা যেত। তিনি বললেন, এখন বললে কী হবে, সে সময় মনে করিয়ে দিলে না কেন? (খাসায়েলে নববী)।
রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, আমি এটা পছন্দ করি না যে, ওহুদ পাহাড় আমার জন্য স্বর্ণে পরিণত হবে, আর রাত্রিবেলায় আমার কাছে তার এক দিনারও অবশিষ্ট থাকবে, সেই দিনার ছাড়া, যা আমি ঋণ পরিশোধের জন্য রেখে দেব। এটা তার চ‚ড়ান্ত দানশীলতার প্রমাণ। এ কারণে অনেক সময় তিনি ঋণাভারে ভারাক্রান্ত থাকতেন। এমনকি তার ওফাতের সময় তার লৌহবর্মখানাও পরিবার-পরিজনের ব্যয়ভার বহনের দায়ে বন্ধক রাখা ছিল। (নাশরুত তীব)।
হযরত আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণিত আছে, রাসুলুল্লাহ (সা.) স্বভাগতভাবে কঠোরভাষী ছিলেন না, এমনকি প্রয়োজনেও কঠোরভাষী হতেন না। তিনি বাজারে গিয়েও গাম্ভীর্যের পরিপন্থি কথাবার্তা বলতেন না এবং মন্দের জবাবে মন্দ কাজ করতেন না, বরং ক্ষমা করে দিতেন। যদি কোনো প্রয়োজনে কোনো অশোভন বিষয় উল্লেখ করতেই হতো, তবে ইশারা-ইঙ্গিতে করতেন।
হযরত আলী (রা.) থেকে বর্ণিত আছে, রাসুলে আকরাম (সা.) মনের দিক দিয়ে সর্বাধিক প্রশস্ত ছিলেন। সত্য কথা বলতেন এবং নরম স্বভাব বিশিষ্ট ছিলেন। তিনি সামাজিকতায় অত্যন্ত ভদ্র ছিলেন। কেউ দাওয়াত করলে তিনি কবুল করতেন। তিনি হাদিয়া গ্রহণ করতেন, যদিও (সেই হাদিয়া অথবা দাওয়াতের খাদ্য) গরু অথবা ছাগলের পায়ের মতো তুচ্ছ কোনো বস্তুও হতো। তিনি হাদিয়ার প্রতিদানও দিতেন।
তিনি ক্রীতদাস, আজাদ, বাঁদি, ধনী-দরিদ্র নির্বিশেষে সকলের দাওয়াতই কবুল করতেন। মদীনার জনপদের শেষ প্রান্তেও যদি কেউ অসুস্থ হতো, তিনি তাকে দেখতে যেতেন। কেউ ওজরখাহি করলে তিনি তার ওজর কবুল করতেন। তিনি সাহাবায়ে কেরামের সাথে অগ্রণী হয়ে মুসাফাহা বা করমর্দন করতেন। তাকে কখনো সাহাবীগণের মধ্যে পা ছড়িয়ে বসে থাকতে দেখা যায়নি। কেউ তার কাছে এলে তিনি তার সমাদর করতেন এবং কোনো কোনো সময় তার বসার জন্য নিজের গায়ের চাদর পর্যন্ত বিছিয়ে দিতেন। তিনি কারও কথা কেটে কিছু বলতেন না। স্মিত হাসিতে ও প্রফুল্লতায় তিনি সবার অগ্রণী ছিলেন। তবে ওহী অবতরণের সময় অথবা ওয়াজ ও খুতবা দানকালে তার মুখে হাসি কিংবা কৌতুক প্রকাশ পেত না। (নাশরুত তীব)।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন