শুক্রবার ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ০৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২০ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

ধর্ম দর্শন

মসজিদের পবিত্রতা রক্ষায় করণীয়

মুহাম্মদ মুনিরুল হাছান | প্রকাশের সময় : ৫ নভেম্বর, ২০২০, ১২:০১ এএম

মসজিদ ইসলামী সংস্কৃতির অন্যতম নিদর্শন। মসজিদ নির্মাণ করা অত্যধিক ফযিলতের কাজ। ইসলামের মধ্যে সালাতের অবস্থান হলো ঈমানের পরে তাই ঈমানদারগণই সালাতের জন্য আল্লাহর ঘর মসজিদ তৈরি করে থাকেন। আল্লাহ তায়ালা বলেন, “নিঃসন্দেহে তারাই আল্লাহর মসজিদ আবাদ করবে যারা ঈমান এনেছে আল্লাহর প্রতি ও শেষ দিনের প্রতি এবং সালাত কায়েম করেছে, যাকাত আদায় করে ও আল্লাহ ছাড়া কাউকে ভয় করেনা। তাদেরই পথ প্রাপ্তির আশা আছে”। (সূরা তাওবা - ১৮)

রাসুলে করিম (সাল্লালাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, “যে ব্যক্তি আল্লাহর সন্তুষ্টির উদ্দেশ্য মসজিদ নির্মাণ করবে আল্লাহ তায়ালা তার জন্য জান্নাতে একটি ঘর নির্মাণ করবেন”। (তিরমিযী - ২৯২)
মসজিদ নির্মাণের প্রকৃত অর্থ হলো মসজিদকে সালাত, জিকির, তাসবিহ ইত্যাদির জন্য আবাদ রাখা। কেননা মসজিদকে কোনো কাফির ব্যক্তি আবাদ করতে পারবেনা এবং মোতায়াল্লিও হতে পারবেনা।
মসজিদের পবিত্রতা রক্ষায় কিছু বিধি-বিধান রয়েছে যা একজন মুমিনকে মেনে চলতে হয়, যেমন-
১। একনিষ্ঠ নিয়্যতে, বিনয়ী হয়ে, কম্পিত হৃদয়ে মসজিদে প্রবেশ করা। কারণ আল্লাহ তায়ালা মানুষের বাহ্যিক অবস্থার সাথে অন্তরের পরিশুদ্ধতাও লক্ষ্য করেন। প্রিয় নবিজী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, “প্রকৃতপক্ষে সকল কাজ নিয়তের উপর নির্ভরশীল”। (সহীহ বুখারী- ০১)
২। পবিত্র পোশাক দেহ ও মন নিয়ে মসজিদে উপস্থিত হওয়া। আল্লাহ তায়ালা বলেন, “হে আদম সন্তানেরা, তোমরা প্রত্যেক নামাজের সময় সাজ-সজ্জা পরিধান করে নাও, খাও ও পান কর এবং করো না। তিনি অপব্যয়ীদেরকে পছন্দ করেনা”। (সূরা আরাফ- ৩১)
৩। অজু করে মসজিদে প্রবেশ করা বিশেষত অজুর পানি যাতে মসজিদে না পড়ে খেয়াল রাখা। হযরত উসমান (রাঃ) বলেন, “আমি রাসুলে পাক (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)কে বলতে শুনেছি, যে ব্যক্তি অজু করবে আর তা উত্তমরূপে করবে এবং পায়েঁ হেটেঁ ফরজ সালাত লোকদের সাথে অথবা জামাতের সাথে অথবা মসজিদে আদায় করবে, তার গুনাহ ক্ষমা করা হবে”। (নাসাঈ- ৮৫৬)
৪। মসজিদে প্রবেশের সময় ডান পা দিয়ে এবং বের হওয়ার সময় বাম পা দিয়ে নির্দিষ্ট দোয়া পড়া। হযরত ফাতেমা (রাঃ) বর্ণনা করেন, নবিজী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) যখন মসজিদে প্রবেশ করতেন তখন তিনি “বিসমিল্লাহি আসসালামু আলা রাসুলিল্লাহি আল্লাহুম্মাগফিরলী জুনুবী ওয়াফতাহলি আবওয়াবা রাহমাতিকা” বলে প্রবেশ করতেন। আর তিনি যখন বের হতেন তখন তিনি বলতেন, “বিসমিল্লাহি ওয়াসসালামু আলা রাসুলিল্লাহি আল্লাহুমাগফিরলি জুনুবী ওয়াফতাহলি আবওয়াবা ফাদলিকা”। (ইবনে মাজাহ- ৮১৭)
অপর হাদীসে রয়েছে প্রবেশের সময় “আল্লাহুম্মাফতাহলী আবওয়াবা রাহমাতিকা” বলা আর বের হওয়ার সময় “আল্লাহুম্মা ইন্নি আসআলুকা মিন ফাদলিকা” বলা। (সহীহ মুসলিম- ৭১৩)
৫। মসজিদে দীর্ঘ সময় অপেক্ষা করা এবং বেশি সওয়াবের আশায় ইতেকাফের নিয়ত করা। নবিজী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেন, আমি কি তোমাদেরকে এমন সংবাদ দিবোনা যা তোমাদের গুনাহসমূহের কাফফারা হয়ে যাবে। তা হলো কষ্ট হওয়া সত্তে¡ও পূর্ণরূপে অজু করা, মসজিদের দিকে অধিক পদক্ষেপ এবং এক সালাত আদায় করে অন্য সালাতের প্রতীক্ষায় থাকা, এতে পাপরাশি মুছে যায়। (আল মুসতাদরাক লিল হাকিম-৪৫৬)
৬। মসজিদে শোরগোল না করা, মানুষকে ডিঙিয়ে সামনে না যাওয়া, আঙ্গুল না ফোটানো। হযরত হাসান বসরী (রাঃ) হতে বর্ণিত। রাসুলে করিম (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেন, মানুষের জন্য এমন একটি সময় আসবে যখন মসজিদে পার্থিব বিষয় নিয়ে আলোচনা করা হবে, সুতরাং তোমরা তাদের সাথে বসবেনা, তাদের সাথে আল্লাহর কোনো প্রয়োজন নেই। (শুআবুল ঈমান-২৭০১)
৭। মসজিদে প্রবেশের সাথে সাথে নিষিদ্ধ ওয়াক্ত না হলে দুই রাকাত সালাত আদায় করা। নবিজী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেন, যখন তোমাদের কেউ মসজিদে প্রবেশ করে তখন সে দুই রাকাত সালাত আদায় না করে বসবেনা। (সহীহ মুসলিম-১০৯৭)
৮। আযানের সাথে সাথে মসজিদে প্রবেশ করা এবং প্রথম কাতারে যাওয়ার জন্য প্রতিযোগিতা করা। নবিজী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, মানুষ যদি জানত আযান ও প্রথম কাতারের মধ্যে কী ফযিলত রয়েছে, আর তা লটারি ব্যতীত পাওয়া সম্ভব না হত, তা হলে তা পাওয়ার জন্য লটারি করত। আর যদি জানত মসজিদে আগে আসার মধ্যে কী ফযিলত তাহলে তার জন্য প্রতিযোগিতা করত। (সহীহ বুখারী-৬১৫)
৯। মসজিদে গমনকারীর প্রতি পদক্ষেপে একটি পূণ্য অর্জিত হয়, মর্যাদা বৃদ্ধি পায়, একটি পাপ মোচন হয়। হযরত আবু মুসা আশআরী (রাঃ) থেকে বর্ণিত, প্রিয় নবি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এরশাদ করেছেন সালাতের মধ্যে ঐ ব্যক্তি সবচেয়ে বেশি প্রতিদান লাভের অধিকারী যে অধিক দূর হতে পায়ে হেঁটে সালাতে আসে। (সহীহ মুসলিম-৬৬২)
১০। ইমামের বক্তব্য মনোযোগ সহকারে শুনা, সর্বাবস্থায় ইমামের অনুসরণ করা, জ্ঞান অর্জনে আগ্রহী হওয়া কর্তব্য। হযরত রাসুলে পাক (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেন, যে ব্যক্তি মসজিদে ভালো কিছু শিক্ষার জন্য অথবা শিক্ষা দেওয়ার জন্য গমন করল তার জন্য একটি পরিপূর্ণ হজের সাওয়াব রয়েছে। (ইমাম তাবরানি, মুজামুল কবির-৭৪৭৩। আত তারগিব ওয়াত তারহিব-১/১০৪)
নবিজী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) আরো বলেন, যে ব্যক্তি তার মাথা ইমামের পূর্বে উঠিয়ে ফেলে তার কী এ ভয় নেই যে আল্লাহ তায়ালা তার মাথাকে গাধার মাথা বানিয়ে দিবেন অথবা তার আকৃতিকে গাধার আকৃতি বানিয়ে দেবেন। (সহীহ মুসলিম-৬৪৭)
১১। মসজিদে তাড়াহুড়া না করে স্থির ও শান্ত হয়ে বসা। নবিজী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, যখন তোমরা সালাতে আসবে অবশ্যই ধীরস্থিরতা বা শান্তভাব বজায় রাখবে। যেটুকু পাবে তা আদায় করবে আর যা পাবেনা তা পূর্ণ করবে। (সহীহ বুখারী-৫৯৯। সহীহ মুসলিম-৬০২)
১২। আযান হওয়ার পর মসজিদ থেকে বের হওয়া জায়েজ নেই। নবিজী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, যে মসজিদে থাকা অবস্থায় আযান হলো তারপর কোন প্রয়োজন ছাড়াই মসজিদ থেকে বের হয়ে গেল অথচ আর ফিরে আসলনা তাহলে বুঝে নিবে সে একজন মুনাফিক। (ইবনে মাজাহ-৭৩৪)
১৩। মসজিদের উপর রাস্তা বানানো এবং এর ভিতর দিয়ে বারবার গমনা গমন করা জায়েজ নাই।
১৪। মসজিদে থুথু ফেলা গুনাহের কাজ। ইচ্ছাকৃত ভাবে কিবলার দিকে পা বিছিয়ে দেওয়া মাকরূহ।
১৫। মসজিদে ভিক্ষা করা হারাম, যদি কেউ ভিক্ষা করেও ফেলে তাহলে তাকে ভিক্ষা দেওয়া ও হারাম।
লেখক : সহকারী শিক্ষক (ইসলাম শিক্ষা) চট্টগ্রাম কলোজিয়েট স্কুল

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন