আল্লাহ রাব্বুল উজ্জত পিয়ারা নবী মোহাম্মাদুর রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর শ্রেষ্ঠত্ব ও আজমতকে আল-কোরআনের তেরটি স্থানে বিবৃত করেছেন। তের সংখ্যাটি আমাদের কাছে খুবই পরিচিত এবং প্রিয়। কেননা, আল-কোরআনের আয়াতে কারীমা ‘মোহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ’ বাক্যে তেরটি বর্ণই রয়েছে। এজন্যই হয়ত আল্লাহপাক তাঁর প্রিয় হাবীব (সা.)-এর শ্রেষ্ঠত্বকে তের বার আল-কোরআনে উল্লেখ করেছেন। সে যাই হোক, আসুন আমরা আমাদের লক্ষ্যের দিকে এগিয়ে যাই।
মহান রাব্বুল আলামীন পিয়ারা নবী মোহাম্মাদুর রাসুলুল্লাহ (সা.)-কে খেতাব করে ইরশাদ করেছেন : নিশ্চয়ই আমি আপনাকে সাক্ষী, সুসংবাদদাতা ও সতর্ককারীরূপে (পৃথিবীতে) প্রেরণ করেছি। যাতে (হে মানুষ!) তোমরা আল্লাহ ও তাঁর রাসুলের ওপর ঈমান আনয়ন করো, এবং তাঁকে সাহায্য ও সম্মান করো, আর সকাল-বিকাল আল্লাহর তাসবীহ পাঠ করো। আর (হে প্রিয় হাবীব সা.) যারা আপনার কাছে আনুগত্যের বাইআত গ্রহণ করে তারা মূলত : আল্লাহর কাছেই আনুগত্যের বাইআত গ্রহণ করে। আল্লাহর (কুদরতের) হাত তাদের হত সমূহের ওপর সংস্থাপিত। সুতরাং যে তা (শপথ) ভঙ্গ করে তার পরিণতি তারই বিরুদ্ধে (আপতিত) হবে। আর যে আল্লাহপাকের সাথে (কৃত) অঙ্গীকার পুরণ করবে, অতি সত্ত¡র তিনি তাদেরকে বিরাট পুরস্কারে বিভূষিত করবেন। (সূরা আল ফাতহ : আয়াত ৮-১০)।
এই তিনটি আয়াতে আল্লাহপাক হাবীবে কিবরিয়া মোহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর সাতটি মর্যাদাপূর্ণ বৈশিষ্ট্যের কথা তুলে ধরেছেন। যথা (১) তিনি সকল নবী ও রাসূল এবং তাদের উম্মতগণের সাক্ষী। হাশরের মাঠে তাঁর সাক্ষ্য দানের ফলেই সকল নবী রাসূল ও তাদের উম্মতগণ নাজাত লাভ করবেন। (২) তিনি সকল নবী রাসূল ও তাদের উম্মতগণের প্রতি জান্নাত লাভের সুসংবাদদাতা। তিনি সত্যই সুসংবাদদাতা বা মুখবেরে সাদেক। এর মাঝে বিন্দুমাত্র সন্দেহর অবকাশ নেই। (৩) তিনি জাহান্নামের আযাব এবং পরকালের শাস্তির ভীতি প্রদর্শনকারী। যারা তাঁর ভীতি প্রদর্শনকে গ্রাহ্য করবে না, তারা কঠিনতর আযাবে নিপতিত হবে। (৪) এতদ কারণেই প্রত্যেককে আল্লাহপাক ও তদীয় রাসুল মোহাম্মাদ মুস্তাফা আহমাদ মুজতাবা (সা.)-এর ওপর ঈমান আনয়ন করতে হবে, তাঁকে সম্মান করতে হবে এবং মনে প্রাণে তাঁকে সাহায্য করতে হবে এবং সকাল বিকাল আল্লাহপাকের তাসবীহ পাঠ করতে হবে।
(৫) উম্মতে এজাবত এবং উম্মতে দাওয়াত উভয় শ্রেণির লোকদের জন্য ফরয হলো সাইয়্যেদুল মুরসালীন মোহাম্মাদুর রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর পবিত্র দস্ত মোবারকে হাত রেখে অথবা ওয়াছিলার মাধ্যমে আনুগত্যের বাইআত (শপথ) গ্রহণ করা এবং এই শপথের হক পরিপূর্ণভাবে আদায় করা। এই শপথ কোনোক্রমেই ভঙ্গ না করা। (৬) যারা রাহমাতুল্লিল আলামীন (সা.)-এর কাছে আনুগত্যের শপথ গ্রহণ করে, তারা মূলত : আল্লাহপাকের (কুদরতের) হাতেই শপথ গ্রহণ করে থাকে। কেননা, আল্লাহ তায়ালার (কুদরতের) হাত শপথকারীদের হাতের ওপর সংস্থাপিত রয়েছে। এই বাঁধন অত্যন্ত সুদৃঢ় মজবুত ও অবিচ্ছ্যে। (৭) যারা এই আনুগত্যের শপথ পরিপূর্ণ রূপে পুরণ করবে তারা আল্লাহপাক প্রদত্ত বিরাট পুরস্কার লাভে ধন্য হবে। আর যে সকল মানুষ এই শপথ গ্রহণ করবে না অথবা শপথ গ্রহণ করার পর তা’ ভঙ্গ করবে, তারা শপথ ভঙ্গের পরিণাম নিজেরাই ভোগ করবে। চাই তা’ দুনিয়াতেই হোক অথবা আখেরাতে। শাস্তির নিগঢ় হতে অপরাধিরা কোনোক্রমেই রেহাই পাবে না। কেন পাবে না, এবং কিজন্য পাবে না, তার স্বরূপ আমরা পরবর্তী আলোচনায় উপস্থাপন করতে প্রয়াস পাব। ততক্ষণ সহৃদয় পাঠক ও পাঠিকাগণ আমাদের সঙ্গে থাকবেন বলেই আমরা বিশ্বাস করি। ওয়াল্লাহুল মুস্তায়ানু আলা কুল্লি হালিন, আমীন!
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন