শনিবার, ০৪ মে ২০২৪, ২১ বৈশাখ ১৪৩১, ২৪ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

শান্তি ও সমৃদ্ধির পথ ইসলাম

রাসুল (সা.)-এর ত্যাগ ও ধৈর্য-১

উবায়দুর রহমান খান নদভী | প্রকাশের সময় : ১১ নভেম্বর, ২০২০, ১২:০০ এএম

এক রেওয়ায়েতে আছে, যায়দ ইবনে শানা পূর্বে ইহুদি ছিলেন। তিনি একবার বলতে লাগলেন, নবুওয়াতের আলামতসমূহের মধ্যে সকল আলামতই আমি রাসুল (সা.)-এর মধ্যে দেখতে পেয়েছিলাম; কিন্তু মাত্র দু’টি আলামতের পরীক্ষা বাকি ছিল। এক. তার সহিষ্ণুতা তার ক্রোধের ওপর প্রবল হবে। দুই. তার সাথে যতই মূর্খজনিত ব্যবহার করা হবে, ততই সহিষ্ণুতা বৃদ্ধি পাবে। আমি দু’টি আলামত পরীক্ষা করার সুযোগ খুঁজতে লাগলাম এবং তার কাছে একটু বেশি পরিমাণ আসা-যাওয়া করতে লাগলাম। একদিন রাসুলুল্লাহ (সা.) নিজের ঘর থেকে বাইরে এলেন। তার সাথে ছিলেন হযরত আলী (রা.)। ইতোমধ্যে জনৈক বেদুইনের মতো ব্যক্তি এসে আরজ করল, ইয়া রাসুলুল্লাহ, আমার গোত্র ইসলাম গ্রহণ করেছে। আমি তাদেরকে বলেছিলাম, মুসলমান হয়ে গেলে তোমাদের রিজিকের আর অভাব থাকবে না, কিন্তু এখন তারা দুর্ভিক্ষপীড়িত। আমার ভয় হচ্ছে, এ অবস্থায় তারা ইসলাম ছেড়ে না যায়। যদি ভালো মনে করেন, তবে আপনি তাদেরকে কিছু সাহায্য করুন।

রাসুলে আকরাম (সা.) সম্ভবত হযরত আলী (সা.)-এর দিকে দেখলেন। তিনি আরজ করলেন, হুজুর, কিছুই তো মজুদ নেই। আমি (অর্থাৎ যায়দ, তিনি তখন পর্যন্ত ইহুদি ছিলেন এবং এই দৃশ্য অবলোকন করছিলেন) বললাম, মুহাম্মদ, যদি আপনি অমুক ব্যক্তির বাগানের এই পরিমাণ খেজুর নির্দিষ্ট মেয়াদের ওপর আমাকে দেন, তবে আমি অগ্রিম মূল্য দিয়ে দেব এবং নির্দিষ্ট মেয়াদ উত্তীর্ণ হলে খেজুর নিয়ে নেব। রাসুলুল্লাহ (সা.) বললেন, এটা হতে পারে না। তবে যদি বাগান নির্দিষ্ট না করো, তবে আমি এ চুক্তিতে আবদ্ধ হতে পারি। আমি তার প্রস্তাব মেনে নিলাম এবং খেজুরের মূল্য আশি মিসকাল (এক মিসকল সাড়ে চার মাশার সমান) দিয়ে দিলাম। রাসুলুল্লাহ (সা.) এই স্বর্ণ বেদুইন ব্যক্তির হাতে দিয়ে বললেন, ইনসাফের প্রতি লক্ষ রেখে এ দ্বারা তাদের অভাব দূর করে দাও।

যায়েদ বলেন, খেজুর পরিশোধ করার সময় আসতে তখনও কয়েক দিন বাকি ছিল। এ সময় একদিন রাসুলুল্লাহ (সা.) আবু বকর, ওমর ও ওসমান (রা.)সহ একদল সাহাবীর সাথে একটি জানাজার নামাজে শরিক হতে গেলেন। নামাজ শেষে তারা একটি প্রাচীরের কাছে বসেছিলেন। আমি সেখানে উপস্থিত হয়ে তার কোর্তা ও চাদরের কিনারা ধরে অত্যন্ত কর্কশ ভাষায় বললাম, হে মুহাম্মাদ, আপনি আমার ঋণ পরিশোধ করছেন না কেন? আল্লাহর কসম, আব্দুল মুত্তালিবের বংশধরদের আমি ভালোরূপেই চিনি। তারা কিছু নিলে আর তা ফেরত দিতে চায় না।

হযরত ওমর (রা.) রাগে অগ্নিশর্মা হয়ে চক্ষু বিস্ফারিত করে আমার দিকে দেখলেন এবং বললেন, হে আল্লাহর দুশমন, এ কী বকছিস! আল্লাহর কসম রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর ভয় না থাকলে আমি এই মুহূর্তে তোর গর্দান উড়িয়ে দিতাম। কিন্তু রাসুলুল্লাহ (সা.) অত্যন্ত শান্ত মনে আমাকে দেখছিলেন। অতঃপর সাহাস্যে বললেন, ওমর, আমি আর সে তোমার কাছে আরও একটি বিষয়ের মুখাপেক্ষী ছিলাম। তা এই যে, তুমি আমাকে সুন্দরভাবে প্রাপ্য পরিশোধ করতে বলতে আর তাকে উত্তম পন্থায় তাগাদা করার উপদেশ দিতে! যাও, তাকে নিয়ে যাও এবং তার প্রাপ্য পরিশোধ করে দাও। আর তুমি যে তাকে শাসিয়েছ, এর বিনিময়ে তাকে বিশ ছা’অ (প্রায় দু’মণ) খেজুর বেশি দিয়ে দাও।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (13)
আরমান ১১ নভেম্বর, ২০২০, ২:২০ এএম says : 0
ইসলামের এই বিষয়গুলো নিয়ে ধারাবাহিকভাবে লেখার জন্য আল্লাহ আপনাদেরকে উত্তম প্রতিদান দান করুক।
Total Reply(0)
নাজিম ১১ নভেম্বর, ২০২০, ৩:০২ এএম says : 0
আল্লাহ আমাদেরকে তার প্রিয় হাবিব (সা.)-এর দেখানো পথে চলার তৌফিক দান করুক।
Total Reply(0)
মারিয়া ১১ নভেম্বর, ২০২০, ৩:০৩ এএম says : 0
রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর উম্মত হতে পেরে আমরা নিজেদেরকে ধন্য মনে করছি
Total Reply(0)
রুহান ১১ নভেম্বর, ২০২০, ৩:০৫ এএম says : 0
রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর জীবনের প্রতিটি বিষয়ই আমাদের জন্য শিক্ষনীয়
Total Reply(0)
মিনহাজ ১১ নভেম্বর, ২০২০, ৩:০৫ এএম says : 0
পরবর্তী পর্বের অপেক্ষায় রইলাম
Total Reply(0)
Imran ১১ নভেম্বর, ২০২০, ৭:১৪ এএম says : 0
ধন্যবাদ
Total Reply(0)
কে এম শাকীর ১১ নভেম্বর, ২০২০, ৭:২৯ এএম says : 0
ইনসানে কামিল বা পরিপূর্ণ মানব, সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ মহামানব, সর্বশেষ নবী ও রাসুল, আল্লাহর পেয়ারা হাবিব, প্রিয় নবী হজরত মুহাম্মাদুর রাসুলুল্লাহ (সা.)। তিনি বিশ্বের সব মানুষের জন্য সর্বোত্তম আদর্শ মহামানব।
Total Reply(0)
বারেক হোসাইন আপন ১১ নভেম্বর, ২০২০, ৭:৩০ এএম says : 0
আমাদের প্রিয় রাসুল (সা.) সবার সেরা হয়েছেন সেরা গুণাবলির জন্য। ধৈর্য, সহিষ্ণুতা, ক্ষমা, উদারতা, প্রেম-প্রীতি, ভালোবাসা, দয়া-মায়া, মানবিকতা, ত্যাগ-তিতিক্ষা, পরোপকার ইত্যাদি সব মানবীয় সদ্‌গুণের অনন্য সমাহার ছিল তাঁর মধ্যে। তিনি ছিলেন সর্বোত্তম চরিত্রের অধিকারী।
Total Reply(0)
তাসফিয়া আসিফা ১১ নভেম্বর, ২০২০, ৭:৩১ এএম says : 0
আমাদের নবীজি (সা.) শ্রেষ্ঠ নবী ও রাসুল এবং সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ মহামানব; তাই আমাদেরও হতে হবে শ্রেষ্ঠ উম্মত এবং কালের শ্রেষ্ঠ মানুষ। তা না হলে নবীজি (সা.)-এর সুনাম ও সম্মানের প্রতি অন্যায় করা হবে। আমাদের হতে হবে খাঁটি নবীপ্রেমিক, নবীর সুন্নতের অনুসারী ও নবীর রঙে রঙিন। না হয় আমরা প্রকৃত অর্থে নবীর আশেক হওয়া দূরের কথা, নবীজির সত্যিকারের উম্মত হতে পারব না। যার কর্মকাণ্ডে ধর্মের দুর্নাম হয়, ইসলামের বদনাম হয়; মহামানবের সম্মানহানি হয়, মানবতার অকল্যাণ হয়, সভ্যতার অমঙ্গল হয়; সে ধার্মিক নয়, এমনকি মনুষ্যপদবাচ্য হওয়ারও অযোগ্য।
Total Reply(0)
জাহিদ খান ১১ নভেম্বর, ২০২০, ৭:৩১ এএম says : 0
আসুন, শ্রেষ্ঠ নবীর উম্মত হিসেবে শ্রেষ্ঠ গুণের অধিকারী হই, ইসলামের অনুপম আদর্শ বিশ্বের দরবারে কার্যত তুলে ধরি এবং মহানবী (সা.)-এর মর্যাদা সমুন্নত রাখি।
Total Reply(0)
saif ১১ নভেম্বর, ২০২০, ১০:০০ এএম says : 0
এত সুন্দর আর মুল্যবাদ লেখার জন্যে এবং তা প্রকাশ করার জন্যে সন্মানিত লেখক সাহেব এবং ইনকিলাব সংশ্লিষ্ট সকলকে অনেক ধন্যবাদ। আল্লাহ্‌ আপনাদের এর উত্তম প্রতিদান অবশ্যই দেবেন। আমরাও জেন আমাদের প্রিয় নবি (সাঃ) এর জীবনী পড়ে সেখান থেকে শিক্ষা গ্রহন করে আমাদের নিজেদের উপকৃত করতে পারি আল্লাহ্‌ আমাদের সেই তৌফিক প্রধান করুন।
Total Reply(0)
nayeem ১১ নভেম্বর, ২০২০, ৬:০৭ পিএম says : 0
My prophet SW is great.We have to come back on sunnah as soon as possible.
Total Reply(0)
সৈয়দ রুহুল আমিন ১১ নভেম্বর, ২০২০, ৯:৪০ পিএম says : 0
সবার কাছে অনুরোধ আসুন, শ্রেষ্ঠ নবীর উম্মত হিসেবে শ্রেষ্ঠ গুণের অধিকারী হই, ইসলামের অনুপম আদর্শ বিশ্বের দরবারে কার্যত তুলে ধরি এবং মহানবী (সা.)-এর মর্যাদা সমুন্নত রাখি।
Total Reply(0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন