মঙ্গলবার ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ১১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৩ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

শান্তি ও সমৃদ্ধির পথ ইসলাম

অনাড়ম্বর ও নম্র রাসুল (সা.)

উবায়দুর রহমান খান নদভী | প্রকাশের সময় : ৮ নভেম্বর, ২০২০, ১২:০০ এএম

হযরত ওমর (রা.) থেকে বর্ণিত রেওয়ায়েতে রাসুলে পাক (সা.) বলেন, হে মুসলমানগণ, তোমরা আমার সীমাতিরিক্ত প্রশংসা করো না, যেমন খৃষ্টানরা ঈসা ইবনে মরিয়ম (আ.)-এর বেলায় করেছে। কেননা, আমি আল্লাহর বান্দা। অতএব, তোমরা আমার সম্পর্কে এতটুকুই বলতে পারো যে, মুহাম্মাদ আল্লাহর বান্দা ও তার রাসুল। (মাদারিজুন নবুওয়াত, যাদুল মাআদ)। হাদীসে আছে, একবার এক সফরে কয়েকজন সাহাবী একটি ছাগল জবেহ করার আয়োজন করে তারা সমস্ত কাজ নিজেদের মধ্যে ভাগ করে নিলেন। কেউ জবেহ করার, কেউ চামড়া ছাড়ানোর এবং কেউ রান্না করার দায়িত্ব নিলেন। রাসুলুল্লাহ (সা.) বললেন, রান্না করার জন্যে লাকড়ি সংগ্রহ করা আমার কাজ। সাহাবায়ে কেরাম আরজ করলেন, হুযুর, এ কাজ আমরাই করে নেব। রাসুলুল্লাহ (সা.) বললেন, এটা তো আমিও বুঝি যে, তোমরা সানন্দে এ কাজ করে নেবে; কিন্তু আমি সকলের মধ্যে বিশিষ্ট হয়ে থাকা পছন্দ করি না এবং আল্লাহ তায়ালাও এটা পছন্দ করেন না। (খাসায়েলে নববী)।

হযরত আবু হুরায়রা (রা.) বলেন, একবার আমি রাসুলুল্লাহ (সা.) সাথে বাজারে এলে তিনি চার দিরহাম দিয়ে একটি পায়জামা খরিদ করলেন। অতঃপর তিনি ওজনকারীকে বললেন, মূল্য বাবদ প্রদত্ত মালগুলো খুব টেনে টেনে ওজন করো (অর্থাৎ, কম অথবা সমান সমান নিয়ো না; বরং কিছু বেশি নাও)। ওজনকারী বিস্মিত হয়ে বলল, আমি কখনো কাউকে মূল্য পরিশোধ করতে গিয়ে এমন কথা বলতে শুনিনি। হযরত আবু হুরায়রা (রা.) বললেন, পরিতাপের বিষয় যে, তুমি নবীকেও চেনো না।

এ কথা শুনে লোকটি দাঁড়িপাল্লা ছেড়ে দাঁড়িয়ে গেল এবং রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর হাতে চুমো খেল। রাসুলুল্লাহ (সা.) হাত টেনে বললেন, এটা অনারবদের নিয়ম। তারা তাদের রাজা ও প্রধানদের হস্ত চুম্বন করে। আমি রাজা নই, আমি তো তোমাদেরই একজন (হুযুর (সা.) স্বীয় অভ্যাস অনুযায়ী এ কথা নম্রতাবশত বলেছেন)। অতঃপর তিনি পায়জামাটি তুলে নিলেন। হযরত আবু হুরায়রা (রা.) বলেন আমি এগিয়ে গিয়ে তার হাত থেকে পায়জামাটি নিতে চাইলে তিনি বললেন, জিনিস তুলে নেয়ার অধিকার জিনিসের মালিকেরই রয়েছে। তবে যে দুর্বল এবং বইতে অক্ষম, তাকে সাহায্য করা তার অন্য ভাইয়ের কর্তব্য। (মাদারিজুন নবুওয়াত)।

হযরত আনাস (রা.) বলেন, রাসুলে কারীম (সা.) একটি পুরনো পালানে বসে হজ করেন, যার ওপর একটি কাপড় ছড়ানো ছিল, যার মূল্য চার দিরহামও ছিল না। এরপরেও তিনি দুআ করেছিলেন, হে আল্লাহ, এ হজকে লোক দেখানো নয়, এমন কিংবা আড়ম্বরহীন হজে পরিণত করুন। (শামায়েলে তিরমিযী)।

মক্কা বিজয়ের দিন যখন তিনি বিরাট মুসলিমবাহিনী সাথে নিয়ে বিজয়ীবেশে শহরে প্রবেশ করেন, তখন আল্লাহর দরবারে বিনয় ও নম্রতাবশত মস্তক বাহনের পালানের ওপর ঝুঁকিয়ে নেন; এমনকি, গদির সামনের লাকড়ির সাথে তার মস্তক লেগে যাওয়ার উপক্রম হয়। (শিফা)। তিনি কাফের ও শত্রুর সাথেও মন জয় করার আশায় হাসিমুখে ব্যবহার করতেন এবং বাহ্যিক ধৃষ্টতাপূর্ণ কথা শুনেও সবর করতেন। ঘরে ফিরে গৃহস্থালি কাজ-কর্মের ব্যবস্থা করতেন। তিনি চাদর পরিধানে খুব সতর্কতা অবলম্বন করতেন, যাতে হাত-পা খোলা না থাকে (সম্ভবত উপবিষ্ট অবস্থায় এরূপ হয়ে থাকবে)। তার হাসিমুখ ও ইনসাফ সকলের জন্যে ব্যাপক ছিল এবং ক্রোধ তাকে কখনো নিজের ওপর নিয়ন্ত্রণহারা করতে পারত না।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (6)
মোহাম্মদ আলী ৮ নভেম্বর, ২০২০, ১২:৩৯ এএম says : 0
মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সা.) {৫৭০-৬৩২ খ্রি.} ছিলেন মানবজাতির অনুকরণীয় ও অনুসরণীয় মহান উদার, বিনয়ী ও নম্র ব্যক্তিত্ব। তিনি উত্তম চরিত্র ও মহানুভবতার একমাত্র আধার।
Total Reply(0)
Md Masud Hawlader ৮ নভেম্বর, ২০২০, ১২:৩৯ এএম says : 0
পিতা-মাতা, স্বামী-স্ত্রী, প্রতিবেশী সবার অকৃত্রিম শিক্ষণীয় আদর্শ ও প্রাণপ্রিয় ব্যক্তিত্ব নবী করিম (সা.) একাধারে সমাজসংস্কারক, ন্যায়বিচারক, সাহসী যোদ্ধা, দক্ষ প্রশাসক, যোগ্য রাষ্ট্রনায়ক এবং সফল ধর্মপ্রচারক।
Total Reply(0)
Iftikhar Bappy ৮ নভেম্বর, ২০২০, ১২:৩৯ এএম says : 0
কল্যাণকর প্রতিটি কাজেই তিনি সর্বোত্তম আদর্শ। তাঁর অসাধারণ চারিত্রিক মাধুর্য ও অনুপম ব্যক্তিত্বের স্বীকৃতি দিয়ে পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘তোমাদের জন্য আল্লাহর রাসুলের মধ্যে রয়েছে উত্তম আদর্শ।’ (সূরা আল-আহজাব, আয়াত: ২১)
Total Reply(0)
Ujjal Khan ৮ নভেম্বর, ২০২০, ১২:৪০ এএম says : 0
তিনি অবিস্মরণীয় ক্ষমা, মহানুভবতা, বিনয়-নম্রতা, সত্যনিষ্ঠতা প্রভৃতি বিরল চারিত্রিক মাধুর্য দিয়েই বর্বর আরব জাতির আস্থাভাজন হতে সক্ষম হয়েছিলেন। যে কারণে তারা তাঁকে ‘আল-আমিন’ বা বিশ্বস্ত উপাধিতে ভূষিত করেছিল। তিনি যে বিনয়-নম্র ও সৎচরিত্রের অধিকারী ছিলেন, তা তারা একবাক্যে অকপটে স্বীকার করেছে।
Total Reply(0)
Ujjal Khan ৮ নভেম্বর, ২০২০, ১২:৪০ এএম says : 0
মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সা.) দুনিয়ার মানুষকে অর্থের দ্বারা বশীভূত না করে বরং তাদের সদাচরণ, উত্তম ব্যবহার এবং সততার দ্বারা বশীভূত করতে সক্ষম হয়েছেন। তাঁর চারিত্রিক গুণাবলি সম্পর্কে আল্লাহ তাআলা ঘোষণা করেছেন, ‘নিশ্চয়ই তুমি সুমহান চরিত্রে অধিষ্ঠিত।’ (সূরা আল-কালাম, আয়াত: ৪)
Total Reply(0)
Habibur Rahman ৮ নভেম্বর, ২০২০, ১২:৪১ এএম says : 0
আত্মমর্যাদাবোধবশত কখনো তিনি মানুষকে তুচ্ছজ্ঞান ও হেয়প্রতিপন্ন করেননি বা নগণ্য ভাবেননি। জাতি-ধর্ম-বর্ণ-দল-মতনির্বিশেষে সব মানুষের সঙ্গে সদাচরণ করে পৃথিবীর বুকে শ্রেষ্ঠতর স্বভাব-চরিত্রের অতুলনীয় আদর্শ স্থাপন করেছেন।
Total Reply(0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন