বরেন্দ্র অঞ্চলের ধান ক্ষেতে এখন এক অন্যরকম সুবাস। শ্রোতা নন্দিত প্রখ্যাত শিল্পী মান্নাদের কন্ঠের ‘মিষ্টি একটা গন্ধ ছড়িয়ে আছে ঘরটা জুড়ে’। গানটার কথা মনে পড়ে যায় বরেন্দ্রের ধানের ক্ষেতে গেলে। মনের অজান্তেই গুণগুণিয়ে উঠতে পারেন একটি মিষ্টি গন্ধ ছড়িয়ে আছে ধানের ক্ষেতজুড়ে। চালটির নাম চিনি আতপ, চিনি গুড়া, কালোজিরা এমনি নানা নামে সুগন্ধি চালটি পরিচিত। বনেদি জাতের এ চাল ছাড়া জমে না কোন খানা পিনার আয়োজন। বিরিয়ানী, পোলাও জর্দা, পায়েসসহ সর্বত্র এ চালের কদর। ফলে দামের দিকেও এর কদর কম নয়। সুগন্ধি চাল আবাদ করে কৃষক সব সময় লাভবান হয়। উৎপাদিত চাল নিয়ে বিক্রির জন্য হা হুতাশ করতে হয় না। আর তাই কৃষক দিন দিন ঝুঁকে পড়ছে সুগন্ধি চাল আবাদের দিকে। প্রতি বছর বাড়ছে এর আবাদের পরিমাণ এবারো তার ব্যতিক্রম হয়নি।
গত শনিবার বরেন্দ্র অঞ্চলের বিস্তীর্ণ ধান ক্ষেতের মধ্য দিয়ে যাবার সময় পাকা আমনের সোঁদা গন্ধ নয়। সুগন্ধি চালের মিষ্টি ঘ্রাণ অন্যরকম অনুভ‚তি এনে দেয়। ধানের ক্ষেতের পাশ দিয়ে গেলে সহজেই চেনা যায় আমন আর সুগন্ধ চালের ক্ষেত। আবহাওয়া অনুক‚ল ও পোকার আক্রমণ কম থাকায় চলতি মৌসুমে ক্ষেতে চিনি আতপের ফলন ভাল হয়েছে। ফলে কৃখশ আশা করছেন বাম্পার ফলনের। আমন ধান কাটা-মাড়াই শুরু হলেও সুগন্ধি চাল কৃষকের ঘরে আরো কিছু দিন পরেই আসবে।
আলাপকালে কৃষকরা বলেন, অন্য মোটা ধান চাষ করে দাম পাচ্ছি না। আতপের চাহিদা থাকায় দাম ভাল। তাই অনেকে এবার মোটা ধানের পাশাপাশি আতপ চাষ করেছেন। রাজশাহী কৃষি স¤প্রসারণের তথ্য অনুযায়ী রাজশাহী অঞ্চলে, রাজশাহী, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, নাটোর ও নওগাঁ জেলায় চিনি আতপ চাষাবাদ হয়েছে প্রায় ৫০ হাজার হেক্টরের বেশি জমিতে। এর মধ্যে সব চেয়ে বেশি আতপ চাষ হয়েছে নওগাঁ জেলায়।
রাজশাহীতে ২০১৫ সাথে আতপ চাষাবাদ হয়েছিল ৭২০ হেক্টর জমিতে। ২০১৬ সালে কমে ৬৫০ হেক্টর হয়। ২০১৭ সালে আরো কমে চাষাবাদ হয় ৫২০ হেক্টর । ২০১৮ সালে চাষাবাদ হয়েছে ৮৫০ হেক্টর। ২০১৯ সালে চাষাবাদ হয়েছে ৯১৭ হেক্টর জমিতে। এবং চলতি বছর আরো ২০০ হেক্টর বেড়ে চাষাবাদ হচ্ছে এক হাজার ১১৭ হেক্টর জমিতে। এবার অনুক‚ল আবহাওয়া অন্য বছরের চেয়ে ফলন ভাল হবে। এবং বর্তমানে বাজারে প্রতিমণ (৪০ কেজি) আতপ ধান বিক্রি হচ্ছে এক হাজার ৮০০ থেকে দুই হাজার টাকায়।
রাজশাহীর তানোর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা জানান, আতব চাষ প্রতিবছরেই বৃদ্ধি পাচ্ছে। চলতি বছর প্রাকৃতিক দুর্যোগ ও পোকার আক্রমণ কম। এর আগে কয়েক বছরে প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে আতপ চাষীরা লোকসান গুণেছিল তা এখন কেটে উঠেছে কৃষক। এক বিঘা আতপ চাষ করে ১২ থেকে ১৫ মণ পর্যন্ত পাওয়া যায়। বাজারে এর দাম প্রতি মণ দুই হাজার টাকা পর্যন্ত পাওয়া যায়। তাই অন্য সব ধানের চেয়ে আতপ চাষ করে বেশি লাভবান হন কৃষক। ফলে সেদিকেই ঝুঁকছেন আবাদকারীরা।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন