দুনিয়ার নানা স্থানে বিশ^নবী হজরত মোহাম্মদ (সা.)-এর শানে গোস্তাখি প্রদর্শন ও অবমাননার ধারা নতুন নয়। অতীতে যুগে যুগে এক শ্রেণীর রাসুল (সা.) বিদ্বেষী বদবখত লোক এ অশুভ আচরণ করে দুনিয়াতে যেমন জীবনকে কলঙ্কিত করেছে, পরকালও বরবাদ করেছে। আধুনিক যুগের গোস্তাখে রাসুলগণ (সা.) সে সব করুণ পরিণতির কাহিনী অবগত হলে অনুধাবন করতে পারত, রাসূল (সা.) বিদ্বেষ কত বড় পাপ। আখেরাতের কথা বাদ দিলেও দুনিয়াতে তাদের জিল্লতি অবধারিত। সে সব করুণ কাহিনীর বিবরণ দিতে গেলে বিশাল পরিসর প্রয়োজন, যা এখানে সম্ভব নয়। তবে, এখানে আমরা ছোট্ট একটি ঘটনা উদাহরণ স্বরূপ উল্লেখ করতে চাই, যাতে রয়েছে মোর্তাদ ও রাসুল (সা.)-এর অবমাননাকারীদের শিক্ষা গ্রহণের প্রচুর খোরাক।
খোদ রাসুল (সা.)-এর যুগেই অনেক রাসুল (সা.) বিদ্বেষী কোনো না কোনো প্রকারে হুজুর (সা.)-এর শানে বেআদবি ও তার প্রতি দোষারোপ ও অবমাননাকর আচরণ, কট‚ক্তি এবং তার সাথে দুর্ব্যবহার, অশালীন, অশুভ ব্যবহার ইত্যাদির ফলে করুণ পরিণতি দুনিয়াতেই ভোগ করেছে। তবে তাদের মধ্যে অনেকে হুজুর (সা.)-এর নিকট কৃত অপরাধের জন্য তওবা করে ক্ষমা প্রার্থনা করে দয়াল নবী (সা.)-এর ক্ষমাপ্রাপ্তও হয়েছে এবং খাঁটি মুসলমান হিসেবে সৌভাগ্যের অধিকারী হয়েছে। আবার অনেকে খোদায়ী গজবের শিকার হয়েছে। তারা দুনিয়া, আখেরাত উভয়ই বরবাদ করেছে। উভয় শ্রেণির তালিকা বিশাল। ওহী লেখক এক ভন্ড খৃষ্টান মোর্তাদের যে শোচনীয় পরিণতি হয়েছিল তা আজকের নবী (সা.) বিদ্বেষীদের জন্য বড় শিক্ষা হতে পারে। মিথ্যা ভন্ড নবুওয়াতের দাবিদারদের করুণ পরিণামের অসংখ্য কাহিনীর মধ্যে একটি হচ্ছে রাসূল (সা.) এর অবমাননাকারী এক মোর্তাদকে কবর পর্যন্ত গ্রহণ না করার বাস্তব ঘটনা। কবর যাকে বারে বারে প্রত্যাখ্যান করেছে, বর্জখ বা কবর জীবনে তার কি ভয়ঙ্কর পরিণতি হতে পারে তা ভেবে দেখার বিষয়। এবার কবর যাকে প্রত্যাখ্যান করেছে সে বদবখতের কথায় আসা যাক।
বিখ্যাত সাহাবী হজরত আনাস (রা:) বর্ণনা করেন, জনৈক খৃষ্টান ব্যক্তি মুসলমান হয়েছিল এবং সে কোরআনের সূরা বাকারা ও সূরা আলে ইমরান পড়েছিল। অতঃপর রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর জন্য ওহী লিপিবদ্ধ করার কাজ শুরু করে। ফের মোর্তাদ হয়ে যায় এবং প্রচার করতে থাকে যে, ‘মোহাম্মদ (সা.)-এর তো কোনো কথাই জানা নেই, আমি যা কিছু লিখি সেটাই তিনি বলে দেন।’
বর্ণনাকারী সাহাবীর বক্তব্যে এ মোর্তাদের ইসলাম গ্রহণের কারণ উল্লেখ না থাকলেও এ কথা স্পষ্ট যে, একটি ধর্মের চর হিসেবে লোকটি ভন্ড মুসলমান হয়েছিল এবং মুসলমানদের ভক্তি ও বিশ্বাসভাজন হওয়ায় হুজুর (সা.)-এর প্রতি যে ওহী বা আসমানী বাণী নাজিল হতো তা লিপি করার কৌশল অবলম্বন করেছিল, যাতে সুযোগ মতো তার অসৎ উদ্দেশ্য সাধনে তা ব্যবহার করতে পারে এবং সে তাই করেছিল। কিন্তু ওহী বিকৃত করার এবং মোর্তাদ হয়ে যাওয়ার অপরাধ তাকে কোনো নিকৃষ্ট ও ঘৃণ্য স্তরে পৌঁছে দিয়েছিল, তার জ্বলন্ত প্রমাণ তার মৃত্যু পরবর্তী কবরে প্রবেশের পূর্ববর্তী ঘটনাবলি।
হজরত আনাস (রা.) বলেন: ‘আল্লাহ তাআলা যখন তাকে মৃত্যু মুখে পতিত করেন তখন খৃষ্টানরা তাকে দাফন করে। পরের দিন ভোরে লোকেরা দেখতে পায় কবর তাকে বাইরে নিক্ষেপ করে দিয়েছে। খৃষ্টানরা বলতে লাগল, এটি মোহাম্মদ (সা.) ও তার সঙ্গীদের কাজ। কেননা সে মৃত ব্যক্তি তাদের দ্বীন হতে পলায়ন করেছিল, তাই তারা তার কবর খনন করে লাশ বাইরে নিক্ষেপ করে দেয়। পরের দিন খৃষ্টানরা নতুন কবর খনন করে, পূর্বের তুলনায় অধিক গভীরে দাফন করে। লোকেরা দেখল, কবর তাকে আবারও বাইরে নিক্ষেপ করেছে। খৃষ্টানরা ফের অভিযোগ করল যে, এক কাজ মোহাম্মদ (সা.) ও তার সাহাবাগণের। খৃষ্টানরা পূণরায় তার কবর বানায় এবং তা খুবই গভীরে খনন করে। পরের দিন ভোরে, কবর ফের লাশ বাইরে নিক্ষেপ করে। তখন খৃষ্টানদের বিশ্বাস জন্মে যে, এটি মুসলমানদের কাজ নয়। অতঃপর তার লাশটি এমনিই ফেলে রাখে।
দুনিয়াতে ছদ্মবেশী মুসলমানদের সংখ্যা কত তা বলা কঠিন হলেও ওরা ইসলাম ও মুসলমানদের সর্বনাশ করতে নিয়োজিত। ওদের ব্যাপারে মুসলমানদের সতর্ক থাকতে হবে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন