মাহমুদ ইলাহী মন্ডল
হিলারি ক্লিনটন ও ডোনাল্ড ট্রাম্প তাদের নিজ নিজ দলের পক্ষ থেকে প্রেসিডেন্ট প্রার্থী মনোনীত হয়েছেন। দীর্ঘ প্রাইমারি যুদ্ধে দুজনই নিজ নিজ দলের প্রার্থীদের সাথে তীব্র প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে অবশেষে দলীয় মনোনয়ন লাভ করেছেন। এক্ষেত্রে হিলারি ক্লিনটনের চেয়ে ডোনাল্ড ট্রাম্পকেই বেশি ঝাক্কি-ঝামেলা পোহাতে হয়েছে। রিপাবলিকান দলে একাধিক প্রার্থী থাকায় সবাই প্রায় একজোট হয়ে ট্রাম্পের বিরুদ্ধেই অবস্থান নেন। বিশেষ করে ট্রাম্পের মুসলিমবিরোধী অবস্থান এবং উল্টোপাল্টা কথাবার্তার কারণেই ট্রাম্প প্রায়ই সমালোচিত হতেন এবং রিপাবলিকান নেতারাও বিব্রতবোধ করতেন। দলে রিপাবলিকান প্রাইমারি নির্বাচনের শেষ পর্যায়ে এসে এমনও একটি ধারণার জন্ম হয়েছিল যে, ট্রাম্পকে ঠেকাতে তার প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী ট্রেড ক্রুজ অথবা অন্য কোনো প্রার্থীকেই রিপাবলিকান দলীয় প্রেসিডেন্ট প্রার্থী হিসেবে মনোনয়ন দেয়া হবে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত ক্লিভল্যান্ডে অনুষ্ঠিত দলীয় কনভেনশনে রিপাবলিকান নেতাদের সেই চেষ্টা সফল হয়নি। অন্য কথায় বলা যায়, তারা সে সাহসটি পাননি। সিনেটের সভাপতি রিপাবলিকান নেতা পল রায়ান একবার সেই দুঃসাহস দেখালেও পরবর্তীতে চুপসে যান। অর্থাৎ ট্রাম্পের ব্যাপারে দেখা যাচ্ছে যে, তার বলিষ্ঠ কণ্ঠস্বর ও একগুঁয়েমি জেদের কাছে রিপাবলিকান নেতারা তাদের দলীয় ইতিহাসে এই প্রথম মাথা নত করেন। আর শেষ পর্যন্ত ট্রাম্পকেই তাদের দলীয় প্রেসিডেন্ট প্রার্থী হিসেবে মনোনয়ন দিতে বাধ্য হন। কিন্তু ডেমোক্রেট শিবিরে আবার অন্য চিত্র। সাবেক ফার্স্টলেডি ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিলারি ক্লিনটনের বিপরীতে হঠাৎ করে এসে হাজির হন বার্নি স্যান্ডার্স। অজানা অচেনা এই স্যান্ডার্সকে প্রথম দিকে তেমন কেউ চিনতে না পারলেও পরবর্তীতে তাকে চিনতে শুরু করে। কারণ প্রাইমারির প্রথম অবস্থায় তাকে তেমন কোনো প্রার্থীই মনে হয়নি। মনে হয়েছিল, হঠাৎ করে আসা কেউ, যে অল্পতেই ঝরে পড়বে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত সবাইকে অবাক করে দিয়ে বুড়ো স্যান্ডার্স তার প্রতিপক্ষ হিলারিকে এমনভাবে তীব্র বাক্যবাণে জর্জরিত করে আক্রমণ করা শুরু করেন যে, সবাই প্রায় অবাক হয়ে যায়। স্যান্ডার্সের কথাবার্তায় একটা বিচক্ষণতার লক্ষণ ছিল, যা একজন প্রেসিডেন্ট প্রার্থীর থাকা উচিত। তিনি একেবারে শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত এসেও হাল ছাড়েননি। এটিই একজন প্রার্থীর শেষ লক্ষ্য থাকা উচিত। যেটি রিপাবলিকান ট্রেড ক্রুজ অথবা অন্য প্রার্থীরা কেউ পারেননি। এটিই স্যান্ডার্সের জন্য সবচেয়ে বড় অর্জন।
এখন প্রশ্ন হলো, দুই দল থেকে দুজনই তো মনোনয়ন পেলেন। এবার কী হবে? নভেম্বরে নির্বাচন। সময় বেশি নেই। ইতোমধ্যেই হিলারি ক্লিনটন ও ডোনাল্ড ট্রাম্প তীব্র বাগযুদ্ধে নেমেছেন। প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা ও মিশেল ওবামা হিলারিকে একজন শ্রেষ্ঠ প্রেসিডেন্ট হিসেবে অভিহিত করেছেন। তাদের মতে, হিলারিই হবেন মার্কিন ইতিহাসে শ্রেষ্ঠ প্রেসিডেন্ট। শুধু তাই নয়, যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে প্রথম মহিলা প্রেসিডেন্ট আর বিল ক্লিনটন হবেন প্রথম ফার্স্ট জেন্টলম্যান। হিলারিকে নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে দীর্ঘদিন ধরেই জল্পনা-কল্পনা চলছে। আর হিলারিও দীর্ঘদিন ধরে তাকে সেভাবেই তৈরি করছিলেন। এই সম্ভাবনাটা আরও গাঢ় হয় যখন গত নির্বাচনের আগের নির্বাচনে বারাক ওবামার বিপক্ষে প্রাইমারি দৌড়ঝাঁপে তিনি অংশ নেন। সম্ভাবনা থাকা সত্ত্বেও হিলারি বারাক ওবামার কাছে হেরে যান। কিন্তু ওবামাও কম যান না। তিনি হিলারিকে পররাষ্ট্রমন্ত্রী নিয়োগ দিয়ে যোগ্যতার মানদ-ে আরও একধাপ এগিয়ে নেন। হিলারি পররাষ্ট্রমন্ত্রী থাকাকালে মোটামুটি দক্ষতার সাথেই তার দায়িত্ব পালন করেন। এক্ষেত্রে কিছু সামান্য দোষত্রুটি থাকলেও হিলারি তা সামাল দেন। আর এটিই হিলারির সবচেয়ে বড় দক্ষতা। প্রাতিষ্ঠানিক দক্ষতা বলতে যা বুঝায় হিলারি তার সবটুকুই অর্জন করেছেন। সুতরাং হিলারিকে হালকাভাবে দেখার সুযোগ নেই। এ ছাড়া হিলারি একজন সমাজকর্মী হিসেবে বিশ্বব্যাপী চষে বেড়িয়েছেন। হিলারি যে ডেমোক্রেট দলীয় মনোনয়ন পেয়েছেন, এটি অবশ্যই তার প্রাপ্য ছিল। ট্রাম্পের ব্যাপারটি একেবারেই অন্যরকম। একজন ব্যবসায়ী ও অভিনেতা হিসেবে ট্রাম্পের উদয় মার্কিন রাজনীতিকে প্রচ- নাড়া দিয়েছে। মার্কিন গতানুগতিক যে প্রার্থিতা যা এতদিন ধরে চলে আসছে ট্রাম্প তার থেকে সম্পূর্ণ আলাদা। তার কথাবার্তা সবাইকে এবার বিপাকে ফেলে দিয়েছে। বিশেষভাবে মুসলিম ইস্যু নিয়ে ট্রাম্প যেসব কথাবার্তা বলেছেন তা মুসলিম বিশ্ব তো বটেই সাধারণ মার্কিনিরাও ভালো চোখে দেখেনি। অনেকেই তাকে বদ্ধ উন্মাদ অথবা একজন অতি বদরাগী হিসেবে চিহ্নিত করেছেন। তার কথাবার্তার মধ্যে সাধারণ শালীনতাবোধটুকুও নেই। যদিও ট্রাম্প মনোনয়ন পাওয়ার আরো আগে নিজেকে শুধরে নেয়ার প্রত্যয় ব্যক্ত করেছেন কিন্তু তারপরও তার কথায় কেউ বিশ্বাস স্থাপন করতে পারছে না। বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্র থেকে মুসলমানদের বের করে দেয়া হবে, তার এই কথায় খোদ মার্কিনিরাও খুশি হয়নি। তারা ট্রাম্পের কঠোর সমালোচনা করেন। রিপাবলিকান নেতারাও ট্রাম্পের ওপর নাখোশ হয়েছেন। তারা ট্রাম্পকে এ ব্যাপারে সতর্ক করেছেন। কিন্তু ট্রাম্পও নাছোড় বান্দা। তিনি রিপাবলিকান নেতাদের এ ব্যাপারে মোটেই পাত্তা দেননি। শেষমেশ এমন হলো যে, একেবারে প্রার্থিতা আদায় করে তবেই ছাড়লেন। আসছে নভেম্বরের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে হিলারি ক্লিনটন না ডোনাল্ড ট্রাম্প নির্বাচিত হয়ে আসেন, সেটাই এখন দেখার বিষয়।
লেখক : কবি ও সাবেক কর্মী আন্তর্জাতিক উদরাময় গবেষণা কেন্দ্র, আইসিডিডিআর’বি, ঢাকা।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন